রংধনুর স্নিগ্ধতা গল্পের লিংক || নবনী নীলা

রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ১
নবনী নীলা

আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করিনি। আমার বর বাচ্চা এইসব আসবে কি করে?আম্মু বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি।”,বলেই কাদতেঁ লাগলো স্নিগ্ধা।

স্নিগ্ধার মা আয়েশা খাতুন হাতে ঝাটা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। এখন পর্যন্ত মেয়েকে মারেন নি, অনেক কষ্ট নিজেকে সামলে রেখেছেন। মেয়ের নিজেকে এমন নির্দোষ দাবী করায় তিনি বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললেন,” আচ্ছা, তাহলে টিভি চ্যানেলে যে এইসব দেখাচ্ছে। সেগুলো কি মিথ্যে ? কে এই আবরার ফাইয়াজ? হ্যা? মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে তো করেছো, বাচ্চাও নাকি আছে। ফুফুর বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনার নামে তাহলে এইসব করে বেরিয়েছ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্নিগ্ধা অঝোরে কাঁদছে। রাগে ভিতরে ভিতরে ইচ্ছে করছে ঐ আবরার ফাইয়াজটাকে খুন করে ফেলে। স্নিগ্ধা কিছু বলতে যাবে আগেই তাদের বাসার কলিংবেল বাজলো। কাজের মেয়েটি ভয়ে জড়সড় হয়ে একপাশে বসে ছিলো। কলিং বেলের আওয়াজে সে ছুটে গেলো। দেরি হলে ঝাটার বাড়ি তার উপরেই না পরে। কাজের মেয়ে ফরিদা দরজা খুলেই তার মুখ হা হয়ে গেলো। এতো সুন্দর ছেলে হয়তো সে জীবনে দেখেনি। আবরার কোম্পানির মালিক আবরার ফাইয়াজকে তার কাছে মনে হচ্ছে সিনেমার নায়ক। টিভিতে একটু আগেই দেখেছে কিন্তু বাস্তবে যেনো সে আরো সুন্দর।

জিন্সের সঙ্গে সাদা টি শার্ট আর উপরে ক্যাজুয়াল বাদামী রঙের লেদারের জ্যাকেট। ফিট বডি, চুলগুলো সিল্কি, ফর্সা গায়ের রং আর চেহারা তো মাশাল্লাহ। ফরিদা হা করে তাকিয়ে আছে কিন্তু এইদিকে যে তার খালাম্মা আয়েশা খাতুন ঝাঁটা হাতে ভিতরে অপেক্ষা করছে সে সেটা ভুলতে বসেছে প্রায়।
আবারারের ডাকনাম আদিল। কাছের মানুষেরা তাকে আদিল বলেই ডাকে।

আদিল মেয়েটির এমন দৃষ্টিতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে চোখের সানগ্লাসটা খুলে পাশে দাড়িয়ে থাকা কালো কোর্ট পড়া তার অ্যাসিস্টেন্ট জিমকে নিচু স্বরে বলল,” আর ইউ সিউর? এইটাই মেয়েটির বাড়ি।”
জিম কাছে এসে নিচু স্বরে বলল,” জ্বি স্যার অফিসে তো এই ঠিকানাই ছিলো।”
এদের এই কথোপকথনের মাঝে আয়েশা খাতুন এসে হাজির, ফরিদার মাথায় অকপটে একটা থাবর দিয়ে বললেন,” কিরে দরজার সামনে হা করে দাড়িয়ে কি করিস?”

ফরিদা মাথা ডলতে ডলতে বললো,” খাল্মা, দেখেন। দুলাভাই আসছে।”
আয়েশা খাতুন সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত চোখে সামনে তাকালেন আর অগ্নি কণ্ঠে বললেন,” কে দুলাভাই?”
নিজের হবু শাশুড়িকে এইভাবে ঝাঁটা হাতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিল একটা ঢোক গিললো। মেয়েটা বলেছিলো তার মা সাংঘাতিক কিন্তু এতটা সাংঘাতিক সেটা তো সে কল্পনাও করে নি।

জিম পিছন থেকে ভয়ার্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বললো,” স্যার হাতের এই ঝাটাটা কি আমাদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে? আপনার শাশুড়ি তো দেখি ডেঙ্গারেস মহিলা। আমাদের মারবে নাকি?” আদিল ফিচেল একটা হাসি দিয়ে তাকালো তার হবু শাশুড়ির দিকে।
তারপর এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় দেওয়ার আগেই আয়েশা খাতুন গম্ভির গলায় প্রশ্ন করলো,” তুমিই কি সেই বদমাশ ছেলে ? কি যেনো নাম আবরার ফাইয়াজ?”

আদিল নিচের ঠোঁট কামড়ে সরল দৃষ্টিতে একবার চোখের পলক ফেলে তাকালো। এইভাবে মুখের উপর কেউ তাকে এমনভাবে বদমাশ বলে নি। আদিল অত্যন্ত বিনীত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে জ্বি বলতে গিয়েও দাত চেপে মুখ বন্ধ করে ফেললো। কারণ তার আগেই জিম প্রতিবাদী ভঙ্গিতে বলল,” আপনি ওনাকে এইভাবে বলতে পারেন না। উনি একজন পাবলিক ফিগার, ওনার একটা মান সম্মান আছে।”

চুলার গরম তেলে যেনো একটু খানি পানির ছিটে। আয়েশা খাতুন কড়া চোখে তাকালেন। আদিল ওনার চোখের চাওনি দেখেই বুঝেছে, জিমের কথায় মহিলাটা আরো ক্ষেপে উঠেছে। আদিল জিমের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। জিমের মরি মরি অবস্থা হয়েছে ওভার এক্সাইটমেন্ট সামলাতে না পেরে বলে ফেলেছে।
আয়েশা খাতুন হাতের ঝাঁটার দিকে ঈশারা করে বললো,” এইটা কি দেখছো? অনেক্ষন ধরে এইটা হাতে নিয়ে ঘুরছি। এমন মাইর লাগাবো তুমিই যেই হও না কেনো পাবলিক ফিগার হও আর প্রাইভেট ফিগার একদম সোজা হয়ে যাইবা। মুখে মুখে কথা বলা একদম বের হয়ে যাবে।”

আদিল আর জিম দুজনেই তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে আছে। এমন সাংঘাতিক কিছুর মুখোমুখি তারা এর আগে হয় নি।
আদিল ভালোই বুঝতে পারছে এইভাবে ভদ্রতার জন্যে চুপ করে থাকলে সে কথা বলার কোনো সুযোগই পাবে না। আদিল স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে এসে বললো,” আমি আবরার ফাইয়াজ। আপনি হয়তো আমাকে চিনেন না। আমি বুঝতে পারছি অনেক ভুল বুঝাবুঝি শুরু হয়েছে। আমি সেই জন্যেই কথা বলতে এসেছি। আমাকে না জেনে বিচার করবেন না।”

আয়েশা খাতুন তার সামনে দাড়িয়ে থাকা সুন্দরমত ছেলেটির থেকে এমন গুছানো আর স্পষ্টবাদী কথা আশা করেননি। তার ধারণা মতে সুন্দর ছেলেদের মগজে কোনো ঘিলু থাকে না। কিন্তু এই ছেলেটি আলাদা, কণ্ঠেই কেমন এক ম্যাচিউর ভাব আছে।

আয়েশা খাতুন নিজেকে সামলে বললেন,” ভিতরে আসো।” তারপর ফরিদার দিকে তাকিয়ে বললো,” ওকে ভিতরে বসতে দে।” ফরিদা ফ্যালফ্যাল করে হেসে আদিলকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো।
জিম ভয়ার্ত চোখে এখনো বাহিরে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না ভিতরে যাবে কি যাবে না। আয়েশা খাতুন গম্ভীর কণ্ঠে জিমের দিকে তাকিয়ে বললেন,” ভিতরে যাও।” জিম ভয়ার্ত বিড়ালের মতন ভীতরে এলো।

স্নিগ্ধা নিজের রুমে খাটের উপর দুই হাঁটু ভাজ করে তার উপর মাথা নুইয়ে বসে বসে কাদছে। মুহূর্তেই যেনো তার জীবনের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেলো। সে যা করেনি তার জন্যে কথা শুনতে হচ্ছে। সব জায়গায় জানাজানি হয়ে গেছে। এমনকি নিজের মা পর্যন্ত তাকে অবিশ্বাস করেছে।

সকালে অফিসে যাওয়ার জন্যে সে বেরিয়েছে। হেঁটে হেঁটে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে সে থামলো। হটাৎ এমন সুন্দর সকালে এতো প্রেস মিডিয়া ভন ভন করছে কেনো তাদের এলাকায়। স্নিগ্ধার কৌতূহল হলো ঠিকই কিন্তু সে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো মাথায় কালো ক্যাপ, মুখে কালো মাস্ক, নেইভি ব্লু শার্টের কনুই পর্যন্ত হাত ভাজ করা একজনকে ঘিরে ধরেছে মিডিয়া। ছেলেটার বডি গার্ডরা তাকে ভিড় ঠেলে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে ব্যাস্ত। স্নিগ্ধা বেশ বিরক্ত হলো।

এইসব পাবলিক ফিগারদের এটা আবার কেমন বাড়াবাড়ি? এদের এমন বাড়াবাড়ির জন্যে সাধারণ জনগনকে কতটা অসস্থির মধ্যে পড়তে হয়। প্রতিদিন এই মোড়ে এলেই রিক্সা পাওয়া যেতো। এদের যন্ত্রণায় আজ সেটাও নেই। স্নিগ্ধা মুখ কালো করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। কিছুদূর যেতেই দেখলো, ছোট্ট একটা বাচ্চা তার ছোটো ছোটো পা ফেলে বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা এদিক সেদিক তাকালো। বাচ্চাটার সঙ্গে কাউকে দেখতে পাচ্ছে। এইদিকে বড় রাস্তা দিয়ে একেরপর এক বাস যাচ্ছে তাও আবার দ্রুত গতিতে।

কেমন বাবা মা? নিজেদের বাচ্চাকে কেউ এইভাবে ছেড়ে দেয়। স্নিগ্ধা দৌঁড়াতে লাগলো কারন বাচ্চাটা অনেকটা এগিয়ে পড়েছে। বাচ্চাটা মাঝ রাস্তায় গিয়ে দাড়িয়ে পড়তেই স্নিগ্ধার বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো। স্নিগ্ধা দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দ্রুত গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো। কোলে নিয়েই স্নিগ্ধা মুগ্ধ হয়ে তাকালো। কি সুন্দর মায়াবী দেখতে, চোখ গুলো দীর্ঘপল্লব বিশিষ্ট। যেনো জীবন্ত একটা পুতুলকে কোলে নিয়েছে সে।

স্নিগ্ধা বাচ্চাটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে গাড়ির সামনে থেকে ছিটকে চলে আসতেই তার চোখ যায় বাম দিকে। বড় একটা প্রাইভেট গাড়ি দ্রুত এগিয়ে আসছে। অপরপাশে একটি বাস, স্নিগ্ধা বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো। পিছিয়ে যাবার রাস্তাও বন্ধ। আশেপাশে কেউ নেই, এমন সকালে যারা উঠে তারা সবাই অফিসের জন্যে রওনা হয়ে যায়। বাকি যারা ছিলো তারা সেই ভিড় দেখতে ব্যাস্ত। হাত পা কেপে উঠলো তার। বাচ্চাটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো সে।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে কারোর বলিষ্ঠ বাহুর মাঝে আবদ্ধ অনুভব করে চোখ খুললো স্নিগ্ধা। কালো ক্যাপ আর কালো মাস্ক পড়া সেই ছেলেটির বাহুতে অবিস্কার করলো নিজেকে। ছোটো বাচ্চা ছেলেটি স্নিগ্ধার কাধে মুখ লুকিয়ে পরে আছে। চারিদিকটা কেমন যেনো ঘোলাটে মনে হলো তার কাছে? তার শরীর থর থর করে কাপছে। আসে পাশে তাকাতেই দেখলো কালো কোর্ট পড়া বিশাল দেহের বডিগার্ডরা সব গাড়ী থামিয়ে দিয়েছে। একপাশে মিডিয়ার লোকজন। স্নিগ্ধা দ্বিতীয়বারের মত ছেলেটার দিকে তাকালো, শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে চারিপাশ অন্ধকার হয়ে গেলো। স্নিগ্ধা জ্ঞান হারিয়ে মাথা ফেলে দিলো আদিলের বুকে।

স্নিগ্ধার জ্ঞান ফিরলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো সে। মাথাটা কেনো জানি প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। চোখ মেলতেই তার স্নায়ু সজাগ হয়ে গেলো। বাচ্চাটার কি হয়েছে মনে আসতেই সে লাফিয়ে উঠে বসলো। হৃদ কম্পন কয়েকশ গুন বেড়ে গেলো তার। পরক্ষনেই স্নিগ্ধা নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। কালো কোর্ট পরা মধ্য বয়সী একজন দাড়িয়ে আছে একপাশে, সে ছাড়া রুমটিতে আর কেউ নেই। স্নিগ্ধা লোকটাকে এর আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,” কে আপনি?”

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি খুব মার্জিত ভঙ্গিতে বললো,” আমার নাম জিম, আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনি কি এখন সুস্থ বোধ করছেন? আপনি অতিরিক্ত ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।”
স্নিগ্ধার শেষে কি হয়েছিলো মনে পড়ছে না। খালি ওই বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে চোখ বুজে দাড়িয়ে ছিলো অতটুকুই তার মনে পড়ছে। স্নিগ্ধা সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করলো,” বাচ্চাটা কেমন আছে?”
জিম হেসে তাকালো। তারপর বললো,” জ্বি, সে ভালো আছে।”

স্নিগ্ধা কড়া গলায় বললো,” বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারেন না? বাচ্চাটা তো আপনারই নাকি?” বাকিটা বলার আগেই স্নিগ্ধার কানে টিভির আওয়াজ ভেসে এলো। স্নিগ্ধা ঘাড় ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকালো। লোকাল হাসপাতালে সাধারণত টিভি থাকে না, দেখে মনে হচ্ছে ব্যায়বহুল কোনো হাসপাতাল। তার এমন কিছু হয় নি, যে এইভাবে এমন ব্যায়বহুল হাসপাতালে এনে তুলতে হবে। স্নিগ্ধা টিভির দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে,

টিভির পর্দায় অচেনা এক ছেলের বুকে মাথা রেখে তার অজ্ঞান হওয়ার দৃশ্য দেখাচ্ছে। সঙ্গে সেই বাচ্চাটি, আর মিডিয়া ঘিরে ধরেছে। স্নিগ্ধা মুহূর্তেই চমকে তাকালো, নিউজ চ্যানেলে এইসব কি দেখাচ্ছে। তার মাথা কাজ করছে না কিছুক্ষণের জন্যে সে থমকে গিয়ে হেডলাইন পড়তে যাবে তখনি কেউ টিভির সামনে এসে দাড়ালো। ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ সে টিভির দিকে মুখ করে পকেটে একটা হাত ভরে দাড়িয়ে আছে।

ছেলেটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে টিভি চ্যানেল বন্ধ করে রিমোটটা একপাশে রেখে স্নিগ্ধার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। এই প্রথম সে ছেলেটির চেহারা দেখলো। কপালের সামনে কয়েকটা চুল এসে পড়েছে। দেখেই মনে হচ্ছে খুব নামী দামী কেউ। স্নিগ্ধা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এই মুহুর্তে চেঁচিয়ে এই হাসপাতাল মাথায় তুলে ফেলতে পারতো। তারও চেঁচাতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু সে পারছে না। নিজেকে যথাসম্ভব সামলাতে চেষ্টা করছে। তার বুঝতে বাকি নেই এই ছেলের সাথে নাম জড়িয়েছে।

একটি কুমারী মেয়ের নাম কোনো ছেলের সাথে জড়ানো মানেই তো লাঞ্ছনা, অপবাদ। সে খুব সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে, সেই পরিবার আর সমাজের কাছেই এইটাই তো সত্যি। স্নিগ্ধা খুব কষ্টে নিজেকে সামলে বসে আছে। মনে মধ্যে ক্ষীণ একটা আশা নিয়ে যে হয়তো এইসব ভুল, টিভিতে যেটা দেখেছে সেটাও হয়তো ভুল।
আদিল সামনে পাথরের মতন বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিষণ্ণতায় ভরা চেহারায় জীর্ণ শীর্ণ হয়ে বসে আছে সে মেয়েটি। অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে দেখে বড্ড মায়াবী লেগেছিল তার।

আদিল জিমের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” বাহ্, তোর আবার কবে থেকে নিউজের প্রতি এতো আগ্রহ তৈরি হলো।” তারপর একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিমকে জিজ্ঞেস করলো,” মেয়েটা কি কিছু মনে করতে পড়ছে না নাকি সৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে? এভাবে মূর্তির মতন বসে আছে কেনো? ”

স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেটির দিকে তাকালো। এই সেই ছেলে যার সাথে তার এতো খবর বের হয়েছে। অথচ ছেলেটার কোনো মাথা ব্যাথা। অবশ্য ছেলেদের মাথা ব্যাথা থাকবেও বা কেনো তাদের দিকে তো আর কেউ আঙ্গুল তুলে না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে স্নিগ্ধার এর মাঝেই ছেলেটা এগিয়ে এসে স্নিগ্ধার বেডের সামনে বুকের কাছে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে নিশ্চুপে কিছুক্ষণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রইলো।

জিন্সের সঙ্গে সাদা কুর্তি আর গলায় নেভি ব্লু রঙের স্কার্ফ যাতে ঝুলে আছে রং বেরঙের পমপম। চোখগুলো টানা টানা, চেহারায় অন্যরকম এক মায়া। চুলগুলো একপাশে এনে খেজুরে বেনী করা। এক কথায় মেয়েটাকে দেখতে চমৎকার লাগছে।
স্নিগ্ধা ব্যাপারটা মোটেই ভালো ভাবে নিলো না রাগ সামলাতে না পেরে বলে উঠলো,” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আপনি?”

” তোমাকে দেখছি।”, বলেই আদিল আরো গভীরভাবে তাকালো তারপর মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,” হুম, তুমি দেখতে সুন্দর, তাই মিডিয়ার এতো বাড়াবাড়ি। এই জন্যেই তোমাকে মিসেস আবরার ফাইয়াজ ভেবে বসে আছে।” বলতে বলতে হাত দুটো নামিয়ে দুই পকেটে ভরে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
স্নিগ্ধা হতবাক হয়ে বললো,” কে এই আবরার ফাইয়াজ?”

রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ২