ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৪

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৪
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা দরজার ওপারে দেখতে পেলো মিস্টার রিহান দাঁড়িয়ে আছে।‌ অধরা‌ রিহানকে দেখে পুরো থ‌ হয়ে যায়। “এই ডাক্টার এখানে কেনো? রোজ এর সাথে‌ এর কি সম্পর্ক? নাকি এই ডাক্টার আমাকে ফলো করে এখান উবদি চলে এসেছে? হ্যাঁ হতে পারে। পুরুষ মানুষ বিশ্বাস নাই”। অধরা রিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছে। রিহান‌ অধরাকে এখানে দেখতে পেয়ে সে নিজেও চমকে যায়। রিহান অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আরে‌ আপনি এখানে কি করে?
রিহানের কথা‌ কানে আসতেই অধরা মৃদু কেঁপে উঠল। অধরা কর্কশ গলায় বলল
— আমারও তো সেম প্রশ্ন। আপনি এখানে কেনো? আমাকে বলো করছেন? এখুনি আপনার ফলো করা গিরি আমি বের করছি। অসভ্য লোক কোথাকার। আপনি জানেন না আমি কে! ওয়েট দেখাচ্ছি।
অধরা কথা শেষ করতেই রোজ রোজ বলে চিৎকার শুরু করল। অধরার গলা শুনতে পেয়ে রোজ খাবার টেবিল ছেড়ে দৌড়ে ছুটে আসতে লাগলো। অধরার কান্ড দেখে রিহান দরজায় হেল দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। রিহানের হাসি দেখে অধরার গা জ্বালা করছে। রোজা দরজার দিকে এসে রিহানকে দেখতে পেলো। রোজা অধরার দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
অধরা আঙ্গুল তাক করে রিহানের দিকে। রাগান্বিত কন্ঠে অধরা রোজকে বলতে লাগলো
— এই লোকটাকে দেখেছিস? কি সাহস এর। আমাকে ফলো করতে করতে এখানে চলে এসেছে। তুই এখনি পুলিশকে কল কর। এই সব ছেলেদের দিয়ে বিশ্বাস নেই। দুজন মেয়ে মানুষ আমরা। আমাদের একাকীত্বের সুযোগ নিতে পারে যে কোনো সময়। আমার বিশ্বাস আছে এই লোকটার উদ্দেশ্য ভালো কিছু না। তারাতাড়ি করে কল কর প্লিজ!
অধরার কথা শুনে রোজ চরম‌‌ বিরক্ত হলো। বিরক্তির চরম পর্যায়ে রোজ অধরাকে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো

— তোর মুখে কোনো কথা আটকায় না। না জেনে সব সময় উল্টা পাল্টা বকিস তুই। এই ছেলেটা কোনো অপরিচিত লোক না। আমার বড় ভাইয়া। যত্তসব ফালতু চিন্তা।
রোজ এর কথা শুনে অধরা থ মেরে যায়।‌ আপন মনে অধরা নিজের বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এসব আমি কি বললাম? রোজ‌ এর ভাইকে কথা শুনিয়ে দিলাম। লোকটা আমায় কতই বাজে ভাবছে। ধূর আমিও না।
— আহা ম্যাম অধরা এতো ভাবলে হবে? আসুন ভিতরে আসুন তারপর না হয় পুলিশকে ডাকবেন‌ কেমন।

* বাঁকা হেঁসে কথাটা বলল রিহান। অধরা যদিও নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হয়েছে। কিন্তু রিহানের বাঁকা হাসি অধরাকে বিরক্ত করছে। অধরা খাবার সম্পূর্ণ না খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে অধরা মনটা খারাপ করে বসে আছে।‌ যতবার অধরা অয়নকে ভূলে নিজের জীবনটা নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে। ঠিক ততবার অয়নের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বার বার অধরার‌ মন ব্যাকূল হয়ে উঠছে। “কেনো জানি মনে হচ্ছে অয়ন একদম নির্দোষ। কোনো ভূল সে করেনি। কিন্তু কি করে‌ অয়নকে বিশ্বাস করবো আমি? সব তো নিজের চোখের সামনেই ছিলো। ইরার সাথে ওর কথা বলা, রিসোর্টের ঘটনা। সব কিছু আমাকে অয়নকে অবিশ্বাস করতে বাধ্য করছে। বাধ্য করছে অয়নকে ঘৃণা করতে”। অধরা অয়নের কথা ভাবছে হঠাৎ করে অধরার কানের কাছে এসে কেউ ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— আমাকে বলা কথা গুলো নিয়ে মনে মনে নিজেকে দোষ‌ দেয়া‌ বন্ধ করুন। আমি কিছুই মনে করিনি।
অধরা মুখ ঘুরিয়ে রিহানাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়ালো। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অধরা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রিহানের দিকে। রিহানের এই কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কথা বলাটা অধরার বেশ খারাপ লেগেছে। অধরা ভারি কন্ঠে রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এটা কোন ধরনের ভদ্রতা মিস্টার রিহান? হুট করে কারো রুমে কোনো‌ পারমিশন না নিয়ে চলে আসাকে কি বলে আমার জানা নেই। মানছি এটা আপনার বাড়ি‌। সব জাগয়ায় যাওয়ার অনুমতি আপনার আছে। কিন্তু আমি একটা মেয়ে। আমি বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। কিছুটা বিপদে পরেও বটে। তাই বলে কি আমার কোনো আত্নসম্মান নেই? আপনি হুট হাট করে রুমে চলে আসবেন আর যা ইচ্ছে হয় বলে যাবেন? এটা আমার একদমই পছন্দ নয় মিস্টার রিহান চৌধুরী।
অধরার ভারি কন্ঠ স্বর রিহানকে অবাক করার পাশাপাশি মনের মধ্যে আঘাত দিয়ে ফেলল। রিহান‌ একটিবারের জন্যও ভাবতে পারেনি অধরা এমন করে বলবে তাকে। রিহান থমকে গিয়ে আমতো আমতো করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— সরি। ক্ষমা করে দিবেন আমায়। আমি ভাবতে পারিনি আপনি এতোটা সিরিয়াস হয়ে যাবেন। ক্ষমা করবেন।

কথাটা শেষ করতেই রিহান অধরার রুম থেকে হনহন করে বেশ দ্রুত বেরিয়ে যায়। অধরা যদিও ঠিক বুঝতে পেরেছে যে রিহান তার কথায় কষ্ট পেয়েছে। তবে অধরা তার‌ করা ব্যবহারের জন্য এতো টুকু ও অনুতপ্ত নয়। কারন আজ যদি অধরা রিহানকে কিছু না বলতো বা সুযোগ দিতো তবে তার ফল সামনে খারাপ কিছু হতো। যা অধরা কোনো ভাবেই চায় না।
* সকাল‌ হতেই রোজের চিৎকারের শব্দে অধরার ঘুম ভাঙ্গে। অধরা ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে রোজার দিকে। রোজা অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— কত ঘুমাতে পারিস তুই? ওঠ না প্লিজ!

— আরে এমন করে চিৎকার করে ঘুম ভাঙ্গায় কেউ? আমি তো ভেবেছি বাড়িতে আগুন লেগেছে।
লম্বা হাই তুলে অধরা রোজ কে বলল কথাটা। অধরার কথার বিপরীতে রোজ রাগি কন্ঠে বলল
— বাড়িতে না আমার মনের মধ্যে লেগেছে আগুন। আজ থেকে অফিসে যেতে হবে।
অধরা একটু চমকে গিয়ে রোজকে বলল
— অফিসে মানে? তুই কি নতুন কোনো বিজনেস স্টার্ট করেছিস?
— নতুন নয় সখি অনেক আগের বিজনেস এটা। তবে অফ ছিলো। দেশে ফেরার আগেই আবার অন করেছি। আজ থেকে বাবার এই বিজনেসটা আমি হ্যান্ডেল করবো।

— ওহহহ, আচ্ছা ভালো কথা তো যা‌ তুই।
— ঐ আমি যাবো মানে? আমার সাথে কে যাবে? আমি বস আর তুই আমার সেক্রেটারি। চল আমার সাথে।
রোজ অধরার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় রুমের বাহিরে। অধরাকে রেডি হওয়ার সময়টুকুও দিলো‌ না রোজ। অধরা রোজের সাথে গাড়ি করে অফিসে চলে আসে।
* অয়ন রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ করে অয়নের চোখে পরে রাস্তার মধ্যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কোনো একটা বিষয়‌ নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে। হঠাৎ করে ছেলেটা মেয়েটার সাথে বাজে ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। অয়ন তাদের থেকে কিছুটা দূরে ছিলো। অয়ন মেয়েটিকে সেভ করতে এগিয়ে আসতেই শুনতে পেলো

— তুই যে অয়ন আর অধরার সম্পর্কের মাঝে ফাটল তৈরি করেছিস কিছু মিথ্যে দিয়ে। তা আমি অয়নকে বলে দিবো।
কথাটা শেষ হতেই মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে ছেলেটি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলল
— কি? তুই সব সত্যি ফাঁস করে দিবি! তোকে তো আমি আজ সারা জীবনের জন্য চুপ করিয়ে দিবো।
ছেলেটি কথা শেষ করতেই একটা নাইপ হাতে নিয়ে মেয়েটির পেটের দিকে আঘাত করতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে অয়ন বলে উঠলো
— মানে? কি সত্যি আর কি মিথ্যা রৌদ্র?

অয়নের কন্ঠ শুনে ছেলেটি থমকে যায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় সে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখে রৌদ্র মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলল
— কিছু না। আসলে আমরা দুজন অন্য কথা বলছিলাম। তোমাদের কথা নয়।
* রৌদ্র হলো অধরার কলেজ লাইফের ভালোবাসার মানুষ। যার সাথে অধরার খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো। অয়ন রৌদ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে রৌদ্রর শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— সত্যিটা কি? অধরার সাথে তোর যা যা হয়েছে তুই বলেছিস তা কি মিথ্যে? অধরা রোজ তোর সাথে কথা বলতো। তোর সাথে বেড়াতে যেতো। এমনকি তোর সন্তানের মা হতে চলেছে অধরা এসব কি মিথ্যা ছিলো? উত্তর দে।
রৌদ্র আমতো আমতো করতে শুরু করে। রৌদ্রর পিছন থেকে মেয়েটি দৌড়ে এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে

— বিশ্বাস করুন ভাইয়া শুধু মাত্র অধরা আপু নয়। রৌদ্র আজ পর্যন্ত অনেক মেয়ের সাথে এমন করেছে। মিথ্যে ছবি আর ভিডিও দিয়ে ব্লাক মেইল করতো রৌদ্র। রৌদ্রর ট্যাপের শিকার হতো ঐ সব মেয়েদের স্বামীরা যাদের সাথে রৌদ্রের চেনা জানা ছিলো। অধরাকে কল করে এখানে ডাকা ওখানে ডাকা একটা নাটক ছিলো। রৌদ্র আপনার মনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করে এই সব ফ্যাক ভিডিও আর ছবি গুলো দেখিয়ে আপনাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে। এটাই ওর নোংরা খেলা। অধরাকে ও নিজের করে পেতে চেয়েছে। যখন অধরা ওকে না করে দিয়েছে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। তখন ও আপনাকে ট্যাপ করে আপনার থেকে অধরাকে আলাদা করতে এসব করেছে।

মেয়েটির কথা শুনে অয়ন পুরো থ হয়ে যায়। তার মানে অধরার নামে আজ উবদি যা যা সে শুনেছে তা মিথ্যে ছিলো! অয়ন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তার মানে কি?
— তার মানে ভাইয়া অধরা আপু একদম পবিত্র আর অপবিত্র হচ্ছে এই জানোয়ারটা।

অয়ন রৌদ্র শার্টের কলার‌ ধরে রৌদ্রকে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো। যদিও অয়নের মনে রৌদ্রর কথা শুনে বেশ সন্দেহর সৃষ্টি হয়। তবে প্রিয়জনের কাজ আর অন্যদের কথা এক মিনিটের জন্য অয়নকে অন্য কিছু ভাবতে বাধ্য করে। অয়ন রৌদ্রকে মারের এক পর্যায়ে রৌদ্র অয়নের হাত কোনো মতে পালিয়ে যায়। রৌদ্র চলে যেতেই অয়ন দেয়ালে সজোরে একটা ঘুষি মারে। উফফফফ শিট আমি কি করে অধরাকে অবিশ্বাস করলাম? অধরা সত্যি বলেছে তাও আমি ওকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারিনি। সব সময় মনে হতো অধরা আমাকে ঠকিয়েছে। দিনের পর দিন এই ভেবে আমি অধরাকে অবহেলা করে‌ গেছি।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৩

* অয়ন কথা গুলো ভাবছে এমন সময় অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই………………………

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৫