গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ১৬

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ১৬
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী

ফারদিনের বুকে লেপ্টে আছে ফাইজা। হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। বাতাসে বার বার চুল উড়ে এসে মুখের উপর পড়ছে ফারদিন যত্ন সহকারে তা কানের পিছে গুঁজে দিচ্ছে। ওর চোখে মুখে বিরক্তি রেশ মাত্র নেই। ফাইজা ঘুমের মধ্যেই বার বার নড়ে উঠছে। তাই ফারদিন খুব সাবধানে ফাইজা’কে বিছানায় সুইয়ে দিলো। ফাইজা শক্ত করে ফারদিনের শার্ট খামচে ধরে আছে। মেয়ে’টার এখনো ভয় কাটে’নি। হারানোর ভয়’টা খুব করে জেকে বসেছে ওর মস্তিষ্কের। ঘুমানোর আগে পায়রার মতো মিষ্টি মিষ্টি করে অভিমানী কথাগুলো বলছি ফারদিন’কে। আর ফারদিন মিটমিটিয়ে হেসে উঠেছে ওর কথায় । কথা বলতে বলতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেছে। অনেক দিন পর মেয়ে’টা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। এতদিন মেয়ে’টা কত’টা কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই ফারদিনের বুকে চিনচিনিয়ে ব্যাথা করছে। মায়া হচ্ছে মেয়ে’টার চেহারা দেখে। নিজের উপর ও রাগ উঠছে কেনো কষ্ট দিলো এই কয়েকদিন। কিছুক্ষন ফাইজা’র মায়া ভরা চেহার পানে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর নিজেও ফাইজার পাশে সুয়ে পড়ে ফাইজা’কে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফাইজা’ও ঘুমের ঘোরে ফারদিনের বুকের সাথে মিশে গেলো।

–যাদের জন্য তোমাকে এত’টা কষ্ট পেতে হয়েছে তাদের’কে আমি এত’টা কষ্ট দিয়ে মা/রব যা তারা কল্পনাও করতে পারছেনা। আমার মা’কে ওরা কেড়ে নিয়েছে আমার থেকে। আমি কিছু করতে পারি’নি তখন। কিন্তু, এখন সেই পূর্বের ঘটনার পূর্নরাবৃত্তি করতে চাইলে এর ফলাফল কত’টা ভয়ংকর হবে কেউ ভাবতেও পারছেনা।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার মনে মনে বলে উঠলো…..
–ম/রার আগে ওরা উড়চ্ছে উড়তে থাকুক। আমি ওদের উড়ার সুযোগ দিচ্ছি। সময়ের ব্যবধানে ওরা যেদিন মুখ থুবড়ে পড়বে সেদিন আর উড়ার সুযোগ পাবেনা…….
বলে একটু রহস্যময় হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। তারপর বিড়বিড় করে বলে উঠলো……
–অনেক দিন শান্তি’তে ঘুমো’তে পারি’নি জান। তুমি হীনা আমি শান্তি’তে এক মিনিট ও থাকতে পারব না। তোমাকে ছেড়ে বেঁচে থাকা ইম্পসিবল জান। ইম্পসিবল……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালের মিষ্টি রোদ এসে মুখে পড়তে’ই ফাইজার ঘুম ভেঙে গেলো। কয়েক’বার চোখ পিটপিট করে বিরক্ত প্রকাশ করে এক হাতে চোখ ডলতে লাগলো। চোখ ডলে ঘুম ঘুম চোখে তাঁকাতে’ই দেখলো ও নিজের বিছানায় একা সুয়ে আছে। কিন্তু কাল রাতে তো ফারদিন এসেছিলো আর ও ফারদিনের বুকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তাহলে এখন কোথায় গেলো ছেলে’টা। ভাবতেই ফাইজা’র বুক ধক করে উঠলো। তাহলে’ কি ও কাল আবারো স্বপ্ন দেখেছিলো। ওর চোখে পানি জম’তে শুরু করলো। বার বার কেনো এই স্বপ্ন দেখতে হবে। ফাইজা বসে বসে ভাবছিলো এইসবি। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই কেউ একজন দুই হাতে গাল আকড়ে নিলো। তা দেখে ফাইজা টলমল চোখে সামনে তাঁকাতে’ই ফারদিন’কে দেখে ফারদিনে’কে ঝাপটে ধরলো। ফারদিন সামনেই দাড়ানো ছিলো তাই ফাইজা ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো……

–আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানেন। ভেবেছিলাম আমি আবার স্বপ্ন দেখেছি। প্লিজ কোথায় যাবেন না। আমার খুব ভয় করছে। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। প্লিজ যাবেন না…….
বলেই কেঁদে দিলো। ফারদিন ও’কে শান্ত করার জন্য ফাইজা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো……
–আমি কোথাও যাই’নি। এখানেই আছি। ভয় পেও না। আমি আছি তো। প্লিজ কান্না অফ করো। প্লিজ……
ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। ফারদিন ফাইজা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফাইজার পাশে বসে ওর দুই গালে হাত রেখে আদুরে স্বরে বলে উঠলো……

–কান্না করে মিষ্টি চেহারা’টাকে লবনাক্ত করে দিচ্ছো। আমি যদি এখন চু’মু খাই তাহলে আমার ঠো’ট যে লবনাক্ত হয়ে যাবে। তখন অতিরিক্ত লবনের প্রভাবে আমি ম…….
বলতে পারলো না ফাইজা ফারদিনের মুখ’টা চে’পে ধরে বলে উঠলো…..
–পেছনের ফ্লাওয়ার ভাজ’টা দেখছেন ওইটা দিয়ে এই ফা’টা মাথা আরেক’বার ফা’টিয়ে দিব। অভ’দ্র,অস’ভ্র, নির্লজ্জ লোক একটা……
ফাইজার রাগ দেখে ফারদিন শব্দ করে হেসে দিলো। কিছুক্ষন আগের কান্না মাখা চেহারা’টায় এখন রাগ ফুটে উঠেছে। নাকের ডগায় লাল হয়ে আছে। তা দেখে ফারদিনের মনে হলো এক্ষুনি একটা কাম’ড় দিয়ে খেয়ে ফেলতে। নিজের ইচ্ছা’টাকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না। হুট করে আস্তে করে একটা কা’মড় বসিয়ে দিলো ফাইজার নাকের ডগায়। তা দেখে ফাইজা নাক ছিটকানো শুরু করে দিলো। ব্যাথা না পেয়েও ব্যাথা পাওয়ার ভান করে নাক ডলতে ডলতে বললো…..

–এই আপনি কি মানুষ নাকি ভ্যাম্পায়ার বলেন তো? কথায় কথায় খালি কা’মড় বসিয়ে দেন। আমার কি ব্যাথা লাগে’না নাকি। সরুন দূরে যান। একদম কাছে ঘেষবেন না। তাহলে দাত গুলো হা’তুড়ি দিয়ে ভেঙে দিব……
বলেই খাট থেকে নেমে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। ফারদিন মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে ওর কথায়। ঘুমানোর সময় ফাইজা’র প্লাজু’টা হাটুর একটু নিচ অব্দি উঠে গেছে। ওর চিকন চিকন পা গুলো দেখে ফারদিন ফাইজা’কে আরেক’টু রাগানোর জন্য দুষ্টুমি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো…..
–আমার এখন কোথায় চু’মু খেতে মন চাচ্ছে জানো সুইটহার্ট ?
বলেই একটু ফাইজার দিকে ঝুঁকে ভ্রু নাঁচালো। ফাইজা দুই হাতে ফারদিনের বুকে ঠেস দিয়ে রেখে বললো…..

–খবরদার যদি এখন চু’মু টু’মু খান তাহলে খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। যেখানে সেখানে যখন তখন খালি চু’মু খাওয়ার ধান্দা। আমার মনে হয় আপনার জন্ম হয়েছে খালি চু’মু খাওয়ার জন্য। এমন নির্লজ্জ মানুষ হয় কি করে?
ফাইজার কথা শুনে ফারদিন ওর একদম মুখের উপর ঝুঁকে ডান দিকের ভ্রু উঁচু করে বললো…..
–তোমার এই সুন্দর পা’য়ে চু’মু খেতে ইচ্ছে করছে জান……..

বলেই ফাইজার পা হালকা করে হাত লা’গাতে ফাইজা সুড়সুড়ি’ পেয়ে জোরে চিৎকার করে খাট থেকে লাফিয়ে নেমে গেলো। তা দেখে ফারদিন হাহা করে হেসে দিলো। ওর হাসির শব্দ রুমে বাজচ্ছে। ছেলে’টা এমন মন খুলে হাসতে পারে তা ফাইজার আগে জানা ছিলো না। ফাইজা নিচে নেমেই দেয়াল ঘেষে দাড়িয়ে আছে। এই ছেলে’টা কবে যেনো ও’কে চু’মু খেতে খেতে মে/রেই ফেলব। ফাইজার ভয়ার্ত মুখ’টা দেখে ফারদিনের হাসি কিছু’তেই থামছে না। পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তাও পেট চে’পে ধরে হেসে যাচ্ছে। হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফাইজার রাগ শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কেউ যদি শুনে ফেলে বাইরের থেকে তাহলে কি হবে? ভাবতেই ফাইজা তাড়াতাড়ি এসে আবার বিছানায় উঠে ফারদিনের মুখ চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো….
–আরে পা’গল হয়ে গেলেন নাকি। চুপ করুন বাবা-মা শুনে ফেলবে। ভাইয়া বাসায় এসে যদি দেখে কি হবে ভাবছেন?
ফারদিনের কেনো যেনো হাসি থামছে না। তাও হাসি কন্ট্রোল করে হাসতে হাসতে বললো…..

–আরে তোমার ভাইয়েই আমাকে তোমার রুমে আসার ব্যবস্থা করে দিছে?
তা শুনে ফাইজা চোখ বড় বড় করে প্রশ্নওর দৃষ্টি’তে তাঁকাতে’ই ফারদিন কিছু না বলে ফাইজার হাত ধরে টান দিতেই ফাইজা ফারদিনের বুকের উপর পড়লো। ফারদিন ফাইজা’র নাক’টা হালকা করে টেনে আদুরে স্বরে বলে উঠলো…….
–তোমার এই লজ্জা মাখা মুখ’টা আমার খুব প্রিয় জান…….
এইবার ফাইজা লজ্জায় চুপসে গেলো। চোখ দুটো ফারদিনের গলায় স্থির হয়ে গেলো। ফারদিন পূর্নরায় বললো…..
–তোমাকে দেখলেই আমার প্রেম প্রেম পায় জানননন…

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ১৫

জান শব্দ’টা একটু টেনে বলায় ফাইজা হেসে দিলো। দুজনেই কিছুক্ষন হেসে উঠে বসলো। ফাইজা’কে সব বুঝিয়ে দিলো। সাবধানে মুখে মাস্ক লাগিয়ে মাথায় ক্যাপ পড়ে নিলো। হাতে গ্লাভস পড়ে নিয়ে। শার্টের উপরে এপ্রোন পড়ে নিলো। চোখে একটা সানগ্লাস পড়ে নিলো। ফাইজা বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে ফারদিনের কান্ড দেখছে। ফারদিন রেডি হয়ে যাওয়ার সময় ফাইজা’র কপালে একটা চু’মু একে দিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষন আগেই ফাইজা’র রুমে একটা হিডেন ক্যামেরা সেট করে দিয়েছে। ফারদিন চলে যেতেই ফাইজা বাইরে একটু উঁকি দিলো এখনো মা উঠে’নি। আর হাসনাত সাহেব সেই ভোর বেলায় হাট’তে বের হয়ে যায় নামাজ পড়ে। জেহের ও ফারদিনের পেছন পেছনে গেলো। ফাইজা আবারো দরজা’টা একটু লাগিয়ে এসে বিছানার পাশে বসতেই ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ ভেসে উঠলো……
” খুব শিঘ্রই তুমি তোমার ভালোবাসা’র মানুষ’টাকে হারাবে”
ম্যাসেজ’টা দেখেই ফাইজার বুক কেঁপে উঠলো। আবার কোন নতুন ঝড়ের আগমন ঘট’তে চলেছে?

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ১৭