অতঃপর প্রেম পর্ব ১০+১১+১২

অতঃপর প্রেম পর্ব ১০+১১+১২
লেখনীতে আয়ানা আরা

বিকালে আমি আর রোথি সুন্দর করে রেডি হলাম। অবশ্য রোথি সাজতে চায়নি আমি ওকে জোর করে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছি আর নিজেও সেজেছি। আমাদের আরো কাজিনর’ চলে এসেছে। ওরা যার যার মতো রেডি হচ্ছে। আমার নানুর বোনের বড় ছেলের বউ এসে আম্মুকে খোঁচা দিয়ে বলে,’কি গো মেহেদীর আম্মু ছেলেকে তো বিয়া দিয়া দিতেছো মাইয়ারে দিবা না?’
আম্মু জোরপূর্বক হেসে বলে,’আরে ভাবী মেহেক তো এখনো অনেক ছোট মাত্র মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে।’
অবাক হওয়ার ভান করে বলে,’আল্লাহ কি বলো মাইয়া মানুষ এতো পড়ালেখা করতে নাই। পরে তোমার মতো কোথাও সম্পর্ক করে ভাইগা যাবে।’

কথাটা নানুর বোন শুনে ফেলে সে এসে উনাকে ধমক দেয়। উনি খালি চলে যাওয়ার সময় বলে যায়,’ভালো কথা কইলে সবারই বিঁধে।’
আম্মু চুপচাপ শুনছিলো কথা গুলো। নানুর বোন মানে ছোট নানু এসে আম্মুর পাশে বসে বলে,’ওর কথা মনে নিস না। আসলে কি এমন পাপ করছিলাম যে এমন পোলার বউ পাইছি’
আম্মু বলে,’আরে না খালা আমি কিছু মনে করিনি।’
আম্মুকে ডাক দেওয়ার জন্য সে চলে যায়। আমিও সবই শুনেছিলাম। ছোট নানুর ছেলের বউ এসে আমাকে বলে,’আরে মেহেক বাহ দেখতে তো খুব সুন্দর তুমি। তা কোনো জায়গায় সম্পর্ক আছে নাকি? না মানে তোমরা শহরের মাইয়া তো এই সম্পর্ক করেই বিয়া সাদি করো।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার উনার কথা শুনে খুব রাগ লাগে। আমি নিজেকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করছি। আমি দাঁতে দাঁত চেপে তাকে বলি,’না আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
সে এমন ভান করে বলে,’ওরে বাবা আগে তো আমরা কারো মুখের উপরই কথা বলতে পারতাম না আর এখন কার মাইয়া গুলা তো মুখের উপরই কথা কয়। এই শুনো মেয়ে….
উনি কিছু বলার আগেই আম্মু এসে আমাকে নিয়ে যায়। ছাদে স্টেজ করানো হয়েছে তাই আমি আর রোথি ছাদে যাই। রোশান ভাইয়া মেহেদী ভাইয়াকে নিয়ে ছাদে আসে। মেহেদী ভাইয়াকে বসানো হয় স্টেজে। এক এক করে সবাই মেহেদী লাগাতে বসে। সবাই দেওয়া শেষে আমি রোথিকে বলি,’চল আমরা দিয়ে আসি হলুদ।’

রোথি আমার কথায় সাথে সাথে নাকোচ করে দেয়। আমি ওকে জোর করে নিয়ে যাই। আমি ভাইয়াকে মিষ্টি খাওয়াতে যেয়ে ইচ্ছা করে নিজেই খেয়ে ফেলি আর ভাইয়া হা করে তাকিয়ে থাকে। এই মিষ্টিটা ভাইয়ার খুব পছন্দের তাই তো আমি ইচ্ছা করেই খেয়েছি। রোথি মনমরা হয়ে ভাইয়াকে হলুদ ছোয়ালো। তা আমার চোখে এড়িয়ে যাইনি। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় রোথি মেহেদী ভাইয়াকে ভালোবাসে কিন্তু আমি তো আর আন্দাজে ঢিল মারতে পারবো না তাই আর জিজ্ঞেস করিনা। ভাইয়ার হলুদ শেষে আমরা বেরিয়ে পরি রোজ ভাবীকে হলুদ দিতে।

রোজ ভাবীর বাসায় এসেছি প্রায় অনেকক্ষনই হতে চলল কিন্তু আমার চোখ খুজছে অন্য একজনকে। কেনো তাকে খুজছে জানি না। হঠাৎই আমার চোখের সামনে নিশা রোদের হাত ধরে হাসি মুখে আসতে লাগলো। আমার চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে গেলো। রোদের পাশে নিশাকে সহ্য হচ্ছে না আমার। নিশা আমার সামনে হাসি মুখে এসে দাড়ালো। রোদ মুখ গম্ভির করে দাঁড়িয়ে আছে দেখেই মনে হচ্ছে নিশাকে এখন এই মূহুর্তে একটুও সহ্য হচ্ছে না ভদ্রতার খাতিরে চুপ আছে খালি। নিশা আমাকে বলল,’আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি এসেছো তাই।’

আমি মনে মনে ওকে একটা ভেংচি কেটে মনে মনে বলি,’আমার ভাইয়ের বিয়ে আমি আসবো না তো কি তুমি আসবা?অসহ্য!!’
নিশা আমার পাশে বসে বলে,’চল হলুদ লাগাতে যাই রোজ আপুকে।’
আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলি,’হুম চলো।’
নিশা তারপর রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,’চলো রোদ আগে আমরা যাই পরে মেহেক যাক।’
আমি ফট করে বলে দেই,’রোদ স্যার তোমার সাথে কেনো যাবে?’
রোদ স্যার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকান। নিশা বলে,’আমরা কাপল তাই একসাথে যাবো।’
আমার এখন নিশার চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছা করছে। নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য উঠে চলে আসলাম। ওইখানে একটু থাকলে আজকে নিশার খুন হয়ে যেতো। নিশা আর রোদ স্যার আমার যাওয়ার দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। নিশা রোদ স্যারের উদ্দেশ্যে বলে,’ও চলে গেলো কেনো?’

রোদ স্যার পুনরায় গম্ভির মুখ করে বলে,’জানি না’
‘আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে এখন চলো।’
এই বলে রোদ স্যারের হাত ধরে রোদ স্যার নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,’তুমি যাও নিশা আমি এখন যাবো না।’
‘কেনো?’
‘কাউকে আমি কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না জানো না তুমি?’
নিশা গোমড়া মুখ করে চলে যায়। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছি ওদের দুইজনের সব কথোপথনই আমি শুনেছি। রোদ স্যারের কথাগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। রোদ স্যারকে আসতে দেখে আমি চলে গেলাম ওইখান থেকে। আমি রোজ ভাবীর কাছে যেয়ে বললাম,’বাহ আমার ভাবীকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।’

রোজ ভাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আমি হেসে বলি,’থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।’
রোজ ভাবীকে হলুদ দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন পর রোশান আসে। রোশান এসে আমাকে বলে,’চলো বাসায় যাই সবার যেতে দেরী হবে।’
আমি তাকে বলি,’না আমি যাবো না।’
কোত্থেকে আম্মু এসে বলে,’রোশানের সাথে তুই যা আমাদের আসতে দেরী হবে আর তোর এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকা উচিত না ডক্টর কি বলেছে ভুলে গিয়েছিস?’
আমি মুখ ফুলিয়ে থাকি। হঠাৎই আমার চোখ রোদ স্যারের দিকে যায়। সে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক রাগ লাগছে তার তাই সেটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বহু কষ্টে। আমি তা দেখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলি,’ঠিকাছে আম্মু আমি চলে যাচ্ছি রোশান ভাইয়ার সাথে।’

তারপর আমি আর রোশান ভাইয়া বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় পৌছে আমি ফ্রেশ হয়ে বিরিয়ানি খেয়ে ঘুমাতে গেলাম….
সকালে বাসার কোলাহলের জন্য ঘুম ভাঙে। আমার সাথে যাই করুক না কেনো ঘুমে ব্যঘাত ঘটালে খুব রাগ লাগে। আর এখন যেহেতু এটা বিয়ে বাড়ি তাই বাধ্য মেয়ের মতো নিজের ঘুমকে বিদায় করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। কাল রাতে এতোই গভীর ভাবে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম যে কখন রোথিরা এসেছে ওই বাড়ি থেকে খোজই পাইনি। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নাস্তা করতে গেলাম। আম্মু বিরিয়ানি বেড়ে দিলো। আমি ফোন দেখতে দেখতে খেতে লাগলাম। আমার আবার খাওয়ার সময় ফোন না দেখলে হয় না। এটা খুব বাজে অভ্যাস। বিকালের আগেই আমরা সেন্টারে যাবো। এখন বাজে একটার মতো তাই আমি শাওয়ার নিয়ে একটা লেহেঙ্গা পড়ে নিলাম। ব্লু আর গোল্ডেন কম্বিনেশনের। রোথিও পড়েছে একই রঙ এর। বাড়ির সবাই রেডি হতেই আমরা সেন্টারে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

সেন্টারে পৌছে ভাইয়াকে ভাবীর পাশে বসানো হয়। দুইজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। রোদ স্যারও ছিলো উনি পাঞ্জাবি পড়েছে নিশার সাথে মিলিয়ে। উনাকে আর নিশাকে দেখে তাই মনে হলো। নিশা হাসি মুখে রোদ স্যারের সাথে ছবি তুলছে কিন্তু স্যারের মুখে হাসি নেই গম্ভির হয়ে আছেন তিনি। আমি আর ওইসব মাথা ঘামালাম না কিন্তু একটা চাপা কষ্ট রয়েই গেলো।
ছবির তুলার পর্ব শেষ হতেই কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। ভাবীকে কবুল বলতে বলার সময় তিনি অনেক সময় নিয়ে কবুল বলেন। ভাইয়া কবুল বলতেই সকলে একসঙ্গে ‘আলহামদুল্লিল্লাহ’ বলে উঠেন। অবশেষে ভাইয়া আর তার ভালোবাসার মানুষ এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো।

ভাবী রোদ স্যারকে ধরে অনেকক্ষন কাঁদেন। শুনেছি রোজ ভাবীর কোনো ভাই ছিলো না তাই উনি রোদ স্যারকেই কোলে পিঠে নিজের হাতে বড় করেছেন।কান্নার পর্ব শেষ হতেই আমরা চলে যাই। সাথে নিশা আর রোদ স্যারও আছেন। উনারাও আমাদের বাসায় আসছেন আমাদের সাথে।

বাসায় পৌওছেছি অনেকক্ষন হয়েছে। রোজ ভাবীকে ভাইয়ার রুমে বসিয়ে। আমি, রোথি আর নিশা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা ঠিক করেছি ভাইয়া আমাদের যতক্ষন না টাকা দিবে আমরা ভাইয়াকে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবো না?ভাইয়া দুই হাত জোড় করে আমাদের কে বলে,’দেখো বইনা ছেড়ে দে পরে দিয়ে দিবো নি।’
আমি বলি,’এহহ এতো কষ্ট করে বাসর ঘর সাজিয়েছি আর তোমাকে কিনা টাকা না দিয়ে যেতে দিবো।’
আমার কথা শুনে ভাইয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,’আমি না তোর ভাই?ভাইয়ের সাথে কেউ এমন করে’
আমি একটা ভেংচি কেটে বলি,’ওইসব ভাই টাই কিছু বুঝি না টাকা দেও নাইলে ভাগো।’
শেষে ভাইয়ার হার মেনে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। আমি রোদ স্যারকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দেই। নিশা আমার সাথে থাকবে তাই ওকে আমি আমার রুমে নিয়ে আসি। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে।আমার এক সেট কাপড় নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলি,’এটা পড়ে ফ্রেশ হয়ে নেও’
নিশা ফ্রেশ হতে চলে যায়। আমি আমার ফোন বিছানায় রেখে নিচে চলে যাই।

নিশা ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে মেহেকের ফোনে কারো কল আসছে। তাই সে ফোন উঠিয়ে দেখে। ওর ফোন ধরতেই ফোন কেটে যায়। আর লকস্ক্রিনে বেসে আসে রোদের ছবি। নিশা অবাক হয়ে রোদের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভেবে পায় না রোদের ছবি মেহেকের ওয়ালপেপারে কি করছে। ও আরো কিছু বুঝতে যাবে তার আগেই মেহেক ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়। নিশা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে বলি,’কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?’
‘না মানে তোমার ওয়ালপেপারে রোদের ছবি কেনো?’

আমি কিছু না বুঝার ভান করে বলি,’কিইই!স্যারের ছবি আমার ওয়ালপেপারে কোথা থেকে আসবে?’
নিশা আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বলি,’নিশু শুনো আম্মু তোমাকে ডাকছে তুমি যাও আমি আসতেছি।’
এই বলে নিশাকে ঠেলে পাঠালাম। আর আমিও দ্রুত ওয়ালপেপারে রোদ স্যারের ছবি চেঞ্জ করে দিলাম। বেচারা নাহলে সন্দেহ করতো। আচ্ছা আমি স্যারের ছবি আমার ওয়ালপেপারে কেনো দিয়েছি?আমি তো উনাকে পছন্দ বা ভালোবাসি না।
এইসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমি ফোনটা রেখে আবার সোজা ছাদে চলে গেলাম। ছাদে যেতেই এক মধুর কণ্ঠের গান শুনতে পেলাম।

Bheegi bheegi sadkon pe main
Tera intezaar karun
Dheere dheere dil ki zameen ko
Tere hi naam karun
Khudko main yoon kho doon
Ke phir na kabhi paaun
Haule haule zindagi ko
Ab tere hawaale karun
Sanam re sanam re
Tu mera sanam hua re
Karam re karam re
Tera mujhpe karam hua re
Ho..ho..ho….
Baadalon ki tarah hi toh
Tune mujhpe saaya kiya hai
Baarishon ki tarah hi toh
Tune khushiyon se bhigaya hai
Aandhiyon ki tarah hi toh
Tune hosh ko udaaya hai
Mera muqaddar sanwara hai yoon
Naya savera jo laaya hai tu
Tere sang hi bitaane hain mujhko
Mere saare janam re (বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

আমি খেয়াল করলাম রোদ স্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে গান গাইলেন। উনার গান শুনে আমি মুগ্ধ নয়নে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষটাকে সারাক্ষন দেখতেই ইচ্ছা করে। আমি উনার কাছে গেলাম। মিনমিনিয়ে বললাম,’স্যার।’
উনি পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে স্নান হাসে তারপর বলে,’বলো?’
উনার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি আমি। এতো সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে আমার কখনো দেখিনি। যে কেউ দেখলে তাকিয়েই থাকবে এই হাসির দিকে। উনি আমার সামনে তুড়ি বাজাতেই আমার ধ্যান ভাঙে। আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলি। উনি বলেন,’কিছু বলবে?’
আমি মাথা নিচু রেখেই বলি,’আপনি গান গেতে পারেন?’
উনি হেসে বলে,’শিখেছিলাম কিছুদিন।’
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,’আপনার গানের কন্ঠ অনেক সুন্দর!’
উনি ভ্রুকুচকে বলেন,’শুনেছিলে তুমি?’
আমি মুচকি হেসে বলি,’হুম মাত্র শুনলাম। আমার মনে হলো আপনি এই গানটা কাউকে মিন করে গেয়েছেন।’
উনি বললেন,’হ্যা তা তো অবশ্যই।’
আমি ফট করে তাকে জিজ্ঞেস করি,’তারমানে আপনি কাউকে ভালোবাসেন?’
‘উম..হ্যা বাসি।’

আমি কিছু বললাম না তাকে। দুইজনই চুপ করে আছি টু শব্দ পর্যন্ত করিনি। হঠাৎই রোদ স্যার জিজ্ঞেস করলেন,
‘তুমি কাউকে ভালোবাসো মেহেক।’
আমি বলি,’হুম একজনকে বেসেছিলাম কিন্তু সে তো ঠকিয়ে চলে গিয়েছে।
আমার কথা শুনে সে যে চমকে গিয়েছে তা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি। আমি মুচকি হেসে পুনরায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,’আমি বিশ্বাস করি প্রথম ভালোবাসা আপনাকে ভালোবাসার মানে বুঝতে শেখায়। আর দিত্বীয় ভালোবাসা আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।’
রোদ কিছু না বলে আনমনেই মুচকি হেসে বলে,’সত্যি বলেছো তুমি দিত্বীয় ভালোবাসা মানুষকে বাঁচতে শেখায়।’
আমি বললাম,’আপনি হঠাৎ ছাদে যে?’
‘এমনি ভালো লাগছিলো না তাই আসলাম।’
আমি কিছু বললাম না। নিচ থেকে আমাকে ডাক দেওয়াতে আমি চলে যাই। রোদ স্যার মেহেকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি মেহেক যাকে #অতঃপর_প্রেম বলে। আর খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমি আমার ভালোবাসার কথা জানাবো।’

সকালে ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি ফ্রেশ হয়ে গাছে পানি দিতে চলে যাই ছাদে। আমি ভোরে উঠে গাছে পানি দেই বেশিরভাগ সময়ই। আমি কোনোরকম ওড়না পেঁচিয়ে ছাদে গেলাম। ছাদে যেয়ে দেখি রোদ স্যার দাঁড়িয়ে আছে। আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে গাছে পানি দিতে থাকি। সে আমাকে দেখে বলে,’তোমার ফুল ভালোলাগে?’
আমি উনার দিকে না তাকিয়েই গাছে পানি দিতে দিতে বলি,’কম বেশি সব মেয়েরই ফুল পছন্দের তাই আমারো পছন্দের।’
রোদ স্যার কিছু বলেন না। আমি উনাকে বলি,’আপনি এতো সকালে এইখানে কেনো?’
‘ঘুম আসছিলো না তাই আসলাম।’
‘ওহ আচ্ছা।’

এই বলে আমি চলে আসলাম রুমে। রুমে এসে দেখি নিশা ঘুমাচ্ছে। আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নিশাকে ডাক দিলাম না আর। আমি নিচে যেয়ে দেখি ফুপিমা আর আম্মু কাজ করছে তাই আমিও তাদের সাহায্য করতে চলে যাই। আম্মু আমাকে দেখে বলে,’আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে রোশনি?’
আমি বলি,’আল্লাহ আম্মু তুমি জানো না?সূর্য পূর্ব দিকে উঠে।’
এই বলে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলাম। তারপর আম্মুকে সাহায্য করি। নাস্তা বানানো শেষে সবাই নাস্তা করতে চলে এসেছে। আমি রোদ স্যারের পাশের চেয়ারে বসতে যাবো তার আগেই নিশা এসে বসে বলে,’তুমি অন্যটাতে বসো। আমি না হয় এইখানেই বসলাম।’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে অন্য চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম। ব্রেকফাস্ট শেষে নিশা আমাকে বলে,’শুনো মেহেক তুমি আমাকে আর রোদকে কাপল পিক তুলে দিয়ো কেমন।’

আমি ভ্রুকুচকে বলি,’কিসের কাপল পিক? তোমরা কি হাসবেন্ড ওয়াইফ?’
‘না কিন্তু আমি রোদের উড বি ভুলে যেয়ো না।’
‘তোমাদের কি এংগেজমেন্ট হয়েছে কি?’
‘না হয় নি। আমার নানু মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন আমার আর রোদের বিয়ে দিতে তখন আমার আর রোদের বয়স বেশি ছিলো না তাই সবাই ঠিক করে রেখেছে আমার আর রোদের উপযুক্ত বয়স হলেই আমার সাথে রোদের বিয়ে দিয়ে দিবে।’
আমি মুখ কালো করে ছোট করে শুধু ‘ওহ’ বলি।
কিছুক্ষন পর আমি শাওয়ার নিয়ে ছাদে চলে যাই চুল শুকাতে

রোদ নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলো না ফোনে তাই সে ছাদে চলে আসে। তখন ওর নজরে মেহেক পরে। মেহেকের চুল থেকে পানি টপ টপ করে পরছে। রোদ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মেহেকের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ঝটপট মেহেকের ছবি তুলে নেয়।

একে একে আমরা সবাই রেডি হিয়ে গিয়েছি কারণ আজ রিসেপশন তাই। কিছুক্ষন পর আমরা সবাই বের হলাম সেন্টারের উদ্দেশ্যে। ভাইয়া আর ভাবীকে স্টেজে বসানো হলো। ভাবীর বাড়ি থেকে এখনো লোক আসেনি কিন্তু আমাদের অনেক আত্বীয় স্বজনই এসেছে। কিছুক্ষন পর ভাবীর বাড়ি থেকেও মানুষ আসা শুরু করছে।
নিশা আমার কাছে এসে বলে,’ছবি তুলে দেও আমাদের দুইজনের।’
আমি জোরপূর্বক হেসে বলি,’হ-হুম’
তারপর না চাইতেও ছবি তুলে দিতে হলো। অবাকজনক বিষয় হলো এইবারের ছবিতে রোদ স্যার হেসেছেন। কেনো হেসেছেন জানা নেই।

অতঃপর প্রেম পর্ব ৭+৮+৯

রিসেপশন শেষ হতেই ভাইয়া আর ভাবী ভাবীদের বাসায় গিয়েছে।সাথে রোদ স্যার আর নিশাও চলে গিয়েছে। আমরাও নিজেদের বাসায় চলে আসি। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার থেকে একতা মেসেজ এসেছে। মেসেজে লিখা
প্রিয় মেহুপাখি,
অনেক টায়ার্ড তুমি তাইনা?টায়ার্ড থাকবেই বা না কেনো সারাদিন তো আর কম ধকল তোমার উপর দিয়ে যায়নি। এখন তুমি ঘুমিয়ে পরো তাহলে আর টায়ার্ড লাগবে না। আর হ্যা সরি আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার ছবি তুলে ফেলেছি তাই। আর তোমার টেবিলে রাখা বইটা খুলো।
আমি এইটা পড়ে দৌড়ে যেয়ে বইটা খুলি। একটা পৃষ্ঠা উলটাতেই আরেকটা চিঠি পাই। চিঠিতে লেখা
মেহুপাখি আমি জানি তুমি আমাকে এখন খুজার অনেক চেষ্টা করবা। পিচ্চি আমাকে খোজা বাদ দেও। আমি যতক্ষন না নিজে তোমার সামনে আসবো ততক্ষন তুমি জানতেই পারবা না আমি কে।
কথাগুলো শুনে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। এই কিভাবে বুঝলো আমি তাকে খুজছি। আমি আর এইসব না ভেবে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরি। সারাদিনে এতই দৌড়া দৌড়ি করেছি যে শুতেই ঘুমিয়ে পরি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি ফুপিমারা চলে গেছে। কথাটা শুনে একটু মন খারাপ হলো। যাওয়ার আগে দেখা করতে পারলাম না তাই। নিজের ঘুমকেই এখন ইচ্ছা মতো গালি দিচ্ছি। এখন কি আর করবো যা হওয়ার হয়েই গেছে এখন আফসোস করে লাভ নেই। আমি আম্মুর কাছে যেয়ে কাজে সাহায্য করে দিলাম। রুমে এসে দেখি আবার আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ ওপেন করতেই দেখি লিখা,
মেহুপাখি,
শুভ সকাল। খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে। আর শুনো,,তুমি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলবা না। আমার কথা অমান্য করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মনে রেখো কথা গুলো।
মেসেজটা পড়ে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলি…

অতঃপর প্রেম পর্ব ১৩+১৪+১৫