তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩২

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩২
writer Mousumi Akter

আয়াস আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সেই চোখে আছে শিথলতা।তার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার প্রভাব পড়ছে নিজের ভেতরে।সে কি আমায় ক্ষমা করেছে নাকি করে নি।ঠিক বুঝতে পারছি না।আয়াস কি এখন হেসে দিয়ে কথা বলবে নাকি গম্ভীর মুডে বলবে আমাকে বিরক্ত করো না।
আমি চোখ দিয়ে পানি ফেলে বললাম,
“এখনো?এখনো চুপ করে থাকবেন?”
আয়াস এবার কপাল টানটান করে তাকালো আমার দিকে।
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় অভিমানী সুরে বললাম,
“আপনি কি বুঝতে পারছেন না আপনার এ চুপ থাকায় আমি কেমন ভয়ানক যন্ত্রণায় ছটফট করছি।পৃথিবীতে চুপ থাকার থেকে ভয়ঙ্কর শাস্তি আর নেই।আমি আপনাকে এতদিন এত বড় শাস্তি দিতে পারিনি যা আজ আপনি আমাকে দিয়েছেন।আমি দিয়েছি বলুন দিয়েছি।আপনাকে এত শাস্তি দিয়েছি বলুন।”
আয়াস আমাকে আরেক টু টান দিয়ে কাছে নিয়ে বললো,

“দিয়েছো প্রিয়তমা।”
আমার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেলো।দীর্ঘক্ষণ পর সে আমার সাথে কথা বলেছে। আমার অনুভূতি টা এমন যেনো তাকে হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছি।জীবনের সব সুখ শান্তি হারিয়ে যাবার পরে যেনো এক চিলতে সুখ পাওয়ার মতো আনন্দ আমার মনের মাঝে।মন থেকে ভালবাসলে সে ভালবাসার অনুভূতি কি দারুণ তাইনা।এই পৃথিবীর সব দুঃখের কারণ সে আবার সেই পৃথিবীর সব সুখের কারণ সে।সে পারে জীবন টা সুখ থেকে এক সাগর দুঃখে পরিণত করতে আবার সেই পারে জীবন টা দুঃখ থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট সুখী মানুষ করতে।এই অনুভূতি গুলো জীবনে সত্যিকারে ভালবেসেছে প্রত্যোকেই পেয়েছে।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গিয়েছে আমার।
হেচকি উঠা অবস্থায় বললাম,
“কিভাবে দিয়েছি?আগে আপনার সাথে যা করেছি তা ভাবলেও নিজেকে ছোট মনে হয়। আপনার অযোগ্য মনে হয় নিজেকে।”
“প্লিজ প্রিয়তমা,পাষ্টের কথা তুলবে না।আমি তখন কোনো কষ্ট পাইনি।বরং ইনজয় করতাম ব্যাপার টা।কারো ভালবাসা আদায় করে নেওয়াটা বিশ্বজয় এর মতো।এইযে চোখের পানি ফেলে আমাকে কষ্ট দিলে কেনো?তুমি নারী তবে অসাধারণ নারী তুমি।যে নারী দূরে ঠেলে দিতে পারে,আবার নিমিষেই কেঁদে কেঁদে কাছে টেনে নিতে পারো।খুব জানতে ইচ্ছা করে সৃষ্টিকর্তা নারীর মাঝে কি বিশেষ পাওয়ার দিয়েছেন।যার হাসি ভয়ংকর মায়াবী,কাঁন্না ও ভয়ংকর মায়াবী।এই নারী শুধু তার কাছেই টানে দূরে যেতে দেয়না। এত নিঁখুত সৃষ্টি নারীকে করেছেন যার সৌন্দর্য আজীবন দেখলেও ফুরাবেনা।আমার জন্য সৃষ্টি করা নারীটা একটু বেশী সুন্দর তাইনা?বড় চুল,টানা চোখ,দুধে আলতা শরীর,পাতলা ঠোঁট একটু বেশী সুন্দর না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে বললাম,
“আপনি কি আর রেগে নেই।’
“আমি রাগ করেছিলাম কে বললো।”
“তাহলে কথা বলছিলেন না কেনো?”
“দেখছিলাম।”
“কি?”
“আমার বউ এর আমার জন্য কতটা টান।”
“শুধু এটা দেখার জন্য আমাকে এত কষ্ট দেওয়া।”
“না আরেক টু কাছে পাওয়ার জন্য ও।আমি জানতাম আজ তুমি আমার কাছে আসবেই।কিন্তু মধ্যরাতে যে এইভাবে আমাকে স্ট্রোক করানো লুকে হাজির হবে ভাবতেই পারিনি।আজ কিন্তু অন্য রকম কিছু হলেও হতে পারে।আর ইউ রেডি প্রিয়তামা।বলেই আয়াস হাতে চুমু দিলো।”
এইবার সত্যি সত্যি লজ্জা পেলাম।আয়াসের হাত ঝাড়ি মেরে খানিক টা দূরে সরে দাঁড়ালাম।ইস কি ভয়ানক লজ্জা।তার রাগ ভাঙাতে আমি গেঞ্জি পরে তার সামনে চলে এসেছি।তখন তো এসব কোনো হুঁশ ই ছিলো না।কিন্ত এখন তো ভীষণ লজ্জা করছে।লজ্জায় সম্পূর্ণ মিহিয়ে যাচ্ছি আমি।

আয়াস বিছানা ছেড়ে উঠে এলো আমার কাছে।পেছন থেকে দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
“বেবিডল আজ তোমায় পুরাই বেবিডল লাগছে।আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেনো বলোতো।যখন শাড়ি পরতে মনে হতো শাড়ি পরলে তোমাকে বিশ্বসুন্দরী মনে হয়।থ্রি পিছ পরলেও বিশ্বসুন্দরী মনে হয়।এখন গেঞ্জিতেও বিশ্বসুন্দরী মনে হচ্ছে।আচ্ছা এখন আমি কি করবো বলোতো।নিজেকে তোমার থেকে এই মুহুর্তে কিছুতেই দূরে রাখতে পারবো না।যদি কোনো বড় ধরনের অনর্থ হয়ে যায় আমাকে দোষ দিও না প্লিজ মুগ্ধতা।আমি হারিয়ে যেতে চাই তোমার মাঝে।”
আয়াসের হাত ছড়িয়ে আয়াসের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি।চোখে মুখে পৃথিবীর সব লজ্জা নিয়ে দাঁড়ালাম আয়াসের সামনে।
আয়াস আমার মুখের সামনে পড়া চুল গুলো হাত দিয়ে কানের নিচে গুজে দিয়ে ওষ্ট ডুবালো গালে।আমি কয়েক হাজার গতিবেগে কেঁপে উঠলাম বিদ্যুৎ তরঙ্গের ন্যায়।লজ্জায় আবার ও তুফানের গতিরে আয়াসের হাত ছড়িয়ে ছুটে গিয়ে ওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম।লজ্জায় শরীর কাঁপছে আমার।আয়াসের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।ওর চোখে ভয়ানক নেশা।আয়াস আস্তে ধীরে আমার কাছে এসে ওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়ালো নেশাক্ত কন্ঠে বললো,

“আচ্ছা প্রিয়তাম এভাবে দূরে পালাচ্ছো কেনো?যদি কিছু ভুল হয় তো হোক না।কোনো ক্ষতি নেই তো।”
দুরু দুরু করছে বুকের মাঝে।স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি ওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে।আয়াস ক্রমশ ও এগিয়ে আসছে।আয়াসের ওষ্টে ভীষণ নেশা।আমার মুখের কাছে সম্পূর্ণ এগিয়ে আসতেই সম্পূর্ণ চোখ বন্ধ করে প্লাজু খামচে ধরে মুখ কাত করে রইলাম।আয়াস আমার দুই হাত ধরে আঙুলের ভাজে ভাজ রেখে ঘাড়ে ওষ্ট স্পর্শ করলো।বিদ্যুতের গতিতে কেঁপে উঠলাম আমি।হৃদপিন্ড এ হাতুড়ির বাড়ি দুরুম দুরুম করে দিচ্ছে।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসছে।আয়াসের তপ্ত নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে আমার মুখে।অনুভূতিতে মিশে ছিলো লজ্জা আর ভালবাসা।কিছু অনুভূতি লজ্জার হলেও ভীষণ ভাললাগার হয়।আয়াস ও দুই ওষ্ট আমার ওষ্টে মিলিয়ে কতক্ষণ ছিলো আমার খেয়াল নেই।আমিও ডুবে গিয়েছি ওর সাথেই।কিছুক্ষণ পরে লজ্জায় আমি ওর দিকে তাকাতেই পারছি না।লজ্জায় এক ভাবে তাকিয়ে আছি ফ্লোরের দিকে।কোনদিকে তাকাতে পারছি না।মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে ভ্যানিশ করে দিক।নহলে আমাকে অদৃশ্য করে দিক।এত লজ্জা কই রাখি।এই লজ্জাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে দিলো আয়াস। পাজা কোলে বিছানায় তুলে নিলো।আয়াসের আদর আর ভালবাসা আমার ও ভালো লাগছিলো।নিজের ভার হওয়া শরীরের ভার আয়াসের উপর ছেড়ে দিলাম।ছন্দে আনন্দে ভালবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হলো।এটা ছিলো ভালবাসার নতুন অভিজ্ঞতা।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠ দেখি আমার পাশে আয়াস নেই।আয়াস কোথায় গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৯ টা বাজে।ছিঃছিঃ বাড়ির সবাই কি ভাববে।গতরাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জা লাগছে আবার এত বেলা করে উঠেছি তার জন্য ও লজ্জা লাগছে।বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শাড়ি পরে বাইরে গেলাম।এদিক ওদিক কোথাও আয়াস নেই।আম্মু আর খালামনি ডায়নিং টেবিল জুড়ে খাবার রেখেছে।আমি ঘুম থেকে উঠে আসতেই আম্মু বললো,
“উঠেছিস মা,আয় পিঠা খেয়ে নে।”
আমাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে আম্মু বললো,
“তোর খালামনি,খালু,বাবা, আয়াস,স্রুতি,অয়ন,অহনা সবাই আমাদের আমবাগানে গিয়েছে ঘুরতে।”
আমি একটা পিঠা খেতে খেতে বললাম,
“আমাকে নিলো না আম্মু।”
“তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে কিভাবে নিবে।আয়াস বললো তোমার নাকি মাথায় পেইন হয়েছিলো তাই কাল রাতে ঘুমোও নি।এইজন্য আর ডাকিনি।”
মনে মনে বললাম ভালোই কথা ঘুরাতে পারে।নিজে ঘুমোতে দেয় নি তা না।আমার মাথায় যন্ত্রণা হয়েছিলো।আম্মুকে বললাম,
“আয়াস কখন উঠেছিলো আম্মু।”

“আয়াস তো ভোর ছয়টায় উঠেছে। সবার আগে দেখি উঠেছে।”
উফ বাঁচলাম আয়াস তাহলে আর আমার মতো দেরি করে নি।আয়াস দেরি করলে ভীষণ লজ্জার হতো ব্যাপার টা।
সকাল দশটার দিকে সবাই ঘুরাঘুরি করে বাড়িতে ফিরলে আম্মু সবাইকে খাবার খেতে দিলো।আয়াস বারবার ইশারা করছে ওর পাশে বসার জন্য কিন্তু আমি লজায় বসছি না।আমি,আয়াস,অয়ন স্রুতি আর আরহী এক টেবিলে বসেছি।বাবা, আর খালুকে রুমে খেতে দিয়েছে।বাবা আর খালু আমাদের সাথে খাবেনা। তাছাড়া চেয়ার ও ছয়টা।আয়াসের ইশারা দেখেও আমি না দেখার ভান করে আছি।আরহী ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আমাকে ধরে নিয়ে আয়াসের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো।আমি আয়াসের দিকে লজ্জায় তাকাচ্ছি না।আয়াসের বাম পাশে শ্রুতি বসা।আয়াস খাওয়ার মাঝে প্রায় শ্রুতির গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।অয়ন আরহী যে যার মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে।আয়াস সবার অগোচরে আমার হাত চেপে ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“তোমার হাতে খেতে মন চাইছে। ”
আমি হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,
“ছাড়ুন ওরা দেখবে।”

হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।অয়ন উঠে এসে শ্রুতির গালে এক টুক রো মাংশ দিয়ে বললো,
“মাই পিয়ারী বিয়াইন সাহেবা এক টুকরো মাংশ নাও।”
“শ্রুতি মাংশ নিয়ে বললো থ্যাংকিউ ভাইয়া।”
“অয়ন বললো খুব কিউট করে কথা বলোতো তুমি পিচ্চি।”
“আমি আর পিচ্চি নেই।আমার বন্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড আছে।খালি আমার ই নেই।”
“কি সাংঘাতিক কথা। তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই কেনো?কেউ প্রপোজ করে নি।”
“আমার এসব প্যারা লাগে।কত প্রপোজ পেলাম জীবনে।সেদিন ক্লাসের এইটের এক ভাইয়া আমাকে বলেছে তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।আমাদের বেবি হলে তার নাম রাখবো পুতুল।”
“আমিও তোমাকে প্রপোজ করতে চাই।আমাকেও কি রিজেক্ট করবে।আমাদের বেবি হলে আমিও নাম রাখবো প*রী।”
“আমার এখন প্রেম করার সময় নেই।”
“আয়াস প্রচন্ড জোরে হেসে দিলো।আমিও হাসলাম।আরহী বলছে তুই এত পেকেছিস কেনো রে।আল্লাহ জানে কয়টা প্রেম করবি বড় হয়ে।”
“আমি এখন ই যথেষ্ট বড় আপু।”

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩১

“শ্রুতিকে বললাম,আজ আম্মকে যদি না বলেছি দেখিস।”
“আয়াস বললো,আমার শালিকার নামে কোনো নালিস হবেনা। আমি আছিনা।তোমার আপু তোমার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমাকে বলবে সোজা।”
আমি খাওয়া শেষে রুমে চলে এলাম হাসতে হাসতে।আয়াস আমার পিছ পিছ এসে আমার গালে চুমু দিয়ে বললো,
“খাইয়ে তো দিলে না আমার হাতেও খেলে না নাও চুমু খাও।”

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩৩

1 COMMENT

Comments are closed.