ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২০

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২০
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

অয়ন অফিসে এসে দেখতে পেলো অফিসের গেটে তালা ঝুলছে। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে ভালো করে পরখ করে নিতেই দেখতে পেলো হ্যাঁ সত্যিই সত্যি তালা ঝুলছে। অয়ন আনমনে ভাবতে লাগলো “যদি অফিস বন্ধ থাকে তবে অধরা তাকে মিথ্যে কেনো বলল? কিসের মিটিং আছে? অফিস তো বন্ধ তবে মিটিং হচ্ছে কোথায়”? অয়নকে অফিসের গেটের সামনে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিকয়েরেটি এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— স্যার, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন? অফিস তো বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় আধ ঘন্টা আগে।
— জ্বি হ্যাঁ আমি একজনকে খুঁজছি। কিন্তু সে যে বলল মিটিং আছে।
— মিটিং! সরি স্যার অফিস আজ বন্ধ। আপনাকে হয়তো কেউ বোকা বানিয়েছে। আপনি বরং কাল আসবেন।
সিকিউরিটির কথা শুনে অয়ন মৃদু হেসে জবাব দিলো
— হ্যাঁ বোকাই তো। আচ্ছা তুমি আমাকে বলো অধরা ম্যাম কি চলে গেছে?
— জ্বি স্যার। অধরা ম্যাম তো সবার আগে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। রোজ ম্যাম লাস্ট টাইমে বেরিয়েছে।
— ওকে ধন্যবাদ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়ন পুনরায় নিজের গাড়িতে এসে বসলো। মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অধরা ফোনে ব্যস্ত, অফিস মিটিং মিথ্যে। তবে অধরা গেলো তো গেলো কোথায়? না অয়নের মাথায় কিছু আসছে না। অয়ন অফিসের সামনের থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায় অধরার বাড়িতে। অধরার বাড়ি আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অনেক গুলো গাড়ি অনেক আগেই এখানে চলে এসেছে। তার মানে ইরফান এসে গেছে। অয়ন নিজের গাড়িটা সাইডে পার্ক করে ভিতরে চলে আসে‌‌। ভিতরে আসতেই অয়ন দেখতে পায় ইরফান আর তার পুরো পরিবার ইরার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। আশে পাশে ইরাকে কোথাও দেখা গেলো না। অয়নকে দেখতে পেয়ে তারা সবাই বেশ খুশি হলো। অয়ন তাদের সাথে বসে বিয়ের দিন ফাইনাল করলো। কিছু সময় ইরফানের সাথে কথা বলতেই অয়ন দেখতে পায় অধরার আম্মু অয়নকে ইশারা করে ডাকছে। অয়ন ইরফানকে রেখে অধরার আম্মুর দিকে চলে আসে।

— অয়ন বাবা অধরা আসে নাই?
— আসলে আম্মু অধরা একটু ব্যস্ত অফিসের কাজে তাই আস্তে পারেনি।
— ওহহহ। কিন্তু এই সময় অধরাকে অফিস করতে দেয়া কি আদু যুক্তি যুক্ত?
— না আম্মু তা হয়তো যুক্তিসংগত নয়। তবে আপনার মেয়ের জেদ সম্পর্কে আপনার তো জানেন। কারো কথা কি সে শোনে?
— হুম।
* অয়ন এখানকার ঝামেলা শেষ করে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হয়। পথিমধ্যে অয়ন অধরাকে অনেক বার কল করেও ফোন আনরিচেবল পায়। অয়ন বাড়ি এসে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই দেখতে পায় অধরা কিছু কাগজ এলোমেলো করে কিছু একটা খুঁজে চলেছে। অয়ন দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি সাহায্য করবো?

অয়নের কথা শুনে অধরা বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা মৃদু কেঁপে উঠে পিছন ফিরে অয়নকে দেখতে পেয়ে একটু অপ্রস্তুত হয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— না। কখন এলে? এতো তারাতাড়ি ওখানকার ঝামেলা শেষ হয়ে গেলো?
— হুম।
অয়ন রুমে আসতেই অধরা বেশ দ্রুত কাগজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলো। অয়ন ব্লেজারটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে অধরাকে উদ্দেশ্য করে গভীর কন্ঠে বলল
— তা মিটিং কেমন হলো? ক্লায়েন্ট সেটিসফাই হলো তো?
— হ্যাঁ, ভালোই হয়েছে‌। খারাপ কেনো হবে? একদম ভালো হয়েছে।
— বাহ অধরা ম্যাম তো ভালোই ক্লায়েন্ট ড্রিল করতে পারে। তা আমার অফিসে জয়েন করতে পারো তো।

অয়নের রহস্যজনক কথার মানে অধরার কাছে অস্পষ্ট। অধরা আমতো আমতো করে বলল
— না, না। আমি রোজের অফিসের ঠিক আছি। এখন যদি রোজের অফিস থেকে চলে আসি তা হলে ও মন খারাপ করবে।
অধরার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে অয়ন বিছানা থেকে উঠে অধরার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
— ওহহহ তাই। রোজ কষ্ট পাবে। আর তোমার স্বামী কষ্ট পাবে না বুঝি?
— না। আমার স্বামী একাই সামলাতে পারে সব। তাকে সাহায্য করতে হয় না।
অয়ন বিছানা থেকে উঠে অধরার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। অয়ন এগিয়ে আসতে আসতে অধরার খুব কাছে চলে আসে। অধরা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার দেহ একদম দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে। অয়ন অধরার কপালে উড়ে আসা চুল গুলো আলতো করে কানের দুল গুজে দিয়ে অধরার ঠোঁটের দিকে দৃষ্টিপাত করে ফিসফিস করে বলল

— কেনো জানি আমার না‌ ভিশন ইচ্ছে করে তোমার সাথে সব মিটিং এ যেতে। এক সাথে প্রেজেন্টেশন করতে। উফফফফ! কত দিনের শখ আমার। কবে পূরণ হবে অধরা?
অয়নের গরম নিঃশ্বাস অধরার মুখের উপর পরতেই অধরার শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যায়। অধরা অয়নের বুকের উপর হাত রেখে মুখ নিচু করে বলছে
— অয়ন প্লিজ এমন কিছু করো না। আমি প্রেগন্যান্ট ভূলে যেও না।
অধরা কথাটা শেষ করতেই অধরার কোমড় ধরে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। অধরা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়নের চোখ জোড়া আচমকাই রক্ত বর্ণ ধারণ করে ফেললো। অয়নের নাক মুখ লাল হয়ে আছে। অয়নকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে সে প্রচন্ড রেগে আছে। অয়ন ফিসফিস করে অধরাকে বলছে
— আমি জানি তুমি আমার অফিসে জব করবে না। কারন আমার অফিসে ঐ ব্যবস্থা নেই যেখানে অফিস বন্ধ করে মিটিং হয়। তাও একটা লম্বা সময় ধরে।
অয়নের কথা শুনে অধরা চমকে যায়। অয়নের দিকে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকায় অধরা। অবাক কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল সে

— মানে? কি বলছো এসব? আমি অফিসে……
চিৎকার করে অধরাকে থামিয়ে দিয়ে বলল অয়ন
— একদম চুপ। একটাও মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই। আমি নিজে দেখে আসছি। বলো কোথায় ছিলে? কোন মিটিং এ ছিলে তুমি? আর তোমার ক্লায়েন্ট ছিলো? যার সাথে এতো সময় ধরে মিটিং করে এসেছো। আমার জবাব চাই।
অয়নের কর্কশ কন্ঠ অধরাকে বিব্রত করতে ব্যর্থ হলো। অধরা বাঁকা হেঁসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমাকে বিশ্বাস করো না তুমি?
কথাটা শুনে অয়ন বেশ বুঝতে পারলো অধরা তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। অয়ন একটা ধাক্কা দিয়ে অধরাকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিলো। অধরা ধপাস করে বিছানার উপর বসে পড়লো। অয়ন মুখ ঘুরিয়ে নিল আর অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— জানি না কোন অপরাধের শাস্তি তুমি দিচ্ছো আমায়! শুধু এতোটুকু বলবো এমন কিছু করো‌ না যা আবার আমাদের মাঝে দেয়াল তুলে দেয়।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন ব্যল্কনির দিকে চলে আসে। অধরার মিথ্যে অয়নের মনে যেই প্রশ্ন তৈরি করেছে। তার উত্তর না পেয়ে। অয়নের মনটা কলুষিত হচ্ছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। অয়ন পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো আপনমনে। অধরা বিছানার উপর বসে আছে চুপটি করে।
* সারা রাত ব্যল্কনিতে কাটিয়ে সকাল হতেই অয়ন চোখ খুলে দেখলো সে সোফায় শুয়ে আছে। মাথাটা একটু উঁচু করতেই অয়ন দেখতে পেলো অধরা ফ্লোরে বসে তার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৯

অয়ন অধরাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা হঠাৎ এখানে কেনো? অয়ন আলতো করে অধরার মাথাটা তুলে উঠে বসলো। অধরার দিকে তাকিয়ে অয়ন মৃদু হেসে দিলো। আপনমনে অয়ন বলতে লাগলো “পাগলিটা কখন এসে শুয়ে আছে একটুও খেয়াল করতে পারিনি। এই অবস্থায় ফ্লোরে বসে থাকলে যে আমার বেবির ঠান্ডা লেগে যাবে। তার কোনো খবর নেই। নিজেই অবহেলা করে কষ্ট দেয় আবার নিজের সোহাগ দেখাতে আসে”। অয়ন সোফা থেকে উঠে অধরাকে কোলে তুলে নিলো। অনেক দিন পরে অধরাকে নিজের কোলে তুলেছে অয়ন। অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে তার মনের মধ্যে। অয়ন অধরাকে কোলে করে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো। আলতো করে অধরার কপালে চুমু খেয়ে অয়ন ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো অধরা এখনও শুয়ে আছে। অয়ন রেডি হয়ে নিয়ে ড্রয়েরের লকটা খুলে নিজের হ্যান্ড ওয়াচটা বের করার সময় লক্ষ্য করলো অধরার সেই এলোমেলো কাগজ গুলো ড্রয়েরে আছে। অয়ন একটা কাগজ হাতে নিতেই…………………………….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২১