প্রেমপিপাসা পর্ব ২২
সুমাইয়া সুলতানা
সাদা রঙের কভারে আবৃত বালিশ বুকে চেপে অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে মিষ্টি। চঞ্চল মেয়েটি নিমিষে শান্ত হয়ে গিয়েছে। ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রুপাত ঘটিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে নরম তুলার বালিশ। এক ব্যথার দরুণ হাজারো দুঃখের পাহাড় জমা হচ্ছে মনগহীনে। স্মৃতিতে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে যন্ত্রণার মরণ বিষ। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না৷ ভালো ভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার পূর্বে অবলীলায় বিলীন হতে চলেছে তার প্রথম আবেগ, প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা। এ দহনকাল সহ্য করার মতো না।
বাবা-মা মারা যাওয়া এক এতিম মেয়ে মিষ্টি। বড়ো এক ভাই আছে। সে মিষ্টি’কে কোলেপিঠে করে লালন-পালন করেছে। ভাই-ভাবী ছাড়া মিষ্টির পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। বাবা-মাকে কাছে পায়নি। তাদের মায়া, আদর, ভালোবাসা, যত্ন কেমন হয় জানা নেই। বড়ো ভাই ভাবীর মধ্যে বাবা-মাকে খোঁজে সে। পুরোটা না পেলেও মোটামুটি পেয়েছে। উড়নচণ্ডী মিষ্টি আচমকা পা পিছলে পড়ল রাহাত নামক পাষাণ যুবকের প্রেমে। জীবনের প্রথম অনুভূতি সে। বাবা-মা না থাকলেও মিষ্টির ভাই সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে বোনকে ভালো রাখার। মিষ্টি এতে সন্তুষ্ট। হাসিখুশি জীবনে ঘূর্ণিঝড় বয়ে বাঁধ নির্মাণ ঘটাল অবাধ্য দোনোমোনো টানপোড়া মন। হুট করে ভালো লাগা ছুঁয়ে দিয়ে, পুনরায় সেথায় বিষাক্ত তীরের ফলা চালিয়ে দিল কেউ। সেই তীর ছুঁড়েছে রাহাত!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিষ্টি চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়। একাকী , জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভগ্নহৃদয়ের রমণীর দীর্ঘশ্বাস ঘরের বাতাস ভারী করে তোলে। মুখশ্রীতে গভীর হতাশা। এক অন্ধকার ছায়া তার মুখের মলিনতায় মিশে গিয়েছে। এই যে সে বারবার রাহাতের কাছে মুখে না বললেও ভাষাহীন প্রেমালিঙ্গণের খোঁজ করে, হৃদয়ে ঠাঁই পেতে চায়, বারবার ভালোবাসায় ডুবে যেতে চায়, এটাই কি তার অপরাধ? ভালোবাসা কি এতই তুচ্ছ, এতই অবহেলার যোগ্য? মিষ্টি তো বেশি কিছু চায়নি। শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছে, এটা কি অতিরিক্ত চাওয়া ছিল? রাহাত কেন এমন করল? মিষ্টির মনের ভাষা সম্পের্ক অবগত হয়েও কেন চুপ থাকে? শুরু থেকে পাত্তা না দিলেও ভার্সিটিতে মুচকি হেসে স্বাভাবিক আচরণ কেন করেছিল? এতে যে মিষ্টি আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার উপর আরো গভীর ভাবে ডুবে গিয়েছে সেই খবর কি রাখে শয়তান ছেলেটা? কেন বুঝেও বোঝে না? কেন অনুভব করেও অনুভূতিহীন হয়ে থাকে? একবার কি মিষ্টির চোখের ভাষা পড়তে পারে না? একবার কি বোঝার ক্ষমতা রাখে না, মিষ্টি কতটা ভেঙে পড়বে তার ওই কাটকাট বাক্যবহরে?
সময় যায় তার নিজস্ব গতিতে। সেই সাথে চোখের পাতা ভারী হয় নাজুক মেয়েটির। ঘুম আসবে না রাতে, তা হারাম করেছে এক কঠিন মনের মানুষ। অন্তরের প্রতিটি ভাঁজে জমে থাকা অব্যক্ত ব্যথা তীব্র হতে থাকে। মিষ্টি কি দেখতে খারাপ? কিসের কমতি রয়েছে ওর মধ্যে? শুধু গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। রাহাত অনন্তকাল এমনই থেকে যাবে? কখনো ওই বলিষ্ঠ বুকে জায়গা দিবে না মিষ্টি’কে? মিষ্টি কি বেহায়ার মতো আবারও তার পিছু পিছু ঘুরবে? অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকবে? ভালোবেসে পাগলামি করা, বেহায়াপনা করলে কি অন্যায় হবে? এতদিন না হয় মিষ্টি বুঝতে পারেনি রাহাত আজও তার চোখের মধ্যে ফুটে থাকা একরাশ ভালোবাসা বুঝেছে কি না! কিন্তু ভার্সিটিতে যা যা উপদেশ দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট সে মিষ্টির ভাষাহীন অনুভূতি জানে। তাই তো সহজেই কথাগুলো আওড়াতে পেরেছিল। কিন্তু হঠাৎ ওসব কেন বলল? বুঝতে যখন পেরেছে এতদিন কেন সাবধান করেনি? মিষ্টি কি একতরফা ভালোবাসলো? অচিরেই চুরমার হয়ে যাচ্ছে বক্ষঃস্থল। বক্ষপটের হাহাকারের প্রতিধ্বনি যেন আত্মার গভীর ক্ষতকে জাগ্রত করছে। এ এক নিঃশব্দ আর্তনাদ, যার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পায় না। মিষ্টি নিষ্ফল ব্যথা বুকে নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকল আকাশ পানে।
আকস্মিক গাড়ি থেমে যেতেই অরু ভ্রু কুঁচকে ফেলল। গলা উঁচু করে বাইরে নজর বুলিয়ে দেখল। বাড়ি দেখা যাচ্ছে না। রিকশা চালককে বিনম্র সহিত শুধায়,
” গাড়ি থামিয়েছেন কেন? ”
” একটু অপেক্ষা করেন, দেখতাছি৷ ”
রিকশা চালক গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন। গাড়ির একটা চাকা চুপসে আছে। হয়তো টায়ার ফেটেছে। অরুর দিকে তাকিয়ে থমথমে মুখে বললেন,
” আমি আর যাইবার পারুম না। একখান টায়ার পাঙ্চার হইয়া গেছে। ঠিক না কইরা পৌঁছে দিবার পারুম না। আপনি নাইম্মা যান। আমি অন্য গাড়ি ডাইক্কা আনতাছি। ”
অরু গাড়ি থেকে নামল। রিকশা চালক যেতে নিতেই পিছু ডাকে,
” চাচা লাগবে না। বেশি দূর নেই৷ বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছি। এতটুকু রাস্তা হেঁটে যেতে পারবো। ”
রিকশা চালক সরল গলায় বলে উঠলেন,
” কি কন আম্মা? তাইলে কি আপনি আমারে পুরা টাকা দিবেন? ”
অরু মুচকি হাসে। ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিল। পাঁচশ টাকার নোট দেখে রিকশা চালক মুখ কালো করে জানালেন,
” ভাঙতি নাই গো আম্মা। ”
” লাগবে না। আপনি রেখে দিন। ”
বলেই হাঁটা শুরু করল। অরু একা হাঁটছিল ফাঁকা রাস্তায়। ভীড় ভাট্টা পেরিয়ে গলির মোড়ে আসতেই চারপাশ নিস্তব্ধ। জনমানবশূন্য এদিকটায়। শুধু জুতার নিচে খসখস শব্দ তুলে শুকনো পাতা ভেঙে যাচ্ছে। অরু আপন ছন্দে পা চালাচ্ছে। আচমকা পেছন থেকে ভারী বুটের শব্দ ভেসে আসে। অরু চমকে তৎক্ষনাৎ পেছন ফিরল। সামনে ছায়ার মতো উদ্ভট কয়েকজন পথ রোধ করে দাঁড়ায়। দেখতে বখাটে ছেলেদের মতো লাগছে। গায়ের পোশাক, চুলের স্টাইল, দাঁড়ির কাটিং সবটা উগ্রবাদী মানুষের ন্যায়। চোখের অসভ্য চাহনি, ঠোঁটে ক্রুর হাসি, মুখমন্ডল জুড়ে লেপ্টে রয়েছে পৈশাচিক ভাব। হাতে রিভলবার, মাঝারি সাইজের ছুরি একেক জনের হাতে। কেমন নোংরা আর অদ্ভুত ভাবে দেখে চলেছে অরু’কে। এদের হাবভাবে সুবিধাজনক লাগছে না।
অরু পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। তক্ষুনি খসখসে গলায় একজন বলে,
” এত তাড়া কিসের সুন্দরী? ”
তারা পুনরায় অরু’কে ঘিরে ধরল। অরু কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখল, কাকপক্ষীর নজর মেলা ভার! ভয়ে গাত্র গুটিয়ে এলো মেয়েটির। ভীতিগ্রস্ত মুখবিবর তটস্থ অরু আড়াল করার চেষ্টা করে। যথাসাধ্য রাগান্বিত চোখে চেয়ে কর্কশ গলায় বলল,
” পথ আটকেছেন কেন? এটা কোন ধরনের অসভ্যতামী? ”
একজন বিশ্রীভাবে হেসে এগিয়ে এলো অরুর আরও কাছাকাছি। কেঁপে উঠে অরুর সত্তা। কাঁধ হতে ব্যাগটা বুকে চেপে ধরল। ছেলেটি কপাল গোছায়। লালসার স্বরে বলে ওঠে,
” প্রেম প্রেম লোকাছুপি খেলতে চাই। নজরকাড়া সৌন্দর্য এরিয়ে যাই কিভাবে? ফিগার তো মাথা নষ্ট করার মতো। ”
অরু দাঁতে দাঁত পিষলো। গা ঘিনঘিন করছে। সপাটে থাপ্পড় মেরে দেয় ছেলেটার গাল বরাবর। ক্ষুব্ধ দৃষ্টি তাক করে গর্জে উঠলো,
” নিজের ভালো চাইলে এক্ষুনি বিদায় হন। ”
ধৈর্য্য হারিয়ে একজন ছেলে মন্থর বেগে মাথা নাড়ল,
” শালীর তেজ কি! কথা না বাড়িয়ে এর তেজ কমিয়ে দে। ”
বলার সঙ্গে সঙ্গে একজন আচমকা ছুরি দিয়ে আঘাত করতে এগিয়ে এলে অরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠল! রক্তকণিকা হিম হয়ে গেল। নিঃশ্বাস গলায় আটকে আসে। পিলে চমকে উঠে। ছোট কদমে পিছিয়ে যেতে চাইল। সক্ষম হতে পারলো না। পায়ের নিচের মাটি যেন অরুর পা দুটো ধরে রেখেছে। দৌড়ে চলে যাওয়ার উপায় নেই। ছেলেগুলো গোল হয়ে বেষ্টনী করে রেখেছে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে অরুর! কি করবে? কোন দিকে যাবে? এরা কারা? কেন এমন করছে? অরুর কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভীতসন্ত্রস্ত হৃদয় থেমে যাচ্ছে। মনে হতে লাগলো চারপাশে এক অদৃশ্য শীতল বাতাস ঘুরে বেড়াচ্ছে, যার প্রতিটি ঝাপটা যেন অরুর অস্থির চেতনায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বুকের ভেতর এক অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা ভর করেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তার বাঁকের প্রতিটি কোণে একটি অস্পষ্ট ভয়ের উপস্থিতি তাকে ঘিরে ধরেছে, আর সেই অদৃশ্য জড়ানো ভয় একে একে অস্তিত্বের শূন্যতা খুঁজে পেতে বাধ্য করছে। মস্তিষ্কের ভেতর অস্বাভাবিক চাপ, যেন কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে চলেছে। শরীরের প্রতিটি রক্তনালীতে আতঙ্কের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকল, এবং সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এক অদৃশ্য শকের মাধ্যমে অবশ হয়ে যাচ্ছে।
অরু ঢোক গিলে। কুঁকড়ে আসে। পিপাসায় কাতর কন্ঠনালী অবরুদ্ধ। কোনোরকম উত্তর দেয়,
” কারা আপনারা? কি চাই? ”
জাবাব দিল না তারা। একদম নিরুদ্বেগ। চোখেমুখে নেড়ি কুকুরের ন্যায় লোভাতুর কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভের প্রবল স্রোত। কুটিল হিংসাত্মক তৎপরতা দেখাতে হামলা চালায় অরুর উপর। অরু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। ছুরি দ্বারা নরম বাহু বিদীর্ণ করার আগেই ফেরেশতার মতো কেউ এসে সেই মুহূর্তে উপস্থিত হয়। তুড়ি বাজিয়ে বখাটে ছেলেদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ছেলেগুলো শব্দের উৎসের সন্ধানের নাগাল পেতে বিকৃত দৃষ্টি তাক করল সেথায়। আগন্তুক শিনা টান টান করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পেন্টের পকেটে হাত গুঁজে আছে। একপাশে গ্রীবা বাঁকানো। ঘাড় কাত করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করল ছেলেদের পানে। ছেলেগুলো তাকে দেখে জড়োসড়ো হয়ে গেল। জিহ্বার লালা দ্বারা কন্ঠনালী ভেজায়। অরুর থেকে দুরত্ব বজায় রাখল। একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। তক্ষুনি শুনতে পেলো পুরুষালী মোটা গমগমে স্বর,
” আউট। ”
বলতে বাকি বিধিবাম ছুটতে দেরি হলো না। তৎক্ষনাৎ বড়ো বড়ো ব্যস্ত কদমে চলে গেল তারা। চওড়া কন্ঠ শুনে আতঙ্কিত অরু ফট করে অক্ষিপট খুলল। অপরিচিত মুখাবয়ব দেখে পিটপিট করে তাকাল। আগন্তুক একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। অরু ললাটে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে আশেপাশে নজর বোলালো। বখাটে ছেলেদের না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। উচাটন শরীর আহত হওয়ার কথা চিন্তা করে থরথর করে কাঁপছিল। এখন তা প্রশমিত। জোরে জোরে গভীর ভাবে শ্বাস নিলো, যেন বুকে জমে থাকা এক চাপা দুঃস্বপ্ন মুহূর্তেই গলে গিয়ে ফুসফুসে অক্সিজেন ফিরিয়ে দিল। হৃৎপিণ্ডের পাগলাটে দৌড় আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। তীব্র আতঙ্কে সংকুচিত শিরাগুলো ঢিলেঢালা হয়ে শান্তির স্রোতে ভাসতে শুরু করেছে। শরীরের প্রতিটি কোষে জমে থাকা তীব্র শীতল ভয় গলে গিয়ে উষ্ণ রক্তের প্রবাহে মিশে যাচ্ছে। এতক্ষণ যে হাত-পা বরফের মতো অসাড় হয়ে ছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরে পাচ্ছে। বুকের গভীরে এক অজানা শূন্যতা আশ্বাসের ছোঁয়ায় ভরে উঠল। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপহার মনে হচ্ছে, নিঃশ্বাস নেওয়ার এই স্বাধীনতা।
নিজেকে সামলে অরু অবুজ চাউনিতে দেখল একপল সম্মুখের মানুষটিকে। অতঃপর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না। আপনি কি আমায় চিনেন? ”
আগন্তুক কিছুটা বিরক্ত হলো। তবে প্রকাশ করল না। চিবুক চুলকায় আলতো করে। কন্ঠ খাদে এনে রুষ্ট গলায় জানায়,
” চেনা-জানা পরে। আমি যে আপনার এত বড়ো উপকার করলাম, বিনিময়ে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ জানাতে পারতেন। নাকি ধন্যবাদ দিতে টাকা লাগে? ”
অরু কাজল টানা হরিণী নেত্র বড়ো বড়ো করে তাকায়। পল্লব নড়াচড়া করছে তার। আড়ালে সহসা জিভ কাটল। অস্বস্তি মাখা কন্ঠে জবাব দেয়,
” থ্যাংকস। ”
আগন্তুক শব্দ করে হাসল। অরুর ফ্যালফ্যাল নিস্প্রভ দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাল। বলল সবেগে,
” উপকার করে চেয়ে ধন্যবাদ নিতে লজ্জা লাগলো আমার। ”
অরু গোমড়া মুখ বানিয়ে রাখল। কুন্ঠায় বিমূর্ত। চাপা স্বরে বলে,
” অ্যাকচুয়ালি, আই ওয়াজ টেকেন অ্যাব্যাক। ”
” আই সী। বাই দ্য ওয়ে, আ’ম মৃণাল। হ্যাভেন স্যারের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। ”
বলেই হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। অরু বিব্রতবোধ করল। হাত বাড়াল না। জোরপূর্বক হেসে সাবলীল স্বীকারোক্তি জানায়,
” নেভার মাইন্ড। ”
মৃণাল অপমানিত ফিল করে। বাড়ানো হাত গুটিয়ে নিলো। ইতস্তত হয়ে থমথমে মুখে উচ্চারণ করলো,
” ইটস ওকে। ”
সন্ধ্যায় হ্যাভেন বাড়িতে ফিরল। অরু ড্রয়িংরুমে বসে টুটুলের সঙ্গে মিনি সাইজের বল দিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলছে। হ্যাভেন’কে দেখে খেলা থামিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইল। হ্যাভেন অরুর দিকে তাকাল না। টুটুল’কে আদর করে বেডরুমে চলে যায়। সে চলে যাওয়ার পরপর টুটুল’কে একা খেলতে বলে, অরুও রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
হ্যাভেন রুমে এসে ফ্রেশ হতে যাবে সেই মুহূর্তে নজর পড়ল, বিছানার উপর ওর প্রয়োজনীয় জামাকাপড় রাখা। টিশার্ট আর ট্রাউজার সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ললাটে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে সরু নেত্রে তাকিয়ে থাকল। অরু পাশে এসে দাঁড়াতেই ভ্রু নাচাল,
” এগুলো? ”
অরু চমৎকার হাসল। চনমনে কন্ঠে জানালো,
” আমি রেখেছি। ”
হ্যাভেন বিস্ফোরিত নিগূঢ় দৃষ্টিপাত করল। অবিশ্বাস্য সুরে প্রশ্ন করে,
” এত পরিবর্তন? ”
অরু মেকি হাসে। অকপটে বলে,
” আমি আপনার বউ। একটা দায়িত্ব আছে না? ”
হ্যাভেনের সন্দেহী তীর্যক চাহনি। অরু ভড়কে গেল কিছুটা। হ্যাভেনের ধ্রুব স্বর,
” গ্রেট। ”
কথাটা শেষ করে ওয়াশরুমের অভিমুখে পা বাড়াল হ্যাভেন। তক্ষুনি পিছু ডাকল রমণী। নির্লিপ্ত বদনে চাইল হ্যাভেন। মেয়েটা তরতরিয়ে এগিয়ে এসে নরম স্বরে শুধায়,
” আজকে অফিস টাইম নিশ্চয়ই খুব ভালো কেটেছে? ”
হ্যাভেন চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
” খারাপ কাটার কথা ছিল বুঝি? ”
অরু হুড়মুড়িয়ে বলে,
” সেটা কখন বললাম? ”
নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। এই ধানিলংকা রাতারাতি বদলে গেল কি করে? কাঁধে তোয়ালে ঝুলিয়ে হ্যাভেন এসব চিন্তায় বিভোর হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।
অরু বিছানায় বসে ঠ্যাং ঝুলাচ্ছে। অধর জুড়ে শয়তানি হাসি৷ ঘন পল্লব নয়ন জোড়াতে বদমায়েশের আনাগোনা।
হ্যাভেন ফ্রেশ হয়ে গায়ে পোশাক জড়ালো। স্কিন কেয়ার প্রসাধনী গায়ে মাখতে ব্যস্ত। মিনিট পাঁচেক পর শরীরে চুলকানি শুরু হয়। প্রথমে অল্পস্বল্প, আস্তে আস্তে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। হ্যাভেন ইচ্ছে মতো চামড়া সমান কাটা নখ দিয়ে শরীর চুলকাচ্ছে আরামের অভিলাষে। চুলকানোর দরুন এখন চামড়ায় জ্বলন অনুভব হচ্ছে। একপর্যায়ে অসহনীয় অস্বস্তি চুলকানির তোপে এক টানে গা হতে টিশার্ট খুলে ফেলল। অরুর ঘর কাঁপিয়ে খিলখিল হাসির আওয়াজে সেদিকে চাইল। সে পেট চেপে প্রাণবন্ত উৎসবমুখর হাসছে, যেন কোনো বড়সড় যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।
পাগলের মতো শরীর চুলকাচ্ছে হ্যাভেন। বিদীর্ণ চামড়ায় মরিচের গুঁড়ো দিলে যেমন লাগে, তেমন লাগছে। তীক্ষ্ণ চাহনিতে গমগমে শব্দ তুলল,
” হোয়াটস দিস অল অ্যাবাউট? ”
অরু কোনোরকমে হাসি আটকে বলে,
” বিলাই চিমটির গুণ। ”
” হোয়াট ইজ দিস? ”
অরু উত্তর দিল না। শুধু চকচকে দন্তপাটি বের করে হাসছে। হ্যাভেনের অবস্থা অবলোকন করে বেশ মজা পাচ্ছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে বজ্জাত ছেলের। সবসময় অরু’কে উত্যক্ত করে, এখন বুঝুক কেমন লাগে!
বাড়ি ফেরার পথে ফুটপাতে এক লোককে হাবিজাবি বিক্রি করতে দেখে, অরু তার নিকট এগিয়ে যায়। বিলাই চিমটির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান আছে। তখন সেই লোকের থেকে বিলাই চিমটি নিয়ে এসেছিল।
হ্যাভেন তুরন্ত ওয়াশরুমে গিয়ে শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালল। পানির ফোঁটা সুচের ন্যায় বিঁধছে। দীর্ঘক্ষণ ফের গোসল করে বেরিয়ে আসে। দৌড়ঝাপ করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। বাইরে থেকেও ক্লান্ত হয়েই ফিরে ছিল। এনার্জি প্রচুর লস হয়েছে। দপ করে বিছানায় বসলো। শান্ত কন্ঠে জানতে চাইল,
” ইচ্ছে করে করেছো? ”
অরু নাক ছিটকায়। ভেজা তোয়ালে বিছানায় ফেলে রেখেছে। ও গিয়ে বেলকনিতে দড়ির মধ্যে মেলে দিয়ে আসে। চটপটে দায়সারা ভঙ্গিতে প্রত্যুত্তর করে,
” ইয়েস। ”
” হোয়াই? ”
” যা করেছি বেশ করেছি। এটা আপনার প্রাপ্য। আমাকে মিথ্যা কেন বলেন, বউ ছাড়া পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট নন? ডেফিনিটলী আকৃষ্ট। প্রথম বউয়ের জন্য এতটা উতলা ভালো কথা, কিন্তু বাইরের মেয়ে নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করেন কেন? ”
হ্যাভেন হতভম্ব হয়ে গেল। অবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইল। পরপর সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
” এসব কি বলছো? মাথার নাট বল্টু ছিঁড়ে গিয়েছে? ”
অরু তেতে উঠল। তেড়ে এলো হ্যাভেনের কাছাকাছি। বিদ্রুপ সরূপ বলে,
” একদম ঠিক বলেছি। একটা সাদা বিড়াল শাঁকচুন্নির সঙ্গে আজ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে দেখেছি আমি। ”
ভ্যাবলা কান্তের ন্যায় তাকাল হ্যাভেন।
” জাজলিনের কথা বলছো? ”
অরুর কটাক্ষ জবাব,
” মেয়েটার নাম জাজলিন? বাহ! একবার বলতেই চিনে ফেললেন? ”
হ্যাভেন ফোঁস করে তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। পরমুহূর্তে রহস্যময় ক্রুর হাসল। হাত ধরে অরু’কে টেনে পাশে বসায়। কানের পিঠে নাকমুখ ঘষে ব্যগ্র গলায় বলল,
” পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। ”
অরু ভ্রু কুঞ্চিত করল। ছিটকে কিছুটা দুরত্ব বাড়ায়। লম্বা শ্বাস টেনে নাসারন্ধ্রে পোড়া গন্ধ শুঁকতে চাওয়ার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করে। সক্ষম হয় না।
” কোথায় পোড়া গন্ধ? আমি পাচ্ছি না কেন? ”
হ্যাভেন ফিচেল হাসে। অরুর বিহ্বলিত নয়নে চেয়ে একই সুরে বলল,
” এই গন্ধ সেই গন্ধ না। এটা হলো হৃদয় পোড়ার গন্ধ। ”
অরুর টনক নড়ল। হ্যাভেন ইনিয়েবিনিয়ে ওকে ব্যঙ্গাত্মক করছে বুঝতে পারলো। সহসা গর্জে উঠে কটমটিয়ে চোয়াল শক্ত করে। মুখশ্রী কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে তেজ দেখায়,
” আমি এখানে থাকব না। করবো না আপনার সংসার। আব্বুর কাছেও ফিরব না। সবাইকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। ডি….”
হ্যাভেন ধমকে উঠল তৎক্ষনাৎ,
” ডিভোর্সের কথা উচ্চারণ করলে কপালে শনি আছে। ”
অরু মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ক্রোধে ফুঁসছে। হ্যাভেন বুঝলো, আজ আবহাওয়া প্রতিকূল। মানুষের তিরিক্ষি মেজাজ, মনমানসিকতা সর্বদা একরকম থাকে না। তাই ঘাটল না। মোলায়েম ভাবে বোঝানোর স্বরে বলে ওঠে,
” তুমি যা ভাবছো তা সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। জাজলিন আমার ক্লায়েন্ট। পাশাপাশি খুব ভালো বন্ধু। রাশিয়ায় পড়াশোনার খাতিরে আমাদের পরিচয় হয়। ”
” রেস্টুরেন্টে একাকিত্ব কোন কার্যক্রম ডিসকাস করছিলেন শুনি? ”
অরুর গমগমে ধারালো বাক্যবাণ। কতটা অধিকার সমেত প্রশ্নটা করল সে। হ্যাভেন পুলকিত হয়। অগোচরে মুচকি হেসে ভণিতা ছাড়া বলে,
” মিটিং অফিসে করেছি। অনেক মাস পর দেখা হলো। তাই ভাবলাম বাইরে লাঞ্চ করি, সাথে নেক্সট কাজ নিয়ে কথা বলা হবে। ”
অরু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। নিশ্চুপ রইল। হ্যাভেন বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে চোখ বুজলো। সন্ধ্যায় টুকটাক খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে ওর। তবে শরীর কেমন যেন লাগছে, সেজন্য শুয়ে পড়ল।
সময় গড়াল। আধা ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। অরু আগের মতো ঠায় বসে। হ্যাভেনের ভারিক্কি নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কি? অরু আলগোছে অল্প একটু কাঁথা সরিয়ে চাইল একপল। অমনি আঁতকে উঠল। তড়িঘড়ি করে কাঁথা কোমর পর্যন্ত নামিয়ে নিলো। হ্যাভেন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পড়নে শুধু ট্রাউজার। উন্মুক্ত ফর্সা পৃষ্ঠদেশ, ঘাড়, কাঁধ লাল হয়ে থোকা থোকা ক্ষুদ্রা রূপে ফুলে আছে। আম গাছে থাকা একধরনের ছেংগা নামক বিচ্ছু প্রাণী রয়েছে, যার পশম মানব শরীরের ত্বকে লাগলে চুলকায় এবং ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে, ঠিক সেরকম হয়ে রয়েছে।
অরু কাঁপা হাত হ্যাভেনের কাঁধে রাখল। মুহুর্তে ফট করে চোখ খুলল সে। চক্ষু জোড়া লাল হয়ে আছে। মুখমন্ডল জুড়ে কাতর রেখার সুক্ষ্ম চিহ্ন। অরু হকচকিয়ে যায়। হাত গুটিয়ে নেয়। এদিক ওদিক নজর বোলায়। হ্যাভেন দুর্বোধ্য হাসল। সটান হয়ে শোয়। অরু আড়চোখে চায়। বুক, গলায় একই অবস্থা। খারাপ লাগলো ওর। এরকম ঘটবে জানতো না। ভেবেছিল, জাস্ট চুলকাবে। হয়তো অ্যালকোহলিক পাউডার মিশ্রিত ছিল। অরু চোখ নামিয়ে নিলো। তক্ষুনি শুনতে পায় হ্যাভেনের প্রশ্ন। ফের চাইল সে।
হ্যাভেন উন্মুখ মোটা ভ্রু নাচিয়ে স্থূল গলায় শুধাল,
” খুশি হয়েছো? ”
হ্যাভেনের নির্লিপ্ততা কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করে উদগ্রীব হয়ে উঠল অরু। বিরস মুখে উত্তর দিল,
” আমার এরকম ইন-টেনশন ছিল না। ”
” হাতের নখ যদি বড়ো হয়, তাহলে নখ কাটতে হয়, হাতের আঙ্গুল নয়। ঠিক তেমনি, সম্পর্কের মাঝে যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, তাহলে ভুল ভাঙতে হয়, সম্পর্ক নয়। তাড়াহুড়ো করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মূর্খতারূপ। এতে হয় নিজের, নয়তো আপন কারোর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ”
অরু ভোঁতা মুখে মস্তক নিচু করে নিলো। হ্যাভেন ওর বাহু টেনে বুকের উপর ফেলল। অরু বিস্মিত হয়। অকস্মাৎ ঘটনায় চমকে উঠল। হুড়মুড়িয়ে উঠতে চাইলে বাঁধা প্রদান করল হ্যাভেন। গালের সাথে গাল মিশিয়ে শীতল গলায় জানালো,
” পাগল হয়ে যাচ্ছি, জান। ”
অরুর বুক ধুকপুক করছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি বিঁধছে পেলব মসৃণ গালে। ওর কোমর প্যাঁচিয়ে হ্যাভেন বালিশে শুইয়ে দিল। চোখের পলকে ঝুঁকে আধ শোয়া হলো। মেয়েটির অক্ষিপট বড়ো বড়ো হয় অমনি।
অরুর একটা হাত ধরে বুকের বাম পাশে চেপে ধরল হ্যাভেন। সে অবাক হয়ে তাকায়। অরুর নাকে সরু নাক ঘষলো।
নিরেট স্বরে আবদার করল হ্যাভেন,
” চুমু খাও। ”
জীর্ণ মেয়েটির গলা কাঁপে। শুষ্ক ঢোক গিলল নিমিষে।
” আ..মি…”
স্পষ্ট বাক্য কন্ঠনালী ভেদ করে বের হয় না। সবকিছু অগোছালো লাগছে। সম্মুখের মানুষটার তীক্ষ্ণ সুগভীর আঁখি যুগলে অন্যরকম মাদকতা মেশানো। উষ্ণ নিঃশ্বাস ঝলসে দিচ্ছে তাকে।
অরুর মৌনতা দেখে, হ্যাভেন একই ভঙ্গিতে ফের বলল,
” শুকনো মুখে চিঁড়া ভিজে? ”
অরু অসহায় মুখভঙ্গিতে তাকায়। ঈষৎ কম্পমান দেহশ্রী। বারকয়েক পলক ঝাপটায়। এলোমেলো দৃষ্টি ঘোরায়। হাত ছাড়াতে সচল থাকল। আমতা আমতা করে নিস্পৃহ গলায় প্রত্যুত্তর করল তৎক্ষনাৎ,
” আমি বুঝতে পারিনি এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। ”
হ্যাভেন ঘোর লাগা গলায় বলে,
” বাড়াবাড়ি যেহেতু হয়েই গিয়েছে, তখন আমিও একটু বাড়াবাড়ি করি। এখন আমি এমন কিছু করবো যার জন্য হয়তো তুমি প্রস্তুত নও। সরি বাট নো সরি। ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। সো দু সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করো। ”
বাক্যের যবানিকা টেনে হ্যাভেন মুখ এগোয় স্বীয় কার্য সমপূর্ণ করতে। অরুর হাঁসফাঁস লাগছে। ব্রীড়ায় ছ্বলাত ছ্বলাত শব্দ করছে। নেত্রদ্বয় খিঁচে বন্ধ করে আছে। সেভাবে থেকেই রুক্ষ ঠোঁটের গাঢ় স্পর্শ পেলো থুতনিতে। অরু নিভুনিভু চোখ মেলল। আপনা-আপনি হাত উঠে আসে থুতনিতে। চুমু পড়ল কিন্তু থুতনিতে? অরুর আশ্চর্য হয়! সচল মস্তিষ্ক ভেবেছিল হ্যাভেন ওষ্ঠ চুম্বন ঘটাবে কিন্তু না তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। অবাক হলো ভীষণ।
অরুর উন্মুক্ত সামনে আসা চুল কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে হ্যাভেন মোহনীয় হাস্কিস্বরে বলল,
” আমার কাছে আপেল বড্ড অপছন্দের একটি ফল, অথচ তোমার আপেলের মতো টোল পড়া সেই থুতনি আমার দুর্বলতার কারণ। ”
তারপর অরুর ঠোঁটে আলতো করে আঙুল স্পর্শ করল। ঈষৎ কেঁপে উঠে সে। হ্যাভেন পুনরায় আওড়াল নেশালো বাক্য,
” এটা তো আরো মারাত্মক। একবার ছুঁয়ে দিল দেহমন ক্ষণে ক্ষণে পাগলামি শুরু করে দিবে। এতটা পরিমাণে বেসামাল হতাম, যার উৎপীড়ন সামাল দিতে তুমি রীতিমতো হিমশিম খেতে। চাইলেও আমায় আটকানোর সাধ্যি ছিল না। তাই একে রেহাই দিলাম। তোমার বিশ্রী মার্কা ঠোঁট দেখলে পিপাসা পায় আমার। নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হয়। ভুল করে হলেও যদি একবার নজর দিয়ে ফেলি, তখন আমার প্রেম নামক নিউমোনিয়া তড়তড় করে বৃদ্ধি পাবে। যার ধকল তোমাকে সামলাতে হবে। আমি সেই নিগূঢ় সুখকর, দংশনময় সাগর এক্ষুনি তোমার উপর চাপাতে চাইছি না। আরও বেশ কিছু সময় দিলাম, আমার সাথে স্বাভাবিক হয়ে উঠো। ”
প্রেমপিপাসা পর্ব ২১
হ্যাভেন শ্বাস টেনে অরুর পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। অরু ছাড়া পেতেই বিছানায় হাঁটু ভেঙে গোল হয়ে বসলো। জোরে জোরে শ্বাস টানল। এতক্ষণে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। দু’হাতের করতল দ্বারা ঠোঁট চেপে ধরল। গোলক ধাঁধাঁর ন্যায় আটকে, একবার থুতনিতে তো একবার ঠোঁটে আঙুল বোলাচ্ছে।
হ্যাভেন জোড় ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলল। চক্ষুদ্বয় সংকুচিত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” ঠোঁট ঢেকেছো কেন? হাত সরাও। চুমু খাওয়ার হলে তখনই খেতাম। হ্যাভেন রং টাইমে রোমান্স করে না। ”