ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৮

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৮
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা নিজের চোখের জলকে আড়াল করতে পারছে না। অধরা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করে একদম বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেললো। অয়ন মুখ মলিন করে গাড়ির পাশ থেকে একটু একটু করে অধরার দিকে এগিয়ে আসে। অধরা অয়নের দিকে বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরার চোখে আছে হাজারটা অভিযোগ। অধরার বেশ কাছে এসে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

— বিশ্বাস করো তোমার ড্রিংকে আমি কিছু মেশাইনি আর না আমি জানতাম ঐ ক্লাবে তুমি আসবে। প্লিজ কান্না করো না।
অয়নের কথা শেষ হতেই অধরা দৌড়ে এসে বেশ শক্ত করে অয়নকে জড়িয়ে ধরে। অয়নের বুকে মুখ লুকিয়ে নিজের অভিযোগ, বুকে জমে থাকা সব কষ্ট গুলো প্রকাশ করছে সে। অধরার চোখের জল অয়নের শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে। অয়ন আলতো করে অধরার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অয়ন ও যে তাকে ছাড়া অসহায়। অয়ন ও যে তাকে ছেড়ে ভালো ছিলো না। অয়নের চোখ বেয়ে নোনা জল টপটপ করে পরতে লাগলো। অধরা কিছু সময় নিরব থেকে অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এই তুই এতো জঘণ্য কেনো? কেনো তুই আমার থেকে ইরার কথা আড়াল করেছিস? ইরার আমার থেকেও বেশি জরুরী তোর কাছে? উত্তর দে তুই। স্বামী, স্ত্রীর মাঝে এমন কোনো কথা থাকে না যা আড়াল করে চলতে হয়। তবে তুই কেনো আড়াল করেছিস? দিনের পর দিন আমাকে অবহেলা করে গেছিস। কেনো? কি ভূল ছিলো আমার?
অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে এসে আবার অধরাকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন কান্না ভেজা কন্ঠে অধরাকে বলতে‌ লাগলো

— আমি ইরাকে কথা দিয়েছি যে ওর এই সত্যি আমি কাউকে বলবো না। আমি চাইনি তোমাদের সামনে ওর মাথা নিচু হয়ে যাক। ছোট মানুষ ভূল করেছে। আমি চেয়েছি ইরফানের সাথে যা হয়েছে তার সমাধান করতে। তবে আমি বুঝতে পারিনি আমার এই লুকিয়ে যাওয়াটা আমার থেকে তোমাকে আলাদা করে দিবে। সত্যি বলছি অধরা আমি ভূল করেছি। তোমার থেকে দূরে থাকার প্রতিটা মূহুর্ত আমাকে উপহার দিয়েছে এক আকাশ শূন্যতা। তোমার শূন্যতা আমাকে ভালো থাকতে দেয় না।

— চুপ। একদম চুপ। আমি বুঝি খুব ভালো ছিলাম! একটা নারী তার স্বামীকে ছেড়ে কি করে ভালো থাকতে পারে? জানিস আমি মা হতে চলেছি। আমাদের সন্তান দিন দিন আমার গর্ভে বড় হচ্ছে। এই সময়টা সবার মতো আমারও ইচ্ছে আমার স্বামী আমার পাশে থাকুক। কিন্তু আমি‌ তোকে আমার পাশে পাইনি। কি করে ফিরতাম আমি? তোর আর ইরার অবস্থানটা আমার মনে বারংবার প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। আমাকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করেছে যে, হ্যাঁ তোদের মাঝে কিছু আছে।‌
অধরা মা হতে চলেছে! কথাটা কানে আসতেই অয়নের মুখ জুরে একটা খুশির ঝলক দেখা দেয়। বাবা মা হয়ে ওঠার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করা দায়। অয়ন অধরার গালের উপর হাত রেখে অধরার কপালে চুমু খেয়ে অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলল

— প্লিজ অধরা একটা ক্ষমা চাই আমি। প্লিজ একটা ক্ষমা! এই ভূল বোঝাবুঝির সমাপ্ত হোক। ইরা আমার বন্ধু, আমার ছোট বোন। ওকে আমি সহায্য করেছি। ওর পাশে থেকেছি। আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের মধ্যে কোনো পাপ নেই। বিশ্বাস করো প্লিজ! একটি বার আমার ভূল‌ ক্ষমা করে দাও। একটাবার আমাকে সুযোগ দাও। প্লিজ অধরা প্লিজ!
— হুম। ক্ষমা করতে পারি তবে একটা শর্তে।
অয়ন অধরার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল
— হুম বলো কি শর্ত?
— আমাকে অনেক ভালোবাসা দিতে হবে। আর কখনও কোনো কিছু আমার থেকে লুকানো চলবে না। যে অধরা তোমার পাশে তোমার ছায়াকে সহ্য করতে পারে না। সে কি করে অন‌্য কাউকে সহ্য করবে বলতে পারো?

— হুম আর কখনও আমি তোমার থেকে কিছু লুকাব না। অনেক অনেক ভালোবাসা দিবো। তবুও প্লিজ আমাকে আর ছেড়ে চলে যেও না। তোমার না থাকার প্রতিটা মূহুর্ত আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। প্লিজ!
— হুম। আর যাবো না আমি। একদম এই বুকে থাকবো আমি।
অয়ন অধরাকে জড়িয়ে ধরে আছে। অনেক দিন পরে অয়ন নিজের বুকে ভালোবাসা অনুভব করছে। অনুভব করছে ভালোবাসার পরশ। অয়ন অধরাকে জড়িয়ে ধরে আছে। হঠাৎ করে অয়ন আর অধরাকে উদ্দেশ্য করে কেউ একজন বলে উঠল
— আহহহহ কি ভালোবাসা। এদের দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে সব রেকর্ড ভেঙে এরা ভালোবাসার পরিক্ষায় টপার হবে।

অনুর ব্যঙ্গ করা কথায় অয়ন আর অধরার ঘোর কাটে। অধরা অয়নের পিঠের উপর থেকে নিজের হাত আলগা করে অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছে অনুর দিকে তাকায়। অনু মৃদু হাসছে তাদের দিকে তাকিয়ে। অধরা অনুর দিকে মৃদু হেসে তাকাতেই অনু অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ভাবী আমিও তোমাকে ভিশন মিস করেছি। আর আমি কি তোমায় ভাইয়ার থেকে কম ভালোবাসি নাকি? আমাকে জড়িয়ে ধরবে না?
অনুর কথা শুনে অধরা ভ্রূ কুঁচকে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— দেখেছো অয়ন এই বুড়িটা বেশ পেকে গেছে। ওর একটা পারমানেন্ট ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। আসো বোন আমার আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
* অবশেষে অয়ন আর অধরার মাঝে ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটলো। একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাসের উপর। ভূল বোঝাবুঝির সব সম্পর্কেই থাকে তবে লক্ষ্য রাখা উচিত ভূল বোঝাবুঝি যেনো কখন বিশ্বাসকে ছাপিয়ে যাতে না পারে। সেই ভালোবাসা পরিপূর্ণ যেখানে বিশ্বাস থাকে। অয়ন অধরাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বাবা মা সবাই অধরাকে দেখে খুব খুশি হয়। অধরা যে তাদের চোখের মনি। অধরার মা বাবাও ছুটে চলে আসে অধরাকে দেখার জন্য। অয়ন একটু অভিমান করে থাকে তাদের উপর।

রাতের দিকে অয়ন নিজের রুমে বসে আছে। অধরা অয়নের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। অয়ন অধরার সাথে গল্প করছে। অনেক দিন পরে অয়ন মন খুলে কথা বলতে পারছে। হঠাৎ করে অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললো
— আচ্ছা অয়ন একটা কথা ভালোবাসায় অবহেলা যখন চলে আসে। তখন ভালোবাসা কি ঠিক আগের মতো গুরুত্ব রাখে?
— উহু রাখে না ঠিক। তবে অবহেলা সাময়িক হলে ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ওঠে। আর যদি অবহেলা গভীর হয় তবে ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়।‌
— হুম।

অয়ন বেশ বুঝতে পারছে অধরা হঠাৎ করে কেনো অবহেলার কথা বলছে। অয়ন মে অধরাকে আঘাত করার কোনো অপশন বাকি রাখেনি। অধরা নিশ্চুপ হয়ে আছে। অয়ন অধরার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। অধরা অয়নের ঠোঁটের ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে গভীর ভাবে উপলব্ধি করলো। অয়ন অধরার চুলে বিলি কাটতে লাগল আর অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— জানো অধরা ভালোবাসা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। অবহেলা বলো বা দূরত্ব। সব কিছু ভালোবাসার কাছে তুচ্ছ। এসব ভালোবাসার কাছে কোনো মাইনে রাখে না।
— হুম।

* রাত পেরিয়ে সকাল হলো। সকাল হতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা অয়নের বুকের উপর থেকে মাথাটা তুলতেই দেখতে পেলো অয়ন এখনও ঘুমাচ্ছে। কপালের উপর চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে তার। অধরা অয়নের এলোমেলো চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে ঠিক করে দিলো। আলতো করে অধরা তার ঠোঁট জোড়া অয়নের কপালে ছোঁয়াতেই অয়ন অধরাকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে। অধরা ভালোই বুঝতে পারছে জনাবের ঘুম অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলল
— ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও শুয়ে আছো কেনো? আমায় ঠেকে দিতে পারতে তো নাকি?
সব সময় অধরার মুখে এমন কথা শুনে অয়ন অভ্যস্ত প্রায়। অয়ন অধরার মাথাটা আবার বুকের সাথে চেপে ধরে বলছে

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৭

— আরে সমস্যা কি হুম? একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিতে চাওনা কেনো?
— ওরে শান্তি লাগবে না।‌ ওঠেন এখন অফিসে যাবেন তো নাকি?
— অফিস ভালো লাগে না আমার।
— এহহহহ, এই ছাড়ো আমায়। আমার কাজ আছে। তুমি পরে পরে ঘুমাও।
— কাজ মানে? এই অবস্থায় কোনো কাজ না।
— এখনও ঠিক আছি। অবস্থা যখন হবে তখন কাজ অফ করবো।
অধরা উঠে চলে যায় অয়নকে রুমে রেখে। অয়ন মিনিট খানেক গড়াগড়ি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা রুমে এসেছে। অয়ন অধরাকে দেখে একটু অবাক হলো। অধরা হঠাৎ এই সময়ে………………….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৯