তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৯

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৯
writer Mousumi Akter

আয়াস আমার মুখের সামনে ছোট আয়না ধরে রেখেছে কিন্তু ওর দু’চোখ স্হির হয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখপানে।কাজল পরতে পরতে বারবার খেয়াল করছি আয়াসের গভীর চাহনির দিকে।আয়াস মুগ্ধ হয়ে দেখছে আমাকে।ওর বোধহয় পৃথিবীর আর কোনো কিছুর হুঁশ নেই।ওর দৃষ্টিতে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।আয়াস আনমনে বলে উঠলো, আমার দিবস ও রজনী কাটে তোমার চোখে চেয়ে।আমি ও তাকিয়ে আছি আয়াসের মুখের দিকে। ও আমার দিকে তাকালেই আমি বার বার হাজার বার ওর প্রেমে পড়ে যায়।এই মুহুর্তে পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্য আর আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনা।কেননা নির্দিষ্ট কারো মুগ্ধতায় আটকে গেলে আর কাউকে ভালো লাগেনা।আয়াস আমার সেই মুগ্ধতা যার প্রতি ভাললাগা,ভালোবাসা সমুদ্রের মতো গভীর আর আকাশের মতো বিশাল।

আয়াস এর হাতে একটা চিমটি দিয়ে বললাম,
!হুজুরের বাসা কোথায় ঠিকানা দিন।”
আয়াস উহ বলে চিমটি দেওয়া জায়গা হাত বোলাতে বোলাতে বেশ অবাকের সুরে বললো,
“কোন হুজুর?”
“বুঝতেছেন না তাইনা?”
“নাতো।”
“যে হুজুরের কাছে গিয়ে আমায় তাবিজ করেছেন।”
আয়াস ভ্রু উচিয়ে সন্দিহান ভাবে বললো,
“কোন হুজুর আর কিসের তাবিজ বুঝলাম না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তাবিজ টাবিজ না করলে এত ভালবাসলাম কিভাবে?এক বিন্দুও যাকে পছন্দ ছিলোনা তার জন্য সারাক্ষণ আমার মন উতালা থাকে কেনো?এর একটায় কারণ তাবিজ।আপনি আমায় তাবিজ করেছেন। ”
আয়াস এবার নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে দিয়ে বললো,
“করেছি তো তাবিজ।আর সেটা হলো ভালবাসার তাবিজ।এই তাবিজে নিঁখুত ভালবাসা প্রয়োগ করা হয়েছে।”
আমি লাজুক ভাবে হেসে দিলাম।আসলে বিবাহিত জীবনের মতো সুন্দর জীবন আর নেই শ্বশুর বাড়ি যদি মনের মতো হয়।আমাকে হাসতে দেখে আয়াস আমার গাল টেনে বললো,

“শোনো চিরল দাঁতের মেয়ে তোমার হাসির শব্দে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে ওঠে।এত সুন্দর কেনো তোমার হাসি।”
আমি এবার লজ্জা পেয়ে আবার ও হাসলাম।
বাইরে থেকে আয়াসের বাবা ডাকছে,
” মুগ্ধতা তুমি রেডি হয়েছো মা।”
মাথার ঘোমটা টেনে বাইরে বেরিয়ে বিনয়ের সাথে বললাম,
“জ্বী বাবা।”
“হাত টা একটু বাড়াও তো মা।”

বাবার দিকে হাত টা বাড়াতেই বাবা চুপি চুপি আমার হাতে একহাজার টাকার দুইটা নোট গুজে দিলেন।আমি রিতীমত অবাক হলাম।
“বাবাকে বললাম, না বাবা আমার টাকা লাগবে না।”
বাবা আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
“রাখো মা।বাবার বাড়িতে যাবে তোমার চাচাতো ভাই বোনেরা এসে ধরবে তোমাকে নিয়ে দোকানে যাওয়ার জন্য বায়না ধরবে।তখন তোমার লাগবে।”

আয়াসের আম্মা এগিয়ে এসে বড় বড় দুইটা ব্যাগ আয়াসের হাতে ধরিয়ে দিলো আর সাথে দুইটা টিফিন বক্স।দেখে মনে হচ্ছে তারাই যেনো মেয়ে বিয়ে দিয়েছে ও বাড়িতে।এ বাড়ির যত ফল আছে সব ব্যাগে ভরে দিয়েছে।আয়াসের বাবা সকালে দুপুরে বাজার থেকে ফল, মিষ্টি,মাছ,মাংস কিনে এনেছে ও বাড়িতে পাঠাবে বলে।এই পরিবার টা এত ভালো কেনো?তাদের ব্যবহার এ মনে হচ্ছে ও বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে যত্নের ত্রুটি করা যাবেনা।

আমি আয়াসের আগেই বাড়ির গেটে আসলাম।বাড়ির গেটে এসে দেখি অয়ন সেল্ফি নিচ্ছে আরহীর সাথে।কি অবাক করা ব্যাপার। অয়ন আরহীর কাধে হাত রেখে রেল্ফি নিচ্ছে। দুজনের মুখে ই মিষ্টি হাসি।অথচ দু’দিন আগেও তারা ছিলো বিরোধী পক্ষ।অয়ন এর মতো লাজুক ছেলেও চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।রাগী,বদমেজাজী,শান্ত সব ধরনের ছেলেরাই একবার হলেও কারো প্রেমে পড়ে।প্রকৃতির নিয়মে হলেও তারা কারো না কারো প্রেমে পড়েই।পুরুষ মানুষ নারীর প্রেমে পড়বেই।এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে।পুরুষের ধ্বং/ সের পেছনেও কোনো নারীর খারাপ ভূমিকা থাকে। আবার পুরুষের উন্নতির জন্য কোনো নারীর ভালো ভূমিকা থাকে।অয়ন আরহীকে আরহীদের বাড়িতে পৌছে দিতে যাচ্ছে।আরহীদের বাড়ি এখান থেকে বেশী দূর না।দুজনে একটা রিক্সাতে উঠে গেলো।অয়ন এর টিউশনি নাকি আরহী দের বাড়ির দিকেই আছে।

এরই মাঝে আয়াস বেশ ব্যাস্ততার সাথে এসে বললো,
“মুগ্ধতা প্রাইভেট কার আসতে পাঁচ মিনিট লেট হবে। ”
আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে আবার ও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি প্রাইভেট কার এ যাবো না।”
“প্রাইভেট কার এ নতুন জামাই না গেলে শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই কিপ্টা বলবে।”
“কিপ্টা কে কিপ্টা ছাড়া আর কি বলবে।”
আয়াস কপাল কুচকে রিতীমত অবাক হয়ে বললো,
“আমি কিপ্টা। এই হ্যালো ম্যাডাম আমি কোন দিক দিয়ে কিপ্টা।বউ এর হাতে আমার মানিব্যাগ থাকে তবুও আমি কিপ্টা।”
“কিপ্টা ছাড়া কি।আমাদের বেবি হয়না কেনো?আপনি কিপ্টা বলেই হয়না।ভাবছেন বেবি হলে আপনার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।”

আয়াস ছোট ছোট কাশি দিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা এই ব্যাপার।কথা এত ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বললেই তো পারতে ফুলসজ্জার রাতে তোমার মাথায় গ্যাস্ট্রিক চেপেছিলো।তাই হাজবেন্ড এর থেকে দূরে ছিলে।এখন কাছে চাইছো।নিড ফুলসজ্জা তাইনা বেবিডল।”
“রাস্তায় যেনো সিনক্রিয়েট করা লাগেনা কিপ্টা লোক।সব সময় বাজে কথা।”
“ইস!প্রিয়তমা।কি কিউট করে কিপ্টা বলছো আমায়।এটা আমার জন্য বিশাল বড় খুশির কারণ।আজ ই আমি আমার নামের সাথে জুড়ে দেওয়া কিপ্টা পদবী মুছে দিবো।”
“কিভাবে।”

“আবার ও ফুলসজ্জার খাট সাজিয়ে।এবার শুধু খাট সাজাবো না ফুলসজ্জা ও হবে।তাও আজ ই হবে।রেডি থেকো।”
“আম্মুদের বাসায় যাচ্ছি,ওখানে গিয়ে কিন্তু আমি আম্মুর পাশে ঘুমোবো।ওখানে গিয়ে কিন্তু হুট হাট আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না।”
“আম্মুর পাশে ঘুমোবে মানে।আমার কি হবে তাহলে।”
“কি হবে আপনার,একা একা বড় বিছানায় আরামে ঘুম দিবেন। ”
“শ্বাশুড়ি সিওর তোমাকে তার পাশে নিবেনা।বুঝবে জামাই অনেক বছর পরে বউ পেয়েছে।”
“ওখানে গেলে কিন্তু আমার সাথে বেশী কথা বলবেন না।বাবার সামনে আমার খুব লজ্জা করবে।এক ঘরে ঘুমোলে সকালে উঠে আরো বেশী লজ্জা করবে।বাবা কি না কি ভাববে।”
“বাবারা এসব ভাবে না পা* গ *লি।”
আয়াসের দিকে একটু বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বললাম,
“শুনুন প্রাইভেট কার কে ফোন দিয়ে বলুন না আসতে।”
“তাহলে কিসে যাবো?”

সামনে একটা ভ্যান পেয়ে ভ্যান ওয়ালাকে ডাকলাম ভাই যাবেন।ভ্যানচালক এগিয়ে এসে বললো,জ্বী যাবো।আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি এই ভ্যানে যাবো।ভ্যানের পেছনে খোলা হওয়ায় আপনার হাত ধরে বসে যেতে ভীষণ ভালো লাগবে।প্রকৃতি দেখা যাবে।ভ্যানে বসে যা উপভোগ করা যায় তা আর কোনো কিছুতে দেখা যায় না।”
“আয়াস সম্মতি জানিয়ে বললো,ইস বউটা কি রোমান্টিক হয়ে গিয়েছে।তবে তোমার চুল খোলা রাখবে।খোলা চুলে বাতাসে চুল উড়বে আমার চোখে মুখে পড়বে।তোমার ঘ্রাণ নিতে পারবো।”
“আয়াস কে চিমটি কেটে বললাম,ভ্যান চালক আছে এখানে।নির্লজ্জ ভাববে আমাদের। আর এই গরমে চুল খোলা।এত রোমান্টিক হতে পারবো না আমি।পারলে টাক হয়ে যেতাম।গরমে অসহ্য লাগে চুল।”
টাক হওয়ার কথা শুনে আয়াস খুব জোরে হেসে দিলো আর বললো,
“এত গরম তোমার। আগামি মাসের স্যালারি আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এসি লাগিয়ে দিবো।”

“আবার ও বললাম যে কিপ্টা আপনি।”
“আয়াস আবার ও হেসে বললো,তাইনা?আজ রাত হোক দেন প্রুভ হবে কে কিপ্টা।”
নিজের বি* প*দ কি নিজেই ডাকলাম বুঝলাম না।
জিনিস পত্র ভ্যানে তুলে আমাকে উঠতে বললো।
ভ্যানের পেছনে দুজনে বসলাম।পা দুলাতে দুলাতে চারদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছি।এর ই মাঝে হঠাত এক ঝাঁক বাতাস এলো কোথা থেকে।আমি নিজের খোপা করা চুল খুলে দিলাম আয়াসের ইচ্ছা পূরণের জন্য।সাথে সাথে এলোমেলো বাতাসে চুল উড়ে আয়াসের চোখ মুখ ছেয়ে গেলো।আয়াস মৃদু হাসলো।তৃপ্তির হাসি ওর মুখে।আমার গরম লাগছে ভেবে আয়াস আমার চুল গুলো গুছিয়ে খোপা করে দিলো আবার।ভ্যানের পেছনে প্রিয় মানুষের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে পথ চলার মতো চমৎকার অনুভূতি আর কিছুতে নেই।আয়াস আমার কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রেখেছে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৮

সন্ধ্যার আগে আগেই আমাদের বাড়িতে পৌছে গেলাম।আমার প্রিয় ভীষণ প্রিয় এই বাড়িটা।এ বাড়িকে ঘিরে আমার অনেক অনুভূতি। ভ্যান বাড়ির সামনে থামলেই শ্রুতি এগিয়ে এলো।আয়াস এর হাত ধরে শ্রুতি বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।আম্মু বাবা এগিয়ে এলো।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩০