ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২২

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২২
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা অয়নের কাঁধের উপর মাথা রেখে হঠাৎ করতেই অধরার অয়নের দিকে নিস্তেজ হয়ে নেতিয়ে পড়ে। অয়ন গাড়ির সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু বিচলিত কন্ঠে অধরাকে ডাকছে। আফসোস অধরার কোনো রিস্পন্স নেই। অয়ন গাড়িটা কোনো মতে সাইড করে ব্রেক করলো। গাড়ি থেমে যাতেই অয়ন অধরার গালে আলতো করে হাত রেখে অধরাকে ডাকছে। অধরা নিশ্চুপ। অয়ন অধরার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। “না অধরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এখন কি করবো আমি? কি হয়েছে ওর? এই তো দিব্বি ভালোই ছিলো‌ হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো”? অয়ন ছলছল দৃষ্টিতে অধরা দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে অধরাকে বলছে

— অধরা প্লিজ চোখ খোলো! কি হয়েছে তোমার? প্লিজ বলো কিছু আমায়!
অয়ন আর সময় নষ্ট করলো না। অধরাকে কোনো মতে গাড়িতে তুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের দিকে। অয়ন বেশ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে। অয়নের মাথা কাজ করছে না। “কি হলো অধরার”? এই প্রশ্নটা তাকে ভিশন চিহ্নিত করে তুলেছে। হাসপাতালে আসতেই অয়ন অধরাকে কোলে তুলে নিলো। অধরাকে কোলে করে নিয়ে চলে আসে হাসপাতালের কেবিনে। বেডে অধরাকে শুয়িয়ে দিলো অয়ন। অধরাকে এখনও অজ্ঞান দেখে অয়ন চিৎকার করে ডক্টরকে ডাকতে লাগলো। ডক্টর বেশ দ্রুত চলে আসে কেবিনে। ডক্টর এসে অধরাকে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে। কিছু ইনজেকশন দিয়ে দিলো অধরাকে। অতঃপর ডক্টর অয়নে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এখানে ভিড় করবেন না। আমার কেবিনে গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমি আসছি।
অয়ন ডক্টরের উদ্দেশ্য হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অধরার হাতটি শক্ত করে ধরে অধরার কপালে চুমু খায় অয়ন। নার্স অধরাকে দেখছে। অয়ন অধরার কেবিন থেকে চলে যায় ডক্টরের চেম্বারে। ডক্টরের চেম্বারে যেতেই অয়ন দেখতে পেলো ডক্টর বসে আছে। অয়ন ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ডক্টর অধরার কি হয়েছে? আমরা একটু বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছি। সব কিছু তো ঠিক ছিলো। হঠাৎ অধরা নিস্তেজ হয়ে পরে। আমি ওকে অনেক সময় ধরে ডাকার পরে বুঝতে পারলাম ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ডক্টর সব ঠিক আছে তো? কোনো সমস্যা হয়নি তো অধরার?
অয়নের কথার বিপরীতে ডক্টর শক্ত গলায় বলল
— দেখুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছে। তাই বেশি এস্ট্রেস নিতে পারছে না। হয়তো এর জন্য উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তবে একটা কথা কেনো জানি আমার অন্য কিছু মনে হচ্ছে। তবে যাই হোক এখন কিন্তু আপনার স্ত্রীর একদম রেস্টের দরকার। আর মানুষিক ভাবে তাকে সব সময় টেনশন ফ্রি রাখার দায়িত্ব টা কিন্তু আপনাকেই পালন করতে হবে। আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছি। এই গুলো কনটিনিউ করুন। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।

* অয়ন ডক্টরের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে। একটু চিন্তা হচ্ছে অয়নের। ডক্টর কি সংকা করছে? অধরার কোনো সমস্যা নেই তো? কথা গুলো ভাবতে ভাবতে অয়ন অধরার কেবিনে চলে আসে। কেবিনে আসতেই অয়ন দেখতে পায়‌ অধরার জ্ঞান ফিরেছে। অয়ন মৃদু হেসে অধরার কাছে গিয়ে বসলো। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সরি গো আসলে মাথাটা ঘুরছিলো। তাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। তোমার খুশিটা মাটি করে ফেললাম। সরি, ক্ষমা করে দাও।
অয়ন অধরাকে কিছু না বলে অধরার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। অধরা অয়নের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন অধরার কপালে চুমু খেয়ে অধরাকে জড়িয়ে ধরে। অধরা অয়নের বুকে মাথা রাখতেই অয়ন ফিসফিস করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— তুমি ঠিক আছো এটাই আমার কাছে অনেক। আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
কথাটা শুনে অধরা পরম আবেশে অয়নকে জাপটে জড়িয়ে ধরে।

* হাসপাতাল থেকে অয়ন অধরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরতেই অয়ন অধরাকে রুমে নিয়ে যায়। অধরা বিছানায় শুয়ে একটু রেস্ট করছে। অয়ন সোফার উপর বসে অফিসের কিছু কাজ করে নিচ্ছে। কিছু কাজ করে নিতেই অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে অধরার বাবা কল করেছেন। অয়ন কলটা পিক করতেই অধরার বাবা অয়নকে অবাক করে দিলো। উনি বেশ রাগি কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলেন
— আমার মেয়ে কোথায়? কি হয়েছে আমার মেয়ের? তোমার কোনো রিসপন্সেবেলেটি নাই? অধরা অসুস্থ হয়ে পরেছে এটা আমাদের জানানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই তোমার? এতোটা বেখালি কি হলে হতে পারে মানুষ?

— বাবা আপনি শুধু শুধু রিয়েক্ট করছেন। অধরা অসুস্থ হয়ে পরেছে আমি ওকে ডক্টর দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এখানে আপনাদের টেনশন দিতে চাইনি বলে জানাইনি‌। আর শুনুন বাবা বেয়াদবি ক্ষমা করবেন। যেখানে অধরার স্বামী উপস্থিত আছে। সেখানে অন্য কারো থাকা আবশ্যক নয়।
অয়নের কথা শুনে অধরার বাবা বেশ রেগে গেলেন। উনি অয়নকে উল্টা পাল্টা ভাষায় কটাক্ষ করে কথা বলতে লাগলেন। অয়ন ফোনটা লাউড স্পিকারে রেখে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। অধরা তার বাবার কথা গুলো শুনে মাথাটা নিচু করে আছে। অভার রিয়েক্ট করছেন উনি। অয়ন ফোনটা কাটো করে দিতেই অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— অয়ন প্লিজ তুমি মনে কিছু করো না। উনি আমার বাবা তাই আমার জন্য চিন্তা হচ্ছে এটা স্বাভাবিক। তুমি ওনার কথায় কিছু মনে করো না। উনি রাগের মাথায় এসব বলছে।

— অধরা তা না হয় বুঝতে পারলাম। তবে মার এই ছোট মাথায় এটা ঢুকছে না যে ওনাকে কে জানালো তুমি অসুস্থ? আর আমি বুঝতে পারছি না উনি বরাবর আমার সাথে এতোটা রুড বিহেব কেনো করেন? মানে আমি সত্যি বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব?
অয়ন রাগে সোফার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরাও একটু অবাক। যদিও কেউই অধরার বাবাকে কল করে জানায় নি। তবে জানলো কি করে? অয়ন রেগে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা চুপ করে বিছানায় বসে আছে।
* রাতের খাবার সময় অয়ন অধরাকে ডাততে রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা ঘুমিয়ে আছে। অয়ন অধরাকে বিরক্ত না করে রুম থেকে আবার নিচে চলে আসে। খাবার টেবিল থেকে অয়ন একটা প্লেটে করে কিছু খাবার নিয়ে আবার রুমে ফিরে আসে। প্লেটা সোফার সামনে টি টেবিলের উপর রেখে অয়ন অধরার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে অধরাকে ডাকছে।

— অধরা ওঠো প্লিজ। খাবার খাবে না?
অধরা ঘুমো ঘুমো কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— উহু আজ খেতে ইচ্ছে করছে না। কাল খাবো।
— তা বললে কি করে হয়? চোখ খোলো না হলে কিন্তু অন্য ব্যবস্থা করবো।
অয়নের কথা শুনে অধরা দ্রুত চোখ খুলে উঠে বসে পরলো। অয়ন অধরার কপালে চুমু খেয়ে প্লেটটা এনে নিজ হাতে অধরাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। খাবার অধরার মুখের সামনে নিতেই অধরা অয়নের হাত ধরে ফেললো। অয়ন প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অধরা ভারি কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই ওয়েট। তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছো কেনো? এই খাবার আমি মুখে নিবো না। আগে তুমি মুখে নাও। বলা যায় না বিষ মিশিয়ে আননি তো আবার!

অধরার কথাটা শুনে অয়নের হাস্যজ্বল চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কথাটা অয়নের বুকে এসে আঘাত করে। যে অয়ন এতোটা ভালোবেসে অধরার জন্য নিজে খাবার নিয়ে এলো। সেই অয়ন নাকি খাবারে বিষ দিবে! অয়ন কিছু সময়ের জন্য থমকে যায়। চোখ জোড়া ছলছল হয়ে আসে অয়নের। অয়ন অনেকটা কষ্ট করে নিজের ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে আসে। খাবারটা অধরার দিকে থেকে নিজের দিকে নিয়ে এসে নিজের মুখে খাবারটা তুলে চুপটি করে খেয়ে নিলো অয়ন। খাবার গলা দিয়ে নামতেই অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— এবার বিশ্বাস হলো তো খাবারে বিষ নেই?
— হ্যাঁ। এইবার আমি খাবার খেতে……….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২১

* অয়ন অধরার কথার মাঝেই নিজের হাতে রাখা খাবারের প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দিলো ফ্লোরে। অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন অধরার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অধরার দিকে বাকা হাসি দিয়ে বলল
— জানো তো অধরা সবাই যেমন ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা রাখে না। ঠিক তেমনি সবাই কেয়ার পাবার মতো যোগ্য হয়ে ওঠে না।
কথাটা শেষ হতেই অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায় ছাদে। এই উন্মুক্ত ছাদের বিশালতা অয়নের মনে তৃপ্তি দেয়।
* অধরা নিজের রুমে বসে আছে। কি হলো কিছুই তার মাথায় ঢুকলো না। অধরা বিছানা থেকে উঠতেই……………….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৩