মম চিত্তে পর্ব ২৬

মম চিত্তে পর্ব ২৬
সাহেদা আক্তার

গত দুইদিন ধরে রিয়ানের আচরণ একই। মমকে সব সময় এড়িয়ে চলছে। যেমনটা ছিল তার বিপরীত হয়ে গেল মুহুর্তে। কি এমন হলো যে রিয়ান রাতারাতি পাল্টে গেল! এটা কিছুতেই মম মানতে পারছে না। তবু ধৈর্য্য ধরে রইল। বিশ্বাস রাখল রিয়ান নিজ থেকে এসে ওকে বলবে। পরশু ওর জন্মদিন। বিয়ের পর এই প্রথম। আগের রিয়ান হলে অনেক এক্সাইটেড থাকতো হয়ত। এখনের ঠান্ডা রিয়ানকে ও চেনে না। অফিসে দরকারে টুকটাক কথা হয় কিন্তু এর বাইরে একটা কথাও ও মুখ দিয়ে বের করে না। এই রিয়ানকে ও চায় না। ও আগের রিয়ানকে ফেরত চায়। সেটা কখন হবে ও বলতে পারে না।

রাতে খাওয়া শেষে শরীরটা কেমন খারাপ করতে লাগল মমর। গোলাতে লাগল। মনে হচ্ছে পেটে থাকবে না খাবার। সব বের হয়ে যাবে। মাথাটাও কেমন যেন করছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে এখুনি৷ মম কোনোমতে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল। রিয়ান এসে শুয়ে পড়েছে আগেই। ঘুমিয়ে গেছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। একবার ডাকবে কি না ভাবল। পরে বাদ দিয়ে দিল। ভাবল ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দুই মিনিটের মাথায় ওর মুখ ভর্তি বমি চলে এল। মম দ্রুত ওয়াশরুমে দৌঁড় দিল। পেটের সব বের হয়ে যাওয়ার পরও বমির বেগ পাচ্ছে। দশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এল ও। শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। ভালোও লাগছে না। ও শুয়ে রিয়ানের দিকে তাকাল। বাম হাত যদিও চোখের উপর ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। তার মানে জেগে আছে। শরীর খারাপ বুঝেও চুপ করে শুয়ে আছে দেখে মমও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। মনে মনে জিজ্ঞেস করল, কেন এমন করছো? কি অপরাধে!?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অফিস ব্রেকে মম তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেল একটা কাজে। রিয়ান ডেকেছিল কিন্তু পায়নি। ও এসে যখনই জানতে পারল তখনই রিয়ানের রুমে চলে এল। ঢুকেই বলল, আমাকে ডেকেছো? রিয়ান খানিকটা মেজাজ দেখিয়ে বলল, কোথায় থাকো? কাজের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। গত কালকে যে ডিল হয়েছে তার মিটিং যে সাড়ে তিনটায় আমাকে বলেছো? একটু আগে মিনুভাই এসে বলে গেল। কোনো প্রিপারেশন নেওয়া হয়নি আমার। এখন কি বলব ওখানে গিয়ে?

– ভুলে গিয়েছিলাম।
– কি মনে থাকে? এই সামান্য কাজও যদি ভুলে যাও!?
মম একটা ফাইল এগিয়ে ওর টেবিলে রেখে বলল, এখানে সব তৈরী করা আছে। বলে বেরিয়ে গেল। রিয়ান খুলে দেখল মম সব সুন্দর করে ওর জন্য গুছিয়ে ফাইল তৈরী করে দিয়ে গেছে। একবার চোখ বুলালেই হবে। রিয়ান ফাইলটা বন্ধ করে ছুড়ে মারল টেবিলে। মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নিজের উপর হওয়া রাগটাকে কমানোর চেষ্টা করতে লাগল।

রাতে খাওয়া শেষে মম তাড়াতাড়ি এসে শুয়ে গেল। শরীরটা আজকেও ভালো নেই। অফিসে থাকতেও দুইবার বমি হয়েছে। শরীর এখনো দুর্বল লাগছে। এক পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। একটু পর রিয়ান আসার শব্দ শোনা গেল। ও দরজা মেরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় উঠে বসল। আজ তিন দিন পর মমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল রিয়ান। ওর ছোঁয়া পেয়ে মমর কান্না চলে এল। তাও ওর দিকে ফিরল না। রিয়ান ওর চুলে মুখ ডুবিয়ে আছে। হঠাৎ মমর মনে হল রিয়ান নিঃশব্দে কান্না করছে। ভাবতেই পেছনে ফিরে দেখল সত্যিই তাই। ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে ওর চোখ দিয়ে। মম তাড়াতাড়ি ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল, কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? বলো আমাকে। রিয়ান ওর বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল। মম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কান্নার কারণ জানতে চাইল। রিয়ান আরো শক্ত করে ধরে বলল, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না মম। এই তিনদিন তোমাকে ছাড়া পাগল হয়ে গেছি আমি। মানসিক অশান্তিতে দিন গুনেছি। আর পারছি না নিজের সাথে যুদ্ধ করতে। মম মাথায় হাত বুলানো বন্ধ না করে বলল, কি হয়েছে? আমাকে বলো? দেখবে হালকা লাগবে।

রিয়ান উঠে বসল। মমও ওকে দেখে উঠে বসে অপেক্ষা করতে লাগল রিয়ানের কথা শোনার জন্য। রিয়ান চোখ মুছে বলল, আমাকে তুমি যেমনটা দেখছো আমি আগে তেমনটা ছিলাম না৷ অনেকটা মোটা আর ভীতু প্রকৃতির ছিলাম। মোটা ছিলাম দেখে অনেকবার বুলিংয়ের শিকারও হয়েছিলাম যেটা ক্লাস সিক্সে থাকতে অনেক বড় আকার ধারণ করে। আমি প্রায়ই ডিপ্রেশনে থাকতাম আর টিফিন টাইমে স্কুলের ছাদে এসে একলা কাঁদতাম। এমন করেই দিন চলছিল৷ হঠাৎ একদিন ছাদে এক মেয়ে আসলো৷ সাধারণত কেউ আসতো না দেখেই আমি ছাদে গিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। তাই ওকে দেখে কান্না থামিয়ে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়েটা ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো হাত কার্নিশে রেখে। চুল একটা ফিতা দিয়ে বাঁধা ছিল। কাঁধ পর্যন্ত খোলা চুল বাতাসে উড়ছিল। দৌঁড়ে আসায় বেশ হাঁপাচ্ছিলও। ঘেমেও ছিল। কি যেন দেখছিল নিচে। তখনই কয়েকটা মেয়ের ছাদে আসার শব্দ শুনলাম। সেই শব্দ ঐ মেয়ের কানেও পৌঁছেছিল। সে পিছন ফিরতেই আমি প্রথম ওকে দেখলাম। ওর ঘামে ভেজা মুখে আশে পাশের চুল লেপ্টে ছিল। সেই দৃশ্যটা আমার মনে গেঁথে গেল। মেয়েগুলো এসেই ওর হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল। আমি ভাবলাম ওকেও হয়তো বুলিং করছে। তাই থাকতে না পেরে ছাদের চিপা থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এলাম। চিৎকার করে বললাম, ওকে ছেড়ে দাও। মেয়েগুলো আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। তারপর মেয়েটিকে ছেড়ে দিল। আমি বিজয়ের হাসি দিতেই মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে? আমি একটু বোকা হয়ে বললাম, ওরা তোমাকে বুলিং করছিল না?

– না। আমরা তো খেলছিলাম।
তার উত্তর শুনে লজ্জায় কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর হুট করেই ছাদ থেকে নেমে পড়লাম। এরপর অনেকদিন ওকে দেখেছিলাম ছাদে। পেছনে হাত দিয়ে ছাদে এসে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতো। আপন মনে হাসতো। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। কেন যেন ভালো লাগতো।

ক্লাসে প্রায়ই নিজের দিকে মনোযোগ রাখার চেষ্টা করতাম। আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে খেয়াল রাখতাম না। কিন্তু একদিন হুট করেই একজনের দিকে চোখ পড়ল। সেই মেয়েটি। আশেপাশের সবাই ওকে মৌনী নামে ডাকছে। আমার দিকে চোখ পড়তেই হাসল। আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম। একটা কথা বলতে খুবই ইচ্ছে করছিল, সে দুই ঝুঁটি করে কেন এসেছে। তাকে খোলা চুলেই ভালো লাগে। কিন্তু বলা হয়ে ওঠা হয়নি। সেদিনই ছাদে আমি বসে ছিলাম তার অপেক্ষায়। এদিক ওদিক উঁকি মারছিলাম। দেখলাম সে ছাদে উঠল। আমি দেয়ালের পেছনে লুকিয়ে গেলাম। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আর কত লুকিয়ে থাকবে? তখন ওর চুল খোলা। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ও হেসে ফেলল।

এরপর থেকে আমাদের কথা বলা শুরু। ক্লাসে কখনো ওর সাথে কথা হয়নি। চোখে চোখ পড়লেই হাসতো শুধু। আমিও এগিয়ে গিয়ে কথা বলতাম না। যদি আমার জন্য ওকেও বুলিং হতে হয়। যা কথা হতো ছাদেই। টিফিন পিরিয়ডে।
একবার মন খারাপ করে বসে ছিলাম। সিনিয়র ভাইরা আমাকে মোটা বলে হাসাহাসি করেছে বলে। আমার কান্না পাচ্ছিল। তখন পাশ থেকে কেউ একজন বলল, আবার কান্না করছো? তাকিয়ে দেখলাম মৌনী। আমি চোখ মুছে বললাম, ভাইয়েরা আমাকে নিয়ে আজকে আবার হাসাহাসি করেছে। টিফিনের টাকা নিয়ে গেছে। মৌনী আমার পাশে বসে বলল, তুমি সুযোগ দিচ্ছো বলেই তো করছে। তারপর পেটে একটা গুঁতো দিয়ে বলল, ফাইট ব্যাক ইডিয়েট। এভাবে পালালে ওরা আরো সুযোগ পাবে। বোকা রসগোল্লাটা। ওর কথা শুনে আমি হাসলাম। রেখেছিলাম ওর কথা। ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।

কিন্তু সেদিনের পর হুট করে হারিয়ে গেল ও। ক্লাসে দেখতাম না। ছাদেও আসতো না। কিন্তু ওর ছাপ আমার ভেতর রয়ে গেল। ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলাম আমি ওকে পছন্দ করে ফেলেছি। সময়ের সাথে অনুভূতিটা বাড়তে লাগল। কিন্তু ওর আসল নামটা ভুলে গেলাম। ওকে আমি এলোকেশী ডাকতাম। সেটা মনের মধ্যে গেঁথে রইল।

এতগুলো বছর আমি ওকে খুঁজে বেড়িয়েছি। যদি আর একবার দেখা হয়! তারপর তোমার সাথে দেখা অফিসে। অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। চেহারার তেমন পরিবর্তন হয় নি এত বছরে। কেবল ম্যাচিউরিটি এসেছে। তাই সহজেই চিনতে পারলাম। নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এত সহজে কি করে খুঁজে পেয়ে গেলাম! তারপর তোমার সাথে বিয়ে হতেই যেন আমি আনন্দের সাগরে ভেসে গেলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি এতদিনের গড়ে তোলা সকল অনুভূতি তোমার বোনকে ঘিরে ছিল! তাই ঐদিন নামটা শুনতেই একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। হুট করে মনে পড়েছিল সেই মেয়েটির নাম ছিল মৌনী, মম নয়। তাই নিজের সাথে যুদ্ধ করে আজ হেরে গেছি। এত বছর দূরের একজনের জন্য তৈরী করা অনুভূতি কাছের মানুষের অনুভূতির কাছে হেরে গেছে। তোমাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি মম।

রিয়ান একটানা বলে এসে থামল। মম ওর দিকে চেয়ে রইল। রিয়ান ভেবেছিল মম অনেক অবাক হবে। কিন্তু তার বদলে উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে কি যেন এনে ওর সামনে এসে বসে বলল, দেখি বাম হাতটা দাও তো। রিয়ান হাতটা বাড়িয়ে দিল। মম একটা ফিতা ওর অনামিকায় ফুলের মতো বেঁধে দিয়ে বলল, মেয়েটা যে এভাবে তার মাথার ফিতাটা খুলে বেঁধে দিয়েছিল সেটা ভুলে গেছো? জানো ফিতাটা তোমাকে দিয়ে দেওয়ায় মেয়েটার চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল আর বাসায় গিয়ে আম্মুর কাছে বকা খেয়েছিল? রিয়ান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। মম বলল, তুমি হয়ত জানতে না সেই স্কুলে দুই জমজ বোন পড়ত। একজন ক্লাস সিক্সে আর আরেকজন ক্লাস ফাইভে। যে ক্লাস সিক্সে পড়ত সে ছিল মৌনী। সব সময় মাথায় দুই ঝুঁটি করে যেতো। আর যে ক্লাস ফাইভে পড়তো সে ছিল মম, মাথার চুলগুলো খোলা রেখে একটা ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখতো। তাই তার সাথে রসগোল্লার কেবল টিফিন পিরিয়ডেই দেখা হতো। তখনই কথা হতো। বুঝলে মি. রসগোল্লা?

রিয়ান ওর দিকে চেয়ে আছে। চোখ ভিজে এসেছে। এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়তেই মম হাত দিয়ে মুছে বলল, আমরা দুইজনই ক্লাস ফাইভে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি টিকতে পারিনি। মৌনী টিকেছিল। তাই পরবর্তী বছর আমাকে আবার পরীক্ষা দিতে হয়। সেই বছর আমি টিকে যাই কিন্তু একবছর গ্যাপ পড়ে যায় মৌনীর সাথে। সত্যি বলতে তোমাকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমি রোজ টিফিন পিরিয়ডে ছাদে যেতাম খেলা বাদ দিয়ে। বুঝতাম তুমি আমাকে লুকিয়ে দেখছো। ভাবতেই হাসি পেতো। কিন্তু কখনো সাহস করে এগিয়ে এসে কথা বলোনি। তাই একদিন নিজেই সাহস যুগিয়ে এগিয়ে এসেছিলাম কথা বলতে। তোমার হাসিটাই আমাকে বার বার তোমার কাছে নিয়ে আসতো। তুমি মোটা হলেও তোমার হাসি যেমন ছিল। আজও তেমন আছে। তবে সেই রসোগোল্লা যে তুমি সেটা খেয়াল করিনি। আজ না বললে তো জানতেই পারতাম না। আমাকে এলোকেশী নাম দিয়েছিলে বলে কখনো আসল নাম জানতে চাওনি। আমিও বলিনি। তোমার নামটাও আমি জানতাম না। কি অদ্ভুত না!? কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কেউ জানলে হাসবে৷

– চলে গিয়েছিলে কেন না বলে বন্ধুকে ছেড়ে?
মম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তার পরদিনই আম্মু আর মৌনী গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। আম্মুকে পাওয়া গেলেও মৌনীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আম্মুকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। আর মৌনীরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। কেবল ওর কাঁধে থাকা ব্যাগটা পাওয়া গিয়েছিল রক্তাক্ত অবস্থায়। তাই সবাই ধরেই নিয়েছে ও আর বেঁচে নেই। এরপরই আব্বুর মানসিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সেই সাথে পারিবারিক অবস্থাও। স্কুলের ফি বেশি হওয়ায় আমাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করায়। সেখান থেকেই আজ আমি এখানে।

রিয়ান হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরল। মম ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, আগে সব বললে এই ক’দিন অযথা কষ্ট পেতে হতো না ইডিয়েট। এজন্যই বলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে লুকোচুরি থাকতে নেই। রিয়ান ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বলল, হুম। তোমার ইডিয়েট জামাই। মম বলল, এই আমার সুড়সুড়ি লাগছে। রিয়ান ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলল, লাগুক। তারপর ঘড়িতে টিক টিক শব্দ করতেই ফিসফিস করে ওর কানের কাছে বলল, হ্যাপি বার্থ ডে মম।

মম ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল, আমার গিফট কই? রিয়ান মজা করে বলল, লাগবে নাকি!? মম ওর বুকে হাত মুঠো করে বাড়ি দিয়ে বলল, লাগবে না মানে। তাহলে আমার ফিতা ফেরত দাও। ও রিয়ানের হাত থেকে ফিতাটা নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করতে লাগল। রিয়ান বলল, তুমি যখন আগে আমার হাতে ফিতাটা লাগিয়ে দিয়েছিলে তখন ইচ্ছে করছিল তোমার গালে…। মম চোখ সরু করে কোমরে হাত দিয়ে বলল, থেমে গেছো কেন? কি বলছিলে শেষ করো। রিয়ান বলল, কিছু না, কিছু না। মম রাগ করে বলল, কিছু না মানে! আমার গাল নিয়ে কি ভেবেছিলে বলো বলছি। রিয়ান বলল, বলব না করে দেখিয়ে দিচ্ছি। বলেই ওর গালে ঠোঁট জোড়া আলতো ছুঁয়ে দিল। সাথে সাথে মমর মুখ কান সহ লাল হয়ে গেল। ও রিয়ানের কাছ থেকে সরে বলল, রুমটা বেশ গরম লাগছে। আমি একটু বারান্দায় গিয়ে বাতাস খেয়ে আসি। মম দ্রুত বারান্দায় চলে যেতেই রিয়ান মুচকি হাসল।

রিয়ান দেখল মম বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ান গিয়ে পেছন থেকে ওর দুই হাতের উপর হাত রাখল। মম ওর বুকে হেলান দিয়ে বলল, এই তিনদিন আমার কি যে গেছে ভেতরে! পঁচা জামাই। অযথা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছো। রিয়ার ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল, সরি। মম রিয়ানের দিকে ফিরে বলল, কালকে আমার সাথে এক জায়গায় যাবে। একটা সারপ্রাইজ আছে।
– কি সারপ্রাইজ?
– ধুর বোকা! বললে সারপ্রাইজ থাকে নাকি!?

রিয়ান মমর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল, আচ্ছা। মম বলল, আমার জন্মদিন আর আমাকেই গিফট দিলে না। রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি নিজেকেই দিয়ে দিলাম তাও আরো গিফট লাগবে!? মম হেসে জড়িয়ে ধরে বলল, না, শুধু তুমি হলেই চলবে।
রিয়ান আজকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করেই বেরিয়ে গেল। মম কোথায় যেন নিয়ে যাবে এজন্য। বাড়ির সামনে আসতেই ফোন দিয়ে বলল বের হতে। মম এসে গাড়িতে বসতেই বলল, কোথায় না যাবে বললে? সাজোনি যে? মম সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল, হাসপাতালে কেউ সেজেগুজে যায়? রিয়ান ওর দিকে ফিরে বলল, হাসপাতাল কেন!? কার কি হয়েছে? মম বলল, আরে সেটা গেলেই তো দেখতে পাবে। চলো। রিয়ান হাজার প্রশ্ন নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল৷

মম চিত্তে পর্ব ২৫

আধা ঘন্টায় ওরা হাসপাতালে পৌঁছে গেল। মম গিয়ে সেখান থেকে ওর রিপোর্ট সংগ্রহ করল। গতকালকে অফিস ব্রেকে হাসপাতালে এসেছিল পরীক্ষা করার জন্য। রিপোর্ট দেখে মম রিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিল। ও দেখে একবার মমর দিকে একবার রিপোর্টের দিকে তাকাতে লাগল৷ তারপর জাপটে ধরল মমকে। খুশিতে কি করবে বুঝতে পারল না। বাড়িতে ফোন দিল ও। রিতু ফোন তুলতেই রিয়ান বলল, আম্মুকে ফোনটা দে। রিতু ফেরদৌসীর কাছে ফোন দিলে উনি বললেন, হ্যাঁ বল। রিয়ানের খুশিতে কান্না চলে এল৷ ওর কান্না শুনে তিনি উদ্বীগ্ন হয়ে বললেন, কি হয়েছে বাবা? কাঁদছিস কেন?
– আম্মু, আমি বাবা হতে চলেছি।

মম চিত্তে  পর্ব ২৭