অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ গল্পের লিংক || ইরিন নাজ

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১
ইরিন নাজ

ঘুম থেকে শক্ত হাতে কেউ টে’নে তোলায় ভড়কালো আয়ানা। নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে আদ্রিশ কে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঘুম উধাও হয়ে গেলো তার। আয়ানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে বিছানা থেকে টে’নে নামিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যেতে লাগলো আদ্রিশ। আয়ানা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই র’ক্তি’ম চোখে তাকায় আদ্রিশ। আদ্রিশের এমন চাহনি দেখে ঢোক গিললো আয়ানা। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করার সাহস হলো না আর। নীরবে অভিমানী চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের দিকে। ভাবতে লাগলো গতকাল রাতের ঘটনা।

গতকাল রাতে আদ্রিশের করা ব্যবহারে অবাক হওয়ার পাশাপাশি ভীষণ ক’ষ্ট ও পেয়েছিলো আয়ানা। প্রিয় মানুষের কাছ থেকে এমন ব্যবহার কেই বা আশা করে! তবুও নিজেকে বুঝ দিয়েছে সে। কিন্তু ছাদ থেকে আদ্রিশের গাড়ি বাহিরে যেতে দেখে চমকায় আয়ানা। দৌড়ে রুমে পৌঁছে খুঁজে পায় না আদ্রিশ কে। বুঝতে বাকি থাকে না আদ্রিশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আদ্রিশের রা’গ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপার টা কিছুতেই মানতে পারে নি আয়ানা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একরাশ অভিমান হা’না দেয় মনের মাঝে। সে কি এতোটাই বড় ভুল করেছে যে আদ্রিশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো! আদ্রিশ এর অপেক্ষায় সারাটা রাত চোখের পাতা এক করে নি সে। সকালে যখন আদ্রিশের গাড়ি বাড়িতে ঢুকলো তখন রুম থেকে বেরিয়ে অনু বেগমের রুমে চলে গিয়েছিল আয়ানা। এরপর আর একবারো আদ্রিশের সামনে পড়ে নি। অনু বেগম ও হয়তো কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন আয়ানার লাল, ফোলা চোখ দেখে।

তবে এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করেন নি উনি। উল্টো আয়ানা কে উনার কোলে মাথা রাখতে বলেন। আয়ানা উনার কোলে মাথা রেখে শুতেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করেন উনি। সারারাত না ঘুমানোর কারণে আর মাথায় এমন আদুরে স্পর্শ পড়ায় রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয় আয়ানার চোখে। এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে। এরপর কতো সময় ঘুমিয়েছে জানা নেই আয়ানার। শান্তির ঘুমে ভা’ঙ’ন ধরে আদ্রিশের হেঁচকা টা’নে।

দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আয়ানা। কেঁ’পে উঠলো এক প্রকার। ভ’য়ে মাথা নিচু করে দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। আয়ানার মাথা নিচু করে থাকার ব্যাপার টা যেনো আরও রা’গিয়ে তুলে আদ্রিশ কে। সে আয়ানার কাছাকাছি এসে হিসহিসিয়ে বললো,

— “আমার শান্তি কেড়ে নিয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলে! সকালে গাড়ি থেকে নামার সময় তো তোমাকে এই রুমের বেলকনিতেই দেখলাম। তবে আমাকে দেখেও কেনো আম্মুর কাছে চলে গিয়েছিলে? নাকি আমাকে ইগনোর করার জন্য আম্মুর রুমে চলে গিয়েছিলে? বলো, উত্তর দাও…”

শেষের কথাগুলো বেশ শব্দ করেই বললো আদ্রিশ। আয়ানা দেখেও তাকে ইগনোর করেছে এটা ভাবলেও রা’গ হচ্ছে আদ্রিশের। আয়ানার ফুপানোর শব্দে হুশ ফিরলো তার। রাগের মাথায় আয়ানা কে আবারও হা’র্ট করেছে বুঝতে পেরে নিজের উপর রা’গ হলো আদ্রিশের। আয়ানার অশ্রুভেজা চোখ, মুখ দেখে বুকে তীব্র দ’হ’ন অনুভব করলো সে। অ’গ্নি দৃষ্টি ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসলো। শীতল কণ্ঠে ধীর স্বরে উচ্চারণ করলো,

— “আয়ানা….”
প্রথম বারের মতো আদ্রিশের মুখে নিজের নাম শুনে কেঁ’পে উঠলো আয়ানা। কান্নার তীব্রতা কমে আসলো। আদ্রিশের চোখে চোখ রাখতে ভীষণ ইচ্ছে হলেও তাকালো না ওই চোখের দিকে। আদ্রিশ ফোঁস করে শ্বাস ত্যাগ করলো। ফের বলে উঠলো,
— “I’m sorry… গতকাল রাতের এবং এখনকার ব্যবহারের জন্য। আমি তো আগেই তোমাকে জানিয়েছি রা’গ উঠলে আমার হুশ থাকে না। সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে যায়।”
আদ্রিশ কিছুক্ষন থেমে থেকে বলে উঠলো,

— “আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”
টলমলে চোখে চাইলো আয়ানা। অভিমানী কণ্ঠে তেজের সাথে বলে উঠলো,
— “আপনি করেছেন আমাকে ক্ষমা? রা’গ করে কেনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, হুম? আমার বুঝি চিন্তা হয় নি আপনার জন্য? সারাটা রাত ছটফট করেছি আপনি ঠিক আছেন কিনা, কখন বাড়ি ফিরবেন সেই চিন্তায়। কেনো করলেন এমন?”

কথাগুলো বলে নিঃশব্দে চোখে পানি ফেলতে লাগলো আয়ানা। এতক্ষনে আয়ানার রা’গ, অভিমানের কারণ ধরতে পারলো আদ্রিশ। মেয়ে টা যে ভুল বুঝে অভিমান করে বসেছিল তা ভেবে হাসবে না রা’গ করবে ভেবে পেলো না সে।
এমন একটা সি’রি’য়াস মুহূর্তে কপালে টো’কা পড়ায় হতভম্ব হলো আয়ানা। কান্না বাদ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের দিকে। গম্ভীর চোখে আয়ানার দিকেই তাকিয়ে ছিলো আদ্রিশ। আয়ানা তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিশ গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো,

— “তোমাকে শুধু শুধু স্টুপিড বলি না। তুমি আসলেই একটা স্টুপিড। আমি কি তোমার উপর রা’গ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি নাকি! আমি তো হসপিটালে গিয়েছিলাম। কারণ স্যার আমাকে ফোন করেছিলেন। রাতে একজন পেশেন্ট গুরুতর আ’হ’ত হয়ে হসপিটালে অ্যাডমিট হয়েছিল। লোকটার অবস্থা ভীষণ খা’রা’প ছিলো। বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম, তখনই অপারেশন করতে হতো। নাহলে বাঁচানো যেতো না। স্যার আমাকে ভীষণ ভরসা করেন। তাই স্যার চাচ্ছিলেন আমি উনাকে অ্যাসিস্ট করি। হাতে সময় খুব কম ছিলো।

তুমিও রুমে ছিলে না। তাই তোমাকে জানাতে পারি নি। লং টাইম চেষ্টার পর আলহামদুলিল্লাহ আমরা সাকসেসফুল হয়েছি। লোকটার জ্ঞান ফেরার পর আমি ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরেছি। আর তুমি নিজে নিজে উল্টোপাল্টা ভেবে ক’ষ্ট পেলে। অবশ্য এতে আমারও দো’ষ আছে মানছি। সেটার জন্য ও সরি।”

কথাগুলো বলে কানে হাত দিলো আদ্রিশ। চমকালো আয়ানা। গম্ভীর মানুষটাকে এভাবে চোখ মুখ ক’রু’ন করে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি পেলো তার। হাসি থামাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিলো সে। আয়ানা কে হাসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আদ্রিশ। গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো আয়ানার মিষ্টি মুখটাকে। চোখে পানি, ঠোঁটে হাসি, নাকের ডগা কান্নার কারণে লাল হয়ে আছে, হাসির কারণে ফুলো গাল জোড়া আরও ফুলে উঠেছে।

অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘোর লেগে আসলো আদ্রিশের। ঘোরের মাঝেই ঝুঁ’কে আসলো আয়ানার দিকে। আদ্রিশ কে এভাবে ঝুঁ’কে আসতে দেখে হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আয়ানার। গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের দিকে।

— “আজকাল কেউ একজন আমার জন্য বড্ড বেশি চিন্তা করছে, দূরে সরে গেলে অ’স্থি’র হচ্ছে, ব’কা দিলে অভিমান করে গাল ফুলিয়ে থাকছে। তার চিন্তা, অ’স্থি’রতা, অভিমানের কারণ টা কি? আমাকে কি সে নিজের ‘প্রিয়’ র তালিকায় যুক্ত করেছে! আমি কি তার ‘প্রিয়’ একজনে পরিণত হয়েছি?”

আদ্রিশের ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো শ্রবণ হওয়া মাত্র শিউরে উঠলো আয়ানা। কান গরম হয়ে আসলো তার। দৃষ্টি নত হলো। গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো লাজের রক্তিম আভা। নিজের অ’স্থি’র মনোভাব আদ্রিশের সামনে প্রকাশ করে যে ভুল করেছে তা বুঝতে বাকি রইলো না আয়ানার। তাকে এভাবে লজ্জায় ফেলবে জানলে কখনোই ওসব বলতো না। মনে মনে বেশ কয়েকবার আদ্রিশ কে ব’দ লোকের উপাধি দিতে ভুললো না সে। প্রথমে তাকে চিন্তায় ফেললো আর এখন সেটা নিয়ে মজাও নিচ্ছে!

আয়ানা কে লজ্জা পেতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো আদ্রিশ। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে দূরে সরে গেলো সে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আয়ানা। আর কিছুক্ষন গেলে বোধহয় তার দম আটকে যেতো।
— “আয়ানা…”

পুনরায় আদ্রিশের কণ্ঠে নিজের নাম শুনে চকিত হলো আয়ানা। নিভু নিভু চোখে চাইলো আদ্রিশের দিকে। হাতের ইশারায় আয়ানা কে কাছে যেতে বললো আদ্রিশ। ধীর পায়ে আদ্রিশের কাছাকাছি যেতেই টে’নে আয়ানা কে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো আদ্রিশ। চোখ বন্ধ করে আলতো স্বরে বললো,
— “একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে? বড্ড ক্লান্ত আমি। অনেক প্রে’সা’র গিয়েছে। এখন একটু শান্তির ঘুমের প্রয়োজন।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ২