ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২১

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২১
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অয়ন একটা কাগজ হাতে নিতেই হঠাৎ করে অয়নের পিছন থেকে অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— কি করছো তুমি?
কথাটা অয়নের কানে পৌঁচ্ছাতেই অয়ন একটু কেঁপে উঠল। মুখ ঘুরিয়ে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো সে। অধরা অয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে আবার অয়নের চোখের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন মৃদু হেসে অধরাকে বলল
— না আসলে ঐ হ্যান্ড ওয়াচটা বের করতে গিয়ে দেখি এই কাগজ গুলো এলোমেলোভাবে পরে আছে। তাই দেখছিলাম।
অয়নের কথা শেষ হতেই অধরা অয়নকের হাত থেকে কাগজ গুলো কেরে নিয়ে ড্রয়েরে রেখে দিলো। অধরা ড্রয়ের বন্ধ করতে করতে অয়নে বলল

— অফিস কখন যাবে?
— এইতো এখনি।
— হুম সাবধানে যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
অধরা ফ্রেশ হতে চলে যায়। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। অয়ন ভাবছে অধরা কাগজটা তার হাত থেকে নিয়ে নিলো কেনো? বেশি কিছু ভাব্বার সময় নেই। লেট হয়ে যাচ্ছে তার। অয়ন নাস্তা করে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।
— কিরে অধরা এমন নিশ্চুপ হয়ে আছিস। কি হয়েছে? নতুন কোনো ঝামেলা! অয়ন আর তোর মধ্যে সব ঠিক তো?
রোজের কথায় অধরার ঘোর কাটে। মৃদু কেঁপে উঠে সে। অধরা রোজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।
অধরার উত্তরটা রোজের মনের মতো হলো না। রোজ ভ্রূ কুঁচকে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমার থেকে সত্যি আড়াল করা এতো সহজ না অধরা‌। আমি যা জিজ্ঞাসা করেছি তার ঠিকঠাক উত্তর আমার চাই। বল কি হয়েছে?
অধরা রোজের কথা শেষ হবার পূর্বেই নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রোজের দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আনমনে বলতে লাগলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— মানুষের জীবনটা এমন অদ্ভূত কেনরে রোজ? যখন মানুষ নিজের জীবনে সব কিছু ফিরে পায় ঠিক তখন কিছু কঠিন সত্যি চোখের সামনে এসে ধরা দেয়। যেই সত্যি গুলো না নিজে মানতে পারে আর না তাদের প্রিয়জন মানতে পারে। সত্যি গুলো এতোটাই কঠিন যে একেকটা দিন একেকটা মুহূর্ত নিজের জীবন থেকে হারিয়ে যায় আর মানুষ ধিরে ধিরে অজানায় এগিয়ে যায়। বলা দায় যে সামনের পথ গুলো কেমন হবে? কি হবে? কেমন হবে? সত্যি অদ্ভুত জীবন।
অধরার গভীর কন্ঠের ক্ষতবিক্ষত অপ্রকাশিত কথা গুলো রোজের বোধগম্য হচ্ছে না। রোজ কিছুটা কম্পিত কন্ঠে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মানে? এতো কঠিন শব্দের মানে কি অধরা? খোলসা করে বল কি হয়েছে? প্লিজ!
অধরা অকাট্য হেসে দিয়ে রোজের দিকে পুনরায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রোজকে চিহ্নিত দেখে অধরা রোজের কাছে গিয়ে বলে
— আরে তেমন কিছু না। ভাবলাম একটু মজা করি তোর সাথে। আচ্ছা শোন কাল থেকে আমি আর অফিসে আসবো না।
— কেনো?
— নারে ভাবছি সংসার সামলাবো। অয়নের সাথে আর দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাই না আমি।
— আচ্ছা তা না হয় ঠিক আছে। তবে আমি কিন্তু রোজ তোকে দেখতে যাবো।
— ওরে আমার লক্ষী বোনরে তুই যাস। তুই আসবি না তো কে আসবে শুনি?
— হুম।

অধরার রহস্যময়ী কথা গুলো রোজের মনের মধ্যে আচর কেটে দিলো। কি বোঝাতে চায় অধরা? অধরা সত্যি সত্যি ঠিক আছে তো? কথাটা মনের মধ্যে খটকা তৈরি করে তার। অধরা অফিসে কাজ করতে লাগলো। কিছু সময় যেতেই অধরার ফোন বেশ শব্দ করে বেজে উঠল। অধরা ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো ফোনের স্ক্রিনে অয়নের নামটা ভাসছে। অধরা কলটা পিক‌ করতেই ওপার থেকে অয়ন বলছে তাকে উদ্দেশ্য করে
— অধরা কি‌ করছো? ব্যস্ত না কি‌ ফ্রি?
অয়নের মৃদু কন্ঠ শুনে এক মিনিটের মধ্যে অধরার মন ভালো হয়ে যায়। অধরা মৃদু কন্ঠে জবাব দিলো
— এই একটু কাজ করছিলাম। ফ্রি আছি। কেনো কি হয়েছে?
— আর কি হবে? যেভাবে কাজে ফাঁকি দিচ্ছো তোমাকে তো পানিসমেন্ট দিতে হবে।
— ওমা কি কাজে ফাঁকি দিলাম আমি?
— এই যে আমাকে আর ভালোবাসো না। এটাকি কম নাকি ফাঁকিবাজি করার!
অয়নের কথা শুনে মুচকি হেসে ফেললো অধরা। অয়ন ও ফোনের ওপার থেকে হাসছে। অধরা ঠোঁটে সাথে ঠোঁট চেপে ধরে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— উমমমমম! তা কি পানিসমেন্ট ধার্য করা হয়েছে জনাব? আমাকে কি দয়া করে অবগত করবেন?
— অবশ্যই জনাবা। আপনাকে আজ অফিস থেকে নিয়ে সোজা আমরা চলে যাবো অনেক দূরে। এমন একটা জায়গায় যাবো যেখানে আপনি আর আমি। যাবেন তো আমার সাথে?
— আহহহ, জনাব আপনার সাথে তো আমি মরতেও যেতে পারি। সামান্য ঘুরতে যেতে পারবো না। তা কি করে হয়?
— জ্বি।
* অধরার সাথে বেশ কিছু সময় কথা বলার পরে অয়ন কলটা কাট করে‌। মনটা খুশি হয়ে যায় দুজনের। প্রিয়জনের সাথে কথা বলার পর যে মানুষিক প্রশান্তি আসে তা ব্যক্ত করার সাধ্য নেই। অয়ন মন দিয়ে কাজ করতে লাগলো। বিকেলের দিকে অয়ন অফিসের সকল কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অধরাকে কল করে অয়ন অফিসের সামনে অপেক্ষা করতে বলে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পিছনের অতিতের পাতায় বিচরণ করছে।

— উফফফ অয়ন জানো আমার না এই লং ড্রাইভে যেতে সেই ভালো লাগে।
— হুম জানি না আবার। আপনি কি জানেন মিস আপনাকে নিয়ে লং ড্রাইভে ঘুরতে যেতে আমারও ভালো লাগে তবে এই লং সময় আপনার ড্রাইভার হয়ে থাকাটা ভেরি পেন ফুল।
— ওহহহ, তাই নাকি! ভেরি পেইন ফুল তাই না। সরাসরি বলে দেন আমিও পেইন ফুল।
— তা তো বটেই।
— কিহহহহহ!
— আরে না না আমি বলতে চেয়েছি তুমি পেইন ফুল কেনো হবে? তুমি তো শুধু ফুল। আমার ফুল।
— হুম। হয়েছে হয়েছে আপনার মনের কথা আমি জানি। সো নাটক করতে হবে না।
— তাই একটু দেখাও তো আমার মনের কথা গুলো কি?

কথাটা শেষ করতেই অয়ন ধিরে ধিরে অধরার দিকে এগিয়ে আসে। অধরা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অয়নের দিকে। “এ কেমন লোক? খোঁচা মেরে কথা বলে এখন আবার চুমু দিতে আসে”! মনে মনে বলল কথাটা। অধরাও অয়নের দিকে এগিয়ে এসে আলতো করে অয়নের ঘাড়ের পিছনে হাত দিতেই অয়ন গাড়িটা ব্রেক করে। অধরা অয়নের মতলব বুঝতে পেরে মুচকি হেসে অয়নের কানটা আলতো করে স্পর্শ করে‌‌। ইতি মধ্যে অয়নের অবস্থা দেখার মতো হয়ে গেছে। অয়ন শিহরণে একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে। অধরা দুম করে অয়নের কানে শক্ত করে ধরে মুলে দিতে লাগলো। অয়ন অবাক হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চিৎকার করে উঠল।
— উফফফফ! অধরা উফফফফ! প্লিজ ছাড়ো ছাড়ো আহহহহহ! লাগছে আমার।
— লাগুক। বড্ড ফাজিল হয়েছো। সময় বুঝলে না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে শুরু হয়ে যাও।
— আর করবো না‌। উফফফফ!
— ভদ্র ছেলের মতো গাড়ি স্টার্ট করো।
— ঠিক আছে।

* অধরা অয়নের কান ছেড়ে দিতেই অয়ন অধরার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। অধরা খিলখিল করে হাসছে অয়নের কান্ড দেখে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো আর অধরা অয়নের কাঁধের উপর মাথা রেখে শান্তিতে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
অতিতের দিন গুলো আজ বড্ড মনে পরছে তার। “এতোটা সুন্দর মূহুর্ত আমরা এক সাথে কাটিয়েছি যা ভাবলেই মনে হয়‌ স্বপ্ন ছিলো সব”। অয়ন গাড়ি নিয়ে চলে আসে রোজের অফিসের সামনে। অফিসের সামনে আসতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অধরার বেশ কাছে গাড়িটা ব্রেক করে গাড়ি থেকে নেমে পরলো। অধরার দিকে অয়ন দৃষ্টিপাত করতেই অয়ন অবাক হয়ে যায়। ম্যাম রেগে বোম হয়ে আছে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে কোমল কন্ঠে বলল
— জনাবা আই এম রিয়েলি সরি। আসলে জ্যাম ছিলো তাই লেট হয়ে গেছে।
অধরার রেগে গাল ফুলিয়ে বলল “হুম” অয়ন আবারও অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল ” সরি তো আর লেট হবে না আমার” অধরার আরও রেগে গিয়ে ফেটে পরলো। বিক্ষিপ্ত কন্ঠে অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সব সময় লেট করে এসে এটাই বলবে তুমি। এতো কিছু বলতে হবে না। জানো আমি কতটা সময় এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তুমি একটা…..

অধরাকে থামিয়ে দিয়ে অয়ন চিৎকার করে বলতে লাগলো
— থামো আমি বলছি। অয়ন তুই একটা বাজে ছেলে। খুব বাজে। তোর মতো সেন্সলেস মানুষ হয় না। কোনো কান্ড জ্ঞান নেই তোর। হ্যাঁ সব সময় নিজের বউ অপেক্ষা করার। অধরা দেখে কিছু বলে না। অন্য কেউ হলে এতো দিনে তোর অবস্থা ভর্তা হয়ে যেতো।
— এই অন্য কেউ মানে? একদম খুন অরূপ দিবো তোকে। ফাজিল‌।
অয়ন কান‌ ধরে অধরার দিকে ঝুঁকে বললো
— হ্যাঁ তুমি শুধু। প্লিজ সরি ক্ষমা করে দাও।
— হুম হয়েছে চলো।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২০

অয়ন কান ধরলে অধরার অভিমান কমে যায়। তবে এটা সব ক্ষেত্রে নয়। অধরা গাড়িতে উঠে বসলো। অয়ন গাড়ি স্টার্ট করে অধরাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিসের থেকে। গাড়ি আপন গতিতে চলছে। অধরা অয়নের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। নিরবতা পরিস্থিতি। অধরা অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে অয়নের কাঁধের উপর মাথা রাখলো‌। সকল নিরবতা ভেঙ্গে অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন সব সময় আমাকে আগলে রাখবে তো নিজের কাছে? কখনও আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো?
অয়ন অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
— কোনো দিন না। আমি তোমাকেই আসক্ত হয়ে থাকবো চিরকাল।
— হুম।
অয়নকে পরম আবেশে শক্ত করে অধরা জাপটে ধরে আছে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে। হঠাৎ করে অধরা অয়নকে অবাক করে দিলো। অধরা অয়নের কাঁধের উপর মাথা রেখে হঠাৎ করতেই…………………………….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২২