বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ১৪

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ১৪
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

প্রচন্ড বেগে গাড়ি ড্রাইভ করছে রায়হান। সে ছুটে চলেছে তিতিরের ফ্ল্যাটের দিকে।
একহাতে ফোন কানে কাউকে চিৎকার করে বলছে, ঢাকার মধ্যেই আছে ওরা প্রত্যেকটা অলিগলি তন্নতন্ন করে খোঁজ। সকালের মধ্যে আহান আর পাখিকে আমি আমার আস্তানায় দেখতে চাই। খোঁজে বের করতে না পারলে তোদের একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবো না আমি।

ফোন রেখে দিলো রায়হান। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছে তার। মৌকে পাওয়ার আনন্দে এতোই মত্ত ছিলো যে আহান, পাখি কিংবা তিতির কারো উপরেই আগের মতো নজর রাখেনি। নিজের উপর রাগ হচ্ছে রায়হানের। এতোটা কেয়ারলেস সে কীভাবে হতে পারলো ? ওরা যদি একবার তিতিরের কাছে পৌঁছে যায় তাহলে সব খেলা শেষ হয়ে যাবে। তার এতদিনের সাজানো প্ল্যান সব নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা সে কিছুতেই হতে দিবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মৌকে পাওয়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তাকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট সহ্য করতে পারবে না রায়হান। ঝড়ের বেগে তিতিরের ফ্ল্যাটের সামনে এলো। কিন্তু ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। তলা ঝুলছে দরজায়, কিন্তু রায়হান ভালো করেই খোঁজ নিয়েছে তিতির আজ এখানে এসেছে আর তাজের বাড়িতে লাগানো ক্যামেরা বলে দিচ্ছে তিতির সেখানে ফিরে যায়নি। রায়হান দু-হাতে নিজের চুল খামচে ধরে চিৎকার করে উঠলো।

আহান তুই আমার নিজের ভাই হয়ে এতবড় ক্ষতি করে দিলি। আমারই ভুল হয়েছে, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুতুলের জন্য তুই নিজের ভাইকে খু*ন করতেও দু’বার ভাববি না। সে জন্য তিতির আর পাখির পরিচয় গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু তুই সব জানলি কী করে ? আমারই ভাই তো তাই মাথার ব্রেনও আমার মতোই। কিন্তু ভাই, তুই যদি চলিস ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই তুই থাকিস আমি খোঁজে বের করবো। আর তিতির আমার কথার অবাধ্য হওয়ার চরম মূল্য দিতে হবে তোকে। শুধু একবার হাতের নাগালে পাই।
রায়হান তিতিরের ফ্ল্যাটের বন্ধ দরজায় লাথি দিয়ে বের হয়ে গেলো। যে করেই হোক এই তিনজনকে খোঁজে বের করতে হবে তাকে। একবার মৌ বা তাজের কাছে পৌঁছে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। সিকিউরিটি রুমে গেলো ফুটেজ দেখতে, যে গাড়িতে গেছে তার নাম্বার পাওয়া যায় কিনা।

আমরা কোথায় যাচ্ছি আহান ?
আপাতত ঢাকার বাইরে চলে এসেছি। ভাইয়ার সম্পর্কে যতটা জেনেছি সারাদেশে তার লোক আছে। তবে ঢাকায় তার পাওয়ার বেশি। এখন বড় কোনো শহরে যাওয়া যাবে না। সেখানে ধরা পরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুরোপুরি গ্রামেও যাওয়া যাবে না, সেখানে আমরা সবার নজরে পড়বো সহজে আর ভাইয়ার লোক থাকলে বিপদ হয়ে যাবে। ছোটখাটো কোনো শহরে গা ঢাকা দিতে হবে।
তিতির আহানের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো, আহু তুই আর রায়হান চৌধুরী এক মায়ের পেটের ভাই তো ?
আহান জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো, এ কথা কেনো বলছিস তুই ?
তিতির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, যেখানে রায়হান চৌধুরী নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য এতটা নিচে নেমে গেছে। নিজের বোনদের ব্যবহার করতেও তার বিবেকে বাঁধেনি। সেখানে তুই তারই ভাই হয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে আমাদের সাহায্য করছিস।

আহান তিতিরের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো, তুই যদি একবার বুঝতে পারতি আমার জীবনে তোর জায়গাটা কোথায়। রায়হান চৌধুরীর সাথে এই একটা জায়গায় আমার মিল আছে রে তুতুল, ভালোবাসা। তবে আমার ভালোবাসার ধরণটা তার থেকে আলাদা। সে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য এতো নিচে নেমেছে আর আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখতে সব করতে পারবো। সে আমার কাছে ভালো থাক বা অন্যকারো কাছে।
কথাগুলো মুখে বলা হলো না আহানের। সামনে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো। তিতির নিজের ব্যাগ থেকে আবার ফোনটা বের করলো।
অন করার আগেই আহান বললো, কী করছিস ?
তিতির মলিন হাসলো, রায়হান চৌধুরীর কথায় দুটো জীবন এলোমেলো করে দিয়েছি রে আহু। সেগুলো আমাকেই ঠিক করতে হবে। নাহলে সারাজীবন সেই পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।

আহান ব্যস্ত গলায় বললো, তোর ফোন অন করলে ভাইয়া লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জেনে যাবে আমরা কোথায় আছি।
তিতির চিন্তিত হয়ে পড়লো, কিন্তু কাজটা করা যে খুব বেশি জরুরি।
আহান একটু চিন্তা করে বললো, আমার ফোনটা দিয়ে করতে পারবি ?
তোর ফোন অন করলে বুঝবে না ?
নাহ্ এটা সম্পূর্ণ নতুন ফোন। ঢাকায় এসে প্রথমেই একটা ফোন কিনেছি।
আহানের ফোনটা নিলো তিতির। নিজের ফোনের এসডি কার্ড খুলে আহানের ফোনে লাগিয়ে নিলো। নিজের ফোনটা জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলো।
আহান এসডি কার্ড উদ্দেশ্য করে বললো, এটা দিয়ে কী কাজ ?
এটাতে রায়হান চৌধুরীর সব পাপের প্রমাণ আছে। এগুলো স্যারের কাছে পৌঁছে দিলেই হয়ে যাবে।

আহান কৌতূহল নিয়ে বলে, স্যার কে ? আমার কাছে এখনো সবটা পরিষ্কার না তুতুল। ভাইয়া পাখিকে কিডন্যাপ কেনো করেছিলো আর কীভাবে করেছিলো ? আর গাড়িতে উঠে কী সব বলে একটা ভিডিও বানালি তাও বুঝলাম না।
আহানের কথা শুনে তার দিকে তাকালো তিতির, অনেক কিছুই তুই জানিস না আহু। সব এখনই তোকে বলা সম্ভব নয়। এখন যেটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি।
তিতির পাখির কিডন্যাপ হওয়া থেকে শুরু করে, রায়হানের হুমকি, তিতিরের তাজকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করা, সব একে একে খুলে বললো আহানকে। তিতিরের বিয়ের কথা শুনে মাথা শূন্য শূন্য লাগছে আহানের। তার তুতুল অন্যকারো হয়ে গেছে এটা মানতে পারছে না।

তিতির বললো, এবার সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে স্যারকে নির্দোষ প্রমাণ করে নিজেকে কিছুটা পাপ মুক্ত করতে চাই।
তিতির আহানের ফোনের সাহায্যে তাজের কাছে সব প্রমাণ পাঠিয়ে দিলো। তিতিরের ফোনে কল রেকর্ডের অপশন অন করে রাখা ছিলো আগে থেকেই। সেখানে রায়হানের সমস্ত কথা রেকর্ড হয়েছে। সে কীভাবে তিতিরকে বাধ্য করেছে তাজের নামে মিথ্যা বলতে সব আছে। তিতির একটা ভিডিওতে নিজে সবটা স্বীকার করেছে সেটাও পাঠালো। তিতির সমস্ত প্রমাণ তাজ আর মৌ দুজনের ফোনেই পাঠিয়ে দিলো।

আহান নিজেকে সামলে বললো, ফোনটা দে আমি পুলিশের কাছে সব পাঠাচ্ছি। আমার বন্ধুর বাবা পুলিশ কমিশনার। সেই বন্ধুর সাহায্যে তোকে খোঁজে বের করেছি। ওর কাছে পাঠালে ওর বাবা একশন নিতে পারবে।
আহান ফোনটা নিয়ে সব প্রমাণ পাঠিয়ে দিলো ওর বন্ধুর কাছে। সকালের মধ্যে রায়হানের কাছে পুলিশ পৌঁছে যাবে।
মিস্টার খানকে ভালোবাসিস তাই না রে তুতুল ?
আহানের কন্ঠটা কেমন অসহায় শোনালো। তিতির আহানের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো, স্যার আমার জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত একটা অধ্যায় আর আমিও তার জীবনে। সে অন্যকারো ছিলো আর অন্যকারোই থাকবে।
আর তুই ?

তিতির তাকালো আহানের দিকে। বুঝার চেষ্টা করলো তার কথার মানে। আহান চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো। তুতুলের চোখে চোখ রাখার সাহস হচ্ছে না আহানের। যদি সে চোখে অন্যকারো জন্য ভালোবাসা দেখে, তবে সেটা সহ্য করতে পারবে না। তিতির কিছু না বলে পেছনে তাকিয়ে পাখিকে দেখে নিলো। সে পিছনের সীটে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বোনু তোকে অনেক জ্বালিয়েছে না রে ?
আহান মুচকি হেসে বললো, ছোটবেলায় তুই যেমন দুষ্টু ছিলি পুতুল তেমন হয়েছে।
তিতির প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো আহানের দিকে, পুতুল ?
তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস, আমি বলেছিলাম ওকে আমি পুতুল বলেই ডাকবো। তবে দেখতেও কিন্তু পুতুলের মতোই হয়েছে রে মাশাআল্লাহ। থাক এসব বাদ দে, তুই একটু ঘুমিয়ে নে, নাহলে শরীর খারাপ করবে।

শরীরের কথা শুনতেই তিতিরের মুখ কালো হয়ে গেলো। মনে পরে গেলো নিজের ভেতরে বেড়ে উঠা আরেকটা অস্তিত্বের কথা। তিতির ফট করে তাকালো আহানের দিকে। আহানকে তিতির বিশ্বাস করে নিজেকে যতটা বিশ্বাস করা যায় ঠিক ততটা। যদিও সময়ের সাথে মানুষ বদলে যায়, তবে গত কয়েক ঘণ্টায় তিতির যতটুকু বুঝেছে আহান ঠিক আগের মতোই আছে।
তিতির নিজের পেটে হাত রেখে বললো, আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বোনুটাকে একটু দেখে রাখতে পারবি আহু ?
তড়িৎ গতিতে ব্রেক কষলো আহান। সীট বেলের জন্য বেঁচে গেছে তিনজনই। পাখি ঘুমের মধ্যে সামনে হেলে পড়েছে।
তিতির পেছন ফিরে পাখির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত গলায় বললো, পাগল হলি এভাবে কেউ ব্রেক করে ?
আহান তাকালো তিতিরের দিকে, এখনই কী বললি তুই ?
বললাম এভাবে কেউ ব্রেক করে ?
এটা নয়, তার আগে কী বললি ?

পাখিকে হাত বাড়িয়ে সোজা করার চেষ্টা করছিলো তিতির। এবার তিতির তাকালো আহানের দিকে অসহায় দৃষ্টি তার, বলেছি আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বোনুকে একটু দেখে রাখবি ? এই পৃথিবীতে তোকে ছাড়া বিশ্বাস করার মতো আমার আর কোন জায়গা নেই আহু। দেখ বেশি কিছু করতে হবে না, তিনবেলা একটু খাবার আর পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষদের হাত থেকে রক্ষা করবি, এটুকুই।
আহান সীট বেল খুলে এগিয়ে এলো তিতিরের দিকে। তিতিরের দুগালে নিজের হাত রেখে অসহায় গলায় বললো, এসব কেনো বলছিস তুতুল ? তোর কেনো কিছু হতে যাবে ?
তিতির আহানের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিলো, জীবনটা অদ্ভুত রে আহু। কখন কোন দিকে মোড় নেয় বলা মুসকিল। এই দেখ না সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় আজকে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার জন্যও আমিও প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু তাতে কিছু আঁটকে থেকেছে কী, যা হওয়ার ঠিক হয়েছে।

অশান্ত হয়ে উঠলো আহান, না এভাবে কথা ঘুরাবি না তুই। কিছু তো একটা হয়েছে, আমাকে বল কী হয়েছে তোর ? নাহলে আমি এখনই হসপিটালে নিয়ে যাবো, তোকে দেখতেও অনেক অসুস্থ মনে হচ্ছে। আমার কাছে লুকাতে পারবি না তিতির, এখনো ডাক্তার না হলেও ডাক্তারি পড়ছি আমি।
অবস্থা বেগতিক দেখে তিতির মুখ খুলতে বাধ্য হলো, আহু আমি প্রেগনেন্ট।
বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো যেনো আহানের মাথায়, হোয়াট ?

তিতির আর কিছু বলতে পারলো না। আহান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে প্রেগনেন্ট এটা বললেও ডক্টরের বাকি কথা সে কিছুতেই কাউকে জানতে দিবে না। তিতির ঠিক করে নিয়েছে এই বাচ্চাটা সে কিছুতেই মে*রে ফেলতে পারবে না। এতোটা নিষ্ঠুরতম কাজ তার দ্বারা সম্ভব নয় আর একটা অদৃশ্য মায়ায় জড়িয়ে গেছে এই বাচ্চার সাথে। সাথে সাথে তখন এটা উপলব্ধি করতে না পারলেও ধীরে ধীরে পেরেছে। সে পারবে না বাচ্চাটাকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে। আর এই বাচ্চাটাই তার জীবনে তাজের একমাত্র চিহ্ন। এদিকে আহান একের পর এক ঝটকা সামলে উঠতে পারছে না। নিজেকে অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে তার। আরো তো অনেককিছু জানা বাকি, সব সহ্য করবে কীভাবে ?

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজের ফোন হাতে নিলো তাজ। এতোগুলো নোটিফিকেশন দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নোটিফিকেশন অপেন করে দেখলো একটা অচেনা নাম্বার থেকে অনেকগুলো অডিও ভিডিও আরো কী সব ডকুমেন্টস আছে। ভিডিওটা প্লে করে দেখে হাতের টাওয়েল ফ্লোরে পড়ে গেলো তাজের। ভিডিওতে তিতির নিজের মুখে সব স্বীকার করছে, সে কেনো রায়হানের কথায় সব করতে রাজি হয়েছে। কীভাবে কীভাবে রায়হান প্ল্যান করে তাজের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে এবাড়িতে পাঠিয়েছে সব স্বীকার করছে তিতির।
ভিডিও শেষে তিতির বললো, স্যার নিদোর্ষ তার কোন ভুল নেই। দু’বছর আমি তার সাথে কাজ করেছি সে কখনো আমার দিকে বা*জে নজরেও তাকায়নি। তার জীবনটা এভাবে নষ্ট করার দ্বায় আমারও আছে, সেটা আমি অস্বীকার করছি না। তবে আমি পরিস্থিতির স্বীকার। ভালো থাকবেন স্যার, যেভাবে হুট করে আপনার জীবনে এসেছিলাম আবার সেভাবে হুট করেই চলে গেলাম। পারলে মাফ করবেন আমাকে।

তিতিরের ঠোঁটের কোণে ঝুলছে মলিন হাসি। শেষে ভেসে উঠলো তিতিরপাখি দুই বোনের হাসোজ্জল কিছু ছবি। কত হ্যাপি মনে হচ্ছে তাদের দেখে। তাজ পাখির বিষয়ে কিছুই জানতো না। তাজ একে একে সব প্রমাণ ভালো করে দেখে নিলো। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য এর থেকে বেশি আর কিছুরই প্রয়োজন হবে না তাজের। তাজ তাড়াতাড়ি কল দিলো তিতিরকে কিন্তু বন্ধ বলছে।
তাজ চিন্তিত গলায় বললো, এসব কে পাঠালো, তিতির ? তিতির পাঠালে নিজের নাম্বার থেকেই পাঠাতে পারতো। তবে কে পাঠালো আর তিতিরই ফোন ধরছে না কেনো ? তবে কী সত্যি চলে গেছে তিতির ?
তাজ কোনমতে চেঞ্জ করে ছুটলো তিতিরের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। কী হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার। এদিকে মৌ নিজের বেডে থম মেরে বসে আছে। সবগুলো প্রমাণ সে নিজেও দেখেছে। রায়হান এতোটা নিচে নেমে গেছে ভাবতে পারছে না সে। হঠাৎ করেই তিতিরের জন্য কষ্ট হচ্ছে মৌয়ের। শেষের ভিডিওটা আবার প্লে করলো মৌ। এটা মৌকে পাঠালেও তাজকে পাঠায়নি তিতির।

কেমন আছো মৌ আপু ? হয়তো ভালো নেই কারণ তোমার ভালো থাকার কারণ কেড়ে নিয়েছিলাম আমি। সব প্রমাণ দেখে এতক্ষণে হয়তো জেনেও গেছো আমি বাধ্য ছিলাম। আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে কী করতো আমার জানা নেই ? তুমি কী করতে আপু ? যদি তোমার বাবা-মার জীবন বাঁচাতে এমন কিছু করতে বলা হতো ? আপু আমার জীবনে আপন বলতে ঐ বোনটা ছাড়া আর কেউ নেই। খুব খুব বেশি ভালোবাসি বোনুটাকে। আপু আমার বোনুটা বুদ্ধি প্রতিবন্দী, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর কিছুই বুঝে না ও।
তিতির ক্যামেরা ঘুরিয়ে ঘুমন্ত পাখিকে একবার দেখালো। মৌয়ের নিজেরও মায়া হলো ঘুমন্ত মেয়েটার উপর, সেখানে তিতির তার বোন।

তিতির আবার ক্যামেরা নিজের দিকে করে বললো, থাক সেসব কথা। আজ থেকে তুমি ভালো থাকবে আপু, তোমার ভালো থাকার কারণ তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম। কখনো হয়তো দেখা হবে না আর, আমি চাইও না আমার বিষাক্ত ছায়া তোমাদের জীবনে আবার পড়ুক। স্যার সত্যি বলে আমি বিষাক্তফুল। ভালো থেকো আপু আর স্যারকেও অনেক ভালো রেখো। পারলে মাফ করে দিও এই খা*রা*প মেয়েটাকে, আল্লাহ হাফেজ।
মৌ বুঝতে পারলো তার চোখে নোনাজলের বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আজ তো তার খুশি হওয়ার কথা তবে এতটা কষ্ট কেনো হচ্ছে, কেনো তিতিরের মলিন মুখটা চোখে ভাসছে ? বাইরে চেঁচামিচির আওয়াজ শুনে মৌ দরজা খোলে ড্রয়িংরুমে এলো।
রায়হান উঁচু গলায় বলছে, বিয়েটা আজ আর এখনই হবে। পরে অনুষ্ঠান করা যাবে কিন্তু বিয়ে এখনই হবে।

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ১৩

(গল্পের শেষের পর্ব প্রথম পর্বের সাথেই অনেকটা লিখে রেখেছি তাই চেঞ্জ করতে পারবো না। চেঞ্জ করতে গেলে পুরো গল্প এলোমেলো হয়ে যাবে। গল্পের মুল চরিত্র, নায়িকা, খলনায়িকা যেটাই বলা হোক সেটা তিতির। তাকেই আমি বিষাক্তফুল হিসাবেই উপস্থাপন করেছি আর তার আসক্তিটা কে সেটাও বুঝে যাওয়ার কথা সবার। প্রথম পর্ব থেকেই সবাই গল্পের নামের উল্টো মানে বুঝেছে। তাই তিতিরকে খা*রা*প লাগাটাই স্বাভাবিক। গল্পের অনেকটা এখনো বাকি আশা করি ধৈর্য সহকারে পড়বেন সবাই। হ্যাপি রিডিং,,,আল্লাহ হাফেজ।)

বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব ১৫