ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৫

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৫
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

অয়ন পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখতে পেলো অফিস থেকে কল এসেছে। অয়ন কলটা শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসে। গাড়ি স্টার্ট করে অয়ন গাড়ি নিয়ে‌‌ চলে যায় অফিসের দিকে। গাড়ি নিজের মতো চলছে আর অয়নের মনে অধরার কথা ভাবছে। অধরার সাথে করা অবহেলার কথা গুলো মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছে তার। ভিশন কষ্ট হচ্ছে অয়নের।

“প্রিয়জনকে যদি বিশ্বাস না করতে পারলাম। তবে কি হবে ভালোবেসে! আমি যেমন অধরাকে ভূল বুঝেছি। ঠিক তেমনি ভাবে অধরাও আমাকে বিশ্বাস করেনি। এভাবেই পরিসমাপ্তি হলো আমার ভালোবাসার”। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অয়ন। গাড়িটা আপন গতিতে ছুটে চলে আসে অফিসের সামনে। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে নিজের কেবিনে চলে যায়।
— এই এভাবে চুপ করে বসে বসে কি ভাবছিস তুই?
রোজা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা। অধরা রোজার স্পর্শ পেতেই একটু কেঁপে উঠল। আমতো আমতো করে অধরা রোজার উদ্দেশ্যে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— কোথায় আমি ভাবছি? ভাবছি না কিছু। তুই বল কি বলবি।
— ওমা আমি‌ বলবো মানে? আমি কেনো বলবো? তুই কি‌ মুখ বাড়িতে রেখে এসেছিস নাকি!
— আরে রোজ তুই সত্যিই খুব জ্বালাতন করিস। বলছি তো কথা।
অধরাকে চরম বিরক্ত দেখে‌ রোজ শব্দ করে হেসে উঠলো। রোজ অধরার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে মৃদু কন্ঠে বলল
— খুব ভালোবাসিস অয়নকে তাই না?
— তা জানিনা। তবে ওর থেকে দূরে না থাকলে হয়তো কোনো দিনও বুঝতে‌ পারতাম না প্রিয়জনের থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্ট কর।
— হুম।

রোজ আবারও অধরার ভাবনার‌ আকাশে অয়নকে এনে দিলো। যদিও তার ভাবনার আকাশে অনেক আগে‌ থেকেই অয়ন বসে আছে।
* রোজ নিজের কেবিনে বসে কিছু কাজ করছে হঠাৎ করে রোজের কানে ভেসে আসে একটা মিষ্টি মৃদু কন্ঠ। কেউ একজন রোজকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— আসতে পারি?
রোজ ছেলেটির দিকে প্রথমবার তাকিয়ে ভিশন মুগ্ধ হয়। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যায় রোজ ছেলেটির মুগ্ধতায়। রোজ পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে‌ চোখ বুলিয়ে নিলো। ছেলেটি একটু অবাক হলো মেয়েটির এমন অদ্ভূত আচরণে। ছেলেটি আবার রোজে দিকে দৃষ্টিপাত করলো এবং অনুমতি চাইলে রোজ সঙ্গে সঙ্গে বলে
— প্লিজ আসুন।

ছেলেটি ভিতরে প্রবেশ করলো। ছেলেটি কেবিনের ভিতরে আসতেই রোজের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো
— হ্যালো, আমি অয়ন চৌধুরী। আপনাদের সাথে আমরা বিজনেস করতে চাই। এই নিন কিছু ডকুমেন্ট।
— হুম বসুন প্লিজ।
* অয়ন রোজের সামনে বসলো। অয়ন এখানে বিজনেসের জন্য এসেছে। রোজ যে অয়নকে পছন্দ করে ফেলেছে তা তো আর‌ বলার অপেক্ষা রাখে না। সো বিজনেস ড্রিল ফাইনাল করতে আর কোনো সমস্যা হবে না আশা করি। অয়ন কিছু সময় রোজার দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে রোজাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— তো ম্যাম ড্রিল কি ওকে?
— আহহহহ এতো অধৈর্য হতে নেই মিস্টার অয়ন চৌধুরী। অপেক্ষা করুন আমার সেক্রেটারি আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাকে জানাতে পারবো।
— ওহহহহ, আচ্ছা ঠিক আছে। কখন আসবেন উনি?
— এই তো‌ চলে আসবে এখনি।‌ আচ্ছা কি নিবেন? কোল্ড না হট!
— কোল্ড ড্রিংক্স হলেই হবে।
— ওকে।
* রোজা কোল্ড ড্রিংক্স অর্ডার দিয়ে অয়নের সাথে গল্প করা শুরু করে দেয়। অয়ন মনে মনে বেশ চিহ্নিত হয়ে আছে। আসলে এই টেন্ডারটা অয়নের কম্পানির জন্য খুব প্রয়োজন। অয়ন রোজার সব কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না মিলিয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় রোজার বকবক শোনার পরে অয়ন রোজার দিকে একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল

— ম্যাম আপনার সেক্রেটারি কখন আসবে? না আসলে আমার অফিসে কিছু কাজ আছে।
— এই তো চলে এসে‌‌!
রোজার‌ কথা শেষ হতেই অধরা কেবিনের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে। অয়ন ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে অধরাকে দেখে বেশ চমকে যায়। অয়ন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যেই অধরা নিজের সংসার সব সময় সামলেছে। বাহিরের কাজ সম্পর্কে যার বিন্দুমাত্র ধারনা নেই। সেই অধরা এতো বড় একটা অফিসের সেক্রেটারি! বিশ্বাস হচ্ছে না অয়নের। অয়ন কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা অয়নকে দেখে ঠিক অয়নের মতোই অবাক হয়েছে। অধরা ভাবছে অয়ন এখানে কি করে এলো? অধরা এগিয়ে এসে নিজের চেয়ারে বসতেই রোজ অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অধরা এই হলো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। উনি আমাদের সাথে বিজনেস করতে চান।
— ওহহহ। হ্যালো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। ভালো লাগলো আপনার সাথে পরিচিত হয়ে।

অয়ন অধরার দিকে আবারও অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। অধরা অয়নের সাথে‌ এমন অপরিচিত লোকের মতো ব্যবহার করবে তা অয়নের ধারনা ছিলো না। অয়ন একটু নিশ্চুপ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অধরা মৃদু হেসে অয়নের ফাইলে সাইন করে দিলো। অতঃপর অয়নকে চলে যেতে বলল।
* অয়ন রোজের কেবিন থেকে বেরিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে আজ যা সে দেখলো তার কি সত্যি? অধরা এতোটা বদলে গেছে। আজ এতো‌ দিন পরে দেখা হলো একটি বার জিজ্ঞেস করলো না অধরা কেমন আছি আমি? সত্যিই তো কেনো জিজ্ঞেস করবে? আমি যে তার যোগ্য না। আমি অধরার থেকে একটু সহানুভূতি পাবার যোগ্য না। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিসের দিকে।

— কিরে অধরা কি ভাবছিস?
— না তেমন কিছু না।
— হুম। জানিস আমি এই অয়ন চৌধুরীর কথা ভাবছি।
* রোজের মুখে অয়নের নাম শুনে অধরা বেশ‌ রেগে যায়। যত ই মান অভিমান থাকুক না কেনো। নিজের স্বামীর সাথে অন্য কাউকে মানতে কষ্ট হবে এটা স্বাভাবিক। অধরা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রোজকে বলল
— এই রোজ তুই এসব কি বলছি? অয়নের কথা ভাবছিস মানে?
— ভাবছি মানে ভাবছি।‌ অয়নের কথা না গাঁধী অয়ন চৌধুরীর কথা ভাবছি।
— ওহহহহ। কেনো ভাবছিস?
— উফফফফ ছেলেটাকে দেখে আমার মনের‌ মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।‌ আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে ইশশ্ যদি ওর বউ হতে পারতাম।

রোজের কথা শুনে অধরার মন খারাপ হয়ে যায়। অধরা রোজের পাশ থেকে উঠে চলে যায় ব্যল্কনির দিকে। ব্যল্কনি থেকে বাহিরের আকাশটা উন্মুক্ত দেখা যায়। অধরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে। বড্ড অসহায় লাগছে অয়নের কাছে নিজেকে। আবার ইচ্ছে করছে একটিবার জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে যে অয়ন আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু তা আর কখনও সম্ভব নয়। অধরা নিজের পেটের ওপর আলতো করে হাত ছুঁয়ে দিলো। বিড়বিড় করে অধরা বলতে লাগলো

— আমি তোকে নিজের পরিচয় বড় করবো। কখনও অয়নের ছায়া পরবে না তোর উপর। তোর মাই তোর বাবা। সব কিছু আমি।
কথাটা বলতে বলতে অধরার চোখের পাতা ভিজে যায়।
* অয়ন সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরবে। অফিস শেষ করে অয়ন নিজের গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল
— স্যার, প্লিজ হ্যাল্প মি!
অয়ন মুখ তুলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি মুখে বলল
— জ্বি বলুন কি সাহায্য লাগবে?
— আসলে‌ স্যার আজ তো ইয়ারের লাস্ট অফিস ডে। তাই আমরা সবাই মিলে আজকের দিনটা ইনজয় করতে চাই। সব কিছু রেডি আছে। যদি আপনি দয়া করে আমাদের সাথে আসতেন তো!

— আসলে মিস আমার তেমন কোনো‌ আগ্রহ নেই তবে…
অয়ন মেয়েটির পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে অফিসের সবাই দাঁড়িয়ে আছে মন উদাস করে। এমনিতে সবাই অয়নকে ভয় পায় তা সত্যি। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে অয়ন যদি না করে দেয় তবে সবার মন খারাপ হয়ে যাবে। অয়ন নির্ভয় দিয়ে মেয়েটিকে‌ উদ্দেশ্য করে বলল
— আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন আর আমি যাবো না তা কি করে হয়? আপনার চলুন আমি আসছি।‌

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৪

অয়নের কথা শুনে মেয়েটি খুব খুশি হয়ে যায়। অয়ন গাড়ি নিয়ে এড্রেস অনুযায়ী চলে আসে। একটা ক্লাবের সামনে অয়নের গাড়ি থামলো। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে ক্লাবের ভিতরে আসতেই দেখতে পেলো সবাই আছে‌। অয়ন ভিতরে এসে একটা টেবিলে একদম একা বসে পড়লো। সবাই ইনজয় করছে আর অয়ন ড্রিংক করছে। হঠাৎ করে অয়নের চোখ গেলো ড্যান্স ফ্লোরের শেষ প্রান্তে। ওখানে চোখ যেতেই অয়ন বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন ভিশন অবাক হয়ে যায়। অয়ন দেখতে পেলো ড্যান্স ফ্লোরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৬