অতঃপর প্রেম শেষ পর্ব 

অতঃপর প্রেম শেষ পর্ব 
লেখনীতে আয়ানা আরা

এক বছর পর-
হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে করে একটা ঘরে ঢুকে ছোট এক বাচ্চা ছেলে। ছেলেটা রুমে ঢুকেই ঘুমন্ত ফ্যাকাসে হওয়া এক মুখের দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকে।কিছুক্ষন পর ছেলেটার মা এসে বলে,’মেহমাত!তোমাকে কতোবার বলেছি এইখানে আসবে না তোমার ফুপিমা ডিস্টার্ব হবে।’
এক বছরের বাচ্চা ছেলেটা কি বুঝেছে কে জানে!!সে আধো আধো গলায় বলে,’ফুতিমা উতে না কেনো?’
ছেলেটার মা চোখের পানি আড়ালে মুছে বলে,’খুব তাড়াতাড়িই তোমার ফুপিমা আবার জেগে উঠবে তখন তোমার সাথে খেলা করবে।’
মেহমাত হাত তালি দিয়ে বলে উঠে,’ইয়ে।’

মেয়েটা আর কেউ না রোজ আর ছেলেটাও তার,,নাম মেহমাত। আর ঘুমন্ত মেয়েটাও আর কেউ না মেহেক।গত বছর কোমায় চলে গিয়েছিলো সে। রোজ মেহমাত কে কোলে নিয়ে যেই না চলে যাবে ওর নজরে ঘুমন্ত মেহেকের হাতের দিকে চলে যায়। হ্যা মেহেকে হাত নড়ছে। রোজ এক মিনিটও না দেরী করে ওর শাশুড়ির কাছে চলে যায়। ওর শাশুড়িও এসে দেখে তার মেয়ের হাত নড়ছে। এই এক বছর মেহেককে বাসায় চিকিৎসা দেওয়া হয় যার জন্য নার্সরাও বাসায় নার্সকে জলদি ডাকা হয়। ততক্ষনে রোজ মেহেদীকে খবর দিয়ে দিয়েছে।খানিক বাদেই মেহেদী চলে আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় মেহেক। ও চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,’আম্মু!’
মেহেকে আম্মু তাড়াতাড়ি নিজের মেয়ের কাছে এসে বলে,’কি হয়েছে মা তোর কি কিছু লাগবে?’
‘আমার না বড্ড চেষ্টা পেয়েছে। একটু পানি দেও।’
মেহেকের আম্মু তাকে তাড়াতাড়ি পানি ঢেলে দেয়। মেহেককে পানি খাওয়িয়ে শুয়ে দেয়। তবুও মেহেকের চোখ জোড়া শুধু একজনকেই খুজছে। সে আর কেউ না রোদ। মাঝে মাঝে মেহেক কোমায় থাকা অবস্থায় ও দেখতে আসতো। ওর কাছে নিজের ভালোবাসা মানুষটিকে জীবন্ত লাশ হিসেবে দেখতে সহ্য হতো না তাই মাঝে মাঝেই আসতো। ওইদিন এক ট্রাক দূর্ঘনটায় নিশা আর কুশ দুইজনেই মারা যায়। ওদের লাশ অস্বীকার করে দেয় ওদের দুই পরিবার। কথায় আছে না পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

রোদ মেহেকের পাশে ওর হাত ধরে বসে আছে। চারদিকে নিরবতা বিরাজমা। ওইসময় রোজ মেহেকের চোখের ইশারা বুঝতে পেরে রোদকে খবর দেয়।নিজের প্রেয়সী আবার ফিরে এসেছে শুনে রোদ এক ছুটে বাসায় এসে পরে। সবাই ওদের দুইজনকে এখন একা রেখেছে। রোদ নিরবতা ভেঙে বলে,’কেনো ছেড়ে গিয়েছে আমাকে মেহেক?’
মেহেক মলিন হাসে। কিই বা বলবে সে?সে তো সেধে ছেড়ে চলে যেতে চায়নি। রোদ আবার বলে,’তুমি তো জানতে তাই না নিশা কেমন তাহলে তাও কেনো ছাদে গিয়েছিলে?

মেহেক আস্তে করে বলে,’ওই সময় অত কিছু মনে ছিলো না।’
রোদ দাঁত কিরমির করে বলে,’এতো ভুলতে পারো কেনো তুমি?’
‘আচ্ছা বাবা সরি এখন এতো কিছু জিজ্ঞেস করিয়েন না তাহলে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে চলে যাবো।’
হুট করেই রোদ মেহেককে জড়িয়ে ধরে বলে,’এই মেয়ে খবরদার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে। আমার থেকে খারাপ কেউই হবে না কিন্তু বলে দিলাম।’
মেহেক হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর রোদের উদ্দেশ্যে বলে,’কোনোদিনও ছেড়ে যাবো না আপনায়।’
রোদও মুচকি হেসে বলে,’আমিও না।’
৫ মাস পর-
আজকে রোদ আর মেহেকের বিয়ে। মেহেক এখন অনেক সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
মেহেককে পার্লারের মহিলারা সাজিয়ে দিয়ে গেছে অনেকক্ষন। লাল শাড়িতে মেহেককে অনেক সুন্দর লাগছে।

অতঃপর প্রেম পর্ব ১৩+১৪+১৫

মেহেক আর রোদ পাশাপাশি বসে আছে। রোদকেও অনেক সুন্দর লাগছে পাঞ্জাবিতে। কিছুক্ষন পর কাজী এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। কবুল বলা শেষেই সবাই একসাথে আলহামদুল্লিল্লাহ বলে উঠে। অবশেষে আরেকটা ভালোবাসার জুটি পূর্ণতা পেলো।
৩ বছর পর-
খাবার প্লেট নিয়ে দৌড়াচ্ছে মেহেক। আর চিল্লিয়ে বলছে,’মাহিরা তুই এখন না খেলে কিন্তু আমি কান্না করবো।’
‘আমি তাবো না।’
এই বাচ্চা মেয়েটা আর কারো নয় মেহেক আর রোদের। নাম রেখেছে মাহিরা। মাহিরার বয়স এক বছর।
মেহেক দৌড়াতে দৌড়াতে অতিষ্ঠ হয়ে সোফায় বসে পরে।

রাতে খাবার খাওয়ার পর মেহেক অনেক কষ্টে মাহিরাকে খাওয়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছে। রুমে এসে দেখে রোদ কাজ করছে ও যেয়ে বলে,’কি কাজ করছেন?’
রোদ কাজ করতে করতে বলে,
‘মেডিক্যাল পরীক্ষার কিছু কাজ’
‘ও আচ্ছা।’
‘ঘুমিয়ে পড়ো!’
‘না। দেখুন আজকে আকাশে কতো জোসনা। চলুন না ছাদে যাই।’
‘আহা মেহেক তুমি যাও!’
মেহেক কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। তা দেখে রোদ মেহেকের গাল টেনে দিয়ে বলে,’আচ্ছা চলো তাহলে।’
ওরা দুইজন তারপর ছাদে চলে যায়। ছাদে এসে ওদের লাগানো একটা দোলনায় বসে পরে দুইজনে। দুইজনে একসাথে চন্দ্রবিলাস করছে।। হঠাৎই মেহেক বলে,’ভালোবাসি প্রিয়।’
রোদ মুচকি হেসে বলে,’আমিও ভালোবাসি।’

সমাপ্ত

1 COMMENT

Comments are closed.