অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ২

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ২
ইরিন নাজ

কাঁপা কাঁপা হাত আদ্রিশের চুলের মাঝে গলিয়ে দিতেই শিহরিত হলো আয়ানা। এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে লাগলো মনের মাঝে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো নিমিষেই। আয়ানার হাতের কম্পন স্পষ্ট অনুভব করলো আদ্রিশ। বলে উঠলো,

— “কাঁপাকাঁপি ই করবে, নাকি মাথায় একটু হাত ও বুলিয়ে দেবে?”
লজ্জা পেলো আয়ানা, ভীষণ রকমের লজ্জা। দ্রুত আদ্রিশের চুলে হাত চালাতে লাগলো সে। মুখে ‘টু’ শব্দ টা করলো না। আয়ানা যে লজ্জা পাচ্ছে তা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলো আদ্রিশ। এই টুকুতেই মেয়েটার এই অবস্থা, কোলে মাথা রাখলে না জানি কি করতো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদ্রিশের খুব করে ইচ্ছে হলো চোখ মেলে একটাবার আয়ানার লাজে রাঙা মুখ টা দেখতে। কিন্তু চোখ মেললো না সে। তাকালে যে মেয়ে টা অ’স্বস্তিতে পড়বে! আয়ানার হাতের কোমল ছোঁয়ায় এক সময় ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো আদ্রিশ।
ধীরে ধীরে আদ্রিশের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আয়ানা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিশের গম্ভীর মুখটার দিকে। লোকটা কে আজকাল বড্ড বেশি ভালো লাগে তার। অদ্ভুত অনুভূতি হয় ওই চোখের দিকে তাকালে। ইচ্ছে করে সারাটাদিন মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকতে। আয়ানার জানা নেই এই অনুভূতির নাম কি! সে শুধু জানে তার ভালো লাগে লোকটাকে, ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে।

রুমে আসার পর আয়ানা কে না পেয়ে হাসলেন অনু বেগম। আদ্রিশ যে আয়ানা কে নিয়ে গিয়েছে তা ঢের বুঝতে পেরেছেন উনি। সকালে আয়ানার চোখ, মুখের অবস্থা দেখেই অনু বেগম বুঝতে পেরেছিলেন আদ্রিশের সাথে আয়ানার কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু আয়ানা যেহেতু উনার সামনে সেই ব্যাপারে কিছু প্রকাশ করতে চায় নি তাই উনিও এই বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি।

বাড়ি ফেরার পর আয়ানা কে রুমে না পাওয়ায় আদ্রিশের চোখে মুখে যেই অ’স্থি’র ভাব ছিলো তা স্পষ্ট জানান দিয়েছে আদ্রিশের মনে আয়ানার জন্য একটু হলেও অনুভূতি জেগেছে। এটা জেনেই ভীষণ খুশি লাগছে অনু বেগমের। আদ্রিশ যদি আয়ানা কে মেনে না নিতো তবে আয়ানার জীবন ন’ষ্টে’র জন্য যে উনিই দায়ী থাকতেন। উনি জানেন হুট করে এভাবে বিয়ে করিয়ে উনি ঠিক করেন নি। কিন্তু এর পেছনেও যে কিছু কারণ ছিলো! আর ভাগ্যের লিখন কি বদলানো যায়! আদ্রিশ, আয়ানা একে অপরের ভাগ্যে ছিলো। তাই তো যেভাবেই হোক তারা এক হয়েছে। এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অনু বেগম।

আগামীকাল মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে জানার পর থেকে অ’স্থি’র হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আয়ানা। ভ’য়ে বুক কাঁ’প’ছে তার। যদি কোনো অ’ঘটন ঘটে যায়! যদি সে চান্স না পায়! তাহলে কি হবে! পুরো পরিবার তার উপর আশা করে বসে আছে। বিশেষ করে আদ্রিশ। লোক টা তো কম ক’ষ্ট করে নি তার জন্য। সারাদিন পরিশ্রম করে এসে তাকে পড়িয়েছে, সবসময় উৎসাহ জুগিয়েছে। কি হবে যদি সে চান্স না পায়!

রুমে ঢুকতেই আয়ানা কে অ’স্থি’র হয়ে পায়েচারি করতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়লো আদ্রিশের। বিকালে তো ঠিকঠাক ই দেখে গেলো। এখন আবার কি হলো মেয়েটার?
আয়ানা নিজের চিন্তায় এতোটাই মগ্ন ছিলো যে আদ্রিশ কে সে খেয়াল ই করে নি। পায়েচারি করতে করতে একসময় এসে ধাক্কা খেলো আদ্রিশের বুকের সাথে। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই সামলে নিলো আদ্রিশ। হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,

— “কি সমস্যা এভাবে গোল গোল ঘুরছো কেনো?”
আদ্রিশ কে দেখে চোখে পানি চলে আসলো আয়ানার। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো সে। গভীর দৃষ্টিতে আয়ানার মুখ টা পর্যবেক্ষণ করলো আদ্রিশ। অতঃপর শীতল কণ্ঠে শুধালো,
— “কি হয়েছে বলবে না? না বললে বুঝি কি করে বলো তো? ওয়েট, ওয়েট। তুমি কি আগামীকাল মেডিকেলের রেজাল্ট দিবে বলে চিন্তিত?”

কিছুক্ষন থম মে’রে থেকে মাথা ঝাকালো আয়ানা। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তার। আলতো হাতে আয়ানার কপোল ছুঁয়ে দিলো আদ্রিশ। মুছে দিলো চোখের পানি। আদ্রিশের হাতের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে ফেললো আয়ানা। আদ্রিশ আয়ানার কপোলে হাত ছুঁয়িয়ে রেখেই বলে উঠলো,
— “আয়ানা, লুক এট মি…”

বাধ্য মেয়ের মতো চোখ মেললো আয়ানা। চোখ রাখলো আদ্রিশের চোখে। আদ্রিশ ফের বলতে লাগলো,
— “আমি জানি চিন্তা হওয়া টা স্বাভাবিক। আমারও হয়েছিল জানো! আমি চাইলেই আমাদের বিজনেস সামলাতে পারতাম, যেমন আহিল সামলাচ্ছে। কিন্তু আমার ছোটবেলা থেকে একটাই স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবো আমি। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য জান প্রাণ এক করে পড়ছিলাম। আমাদের ব্যাচের বেস্ট স্টুডেন্ট ছিলাম আমি। ভর্তি পরীক্ষাও অনেক ভালো দিয়েছিলাম। তবুও রেজাল্ট দেয়ার আগেরদিন আমার চিন্তার শেষ ছিলো না।

মনে হচ্ছিলো চান্স পাবো না, সব ভুল দাগিয়ে এসেছি etc etc… আমাকে এতো এতো চিন্তা করতে দেখে আম্মু আমাকে কিছু কথা বলেছিলো। আম্মু আমাকে বলেছিলো,’আব্বু তুমি এতো চিন্তা করছো কেনো? তুমি তো নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করেছো। আর যারা চেষ্টা করে, তারা কখনো ব্যর্থ হয় না। তারচেয়ে বড় কথা কি জানো? আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা রেখেছেন, তুমি তাই পাবে। আর আল্লাহ যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। তুমি যদি চান্স না পাও তবে ধরে নিবে সেটাই তোমার জন্য মঙ্গলজনক।”

থামলো আদ্রিশ। মনোযোগ দিয়ে আদ্রিশের বলা প্রতিটা কথাই শ্রবণ করলো আয়ানা। এখন একটু শান্তি লাগছে তার। আদ্রিশ আয়ানা কে শান্ত হতে দেখে বললো,
— “তুমি তো অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছো। তুমি নিজেই আমাকে বলেছিলে। আমার মন বলছে তুমি অনেক ভালো ফলাফলের সাথে চান্স পাবে। তোমার চেষ্টা বৃথা যাবে না। বুঝেছো?”

আয়ানার গাল টেনে দিলো আদ্রিশ। পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে আয়ানার হাতে ধরিয়ে দিলো। অবাক হলো না আয়ানা। আদ্রিশ প্রায় প্রায় ই বিভিন্ন চকলেট নিয়ে আসে। আনিকা চকলেট ভীষণ পছন্দ করে। আনিকার জন্য আনলে আয়ানার জন্যও নিয়ে আসে। চকলেট আয়ানার ও ভীষণ পছন্দের। যদিও সে কখনো আদ্রিশ কে সেটা বলে নি। আদ্রিশ যে নিজে থেকে তার জন্য নিয়ে আসে এটা ভাবলেও সুখ সুখ অনুভব হয় আয়ানার।

রাত ১.৪০। চারপাশে শুনশান নীরবতা। সবাই হয়তো গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। কিন্তু ঘুম নেই আয়ানার চোখে। অনেকক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না আয়ানার। ঘুম আসবে কি করে! মাথায় যে অনেক রকমের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আদ্রিশের কথাগুলো শোনার পর কিছু সময়ের জন্য মন টা শান্ত হলেও এখন আবার দু’শ্চি’ন্তাগুলো মস্তিষ্কে হা’না দিচ্ছে।

পাশ ফিরে আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা। চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে আদ্রিশ। বুঝা যাচ্ছে না ঘুমিয়ে গিয়েছে না জেগে আছে। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে আসলো আয়ানা। সে জানে আজ তার ঘুম হবে না। সবসময় ই রেজাল্ট দেয়ার আগেরদিন রাতে তার এই অবস্থা হয়। এই সময় একটা কাজেই তার মন টা শান্ত হয়। সেটা হচ্ছে নামাজ পড়া। কথাগুলো ভেবে অজু করতে চলে গেলো আয়ানা।

অজু করে বেরিয়ে আদ্রিশ কে বসে থাকতে দেখে চমকালো সে। অ’প’রাধী কণ্ঠে বলে উঠলো,
— “আমার কারণে আপনার ঘুম টা ভে’ঙে গেলো তাই না?”
আয়ানার কথার বিপরীতে চমৎকার একটা হাসি দিলো আদ্রিশ। বললো,
— “দুপুরে ঘুমিয়েছি, তাই এখন আর ঘুম আসছে না। তুমি বুঝি নামাজ পড়তে যাচ্ছ?”
মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোঝালো আয়ানা। আদ্রিশ ফের বললো,

— “তাহলে একটু অপেক্ষা করো। আমিও অজু করে আসি। দুজন আজ একসাথে নামাজ পড়ে দোয়া করবো।”
কথাগুলো বলে অজু করতে চলে গেলো আদ্রিশ। চোখ বন্ধ করে হাসলো আয়ানা। বিড়বিড় করে বললো,
— “আল্লাহ হয়তো আমার জন্য এতো ভালো কিছুই রেখেছিলেন। ইশ! এতো সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম বুঝি! হে আল্লাহ, আমার এই ভাগ্যে যেনো কারোর ব’দ নজর না লাগে, কারোর না।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১

আদ্রিশ অজু করে বের হতেই দুজন মিলে দাঁড়িয়ে পড়লো নামাজে। আকাশে আজ থালার মতো চাঁদ উঠেছে। খোলা জানালা দিয়ে সেই চাঁদের আলো ঘরে প্রবেশ করে ঘর কে আলোকিত করে রেখেছে। এ যেনো অন্যরকম সুন্দর এক পরিবেশ!

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৩