ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৬

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৬
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অয়ন দেখতে পেলো ড্যান্স ফ্লোরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে অধরা।‌ অধরা একা ছিলো না। কিছু ছেলেও অধরার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। অধরাকে দেখে নরমাল মনে হচ্ছে না। ছেলে গুলো অধরার সাথে মিসবিহ্যাব করছে। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর আপনমনে ভাবছে “অধরা তো কখনও এই সব নেশা করেনি। তবে আজ আমি যা দেখছি তাকি মিথ্যে? নাকি আগের অধরা আর এখনকার অধরা এক মানুষ নয়? যদিও বদলে গেছে অধরা তবে আমি কি করে ওকে ছেড়ে যাবো?

নিজের স্ত্রী কে নেশায় আসক্ত হয়ে এভাবে ছেড়ে যাওয়া যায় কি? অধরা আমার ভালোবাসা। হ্যাঁ আমি ওকে ভিশন ভালোবাসি। যদি আমার ভালোবাসা মিথ্যে হতো তবে রৌদ্রর কথা শুনে আমি অধরাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু আমি ছেড়ে যাইনি। আর এমন একটা জায়গায় অধরাকে একা ছেড়ে যাবো! কি করে সম্ভব”? অয়ন আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে পরখ করে নিচ্ছে অধরার পরিচিত কেউ আছে কি না। যদিও অধরা একা একা এমন একটা জায়গায় আসবে তা কল্পনার অতিত। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকেই পেলো না। অয়ন অধরার সামনে আসতেই অধরাকে ঘিয়ে ধরা ছেলে গুলো একটু পিছিয়ে যায়। অয়ন রক্ত বর্ণ চক্ষু বিশেষ তাদের উপর পরতেই তারা একটু পিছিয়ে যায়। অধরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না‌। অয়নের ভিশন রাগ উঠছে অধরাকে এমন অবস্থায় দেখে। অয়ন অধরার বাহু জোড়া শক্ত ভাবে চেপে ধরে। অধরা অয়নের দিকে একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলছে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এইসব কি অধরা? এতোটা নিচে কবে থেকে নেমেছো তুমি? লজ্জা করে না তোমার এমন একটা জায়গায় এসে ড্রিংক করে নোংরামি করতে?
অয়ন কথা গুলো বেশ চেঁচিয়ে বলল। তবে অয়নের কথায় অধরার ঘোর কাটছে না। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মাতাল হয়ে বলল
— আমাকে টার্চ করার সাহস হয় কি করে তোমার? আমার হাত ছাড়ো বলছি। আমি ইনজয় করতে এসেছি। ছাড়ো!
অধরা অয়নের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে বেশ হাত নাড়াতে লাগলো। অয়ন রাগে আরো শক্ত করে চেপে ধরে অধরাকে। কি করবে অয়ন বুঝতে পারছে না। অয়ন অধরাকে কোলে তুলে নিলো। অধরা হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে অয়নের কোল থেকে নামার জন্য। কিন্তু অয়ন বেশ শক্ত করে ধরায় অধরা তেমন সুবিধা করতে পারলো না। অয়ন অধরাকে কোলে করে নিজের গাড়ি উবদি নিয়ে আসে। গাড়ির সামনে অধরাকে এনে অয়ন অধরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। অধরা নেশার ঘোরে উল্টো পাল্টা বকছে। অয়ন গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। অধরাকে নিয়ে অয়ন ক্লাব থেকে বেরিয়ে যায়।

* অয়ন ড্রাইভ করছে আর অধরার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। অধরা একদম নিশ্চুপ হয়ে চোখ বন্ধ করে সিটের উপর হেল দিয়ে আছে। অনেক দিন পর অয়নের চোখের তৃষ্ণা মিটানোর সুযোগ এলো। ইচ্ছে হচ্ছিল তার এই দৃষ্টির মধ্যে তার প্রিয়তমাকে সারা জীবনের মতো আটকে ফেলতে। হ্যাঁ প্রিয়জনেকে দেখার তৃষ্ণা আমাদের ব্যাকূল করে। এতোটাই ব্যাকূল করে যে আমরা কোনো বাধাই মানতে চাই না। সকল বাধা পেরিয়ে আমরা প্রিয়জনকে একটিবার দেখার জন্য অপেক্ষা করি। অয়ন আনমনে হেসে ফেললো অধরার দিকে তাকিয়ে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। অধরা চোখ খুলে একটু এগিয়ে এসে অয়নের কাঁধের উপর মাথা রাখলো‌। দুই হাত দিয়ে অধরা জাপটে ধরলো অয়নকে। অয়ন আলতো করে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। হঠাৎ করে অধরা ভিশন বোমি করা শুরু করে দিলো। অয়ন গাড়িটা সাইডে ব্রেক করে অধরাকে সামলাতে লাগলো। অধরা সম্পূর্ণ জামা কাপড় নষ্ট করে ফেলেছে। অয়ন টিস্যু পেপার দিয়ে অল্প করে মুছিয়ে দিলো অধরাকে। অয়ন অধরাকে পানি খাইয়ে দিয়ে আবারও গাড়ি স্টার্ট করলো।

* বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করে অধরাকে আবার কোলে তুলে নিলো অয়ন। অধরাকে কোলে করে অয়ন নিজের রুমে নিয়ে আসে। অধরা ঘুমাচ্ছে। অধরার জামা কাপড় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে আছে। এভাবে অধরা থাকলে সমস্যা হবে। অয়ন অনুকে তার রুম ডেকে আনলো। যাতে করে অনু অধরার জামা কাপড় চেঞ্জ করে দিতে পারে। অধরার জামা কাপড় চেঞ্জ করে অনু অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে দরজার সামনে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ভাইয়া ভাবীর এই অবস্থা কেনো?
অনুর প্রশ্ন শুনে অয়নের রাগ উঠে যায় আবারও। অয়ন অনুকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল
— এই জন্যই তোকে ডাকতে চাই নাই। আমি নিজেই ওর কাপড় বদলে দিলে ভালো হতো।
— এভাবে বলছিস কেনো ভাইয়া? তোকে প্রশ্ন করলাম ক্ষেপে যাচ্ছিস কেনো? আজব!
— কেনো করবি? সব কিছুতে এতো কিউরেসিটি কেনো তোর?
অনু অয়নের দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে অভিমানি কন্ঠে বলল
— সরি ভাইয়া ভূল‌ হয়েছে আমার। আসছি।

— এই দাঁড়া একদম। সব সময় জ্বালিয়ে মারছিস তুই। শোন বাবা মা যেনো কিছু না জানে। অধরাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তুলে নিয়ে আসছি। আমার উপর রাগ করে চলে যাওয়া! ওকে হারে হারে টের পাইয়ি দিবো আমাকে ছেড়ে যাবার ফল। জোর করে তুলে আনা যেতো না। তাই আরকি এই পদ্ধতিতে নিয়ে আসলাম।
অয়নের কথা শুনে অনু ভ্রু কুঁচকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অয়নের দিকে।
— ভাইয়া তুই দেখি ভিলেনদের মতো হয়ে গেছিস। শেষে কিনা ভাবীকে কিডনাফ করে নিয়ে এলি! এই ভাইয়া সত্যি করে বল তুই আমার আসল ভাইয়া তো? না মানে আমার ভাইয়া তো এমন না। সে তো সব কিছু চুপ চাপ ছেড়ে দেয়। কিন্তু আজ হঠাৎ করে তোর মুখে বুলি ফুটলো কি করে?

— ওরে আমার পাকা বুড়িটা সব কিছু কি আর হালকা করে ছেড়ে দিলে চলে? কিছু জিনিস জোড় করে নিতে হয়।
— হুম‌ বুঝলাম।
অনু চলে যায় নিজের রুমে। অয়ন নিজের রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। অধরা বিছানায় শুয়ে আছে। অয়ন অধরার পাশে গিয়ে বসলো। খুব ইচ্ছে করছে অয়নের অধরার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে। কিন্তু অধরাকে দেখে বেশ রাগ ও হচ্ছে তার। একটাবার তাকে বিশ্বাস করলে কি পাপ হতো? অয়ন অধরার কপালের উপর এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে আলতো করে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়িয়ে দিলো চুমু খেলো অধরার কপালে। অধরা নিশ্চুপ। অয়ন অধরাকে বুকে টেনে নিয়ে পরম আবেশে অধরাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে। অনেক দিনের শুণ্যতা আজ‌ পূর্ণ।

* সকাল হতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায় অধরার চিৎকারের শব্দে। অয়ন হেকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে দেখলো অধরা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা অগ্নি দৃষ্টি তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন একটু অবাক হয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কি হয়েছে? এতো চিৎকার করছো কেনো?
অধরা রাগে গজগজ করতে করতে জবাব দিলো
— কি হয়েছে মানে? আমি এখানে কেনো? আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে?
অয়ন অধরার প্রশ্নের জবাবে বেশ শান্ত গলায় বলল
— আমার বউ আমার বাড়ি থাকবে না তো কি ক্লাবে থাকবে?
অধরা অয়নের কথা শুনে বেশ তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল
— বউ! হাউ ফানি। কার‌ বউ? আমার সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে তাকি ভূলে গেছিস?

অয়ন বিছানা থেকে নিচে এসে অধরার সামনে দাঁড়িয়ে অধরাকে মৃদু কন্ঠে বলল
— কাগজের সম্পর্ক না হয় শেষ তবে আত্নার সম্পর্কের কি শেষ আছে! শেষ আছে কি ভালোবাসার সম্পর্কে! আর যদি বলো ডিভোর্সের কথা তবে আমি বলবো সাইনটা তুমি করেছো আমি না। আর তুমি এখনও আমার স্ত্রী সেটা আইনত।‌
— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসস! যাস্ট শার্ট আপ অয়ন চৌধুরী। একদম চুপ। আমাকে নিজের স্ত্রী বলবি না ঐ মুখে। আমি জানি না তুই আবার কোন নোংরা খেলা খেলতে আমাকে এখানে এসেছিস। তবে এতোটুকু আমি নিশ্চিত যে তোর মনের মধ্যে নিশ্চই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। যা পূরণ করতে তুই আমাকে এখানে নেশা করিয়ে তুলে এনেছিস।
অধরার থাপ্পড়টা অয়নের গালে নয়। বুকে এসে আঘাত করলো। অধরার কথা শুনে অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল

— নিজের স্ত্রীকে নিজের কাছে আনতে আমাকে নেশার আশ্রয় নিতে হয় না। আর কাল তুমি ক্লাবে নেশায় আসক্ত হয়ে ছিলে। আমি না নিয়ে আসলে কোনো বিপদ হয়ে যেতে পারতো।
— হাহাহাহা, বিপদ হতো? ওদের সাথে থাকলে আমার কিছুই হতো না। খুব বেশি হলে ধর্ষিতা হতাম এটাই তো? তবুও ভালো। অনন্ত পক্ষে তোর মতো একটা নোংরা মানসিকতার মানুষের সাথে রাত কাটাতে হতো না আমায়। নাটক ভালোই সাজাতে পারিস তুই। তবে একটা কথা আমি বোকা ছিলাম তাই তোকে বিশ্বাস করতাম। এখন আর বোকা নাই। আমি জানি ইরা এখন প্রেগন্যান্ট তাই তোর ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আমাকে চাই। সেই জন্য এই খেলাটা খেলেছিস। ভেবেছিস আমি হয়তো সব ভূল তোকে আবার বিশ্বাস করবো আর আবার ঠকে যাবো। তাই না!

অয়ন নিশ্চুপ দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ জোড়া ছলছল হয়ে আছে তার। অধরার প্রতিটা কথা তার বুকে ভেদ করে এপার ওপার হয়ে যাচ্ছে। আজ অধরার কাছে তার জায়গাটা রাস্তার ছেলের থেকেও নিচে। অধরা অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আর কখনও আমাকে পাবার মিছক স্বপ্ন দেখিস না প্লিজ। যদি আর কখনও আমাকে জোর করে নিজের করতে চাস তবে সেই দিনটাই আমার শেষ দিন হবে। কথাটা মাথায় রাখবি। গুড বায়।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৫

অধরা অয়নের রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে অধরার চলে যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটা কষ্ট হচ্ছে অয়নের বুকের মধ্যে। মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা টা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। অধরা এমন করে অপমান না করলেও পারতো। অয়ন নিজের চোখের জল মুছে ফেলল।
* অধরা অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অধরা আর ভাবছে ক্লাবে তার ড্রিংকে কি মেশানো হয়েছে যার কারনে সে নেশা গ্রস্থ হয়ে পরে? অধরা কিছু দূর এগিয়ে যেতেই হঠাৎ তার চোখ আটকে যায়। অধরা দেখতে পেলো……………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৭