তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩১

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩১
writer Mousumi Akter

বসার ঘরে বাবা,খালু,খালামনি,আম্মু আর আয়াস বসে গল্প করছে।আমি অপেক্ষা করছি আয়াসের জন্য।ও রুমে আসলে খুব করে সরি বলে দিবো।কিন্তু আমি কিভাবে বলবো সরি।সিনেমার মতো আবেগঘন মুহুর্তের যদি সৃষ্টি করতে পারতাম নিশ্চয়ই ওর রাগ এক মিনিটে পড়ে যেতো।কিন্তু বাস্তব জীবনে অনেক কিছুই বলা যায় না

মনে মনে ভেবে রাখা অনেক কিছুই মুখে আমরা প্রকাশ করতে পারিনা।আমি বাইরে থেকে উঁকি মেরে দেখছি বারবার।আয়াস স্বাভাবিক ভাবেই গল্প করছে।
এমন সময়ে খালু আমাকে ডেকে বললো,
“মা মুগ্ধ একটা পান নিয়ে আয় তো।সাথে মিষ্টি জর্দা ও দিস।”
কথাটা শুনেই মারাত্মক খুশি হয়ে গেলাম আমি।আমিও অনেক্ষণ ধরে ওখানে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না।কিভাবেই বা যেতাম। তারা তাদের জামাই নিয়ে গল্প করছে।আমি নির্লজ্জের মতো কি ওখানে গিয়ে বসতে পারি।বাই এনি চান্স বাবা,খালু কেউ যদি ভাবতো মেয়ে এখন জামাই কে চোখে হারাচ্ছে।ইস কি লজ্জাকর হবে ব্যাপার টা।ভয়ংকর লজ্জার হবে সে ভাবনাটা।বাবার ঘরে গিয়ে পান গোছাতে গোছাতে ভাবছি আয়াস কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।আমি কি খুব বেশী মিসবিহেভ করে ফেলেছি।কিভাবে ওর রাগ ভাঙাবো আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এমন সময় আরহী এলো বাবার ঘরে।আমার মন খারাপ দেখে বললো,
“কি হয়েছে মুগ্ধ,মন খারাপ কেনো?”
“মিসবিহ্যাভ করে ফেলেছি আয়াসের সাথে।”
“যা গিয়ে একটা সরি বলে দে।”
“সাহস পাচ্ছি না।”
“কেনো?”
“খুব বেশী মিসবিহ্যাভ করে ফেলেছি।আয়াস রাগ করেছে।”
“কিন্তু কি নিয়ে।”

“অভির ছবি আমি পোড়ানোর জন্য বের করেছিলাম ঠিক তখন ই আয়াস গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।অজান্তেই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।আমি চাই নি অভি আর আমার ছবি ওর সামনে আসুক।”
“এটা কোনো ব্যাপার ই নাহ।তুই দুলাভাই কে একবার জড়িয়ে ধরলেই হয়ে যাবে।”
“আরে বাবাহ ধরবো তো।বাট পাবো কোথায়।দেখছিস না সবার সাথে বসে আছে।”
“চল আমরা সবাই যাচ্ছি।কিছু একটা বলে দুলাভাই কে তুলে আনবো।”

দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় আরহী আয়নের সাথে মারাত্মক একটা ধাক্কা খেলো।অয়ন এ ঘরের দিকেই আসছিলো।অয়ন ফোন চাপতে চাপতে নিচু দিকে তাকিয়ে ঢুকছিলো।তখন ই আরহীর প্রচন্ড গতিবেগের যাত্রায় পড়ে যায় অয়ন।অয়নের বুকের উপর আরহী কে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।অয়ন এইবার ই শে;ষ লজ্জায়।যে লজ্জা ছেলেটার।
অয়ন লাফ মেরে উঠে বললো,
“ভাবি তোমার বোন ইচ্ছা করেই ধাক্কা মারলো নাকি।”
“আরহী মুখ বাঁকিয়ে বললো,মনে হচ্ছে সিনেমার নায়ক বাপ্পারাজ তাই আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিবো।”

“দুঃখিত আমি বাপ্পারাজ হতে চাই না।তার থেকে ভিলেন ই বেটার।আমি ভিলেন হতে চাই।”
“আই লাইক ভিলেন।”
“ইনডিরেক্ট কি আমায় লাইকের কথা বলছো।”
“হ্যাঁ বলছি।আমার অত টা লজ্জা নেই।ডিরেক্ট ই বলছি আই লাইক ইউ।”
অয়ন খুব জোরে কেশে দিলো।বেচারা ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।এইভাবে বোধহয় কোনো তাকে আগে বলেনি।আরহী হাত বাড়িয়ে বললো,
অয়ন ভাইয়া নিজে তো উঠলেন আমাকে তুলবেন না।প্লিজ হেল্প নি।
অয়ন সেদিকে হাত বাড়ালো না।আমার ইশারা করলো আরহী কে তোলার জন্য।বেচারা আরহী বোধহয় অয়নের হাত ধরে উঠবে বলেই না উঠতে পারার ভান করছিলো।

আমি আরহীকে টেনে তুকে বললাম,
“এসব লাইক করাকরি পরে দেখবো।আমার সাথে চলো তোমরা।”
“অয়ন বললো,কোথায় ভাবি”
“তোমার ভাইয়া রাগ করেছে।ভুল বোঝাবুঝি টা মিটিয়ে দাও।”
“ভাইয়া রাগ করে থাকতে পারবে না।আমি তাকে চিনি।বিশেষ করে ভাবির প্রতি না।”
“ভাবির প্রতি ই রাগ করেছে।শোনো ও ঘরে গিয়ে যে কোনো ভাবে তোমার ভাইয়াকে রুমের বাইরে আনার চেষ্টা করবা।”
“ওকে ভাবি।”
আমরা তিনজন প্রবেশ করতেই আয়াস একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো।আয়াস এর পাশেই খালু বসে আছে।

আমি একটু নিচু দিকে ঝুঁকেখালুর হাতে পান দেওয়ার সময় আয়াসের দিকে তাকালাম।আয়াস দেখছে আমি তাকিয়েছি তবুও খেয়াল করছেনা।আমি বারবার আয়াসের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ও একবার ও তাকাচ্ছে না।ইচ্ছা করেই তাকাচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি।এটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না।আয়াস এমন করছে কেনো?যার তাকানোর জন্য আমি বিরক্ত হয়ে যায় সে এখন তাকাচ্ছেই না
।বিরহ এত ই যন্ত্রণার আগে তো বুঝি নি।এক্ষুনি আয়াস কথা না বললে দম বন্ধ হয়ে মা/রা যাবো আমি।মানুষ বিচ্ছেদ কিভাবে মেনে নেয় সত্যিকারের ভালবাসার।আমার তো এতটুকুতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।বার বার আরহী আর অয়নের দিকে তাকাচ্ছি আমি।এর মানে কিছ একটা করো।
এর ই মাঝে অয়ন বললো, “আমার ঘুম পাচ্ছে আঙ্কেল।বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।”

“বাবা বললো,তাইতো অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমোতে যাও।সকালে কথা হবে।”
“আরহী বললো,দুলাভাই চলুন ঘুমোতে হবে।”
আয়াস আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা মুগ্ধতা আপনার কাছে ঘুমোক।মা মেয়ে সারারাত গল্প করবেন। আমাকে বাড়ি থেকে বলেই এসছে সে আপনার সাথে ঘুমোবে।আমি কিছুই মনে করবো না। বরং আমার আরো ভালো লাগবে।”
আয়াসের এমন কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এটা কি বলছে সে।আম্মু কেনো পৃথিবীর কোথাও আমার ঘুম হবে না। সে রাগ করে থাকলে।তাছাড়া এতদিনে আমার অভ্যাস হয়েছে তার সাথে ঘুমোনোর।সে ছাড়া আমি কিছুতেই ঘুমোতেই পারবো না।হঠাত মন খারাপ তীব্র বেগে ভর করলো। আমার মুখ টা কালো ফ্যাকাসে রংহীন হয়ে গেলো।

“খালামনি বললো, তা কি করে হয় বাবা।তোমাদের ঘরে তোমরা যাও।”
“না না আন্টি,কোনো সমস্যা নেই।আবার কবে আসবে এখানে ঠিক নেই।আপনাদের কাছেই ও ঘুমোক।”
আয়াস উঠে আমার রুমে চলে গেলো।খালামনি আমাকে বলছে আয় তবে মুগ্ধ।আয়াস যখন এত করে বলছে। আমরা গল্প করবো সারারাত।অয়ন আর আরহী দুজন দুজনের দিকে তাকালো।এটা কি হলো।তারা কি ভাবলো আর কি হলো।আমিও তো খালামনির মুখের উপর বলতে পারছি না আমি আয়াসের পাশেই ঘুমোবো।শাড়ির আঁচল কচলাতে কচলাতে খালামির সাথে গেলাম।কিন্তু মন পড়ে আছে আয়াসের কাছে।আমি জানি ওর ও ঘুম হবেনা।
কিছুক্ষণের মাঝে আরহী রুমে প্রবেশ করে বললো,
” আম্মু দুলাভাই এর গ্যাস্ট্রিক প্রব্লেম হয়েছে।মুগ্ধকে পাঠিয়ে দাও।দুলাভাই মুগ্ধকে ডাকছে।”

“খালামনি অতিব্যাস্ত হয়ে বললো,কি হয়েছে চলতো দেখে আসি।”
“আম্মু এত রাতে তুমি কেনো যাবে।গ্যাস সামান্য একটু প্রব্লেম।মুগ্ধ যাক।”
খালামনির দিকে তাকিয়ে বললাম,
“যায় খালামনি।”
“দ্রুত যা।”
আরহী আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো।আমি মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলাম।নিজের রুমে গিয়ে দেখি আয়াস ঘুমোচ্ছে।আসলেই কি ঘুমোচ্ছে নাকি ঘুমের ভান ধরেছে।লাইট অন করেতো সে ঘুমোয় না।আমি আয়াসের কানের কাছে গিয়ে বললাম,
“না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরা হয়েছে তাইনা?”

আয়াস কোনো উত্তর দিলো না।বুঝতে পারলাম এইভাবে হবেনা।নিজেকে অন্যভাবে উপস্হাপন করতে হবে।আয়াসের একটা নীল গেঞ্জি বের করে পরলাম।ঠোঁটে গাড় লাল লিপিস্টিক পরে হাত ভর্তি চুড়ি পরে আয়াসের সামনে গিয়ে বাজিয়ে যাচ্ছি।চুল গুলো খুলে রেখেছি।আমি জানি ও ঘুমোয় নি।শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,
“একজন এর গেঞ্জি পরেছি সে কি তাকিয়ে দেখবে না। নাকি গেঞ্জি খুলে ফেলবো।”
আয়াস চোখ অফ করেই আছে।
“আবার ও বললাম,একজন কি আর কথা বলবে না।তার জন্য মধ্যরাতে সাজুগুজু করেছি।”
তবুও সে চুপ আছে।

“আবার ও বললাম,দেখুন আপনার গেঞ্জিতে আপনার থেকে আমাকে বেশী কিউট লাগছে।”
আয়াস কোনো কথায় বলছে না।আয়াসের দুই গালে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে গালে দাগ লাগিয়ে দিলাম।হুবহু আমার ঠোঁটের মতো দেখাচ্ছে লিপিস্টিক এর দাগ।
আয়াস এখনো চুপ আছে।
এভাবে কেটে গেলো অনেক সময়।আয়াস ইচ্ছা করেই কথা বলছে না।রাত প্রায় দুইটা বাজে।আমার চোখে ঘুম নেই।চেষ্টা করেও আয়াসের চোখ খোলাতে পারলাম না।
আমি এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

“ওকে চলে যাচ্ছি বুঝেছি কেউ কথা বলবে না।ভেবেছিলাম আজ একজনের সাথে প্রচুর প্রেম করবো।একজনের বউ আজ প্রচন্ড রোমান্টিক মুডে আছে।তার বউ ভেবেছিলো আজ কিছু একটা হলে হোক।কিন্তু আফসোস তার বর ঘুমিয়ে পড়েছে।ওকে গুড নাইট আম্মুর পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।এটুকু বলে আমি পেছনে ঘুরে হাঁটা দিতেই আয়াস আমার হাত টেনে ধরলো।”
এবার বোধহয় একটা সুযোগ পেলাম আয়াস কে সরি বলার।আয়াসের দিকে তাকিয়ে দেখি ও চোখ বন্ধ করেই আমার হাত টেনে ধরে রেখেছে।আমি খুব মলিন কন্ঠে বললাম,

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩০

“আর কি কথা বলবেন না আমার সাথে।আর কতক্ষণ আমার সাথে কথা না বলে থাকবেন।দেখুন আপনি কিন্তু এমন করতে পারেন না।আপনি আমাকে অন্য যা শাস্তি দিবেন দিন কিন্তু কথা না বলে থেকে এমন ভয়ংকর শাস্তি দিবেন না।সরি!ভীষণ সরি।আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন।আপনি আমাকে ইগনোর করলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।আমার তখন ওইভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিত হয়নি।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।আসলে আমার হাতে অভির চিঠি ছিলো।আমি ওগুলো পুড়য়ে ফেলার জন্য বের করেছিলাম।আপনি দেখলে যদি ভুল বুঝতেন।তাই ভয়ে ওইভাবে রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলাম।কথাগুলো বলে কেঁদে দিলাম।”
আয়াস এবার চোখ মেলে তাকালো।আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩২