ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ গল্পের লিঙ্ক || konika islam

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১+২+৩
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

আমি নাকি তোর বয়ফ্রেন্ড!?তা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডের সম্পর্ক কেমন ইউ নো না হূর বেইবি । সো আই নিড এ কিস। কথাটা বলেই রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় এরিশ।
মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছিল হূর , চুল গুলো দিয়ে তখনো টুপ টুপ করে পানি পরছে। এরিশকে দেখে মনে হচ্ছিল এখন বেশ রেগে আছে। হূর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ গিয়ে হূরের দুইহাত নিজের এক হাত দিয়ে চেপেঁ ধরে, সোজা দেওয়ালের সাথে।।
এরিশের প্রতিটি নিশ্বাস উপলব্ধি করতে পারছিল সেদিন হূর। হূর নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে

” কি করছ এরিশ ভাইয়া, ছাড়ো আমাকে। এরিশ হূরকে আরেকটু নিজের সাথে চেপে ধরে বলে
” কেন আমি না তোর বয়ফ্রেন্ড, তো টেক ইট ইজি বেইবি। বলেই হূরের ভিজা চুলে মুখ ডুবায়। হূর নিজের হাত কোনো রকম ভাবে ছাড়িয়ে এরিশকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। ভয়ে ঘেমে একাকার।
এরিশ উঠে সোজা হূরের কাছে গিয়ে দুইগাল চেপে ধরে বলে
” এখন এতো সমস্যা কেন? বয়ফ্রেন্ড না আমি তোর? তো এখন সমস্যা হচ্ছে কেন?? তোর এই গুজব রটিয়ে সমস্যা না হলে আমার সমস্যা হয়েছে। বন্ধু মহলে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দু হয়েছিলি তুই। আজকের পর যদি এমন কিছু করিস তাহলে খবর আছে। তোর মতো মেয়ে আমার জিএফ ভাবলি কি করে।
হূর কান্না করে দিয়েছে, হূর বলে
” আমি কিছু বলিনি, আমিতো শুধু, এরিশ আফিয়াকে ধমক দিয়ে বলেছিল
” তোর মতো মিথ্যাবাদী আর কেউ হবে বলেতো মনে হয় না। মুখের উপর মিথ্যা। তাহলে কি আদিব আমাকে মিথ্যা কথা বলবে! তোকে আমার কিছু বলার নেই….।
বলেই এরিশ চলে যায়। হূর কান্নায় ভেঙে পরে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হূরের চাচাতো ভাই হচ্ছে এরিশ। আপন চাচা না আসলে হূরের আম্মুর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। যখন হূরের পাঁচ বছর বয়স তখন তার বাবা কেন্সার রুগে মারা জান। পরে তার মার বিয়ে হয় এরিশের ছোট চাচ্চুর সাথে। হূর ছোট বেলায় নিজের নানাবাড়িতে বড় হয়েছে তার নানু আর মামা-মামীর কাছে, কিন্তু শেষে মামারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যায়। আর হূর এখানে পড়ালেখা করাতেই এখানেই থেকে যেতে হয়। তার নানুও মারা গিয়েছেন বছর তিনেক ।
শেষে হূরের বাবা মি.সাহাদ তাকে বাসায় নিয়ে আসে। এই বাড়িতে সাবই হূরকে বেশ অবহেলার চোখেই দেখে শুধু তার কাকিমা আর কাকাই, বাবাই ছাড়া। নিজের মার কাছেও তেমন একটা ভালোবাসা পায়নি হূর। নয়তো তাছাড়া চাচাতো বোন, নিজের বোন, দাদিমা এরিশ সবাই অবহেলার চোখেই দেখে তাকে। আর হূর খুজে পাচ্ছে না এরিশের এমন ব্যবহার করার রিজন!!!
আজ সকালেই তো আদিব তাকে প্রপোজ করে তখন হূর সরাসরি নিষেধ করে দেয়। তার প্রতিশোধই কি আদিব নিয়েছে! হয়তো। আদিব হচ্ছে এরিশের একটা ক্লাসমেট। হূর কান্না বাদ দিয়ে উঠে বসে। হালকা ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ আদায় করে নেয়। তারপর পড়তে বসে

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাশতা করতে নামে হূর হূরকে দেখা মাত্রই হূরের চাচাতো বোন মৃধা বলে
” সকাল সকাল মুডটাই খারাপ। না জানি আবার কি হয়।
হূরের ছোট ভাই বলে
” আমি খাবো না আমার খাওয়া হয়েগিয়েছে। আর এরিশতো হূরকে দেখেই বেড়িয়ে যায়। হূর বলে
” আচ্ছা তোমরা নাশতা খাও আমি আসি। হূরের দিদিমা বলে
” কেনরে মুখপুরি এখন খা খেয়েনে। নিজের বাপের মতো আমার সংসারটাও খেয়েনে। মিস.সাহাদ বলে
” মা চুপ করো, ও আমার মেয়ে, আর আমার মেয়েকে এইসব বাজে নামে ডাকবে না। হূর মা খেয়ে তারওর যাবি।
এরিশের বাবা এরিশের মাকে বলে
“হূরকে খেতে দাও। আর হূর মামুনি ড্রাইভার চাচ্চু তোমাকে ভার্সিটি দিয়ে যাবো। হূরের মা এইসব দেখে নাশতার টেবিল থেকে সরে যায়। হূর তার মার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি এমন হবে একটু মেয়ের মতো আদর করলে?! হূর কোনো রকম খেয়ে বেড়িয়ে পরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। হূরের মা চলে যায় হূরের ছোট বোনকে ডাকতে।

অহি আর অনিক সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে হূরের জন্য। হূর গাড়ি থেকে নেমে তার ড্রাইভার চাচ্চু কে বিদায় দিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। অনিক আর অহিকে দেখে দৌড়ে তাদের কাছে আসতে গেলে কারো সাথে ধাক্কা লাগে। আর নিচে পরে যায় হূর। সামনে তাকাতেই দেখে আবিদ দাড়িয়ে। আদিব হাত বড়িয়ে দিয়ে বলে
” লেট মি হেল্প ইউ বেইবি। হূর আবিদের হাত না ধরেই উঠে দাড়ায়। অহি আর অনিকও চলে আসে হূরকে পরে যেতে দেখে। হূর আবিদ কে বলে
” সমস্যা কি আপনার!!? আপনাকে আমি না করতে এরিশ ভাইয়াকে কি বলেছেন? আবিদ ভাব নিয়ে বলে
” আমি কিছু বলেছি!? হূর বলে
” এক্টিং করবেন না। আপনাকে ভালো ভাবতাম কিন্তু আপনি আপনিতো একটা। তখনই আবিদ বলে
” ডেবিল তাই তো?
হূর কিছু না বলে চোখ পাকিয়ে চলে যায় নিজের জামার ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে। আবিদ বলে
“তোমাকে তো আমি চাই হূর বেইবি।

। ডিপার্টমেন্টের উপর তালায় যেতেই দেখা মিলে এরিশের বারান্দায় দাড়ানো ছিল তার বন্ধুদের সাথে।এর মানে সব দেখেছে এই নিয়ে না কোনো আবার কাহিনী করে। হাতের তালু ছিলে গিয়েছে হূরের জ্বলছে খুব। অহি বলে
” হূর হাত তো অনেকটা ছিলে গিয়েছে। হূর বলে
” অহহহ কিছু না ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ করে অনিক অবকা করে হূরের হাত ধরে বলে
” ইশশ কতটা ছিলে গিয়েছে। হূর তাড়াতাড়ি করে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। আর এইসব নিরব দর্শক হিসাবে দেখছে এরিশ। আর তখনই ক্লাসে ঢুকে যায় হূর।

ক্লাস চলছিল হঠাৎ করেই একটা মেয়ে আসে আর বলে
” হূর তোমাকে নীলা মেম ডাকছে। কালকে নাকি একটা বই দিয়েছিল তোমাকে?? সেটা নিয়ে যেতে বলেছে।
হূর কথা মতো বই নিয়ে নীলা মেমকে দিয়ে আসেছে। সবাই ক্লাসে এই দিকটায় কেউ নেই। তখনই কেউ হেচাকা টান দিয়ে ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে আসে। এটা হচ্ছে মিউজিক রুম। কিছু বুঝার আগেই কেউ দরজা বন্ধ করে দেয়। মুখ দেখা না গেলেও শুধু বেক সাইড টা দেখা গিয়েছে। হূর ভয়ে পেয়ে যায় কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” কে কে আপনি??
হূরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যক্তিটা হূরের হাত ধরে। হূর সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলে ব্যক্তিটা খুব শক্ত করে হূরের হাত ধরে। ব্যাথায় হূরের মুখ দিয়ে।

” আহহহহহ শব্দ টা বেড়িয়ে আসে।
জানলার ফাক দিয়ে হালকা হালকা সূর্যের কিরণ এসে পরছে আর হালকা হালকা মৃদু আলো। ছেলেটা নিজের পেন্টের পকেটে থেকে একটা মলম জাতীয় কিছু হূরের হাতে লাগাতে লাগাতে গম্ভীর কন্ঠে বলে
” তুমি কি বোকা? আবিদ তোমাকে জেনে শুনে ধাক্কা দিয়েছে আর তুমি কিছু বললে না কেন? হূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে
” কে আপনি? আর আমমমম,আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?? ছেলেটা নিজের কাজ করে বলে
” আমি,কে না জানলে চলবে।

বলেই চলে যায় দরজা খুলে বেড়িয়ে যায় । হূর এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে কেমন অদ্ভুত একটা মানুষ। হূর দৌড়ে বাইরে আসে ততক্ষণে ব্যক্তিটা চলে গিয়েছে। হূর সামনের দিকে পা বাড়ায় তখনই নীল মানে নীলা মেম এর ভাই এসে বলে
” কি ব্যাপার হূরপরি তুমি এখন এখানে একা একা? হূর বলে
” না মানে নীলা মেম বইটা দিতে বলেছিল। আপনি এখানে কি করেন? ক্লাস নেই!! নীল বলে
” ছিল কিন্তু করার ইচ্ছে নেই কফি খাবে!? হূর বলে
” না ভাইয়া আমার ক্লাস আছে। নীল কিছু বলতে যাবে তখনই
হূরের ভয় লাগছে, হঠাৎ করে ঘাড়ে গরম কিছু উষ্ণতা অনুভব করে, পিছনে ঘুরতে যাবে তখনই কারো বুকের সাথে ধাক্কা লেগে হূরের। ব্যক্তিটা সাথে সাথে হূরকে চেঁপে ধরে উল্টো করে। আর হূরের ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে গম্ভীর কন্ঠে বলে
” নীলআদ্রের সাথে এতো কিসের কথা?? ( নীলা মেম এর ভাই) হূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে
” কে আপনি!?? আমার পিছু কেন পরে আছেন!? ব্যক্তিটা হূরের ঘাড়ে হালকা করে চুমু দেয় কিন্তু উপরে হালকা কিছুর আবরণ, ব্যক্তিটা বলে

” হূরপাখি এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের যবাব না। নীল আদ্র কি বলেছিল?? বলেই হূরের হাত আরো জুড়ে চেপে ধরে। ফলে হাতে থাকা কাচের চুড়িতে হূরের হাত কেটে যায়। হূর চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে
” আহহহহহ আমার লাগছে। আর আমি যার সাথে ইচ্ছে হবে তার সাথে কথা বলবো আপনি কে?? নয়তো আমি চেঁচাতে বাধ্য হবো। ব্যক্তিটা শীতল কণ্ঠে বললো
” হুশশশশশ। একবার ভাবো তো তোমাকে আর আমাকে যদি কেউ এই ভাবে দেখতে পায় তাহলে কি হবে। ইউ নো না সবাই গুন্ঞ্জন রটিয়ে বেড়াবে তুমি আমার সাথে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়েছ। এখন বলো নীলআদ্র তোমাকে কি বলেছে?
হূরের হাত অনেক জ্বলছে। বেচারি বাসায় যাওয়ার আগে লাইব্রেরিতে এসেছিল বই কিনতে কিন্তু এখানে এসেই এমন বিপদ ঘটবে কে জানে? হূর যখন বই খুঁজতে খুঁজতে একদম শেষের দিকে এক কর্ণারে চলে আসে আর তখনই সে অনুভব করে তার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। হূর বলে

” শুধু বলেছিল যে কফি খাবে। আমি না করে দিয়েছি, প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন। হূরকে হেঁচকা টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুক সেলফের সাথে চেপে ধরে ব্যক্তিটা। গাড়ো নীল এক জোড়া চোখ মুখে কালো মাস্ক। গেটাপ সম্পূর্ণ কালো। চোখ গুলো আর কালো স্লিকি চুলগুলো দেখা যাচ্ছে। ভয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম যমে গিয়েছে হূরের কপালে। ছেলেটা তা দেখে বলে
” তুমি যে এত ভিতু আগে ভাবিনি। বলেই এক পা পিছিয়ে যায়। হূর ছেলেটার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে যেই না মাস্কে হাত দিবে। তার আগেই ছেলেটা হূরের হাতে ধরে আলতো করে চুমু দেয়। সাথে সাথে হূর হাত সরিয়ে ফেলে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই ছেলেটা চোখ মেরে অন্যপাশে চলে যায়। হূরও যায় কিন্তু না সেখান থেকে কোথায় গেলো? হূর সামনের দিকে আগাবে তার আগেই কেউ তাকে পিছন থেকে এসে বলে
” হূর মামুনি বাসায় চলো। স্যার বকবে। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে ড্রাইভার চাচ্চু দাড়িয়ে। হূর জিব দিয়ে ঠোঁটে ভিজিয়ে বলে
” হুম চলো। হূর সামনের দিকে যাচ্ছে কিন্তু বারবার পিছনের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। হূর একটু আগাতেই ছিটির আওয়াজ আসে। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে না কেউ নেই। সব হূরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিকেলের দিকে ছাঁদের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে হূর। একটা ক্লান্ত বিকেল। মন থেকে বেড়িয়ে আসছে লম্বা এক হতাশের নিশ্বাস। সব কিছু কেমন এলোমেলো। তার সাথে সে ভাবছে তার জীবনটা কেমন। মা থাকতেও নেই। একটা বাবার বদলি আরেকটা বাবা পেয়েছে কিন্তু মা!? আবার এই ভার্সিটির কাহিনী। সব মিলিয়ে হূরের বিরক্ত লাগছে। মাথা ধরে এসেছে ।চোখ বুঝে ফেলে হূর মাঝে মাঝে হাওয়ার সাথে তালমিলিয়ে দুলছে মৃদু বাতাসে হূরের চুল।

তখনই ছাঁদে আসে এরিশ কানে হেডফোন হূরকে দেখে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় এরিশ। গোধূলির লগ্ন শুরু হয়েগিয়েছে চারদিকে সোনালী আর লালচে আভা আর সেই আলো এসে পরছে হূরের মুখে। এরিশ হুশ আসে তার বন্ধু আকাশের কথায়। এরিশ বলে
” তোকে আমি পরে কল দিচ্ছে। এরিশের কন্ঠ শুনে হূর চোখ মেলে তাকায় দেখে এরিশ দাড়িয়ে। এরিশকে দেখলেই এখন ভয় লাগে। হূর তাড়াতাড়ি করে উঠে দাড়ায়। এরিশ ভ্রু কুচকে তাকায় হূরের দিকে। হূর ধীর পায়ে এগিয়ে আসে দরজার দিকে। হূর যখন বলতে যাবে,

“ভাইয়া একটু সাইড দিলে ভালো হতো ” তখনই এরিশ বলে
” তুই আবিদ কে দেখে ইচ্ছে করে দৌড় দিয়েছিলি, আর ইচ্ছে করে ওকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজে পরে গিয়েছিস ?
হূর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরিশের দিকে একটা মানুষ এমন কিভাবে হতে পারে। হূর বলে
” সেটা এক্সিডেন্টে ছিল, আর আমি কেন ইচ্ছে করে ধাক্কা দিতে যাবো?? এরিশ এবার নড়েচড়ে দাঁড়ায় আর বলে
” অহহ তা না হয় মানলাম। কিন্তু আরেকটা ছেলে হাত ধরলো, ভার্সিটিতে এইসব করে বেড়াও তুমি। দিদুনকে বলবো? বললে কি হবে জানিস??

হূর বলে
” ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। এরিশ বলে
” অঅ্হ হূর, এটা এখন কমন ডায়লগ জাস্ট ফ্রেন্ড। দিদুনের কানে যদি এই খবর যায় তাহলে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবে। ভালোই হবে কি বলিস!? বলবো!?
হূর বলে
” আপনি এমন কেন করেন? আসার পর থেকে আমার সাথে লেগে আছেন। আমি কি এমন ক্ষতি করেছি আপনার?! ভার্সিটির সেই প্রথম দিন থেকে এমনটা করছেন। আপনি জানতেন আমি আপনার বোন তাও সবার সামনে রেগিং করলেন।
এরিশ একটা ধমক দিয়ে বলে
” কিসের ভাই!? কোন জন্মের ভাই লাগি আমি তোর!? তুই আমার রক্তের সম্পর্কের বোন!? তোকে আমি বোন মানি না। এখন নিচে যাবি আর কফি করে নিয়ে আসবি। নয়তো দেখিস দিদুনকে বলে তোকে বিদায় করব।
হূর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ বলে
” নো মোর ওয়ার্ড, যা এখন। সময় ৫ মিনিট।
হূর বাধ্য মেয়ের মতো নিচে নামতে লাগে। চোখে চিক চিক করছে মুক্তার দানার মতো জল। বোন মানে না মানতে হবে না। একটা মানুষ হিসাবে তো রেসপেক্ট করতেই পারে। মানুষের বাসায় একটা ফুলদানির সাথেও এর থেকে ভালো ব্যবহার করে।

নিচে কিচেনে গেলে দেখতে পাই, আম্মু আর কাকি মা কফি বানাচ্ছে। আমাকে দেখে কাকিমা বলে
” কিরে হূর, কিছু লাগবে.? হূর বলে
” হুমম বড় ভাইয়ার জন্য কফি নিয়ে যেতে বলেছে। হূরের মা বলে
” তোমার লাগবে না যাও নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসো।এরিশকে কফি সার্ভেন্ট দিয়ে আসবে। কাকিমাও বলে
” হ্যা তুই যা। আমিও কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসি। বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি কিন্তু পরতে ইচ্ছে করছে না। তার একটু পরই কেউ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। সামনে তাকাতেই ভয়ে আতকে উঠি আজকেও যমরাজ মানে এরিশ এসেছে।
এরিশ এসে হূরকে একগাদা এসাইনমেন্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে
” এগুলো সব করে দিবি। তোকে বলেছিলাম না কফি দিয়ে আসতে সার্ভেন্টকে দিয়ে কফি পাঠিয়েছিস কোন সাহসে?! হূর এবার কেঁদে ওঠে আর বলে

“আম্মু বলেছিল। আমি বলিনি, আর আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি সকালে, আপনি এমন কেন!? আমি কি মানুষ না? মানুষতো কুকুরের সাথেও এতটা খারাপ ব্যবহার করে না। কথাটা শুনে কিছু না বলে সব কিছু নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো এরিশ। আর যেতে যেতে বলে
” এসাইনমেন্ট করবিনা বললেই পাড়তি এতো নাটক করার কি আছে। হাতে ব্যাথা পেয়েছিস তাই কিছু বললাম না নয়তো তোকে দিয়েই করাতাম। কালকে সব করে দিবি। বলেই চলে যায়
আর হূর তাকায় হাতের দিকে ইশশ হাতটা কেমন হয়েগিয়েছে সকালে ছিলে গিয়েছে তখন আবার সেই ব্যক্তিটার জন্য হাতটা কেটে গেলো। আসলে ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন এইসব আর কি। কিন্তু ব্যক্তিটা আসলে কে!!?
মাঝ রাতে হঠাৎ করে হূরের ঘুম ভেঙে যায়, ভালো লাগছিল না তাই সে ছাদের দোলনাটায় চলে আসে। এই জায়গা টায় আসলেই মন ভালো হয়ে যায়।

গল্পের নামঃ- #ভালেবাসার_নতুন_প্রনয়ণ
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
part:03

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হূর ছাঁদে চলে আসে। তার ফুল গাছে পানি দিতে। এটা তার নিত্যদিনের কাজের মাধ্যে আরেকটা। আর গুনগুন করে গান গাইছে। সকালের আবহাওয়া টাই অন্যরক একটা।
তখনই পিছন থেকে এরিশ বলে
” মনে রঙ লেগেছে?? সকাল সকাল!! হূর ভ্রুকুচকে তাকায় এরিশের দিকে। এরিশ বলে
” এই একদম এইভাবে তাকাবা না। হূর বলে
” আপনার কি আমার সাথে না লাগলে ভালো লাগে না? এরিশ হূরের দিকে আগাতে আগাতে বলে
” কই লাগলাম তোমার সাথে আমিতো কত দূরে। মিথ্যা কথা বলো কেন? হূর বিরক্ত হয়ে ছাঁদ থেকে চলে যেতে চাইলে এরিশ হূরের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে
” নেক্সট টাইম যদি ছাঁদে এইভাবে আসতি দেখি তোকে জানে মেরে ফেলব। লোককে দেখানোর দরকার নেই যে তুই সুন্দরী।
হূর নিজের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠে। রাতে যে একটা টিশার্ট আর টাউজার পরে ঘুমিয়ে ছিল সেটা পরেই ছাঁদে চলে এসেছে । এরিশ হূরকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। এরিশ যখন ছাঁদে আসে দেখে তার পাশের বাসার একটা ছেলে হূরের দিকে তাকিয়ে ছিল আর মেজাজ বিগরে যায় হূরকে এই অবস্থায় দেখে। হূরও নিজেকে বকতে বকতে চলে আসে রুমে।

ক্যাম্পাসের পিছনে লেকের পারে বসে বসে বই পড়ছে হূর আর অহি ঝগড়া করছে অনিকের সাথে। অনিক গান গাইছে
” বুক চিন চিন করছে হায় মন তোমায় কাছে চায়। অহি বলে
” তোকে কাছে পাওয়ার থেকে কাশতে কাশতে বমি করে গলা থেকে রক্ত বের হয়ে মারা যাওয়াটা অনেক ভালো।
অনিক বিরক্ত হয়ে বলে
” তোরা কি হ্যা!? এই যে হূর একটা বই পড়তে পড়তে এ্যাবনরমাল হয়ে গেছে আর তুই তো বাঁচাল রানী।
হূর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে আমি এ্যাবনরমাল?? তবে রে। অনিক বলে
” নিজে কে বাঁচাই পরে আবার বলবো। বলেই দৌড় সাথে হূরও। হূর বলছে
” এই দাড়া। অন্যদিকে এইসব ভিডিও করছে অহি। হঠাৎ করেই অনিক থেমে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে তিথি দাড়িয়ে। তিথিকে দেখে হূর গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
” কি করে কবে ফিরলি দেশে?? বললি না যে। তিথি বলে
” না এমনি, বাবাই হুট করেই দেশে বেক করে। বাবার কথা উপর আর কথা বলিনি। এইসব পরে হবে। চল একটু আড্ডা দেই। অনিক বলে

” আসছে যমুনা নদী। তিথি রাগী চোখে তাকিয়ে বলে
” তুই কি। তুইতো একটা হারামি। অনিক কিছু বলে না। হূর একটু আগতেই দেখে এরিশ, আকাশ, আবির এই দিকেই আসছে। অনিক বলে
” কি গরম। আর হূরের ওড়না দিয়ে নিজের ঘাম পরিষ্কার করে। এরিশ তা দেখেও কিছু বলে না। দেওয়াল টপকে তিনজনই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। তিথি বলে
” দোস্ত আবিরকে আজ কি হেন্ডসাম লাগছে। অহি বলে
” ক্রাশ খেয়েছি।
অনিক বলে
” সাধে মুটি হচ্ছিস? এই যে চোখ দিয়ে ছেলেদের গিলে গিলে খাস। দিন নাই রাত নাই ক্রাশ খাস তার ফল। তিথি বলে
” তুই অনেক বেশি কথা বলিস। কিন্তু হূর ভাবছে এরিশের কথা। দেখেতো মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে। আর ক্যাম্পাসের দেওয়াল কেন টপকালো?!

বাসায় ঢুকতেই ড্রয়িং রুমে দেখা মিলে এরিশের বাসার সবাই আজতো মৃধার কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়েছে। এরিশকে ভাইয়া দেখে ধীর পায়ে উপরের দিকে উঠতে লাগি হঠাৎ করে এরিশ ভাইয়া আমার দিকে আগাতে আগাতে বলে
” ভার্সিটিতে পড়তে যাস নাকি জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে? কোনটা!! ছেলেদের সাথে এতো কিসে কথা?! হূর বলে
” অনিক আমার ফ্রেন্ড। খুবই ভালো ফ্রেন্ড। এরিশ বলে
” ভালো ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড!? হূর বলে
” যাই হোক। আপনাকে জবাব দিতে আমি বাধ্য না। বলেই যেই না রুমে চলে আসবে তখনই এরিশ হূরের হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে, চুলের মুঠি ধরে বলে

“এটা তোর নিজের বাড়ি না। এমন যদি কুকর্তি করতে ভার্সিটি যাস তাহলে তো ভার্সিটি যাওয়া আমার বন্ধ করতে দুই মিনিট লাগবে না। ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডের মতো থাকবে নেক্সট যদি ঐ ছেলেকে তোর সাথে এমন চিপকে থাকতে দেখি, তোকে মেরে ফেলবো। কারণ তোর জন্য আমি আমার বংশের নাম খারাপ হতে দিতে পারি না। মাইন্ড ইট বলেই হূরকে ছেড়ে এরিশ চলে যায়।
হূরের চোখ বেয়ে পানি পরছে এটাই তার সম্বল।

রাতে সবাই বাসায় চলে এসেছে অনেক রাগে। রাত এখন তিনটা বজতে চললো। নিচে নামতে হয় পানির জন্য তখনই দেখি এরিশ ভাইয়া। টুলতে টুলতে বাসায় ঢুকছে। বড় বাবা দেখলে খবর আছে। আর হাত থেকে রক্ত পরছে। তা দেখে দৌড়ে গেলাম তার কাছে। আমাকে দেখে চারপাশ দিয়ে ঘুরে বলে
” হেউ হূর, আমি না তোমার টুইন দেখতে পারছি অনেকগুলো। কি কিউট। বলে আমার গাল ধরতে আসলে তার হাতটা আমার ওড়না দিয়ে চেপে ধরি নিচেও রক্ত পরে ফ্লোর মেখে আছে। তাকে কোনো রকম তার রুমে নিয়ে আসলাম। বেডে বসিয়ে ফাস্ট-এড বক্স খুজতে লাগলাম। আর একটু পর পেয়েও গেলাম৷
পিছনে ঘুরতেই এরিশ ভাইয়াকে দেখে অবাক হয়ে যাই। মানুষটা কি এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না। এরিশ আমাকে বলে

” হূর তুমি কিছু খুঁজছ?হূর রেগে বলে
” হ্যা আপনার মাথা। এরিশ হূরের কথা শুনে হাত দিয়ে নিজের মাথায় ধরে বলে
” কই আমার মাথা তো আমার সাথেই। তুমি আসো তোমাকে কিছু দেখাবো।
বলেই টেনে নিয়ে যায় তার বেলকনিতে। বেলকনিটা বেশ সুন্দর সম্পূর্ণ কাচের। আকাশে উুকি দিয়ে আছে থালার মতো একটা বড় চাঁদ। হূরকে নিয়ে নিচে বসে পরে এরিশ। এরিশ বকবক করেই যাচ্ছে। কিসব বলছে বুঝাও যাচ্ছে না। হূর ধীরে ধীরে এরিশের হাতে বেন্ডেজ করে দিয়ে। যেনই না হূর উঠতে যাবে উমনি এরিশ হূরের উড়না ধরে বলে
” এখানে বসো। হূর বলে
” না অনেক রাত হয়েছে আমার যেতে হবে। এরিশ দাড়িয়ে হূরের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে
” শুসসসসসস,। হূরের কেমন যেন লাগছে।এরিশকে রেখে দৌড়ে নিচে চলে আসে৷ রক্ত পরিষ্কার করে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।

আজ ভার্সিটি নেই তাই বিকালে হূর একটু একা বের হয়েছে পার্কে। পার্কে তেমন কেউ নেই বললেও চলবে। বেস ভালোই লাগছে। দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে আসে সেই দিকে হূরের খেয়াল নেই গাড়িও নিয়ে আসেনি। ভয় করছে এখন। একটু আগাতেই হূর দেখে আদিব সহ আর বেশ কয়েকটা ছেলে সিগারেট টানছে আর কথা বলছে। আদিব এখানে?! আদিব হূরকে দেখে বলে
” আরে হূর নাকি? এখানে কি কর? তা একা কেন বেইবি??
হূর কিছু না বলে আদিবকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে আদিব পিছন থেকে বলে
” একা যেতে পারবে?? নাকি আমি আসবো। হূর কিছু না বলে একরম দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে। আদিব তা দেখে বাঁকা হাসি দেয়, আর আবার আড্ডায় মন দেয়। একটা রিক্সাও নেই। হঠাৎ করে বাইকের আওয়াজে হূর পিছনে তাকায় দেখে একটা ছেলে, ডার্ক ব্লাক কালারের একটা বাইক নিয়ে দাড়িয়ে। হূরকে ধমকের সুরে বলে

” হূর তুমি এই সময় এখানে একা একা কি কর?? হূর কন্ঠ শুনে বুঝতে পারে এটা নীলআদ্র। হূর বলে
” একটু পার্কে এসেছিলাম। নীলআদ্র বলে
” তা একা কেন? রাত হতে চললো, আচ্ছা চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। হূরও কথা বাড়ায় না। কিছু সময়ের মধ্যেই হূর বাসায় পৌঁছে যায়। বাইক থেকে নামে আর তখনই বাইক নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে এরিশ। হূরের দিকে একপল তাকিয়ে বাসায় চলে যায়। সারাদিনে আজ একবারও দেখা হয়নি তাদরে। হূর ভয়ে ঢুক গিলে নীল আদ্রকে ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় চলে আসে,, যেই না নিজের রুমে ঢুকতে যাবে

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৪+৫+৬