ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৭

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৭
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা দেখতে পেলো ইরা একটা ছেলের‌ সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। অধরা একটু ভালো করে‌ লক্ষ্য করতেই দেখতে পায় ইরা ছেলেটির সাথে বেশ রেগে কথা বলছে। ছেলেটাকে চেনা কেউ মনে হচ্ছে না। অধরা কৌতুহল বসত ইরা আর ঐ ছেলের কথা শুনতে চায়। অধরা নিজের মুখের উপর ওরনাটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ইরার দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যায়। অধরা চায় না ইরাকে তাকে দেখুক আর কোনো সিনক্রিয়েট করুক। অধরা ইরার দিকে এগিয়ে আসতেই শুনতে পেলো ইরা খুব রেগে চিৎকার করে বলছে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে

— সেদিন কার কথা ভূলে গেছিস? আমাকে পতিতাদের সাথে তুলনা করেছিস তুই। আমি তোর কাছে একজন পতিতা নারী। বিশ্বাস কর আমি ভালোবাসা প্রমান করতে আর তোকে যেনো না হারাতে হয় তাই তোর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে। তোকে নিজের সব থেকে দামী জিনিস আমার নিজের সম্মান টা তোর হাতে তুলে দিয়েছি। আর সেই তুই নিজের স্বার্থ শেষে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিস। অয়ন তো আমাকে সাহস দিয়েছে। আমি সেদিন ভেঙ্গে পড়েছিলাম। নিজের পরিবারের লোক জনদের এসব বলার সাহস হয়নি আমার। আমি আত্নহত্যা করতে গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে সেদিন অয়ন এসে আমাকে বাঁচায়। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সে। আমি অয়নের থেকে কিছু লুকাইনি। সব সত্যি বলে দিয়েছি। অয়নকে বলেছি আমার এই কথাটা গুলো যেনো কাউকে জানতে দিতে না। অয়ন আমার কথা রেখেছে। আমি কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন অয়নের কাছে। জীবনে যদি কখনো সুযোগ আসে তো অয়নের পাশে আমি দাড়াবো। যেমনটা অয়ন কোনো স্বার্থ ছাড়াই আমার পাশে ছিলো। আর তুই সেই মানুষটাকে নিয়েও আমাকে বাজে কথা বলেছিস। নোংরা তোরা আর তোদের চিন্তা ধারা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইরা কথা গুলো শেষ করতেই চোখ মুছতে লাগলো। অধরা নিরব হয়ে ইরার কথা শুনছে দূর থেকে। ইরার কথা শেষ হতেই ইরফান‌ ইরাকে উদ্দেশ্য করে নরম কন্ঠে বলল
— আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি সত্যি ভূল করেছি। তোমাকে অবহেলা করাটা আমার উচিৎ হয়নি‌। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভূল সুধরে নিতে চাই।
— ভূল! কি ভূল? তোকে আমার লাগবে না। আমি একা আমার সন্তান কে মানুষের মতো মানুষ তৈরি করবো‌।‌ প্রমিস বিশ্বাস কর। তোর মতো অমানুষ কখনও হতে দিবো‌ না আমার সন্তানকে।
— ইরা প্লিজ…..

অধরা পিছন থেকে সব কিছু শুনতে পেলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা। তার বোন এতো বড় একটা কথা সবার থেকে লুকিয়েছে। অধরা আপন মনে বলছে “তার থেকে বড় কথা হলো অয়নকে বলল অথচ আমাদের বললো না। আর অয়ন বা কেমন মানুষ? ইরার কথা আড়াল করে আমার মনের মধ্যে ওর জন্য ঘৃণা তৈরি হতে দিলো। একটিবার ও সত্যিটা বললো না! আমরা তো স্বামী স্ত্রী। আমাদের‌ মধ্যে এতো গোপনীয়তা কেনো থাকবে”? অধরা ওরনাটা ঠিক করে ইরার দিকে তাকালো। ইরা চলে যেতে নিলে ইরার হাত ইরফান ধরতে হাত বাড়ায়। অধরা প্রচন্ড রেগে ইরফানের পিছন থেকে এগিয়ে এসে ইরার হাত ধরে টেনে মুখটা নিজের দিকে করে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস! ছিঃ এতোটা নিচে নেমে গেছিস তুই? বিয়ের আগে অন্যের পাপ নিজের গর্ভে নিয়েছিস তুই। ছিঃ! তুই আমার বোন? তোকে নিজের বোন বলতে লজ্জা লাগছে আমার।

ইরা থাপ্পড় খেয়ে বেশ অবাক হয়ে যায়। ইরা গালে হাত দিয়ে অধরার দিকে বিধ্বস্ত দৃষ্টিতে তাকায়। ইরাকে দেখে মনে হচ্ছে ইরা এই সবের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। ইরা কাঁপা গলায় অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— আপু তুই এখানে!
ইরার কথা শেষ হবার আগেই অধরা ইরার চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে অধরা ইরার উদ্দেশ্যে কর্কশ গলায় বলে
— বাবা মা এর মান সম্মান এভাবে নষ্ট করতে দুবার ভাবিসনি? বাবা মা বেঁচে আছে তাদের সম্মানের উপর। আর তুই তাদের মেয়ে হয়ে এভাবে তাদের মান সম্মান নিয়ে খেলা করলি।
— আপু প্লিজ আমার লাগছে ছেড়ে দে প্লিজ!
ইরার কথা শেষ হতেই ইরফান দৌড়ে ইরার কাছে চলে আসে। অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া নিয়ে ইরফান অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— আপু প্লিজ ওকে ছেড়ে দিন। ওর কোনো অপরাধ নেই। ভূল আমি করেছি। প্লিজ ওকে ছেড়ে দিন!

ইরাফানের কথা গুলো অধরার কানে বিষের মতো এসে বিধলো। অধরা ইরফানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— এই তুই এখানে কি করছিস? আমার আর আমার বোনের মাঝে কথা বলার তুই কে? তোর মতো একটা রাস্তার ছেলের জন্য আমার বাবা মা এর সম্মান আজ মাটিতে মিশে গেছে। তোর মতো একটা নিচু চরিত্রের ছেলের জন্য আজ আমি আমার স্বামীর থেকে দূরে চলে এসেছি। তোদের এই নোংরামির জন্য আমি আমার স্বামীকে ছোট করে বার বার অপমান করেছি। তুই আর কথা বলিস না। তোকে দেখে বেশ বুঝতে পারছি তোর বাবা মা এর শিক্ষা কেমন‌।

অধরার কথা শুনে ইরফান মাথা নিচু করে ফেললো। অধরা একটু থেমে আবারও ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো
— বাবা মা বিশ্বাস করে তোকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছে আর তুই কি সুন্দর তার ফায়দা তুলেছিস। নিজেকে রাস্তার মেয়ে বানিয়েছিস। আত্নহত্যার থেকেও বড় কিছু তোর করা উচিত। এই মুখ কাউকে দেখাতে তোর লজ্জা করে না? অয়নের সাথে সব কথা শেয়ার করতে পারিস‌‌। রিসোর্টে গিয়ে অয়নকে জড়িয়ে ধরতে পারিস। আসলে কি বলতো অয়ন বোকা তোর মতো রাস্তার মেয়েকে সাহায্য করতে চলে এসেছে। আসলে তোর চিন্তা নিচু। তুই একটা…
অধরার সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই ইরা এক ঝটকায় অধরার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। অধরা একটু থমকে যায় ইরার ব্যবহারে। ইরা অধরার দিকে রক্ত বর্ণ ধারণ করা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলতে লাগলো

— অয়নকে নিজের কথা গুলো বলেছি বলে তোর সমস্যা। তোদের কেনো বলি নাই এটাই জানতে চাস তো? তবে শোন একটা মানুষ যখন নিজের সব কিছু হাড়িয়ে ফেলে। বেঁচে থাকার আর কোনো কারন খুঁজে পায় না। তখন আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। আরে অয়ন আমাকে যতটা বুঝেছে তার এক অংশ যদি তোরা আমায় বুঝতি কখনও। তবে আমাকে আত্নহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তার জন্য কোনো সাজাই পারে না এই ভুলকে সুধরাতে। কারন এই ভুল ক্ষমার অযোগ্য। তোর কাছে তো এই ভুলের ও খুব সহজ সমাধান আছে। “আমার এই মুখ কাউকে না দেখানো”। কিন্তু অয়ন আমাকে এটা বলেনি। বলেছে একটু ধৈর্য ধরতে ইরফান যদি সত্যি ভালোবাসে আর নিজের ভুল বুঝতে পারে তবে সে ফিরবে। আর না ফিরলে নিজের সন্তানকে নিজের পরিচয়ে মানুষ করতে। নিজেকে তৈরি হতে বলেছে। তোদের মতো মরতে বলেনি। এটাই তোর আর অয়নের মধ্যে পার্থক্য। একটা কথা বলি আপু তুই আমার কথা কি বুঝবি? নিজের স্বামী, ভালোবাসার মানুষকেই বিশ্বাস করতে পারলি না। আর আমার কথা বুঝবি তুই!
* ইরার কথা গুলো শুনে অধরা একদম চুপসে যায়। ইরার কথা গুলো যে তার মনের ভিতর নিজের কাছে নিজেকে ছোট করে দিয়েছে। অধরা ভাবছে “সত্যি তো আমি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ভূল বুঝেছি। বিশ্বাস করিনি তাকে। ইরার কথা গুলো কোনো অংশে মিথ্যে না”। অধরাকে নিশ্চুপ দেখে ইরা কান্না ভেজা চোখ জোড়া মুছে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আপু তোরা তোদের মতো থাকিস। আমি চলে যাচ্ছি তোদের থেকে অনেক দূরে। আমার জন্য তোদের কারো সম্মান নষ্ট হবে না। আসছি
* ইরা হনহন করে চলে যায় অধরার সামনে থেকে ইরফান অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে ইরার পিছন পিছন দৌড়ে চলে যায়। অধরা মাথাটা নিচু করে আছে। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে তার। ইরার কথা গুলো তাকে ভাবাতে বাধ্য করছে। “আমি নিজের জীবনে কিছুই হতে পারিনি। না হতে পেরেছি একজন বোন। আর না হতে পেরেছি একজন স্ত্রী। আর না হতে পেরেছি কারো মা। আমি ব্যর্থ হয়ে গেছি। আমি কেনো অয়নকে বুঝতে পারলাম না? অয়নের না বলা কথা গুলো কেনো আমি বুঝতে পারলাম না? কেনো ওকে এতো কষ্ট দিয়েছি আমি? না এভাবে দাড়িয়ে চোখের জল ফেললে কোনো লাভ হবে না‌। অয়নের কাছে যেতে হবে আমায়। ওর কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। নিজেকে আর কষ্ট দিবো না। আর না আমার ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিবো। আমার বিশ্বাস কয়ন আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার ভালোবাসবে”।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৬

* অধরা নিজের চোখের জল মুছে ফেললো। একটা রিক্সা নিয়ে অধরা চলে আসে অয়নের বাড়ির সামনে। রিক্সা থেকে নামতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন তার গাড়িতে উঠে বসছে। অয়ন বাড়ির সামনে রিক্সা দেখতে পেয়ে ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলো তার গাড়ির দিকে একটু একটু করে এগায়ে আসছে কেউ একজন। অয়ন সিট ব্যল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে আসতেই দেখতে পেলো অধরা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন নিজের মুখটা মলিন করে মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নিলো। অয়ন ভাবছে অধরা হয়তো তাকে আবার অপমান করতে এসেছে। অয়ন অধরার দিকে তাকাতেই অধরা অয়নকে অবাক করে দিলো। অধরা নিজের…………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৮