ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৯

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৯
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* “অধরা হঠাৎ এই সময়ে‌ রেডি হচ্ছে কেনো’? আনমনে কথাটা ভাবছে অয়ন। অয়ন অধরার থেকে খানেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলল
— অধরা এতো সকাল সকাল রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
অধরা আয়ানার দিকে দৃষ্টিপাত করে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অফিসে যাচ্ছি সোনা।‌

— মানে? অফিসে কেনো যাবে? অধরা তোমার এই সময়ে প্রপার রেস্টের প্রয়োজন। অফিস আমি সামলাবো। তুমি আগের মতো সংসার সামলাবে।
— উফফফ! অয়ন আমি কেনো সংসার সামলাবো? আর তাছাড়া আমি তো তোমাকে বলেছি নারীদের নিজের‌ পা এ দাঁড়ানো প্রয়োজন। অন্যের উপর নির্ভর না করে আত্ননির্ভর হয়ে‌ বাঁচা জরুরী।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অধরার কথা গুলো অয়নের মনে তৃপ্তি দিতে পারলো না। অয়ন অধরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে “এ কোন অধরাকে দেখছি‌ আমি? বিয়ের পর‌ থেকে‌ কিছু দিন আগ পর্যন্ত যে অধরা সংসার সামলেছে। যে অধরা অফিসে যাওয়া তো দূর অফিসের কোনো কাজের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না। আমি কি আজ‌ সেই অধরার সাথে কথা বলছি”? অধরা শাড়িটা ঠিক করে অয়নের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো অয়ন তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরা‌ মৃদু হেসে অয়নের দিকে লজ্জা মাখা মুখ করে বলল
— এভাবে দেখছো কি হুম? আমার‌ কিন্তু লজ্জা লাগে।
— হুম।

অয়ন চোখ জোড়া অধরার দিকে থেকে সরিয়ে নিজের জামা একে একে পড়ে নিলো। অধরা নাস্তা করার জন্য বাহিরে চলে গেছে। অয়ন হয়তো অধরাকে আটকাতে পারতো তবে তা করে লাভ হতো না। অধরা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনও কাউকে প্রশ্রয় দেয় না। আর না কারো কথা সে মান্য করে। অয়ন মন উদাস করে রেডি হয়ে নিলো। অয়নের বরাবর এই বাহিরে গিয়ে কাজ করাটা অপছন্দের। অয়ন রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসে। নিচে আসতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। অয়ন ২য় বারের মতো চমকে যায়। অধরা তাকে ছাড়া কখনও একা খাবার খায়নি।‌ সব সময় খাবার টেবিলে বসে অয়নের জন্য অপেক্ষা করতো সে। অয়ন রিতিমত দেরি করে বাড়ি ফিরলেও সেম ঘটনা। এই অপেক্ষা করার জন্য অধরা যে কত বকা খেয়েছে তার হিসেব নেই। তবুও অধরার বায়না অয়ন আসবে। তার পাশে বসবে। তারপর দুজন একসাথে খাবে। তবে আজ কেনো তার বিপরীত হলো? কিছু দিনের দূরত্ব কি অধরার কাছে তার গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে?

কথা গুলো সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছে অয়ন। অয়নের ঘোর কাটে অনুর ডাকে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— এই ভাইয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? খাবার খাবি না?
অনুর কথায় অয়ন একটু কেঁপে উঠলো। বোকার মতো মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো সে। অয়নের দিকে অধরার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। অধরা নিজের মতো করে নাস্তা শেষ করতে ব্যস্ত। অয়ন টেবিলে বসে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরার কোনো রিসপন্স না পেয়ে অয়ন মাথা নিচু করে খাবার খেতে লাগলো। খাবার শেষ করে অয়ন টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে অফিসের ফাইল গুলো গুছিয়ে অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে পরখ করে নিলো অধরা আসার কোনো শব্দ আসছে কি না। তবে অধরা তো দূর কোনো শব্দ তার কান উবদি পৌঁছায় নেই। অয়ন ব্যাগটা কাঁধে চেপে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে। নিচে আসতেই অয়ন আর অধরাকে দেখতে পেলো না। অয়ন অনুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো

— কিরে অধরাকে দেখছি না। অধরা কোথায়?
অনু অয়নকে মৃদু কন্ঠে বলল
— ভাইয়া ভাবীতো চলে গেছে। তুই ছিলি না তাই তোকে‌ বলে যেতে পারেনি।
— ওহহ। আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আসছি কেমন।
— এই ভাইয়া শোন। কাল আমার কলেজ পিকনিক আছে। আমি কোনো কথা শুনবো না। আমাকে যাবার অনুমতি দিতেই হবে তোকে। সবাই যাবে আমিও যাবো।
অনুর কথা অয়নের কানে পৌঁছায় তবে অয়নের মস্তিষ্কে নয়। অয়ন আনমনে অনুকে বলল
— টাকা আম্মুর কাছে আছে যা খেতে চাস নিয়ে নিস।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অনু একটু অবাক হয় তার ভাইয়ার কথায়।

* অয়ন গাড়িতে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “অধরার কি হয়েছে? কেনো এমন করছে? এই সব নিয়ে কষ্ট পাওয়া চলবে না। হয়তো একটু বেশি ব্যস্ত তাই এমন করছে”। নিজের মনকে কোনো মতে বুঝিয়ে অয়ন গাড়ি স্টার্ট করলো। অফিসের সামনে আসতেই অয়নের ফোনে একটা কল চলে আসে। অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো ইরার কল। অয়ন কলটা দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন দ্রুত কলটা রিসিভ করলো।
— হ্যালো, ইরা তুমি এখন কোথায় আছো?
— কোথায় আছি মানে? বাসায় আছি। কেনো অয়ন কি হয়েছে?
— বাসায় মানে? তোমার ফ্লাইট না গতকাল রাত ৩টায় ছিলো?
— হ্যাঁ, আমি যাইনি।
— কেনো?
— আমি ইরফানকে একটা সুযোগ দিতে চাই। আমি ওর বাচ্চার মা। আমি সমাজে মাথা নিচু করে নয় উঁচু করে বাঁচতে চাই অয়ন।
— দ্যাট’স গ্রেট। কিন্তু ইরফান কি মেনে নিয়েছে সব? তুমি কি মন থেকে ওকে ক্ষমা করতে পেরেছো?

— হ্যাঁ, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। কারন ভালোবাসি ওকে। তাই মনের মধ্যে রাগ, অভিমান, পুরনো কথা এই সব কিছু রাখি নাই।
— একদম। তোমার বাচ্চার তার পিতার পরিচয়ের প্রয়োজন আছে।
— হ্যাঁ, সন্ধ্যায় তুমি আর আপু মিলে আমাদের বাড়ি চলে আসবে। আর হ্যাঁ আসতেই হবে। ইরফান আসবে ওর ফ্যামিলি নিয়ে।
— আচ্ছা আসবো কিন্তু তুমি কি অধরাকে কল করেছো?
— হ্যাঁ করেছি তবে আপু কল পিক করে নাই।
— হুম। হয়তো রেগে আছে। যাই হোক আমি ওকে নিয়ে আসবো। ঠিক আছে।
— ওকে।
* কলটা রেখে অয়ন নিজের কেবিনে চলে আসে। কেবিনে এসে অয়ন কাজ করতে শুরু করে।
— মিস অধরা ভূলে গেছেন আমায়?
রিহানের মৃদু কন্ঠ শুনে অধরা রিহানের দিকে তাকায়। রিহানাকে অফিসে দেখে অধরা একটু অবাক হয়। অবাক দৃষ্টিতে অধরা রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে
— আরে মিস্টার রিহান চৌধুরী আপনি এখানে? তা এখানে বুঝি চিকিৎসা সেবা দেয়া চালু করেছেন?

— আরে না। এখানে কেনো চিকিৎসা দিবো? আমি তো রোজের কাছে এসেছি। ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই।
— ওহহহ। আচ্ছা ঠিক আছে।
— হ্যাঁ, শুনলাম আপনার স্বামীর সাথে আপনার সব কিছু মিট হয়ে গেছে!
— জ্বি একদম ঠিক শুনেছেন।
— হুম মিট হয়ে গেছে ভালো কথা। তবে একটু অবাক হলাম আপনাকে দেখে।
— কেনো? অবাক হবার কি আছে?
— আসলে রোজের কাছে থেকে যা শুনলাম তা শুনে আমার মতে অয়নকে এতো তারাতাড়ি বিশ্বাস করে ক্ষমা করা উচিত হয়নি আপনার।
— আসলে কি জানেন মিস্টার চৌধুরী ভালোবাসা বেশি দিন অযত্নে রাখতে নেই। এতে করে ভালোবাসার মাঝে ফাটল ধরে। যা কোনো মতে প্রশান্তি কর নয়।

— হুম। তবে….
— তবে এখন আমি একটু বিজি পরে কথা বলি?
— আচ্ছা।
* অধরা রিহানাকে থামিয়ে দিয়ে কথাটা এখানেই শেষ করলো। অধরা কখনও নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার বাহিরের কারোর সাথে শেয়ার করাটা পছন্দ করে না। রিহান চলে যেতেই অধরা একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলে অতঃপর কাজ করতে থাকে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অয়ন অফিস থেকে বেরিয়ে অধরাকে কল করছে। বার বার অধরার ফোন বিজি আসছে‌। কার সাথে অধরা এতো কথা বলছে? গাড়িতে হেল দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অয়ন। শেষ বারের মতো অয়ন অধরার ফোনে কল করতেই অধরা কলটা পিক করলো।

— হ্যালো, কত গুলো কল‌ করেছি। একটাও পিক করলে না। কি হয়েছে? কার সাথে এতো কথা বলছো তুমি?
রাগি কন্ঠে কথা গুলো অধরার দিকে ছুড়ে দিলো অয়ন। অয়নের কথার বিপরীতে অধরা বলল
— আরে অফিস মিটিং শুরু হবে। তাই ক্লাইন্ডদের সাথে কথা বলছিলাম। তুমি কোথায়? সব ঠিক আছে তো?
— হ্যাঁ। ইরা কল করে আমাদের ডেকেছে‌ বাড়িতে। মিটিং টা বাদ দাও। আমাদের যেতে হবে।
— ওপস। আমি যেতে পারবো না। তুমি যাও। আমার মিটিং আছে।
— ওহ।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৮

কথা শেষ হতেই অয়ন কলটা কেটে দিলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অধরার উপর। মিটিং ক্যন্সেল করলে কি হতো? যত্তসব। অয়ন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। অয়ন মনে মনে ভাবছে অধরাকে অফিস থেকে জোর করে নিয়ে আসবে। অধরা রেগে আছে ইরার উপর। তাই হয়তো যেতে চাইছে না।
* অয়ন গাড়ি নিয়ে রোজের অফিসের সামনে চলে আসে। অফিসের সামনে আসতেই অয়ন একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন অফিসে এসে দেখতে পেলো……..………………

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২০