ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৪+৫+৬

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৪+৫+৬
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

বাসায় ঢুকে ড্রয়িং রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে হূর সোজা নিজের রুমে চলে আসে আর দরজাটা লাগিয়ে দেয় যাতে এরিশ না আসতে পারে। তখনই এরিশ হূরের বারান্দা থেকে বেড়িয়ে আসে আর বলে
” হ্যা ভালো করে লাগা, কেউ যেন না আসতে পারে। এরিশের কন্ঠ শুনে চমকে যায় হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে এরিশ দাড়িয়ে আছে। হূর, বলে

” আপ,,আপনি এখানে কি করেন?? এরিশ হূরের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
” কেন? নীলআদ্রের থাকার কথা ছিল? হূর রেগে বলে
” নীলআদ্র কেন থাকবে? আর নীলআদ্র থাকলে আপনার মতো হুট করে যার রুম সে উপস্থিত নেই জেনেও কারো রুমে ঢুকতো না।
এরিশ হূরের দিকে আগালে হূর দরজার সাথে চেপে দাড়ায়। আর এরিশ নিজের দুইহাত দরজার দুইপাশে রেখে আলতো করে ফু দিয় হূরের মুখে। হূূর মুখ ঘুরিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কি করছেন, আর দূরে দাড়িয়ে কথা বলুন।
এরিশ হূরের একদম কাছে চলে এসেছে হূর হাত দিয়ে এরিশকে থামিয়ে বলে
” দূরে সরুন। এরিশ হূরের হাতটা খুব শক্ত ভাবে ধরে বলে
” কোথায় গিয়েছিলি ওর সাথে?? হূর নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে
” আগে দূরে সরে দাড়ান তারপর কথা বলুন। এরিশ বলে
“উহু,, এইভাবেই বলবি। হূর বলে
” পার্কে গুয়েছিলাম। গাড়ি নেয়নি। সন্ধ্যা নেমে আসে তখন নীলআদ্রের সাথে দেখা হয়। আর নীলআদ্র আমাকে বাসায় পৌছে দেয়। এরিশ একটু ভেবে বলে

” কাহিনী তে কোনো রসকষ নেই। হূর এবার এরিশের হাতে কামড় বসিয়ে দেয় আর সাথে সাথে এরিশ হূরের হাত ছেড়ে দেয়। হূর বলে
” ওর সাথে আমার লাভ ইস্টরি চলছে না যে রসকষে ভরপুর কাহিনী শুনবেন৷ এরিশ বলে
” তোর কাহিনী পরে শুনবো জঙ্গলি বিল্লি, আগে কামড় কেন দিলি সেটা বল। হূর বলে
” আপনাকে হাত ছাড়তে বলছি ছাড়েননি কেন? তখনই এরিশের মা হূরের দরজায় নক করে।
” হূর, কিরে কখন ফিরলি। কাউকে কিছু বললিও না। কিছু কি হয়েছেরে মা?? এরিশ বাঁকা হাসি দিয়ে হূরের কানে কানে বলে
” এখন আম্মু তোকে আর আমাকে একসাথে যদি দেখে এক রুমে তাও দরজা বন্ধ অবস্থায় কি হবে রে?? হূর অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। এরিশ কিছু বলতে যাবে তখনই হূর এরিশের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে আর বলে
” মামুনি এমনি এখন পড়তে বসেছি তুমি যাও। কিছু হয়নি। টেনশন নিয়ো না৷ এরিশের মা বলে
” চা কফি, কিছু খাবে?! হূর বুদ্ধি করে বলে
“হ্যা, হ্যা তোমার হাতের মালাই চা টা করে দিবে?? এরিশের মা আচ্ছা বলে চলে যায়। এরিশের মা যেতেই এরিশ হূরের হাতে কামড় বসিয়ে দেয় সাথে সাথে হূর হাত সরিয়ে ফেলে, এরিশ বলে
” রিভেন্ঞ্জ ডান। আর হূরকে দরজার থেকে সরিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

আজ ড্রাইভার চাচ্চু আসেনি, তাই হূরকে এরিশের সাথে যেতে হবে। নাশতার টেবিলে হূরের বাবা বলে
” এরিশ বাবা তুই আর হূরতো একই ভার্সিটিতে পড়িস। আর আজ আজিজুল ও আসে নি। (ড্রাইভার) তো বলছিলাম হূরকে সাথে নিয়ে যাস।
এরিশ হূরের দিকে তাকিয়ে জুস খেতে খেতে বলে
” একদিন ভার্সিটি না গেলে কিছু হবে না। হূর বলে
” না পাপা আমি রিক্সা করে চলে যাবো সমস্যা নেই। হূরের দিদুন বলে
” কেন রে একদিন ভার্সিটি না গেলে কি এমন হয়?? নাকি কোনো প্রেম টেম করিস? এই কথা শুনে হূরের কাকাই বলে
” দেখ মা, মানুষের লাইফ গুছাতে সবচেয়ে বেশি কাজে আসে পড়ালেখা। আর এরিশ তুমি হূরকে নিয়ে যাবে তোমার সাথে। হূর বলে
” না না কাকাই আমি একাই যেতে পারবো রিক্সাতে কি এমন হবে। মৃধা বলে
” আহহহ বাবা বুঝি না যার যেই এভাবে ইচ্ছা যাক। আমাদের কি? খাও তো খাওয়ার সময় এতো কথা ভালো লাগে না। এরিশের মা মৃধার পেলেট নিয়ে বলে

” তোর খেতে হবে না। এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে?? বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?? হূর তখনই বলে
“আমার খাওয়া হয়েগিয়েছে, আমি বরং আসি। আর ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরে। হূরের মা হূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে ।এরিশের মা বলে
” মেয়েটাকে খেতেও দিলি না তুই।
মৃধা কিছু বলতে যাবে তার আগেই এরিশ ধমক দিয়ে বলে
” খাওয়ার সময় কথা ভালো লাগে না!! বয়ফ্রেন্ডের গুনগান যে শুনতে সমস্যা হয় সেটা বলিস না কেন?কানে যে হেডফোন গুজে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গুনগুন করিস, সেটা কিন্তু চোখে ঠিকই পরে। শুধু আজই দেখালম খাবার টেবিলে ফোন ছাড়া ৷ মৃধা তোকে লাস্ট টাইম বলছি আদিবের থেকে দূরে থাকবি। সবাই অবাক হয়ে বলে
” আদিব কে?? এরিশ বলে
” তোমাদের আদরের মেয়েকে জিজ্ঞেস করে নাও। আর তোকে যদি আমি ওর সাথে আরেকবার দেখি তাহলে তো বুঝিসই। বলেই খাবার টেবিল ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।

সবাই মৃধাকে ইচ্ছে মতো বকছে। এরিশের মা মৃধার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নেয়। আর বাইরে কলেজে যাওয়াটাও বন্ধ। মৃধা রাগে ফুসছে।
হূরের চোখে পানি চিকচিক করছে। রিক্সার জন্য সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে। ভাগ্যটাই খারাপ তার। শেষে না পেরে কেঁদেই দেয় আর হাটতে লাগে। হঠাৎ করেই হূরের সামনে বাইক থামে। হূর তাকিয়ে দেখে এরিশ। এরিশ বলে
” বাইকে উঠ। হূর কিছু না বলে
” এরিশকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে। এরিশ বাই আবার হূরের সামনে থামিয়ে বলে
” দেখ ছোট বাবা আর বাবা বলেছে তোকে নিয়ে যেতে নয়তো আমারই কোনো ইচ্ছা নেই। হূর বলে
” যাবো না আপনার সাথে লাগবে না। এরিশ বাইক থেকে নেমে। হূরকে সোজা কোলে তুলে নেয় আর বসিয়ে দেয় বাইকে। হেলমেট পরিয়ে বলে

” এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না। আর চুপচাপ বস। হূরও কথা বাড়ায় না। এরিশের সাথে ভার্সিটি চলে আসে। আর বাইক থেকে নেমে কিছু না বলেই চলে যায় ভার্সিটির ভিতরে।
এরিশ বলে
” অকৃতজ্ঞ প্রাণী একটা। প্রতিদিন তো ঠিকিই ড্রাইভার চাচ্চুকে ধন্যবাদ দেয় আমাকে দিলে কি,এমন হবে। ফালতু একটা। তখনই আকাশ পিছন থেকে আকাশ বলে
” কিরে কি এমন বকবক করছিস?? এরিশ বলে
” তোর বিয়ের মন্ত্র পড়ছি। আবির হাহা করে হেসে দেয় আর বলে
” তুই পন্ডিতের কাজ খবে থেকে শুরু করলি?? এরিশ বলে
” নাক বরাবর একটা ঘুসি দিব সোজা গিয়ে পরবি তিথির কোলে। আবিরের তিথির কথা শুনে কাশি উঠে যায় আর বলে
” সালা ওর কথা বলিস না ক্লাসে চল।

ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখা হয় হূরের নীলআদ্রের সাথে। নীলআদ্র হূরকে দেখে বলে
” হূর পরি। হূর চাইলেও এখন ইগনোর করতে পারবে না। হূর বলে
” হ্যা ভাইয়া বলুন। নীলআদ্র বলে
” আজ ফ্রি আছো? তখনই পিছন থেকে অহি বলে
” না হূর সবসময়ই দামি। হূর সবার জন্য না। চলতো হূর। তিথি বলে
” হ্যা তাড়াতাড়ি।
হূর, অহি আর তিথি উপরে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। তখনই একটা আনানো নাম্বার থেকে মেসেজ আসে হূরের ফোনে। আজকে মেসেজটা দেখে হূরের মনে কৌতুহূল জাগছে কে। মেসেজে লিখা
হূর পরি ডাকার অধিকার একান্তই আমার। অন্য কেউ বলবে তো তার খবর আছে। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে হলরুমে না আসলে সোজা ক্লাস থেকে তুলে নিয়ে আসতে ২ মিনিট ভাববো না।
হূর, অহি আর তিথিকে যেতে বলে নিজে হল রুমের দিকে যাচ্ছে। আর ভাবছে কে এই ব্যক্তি ? হলরুমে তেমন কেউ আসেও না তাই ভয় লাগছে। একটু দূরে যেতেই।।

হলরুমের দেওয়ালের সাথে লেগে আছে হূর। আর তাকে দুইদিকে দুই হাত দিয়ে আবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে সেই অজানা ব্যক্তি। ব্রাউন টিশার্ট মুখটা সাদা রুমালে ঢাকা, নীল রঙের চোখ জোড়া যেন অনেক কিছুই বলছে। হূরের কানে কানে ব্যক্তিটা বলে
” হূরপরি তুমি আমার একান্তই আমার। এই শ্যামলতার চোখের কোনের সেই কালো কাজল, চোখের এক একটা জল, ঠোঁটের কোনে সেই মিষ্টি হাসির মালিকটাও একান্তই আমি। জানো তো তোমার এই বাদমি রঙের চুলগুলো হাওয়াতে এলোমেলো হয়ে তোমাকে স্পর্শ করে খুব হিংসে হয় আমার। তোমার এক একটা চোখের সেই ঘনঘন পাপড়ি গুলো আমাকে প্রতিনিয়ত জ্বালিয়ে মারে। তুমি মানুষটা একান্তই আমার। আর সেখানে নীলআদ্র তোমাকে হূরপরি কেন বলবে??
হূর জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে

” যার যেটা ইচ্ছে হবে সে সেটা ডাকবে, আর আমি কোনো বস্তু না। আপনি যে ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমি একটা বস্তু। আর কে আপনি?? ব্যক্তিটা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি কোনো বস্তু না তুমি এমন একটা মানুষ যে, যে কোনো মানুষের মন এলোমেলো করে দিতে পারে। বলেই রুমালের উপরেই হূরের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় আর বলে
” আমার হূর পরির সাথে একদিন শুরু হবে আমাদের
#ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ। বলেই চলে যেতে চাইলে হূর ছেলেটার হাত আকড়ে ধরে। ছেলেটা পিছনে তাকিয়ে বলে
” সেদিনের মতো আজও আক্রমণ করবে? কি দরকার বলো? সময় হোক আমি নিজে দারাবো তোমার সামনে। আজ আসি।
বলেই হূরের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
হূরের হুশ আসে ফোনের রিংটোনে দেখে অহি কল দিয়েছে। ক্লাস শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি। হূর এইসব বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি করে উপরের দিকে যায়।

ক্লাস শেষ করে অহি,তিথি আর হূর ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে, হূর ভাবছে কিছুদিন যাবৎ তার সাথে এইসব কি হচ্ছে!! কিন্তু হঠাৎ করেই ক্যান্টিন থেকে কর্লার ধরে আবিদ কে টানতে টানতে নিয়ে আসছি এরিশ। অন্য দিকে আবির আর আকাশের হাতে হকি ইস্টিক সাথে ওদের গেং এর অনেকে।
মাঠে ফেলে আর কোনো থামাথামি নেই এরিশ এলোপাথাড়ি মারতে লাগে আকশের হাত থেকে হকি ইস্টিক নিয়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হূর তাড়াতাড়ি করে গিয়ে এরিশকে ধরে বলে
” কি হচ্ছে এভাবে মারছেন কেন উনাকে? কি করেছেন উনি?? এরিশ রাগে ফুসছে হূরকে ধাক্কা দিয়ে একদিকে সরিয়ে বলে।
” তোর কি? কি লাগে তোর?!! হূর বলে

“কিছু না লাগুক, কিন্তু একজনের গায়ে হাত তুলার অধিকার আপনার নেই। এরিশ হকি টা জোড়ে নিচে ফেলে হূরের দিকে আগাতে লাগে হূর তা দেখে দুই পা পিছিয়ে যায়। এরিশ বলে
” আমার বোন সহ আরো কত গুলোর মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে তার কোনো হিসাব আছে?? আর শুনলাম তোকেও নাকি প্রপোজ করেছে একসেপ্ট করেছিস নাকি? এতো ভালোবাসা কেন।
অপর দিকে আবির আর আকাশ ইচ্ছে মতো মারছে আদিবকে। ক্যাম্পাসে শুধু এরিশের আর মারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সবাই চুপ কারো মুখে কথা নাই।
অহি কিছু বলতে চাইলে তিথি বারণ করে। হূর বলে
” ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই, আপনার যা ইচ্ছা করুন। এরিশ এক পলক হূরের দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে যায়। আর এই এক নজরের মানে আর কেউ না বুজলেও হূর ঠিকিই বুঝতে পেরেছে এটার মানে খুব সোজা
” তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।
অহি হূরের হাত ধরে বলে
” চল এখান থেকে। তিথি আর অহি বকবক করেই যাচ্ছে তাদের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে এরিশ, আকাশ আর আবির। উপর দিকে ভয়ে শেষ হূর।

সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে এরিশের জন্য হূর বাইকটা অব্দি দেখা যাচ্ছে না চলে গিয়েছে নাকি। একটু আগাতেই দেখা মিলে এরিশের মাথায় বেন্ডেজ ঠোঁটের কোনে রক্ত যমে আছে। বাইক নিয়ে এসে হূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” জলদি উঠ, তোকে বাসায় দিয়ে আবার আসতে হবে। হূর বলে
” ব্যাথা পেলেন কিভাবে?? এরিশ বলে তোকে যা বলেছি কর। হূর বলে
” আপনার সমস্যা হলে থাক জান আপনি। এরিশ রাগে সত্যি সত্যি চলে যায়।
আদিবকে তখন মারার পর আদিব আবার আসে তার দলবল নিয়ে পিছন থেকে এরিশকে আঘাত করে কিন্তু এরিশ, চকাশ আবির আরো অনেকে ঋিল তাদের সাথে পেরে উঠেনি। আর সেই রাগই ঝাড়ছে এরিশ হূরের উপর।

বাসায় ফিরে নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে বসেছে হূর সাথে মেসেজ আসে অনিকের আজকে ভার্সিটিও আসেনি। অনিকের মেসেজ দেখে হূর কল দেয়। অনিক কল রিসিভ করে একরকম কেঁদে দেয় আর বলে
” দোস্ত একটু হেল্প করবি? হূর অবাক হয়ে বলে
” কেন?? কি হয়েছে এমন লাগছে কেন তোর কন্ঠ আর ভার্সিটিও এলি না। অনিক বলে
” সকালে বাবা বাজার থেকে আসার সময় এক্সিডেন্টে হয়। এখন ডক্টর বলছে ওপরেশন করতে হবে নয়তো বাবাকে বাঁচানো যাবে না। মাও ভেঙে পরেছে। শুধু ৫০ হাজার টাকা হলেই হয়ে যায়। একটু হেল্প কর না।
হূর বলে

” আচ্ছা আচ্ছা তুই শান্তহ আমি দেখছি। হূর ধীর পায়ে নিজের বাবার রুমের দিকে যাবে তখনই দেখে সবাই একসাথে বসে বসে নিচে গল্প করছে সাথে এরিশও আছে। হূর গিয়ে তার বাবাইকে বলে
” বাবাই আমার ৫০ হাজার টাকা লাগবে আর্জেন্ট। হূরের দাদি বলে
” কেনরে মুখপুরি কি করবি আবার এত গুলো টাকা দিয়ে। সবইতো পাচ্ছিস। হূরের বাবা হালকা জোড় গলায় বলে
” মা এখানে বাবা মেয়ের কথা হচ্ছে তুমি কথা না বললেই খুশি হবো। হূরের মা বলে
” এত গুলো টাকা দিয়ে কি করবে তুমি? হূর মাথা নিচু করে বলে
” আমার লাগবে একটা ফোন কিনব তাই। হূরের বাবা বলে
” এই ব্যাপার। হূরের কাকাই আর বাবাই মিলে হূরকে টাকা দিয়ে দেয়। হূর ধন্যবাদ বলে ফোন দিয়ে অনিক কে তাদের বাসার সামনের পার্কে আসতে বলে, সবাই হূরের কথা বিশ্বাস করলেও এরিশের হয়নি।

হূর তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যায়। এরিশ সেটা দেখে হূরের পিছু পিছু যায় দেখে হূর অনিকে টাকা দিচ্ছে সেটা দেখে হাত তালি দিয়ে এরিশ বলে।
” বাহ বাহ! ফোন কিনার নাম করে বয়ফ্রেন্ড কে টাকা দিচ্ছিস। অনিক বলে
” ভাইয়া আপনি যা ভাবছেন তেমনটা না। হূর বলে
” অনিক তুই যা নয়তো লেট হয়ে যাবে। অনিক কিছু বলতে চাইলে হূর বলে
” যা। অনিক টাকা গুলো নিয়ে চলে গেলে হূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই চড় বসিয়ে দেয় এরিশ হূরের গালে। আর বলে
” বাবাই আর কাকাই মিথ্যা কথা বললে হলেও আমাকে বললে পার পাবি না। বলেছিলাম না তোকে ওর থেকে দূরে থাকতে বাসায় চল আগে। বলেই হূরের হাত ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসে।
হূরকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে হূরের কাকাই বলে
” কি হয়েছে এভাবে ওকে কোথায় থেকে নিয়ে আসছিস মাত্রই না বেরহলো। আর হূর কান্না করছে কেন? এরিশ রাগে চিৎকার দিয়ে বলে

” সব তোমাদের আদরের নমুনা। বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে টাকা দিতে গিয়েছিল। সবাই অবাক মৃধা বলে
” সকালে তো আমাকে বললে এখন?? হূরের দিদুন বলে
” দেখিছ তো আমার পরিবারের মানইজ্জত ডুবাতে এসেছে এই মুখপরি। এই টাকা গুলি কি তোর বাপের ?? হূরের বাবাই বলে
” সবাই চুপ। হূর মামুনি কি হয়েছে সত্যি করে বলো। হূরের মা এসে হূরের হাত ধরে এক পাশে টেনে নিয়ে বলে
” কি শুরু করেছ তুমি? এই সবের মানে কি?? এরিশের মা এসে হূরের মা কে ধমক দিয়ে বলে
” কি করছিস? ভাইয়া কথা বলছে না। হূর এবার না পেরে কেঁদেই বলে

” অনেক হয়েছে। আমাকে তো একটু বলতে দিবে! হ্যা৷ আমি অনিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম টাকাও দিয়েছি কিন্তু সেটা ওর প্রয়োজন ছিল। ওর বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে টাকার প্রয়োজন ছিল তাই দিয়েছি। আর ও আমাকে দিয়ে দিত টাকাটা আমি জানি৷ তাই বলেছি আমার লাগবে। হ্যা জানি সত্যি বললে হয়তো সমস্যা হতো না। তার জন্য সরি। আর এই বাড়িতে কেন পরে আছি জানতে চাও? শুধু একটা পরিবারের জন্য। নিজের মায়ের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। টাকা পয়সার কথা আসলে আমার বাবা আমার জন্য যা রেখে গিয়েছে অনেক। আমাকে নিয়ে এতো সমস্যা তাহলে আমিই চলে যাচ্ছি।

বলেই বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় হূর। এরিশ তো ইস্তব্দ হয়ে আছে। এরিশের মা এরিশকে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে বলে
” তোরা ভাই বোন আমাকে শান্তি দিবি না। তোদের জন্য মেয়েটা এইভাবে বেড়িয়ে গেলো। এরিশ কাউকে কিছু না বলেই দৌড়ে বাইরে চলে যায় হূরকে খুঁজতে…. সাথে সাথে বের হয় হূরের বাবা, চাচাও
অন্ধকার হয়ে এসেছে৷ রাস্তার পাশের লেম্পের আলোয় হাটছে হূর। আর ভাবছে সে এখন কোথায় যাবে? আর যা হোক ঐ বাড়িতে আর ফিরবে না। চোখের কেনো জমেছে একরাশ অভিমান আর জল।
সামনে যেতেই দেখা মিলে একটা ছোট চা বিস্কিটের দোকান৷ সেখান একটা ৫/৬ বছরের বাচ্চাকে তার মা বকছে, এতো সন্ধ্যা করে বাসায় ফিরেছে তাই।৷

হূর সেদিকে একপলক তাকিয়ে নিজের মতো হাটতে লাগে। বেশি দূর হয়নি বাসা থেকে যে চলে এসেছে হয়তো মিনিটে ৪/৫।
পৃথিবীর নিয়ম গুলে কেমন অদ্ভুত ,সে নিয়ম গুলোও আরেক নিয়মের সাথে বাঁধা। যেই জিনিসটা তুমি খুব করে চাইবে সেটা তুমি কখনোই পাবে না। হূরের ক্ষেত্রেও তাই, হূর তো এতো কিছুর বিনময় একটা সুন্দর পরিবার চেয়েছিল।
কিছু দূর যেতেই দৌড়ে এসে হূরকে ধরে কেউ। অন্ধকারে আচমকা এমন হওয়াতে হূর অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে সেই ব্যক্তির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় তাকে। লাইটের আলোতে হূর তাকিয়ে দেখে এরিশ। এরিশকে দেখে হূর দৌড় দেয়। কারণ সে আর ঐ বাড়িতে যাবে না। এরিশও হূরের পিছু পিছু দৌড়
। এরিশ বলছে

” এই হূর দাঁড়া। হূর থামতে বলছি। হূর নিজের চোখ মুছে বলে
” না আমি যাবো না আপনার সাথে। থাকুন আপনারা সুখে৷ আমার মতো অশান্তিকে আর দেখতে হবে না চলে যান। এরিশ হূরের অনেকটা কাছে চলে এসেছে হূূরকে উদ্দেশ্য করে এরিশ বলে
” ভালে মতো বলছি থামতে, আমি ধরলে খবর আছে। হূর থেমে যায় আর এরিশের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি করবেন? কি করবেন আপনি?? ভয় পাই আপনাকে আমি?? জাস্ট সম্মান করি নয়তো আপনার প্রতিটা কথার জবাব আমার কাছে আছে।
এরিশ বলে

” বিড়াল থেকে বাঘিনী। হূর বলে
” যা ইচ্ছা তাই আমি। যান আমার পিছু কেন এসেছেন। এরিশ হূরের হাত ধরে বলে
” বাসায় চল তারপর কথা হবে। হূর এরিশকে তার হাত ছাড়ার জন্য বলছে
” ছাড়ুন আমাকে আমি থাকবো না আপনাদের সাথে। এরিশ হূরকে এক টানে নিজের কাছে এনে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলে। হূর তখনো নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হঠাৎ করে এরিশের দিকে তাকিয়ে হূর চুপ করে যায়। খুব শান্ত কন্ঠে হূর বলে
” ছাড়ুন আমাকে। এরিশ হূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
” না। হূর এবার মাথা নিচু করে কেঁদে দেয় হূর বলে
” ছাড়ুন আমি চলে যাবো।
এরিশ খুব ধীর কন্ঠে বলে
” সরি। হূর তখনো কাঁদছে।এরিশ হূরের মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে বলে
” সরি বলেছি তো। আর কাঁদে না বাসায় চল। হূর বলে
” আমি যাবো না। এরিশ কিছু বলতে যাবে তখনই, এরিশের বাবা, আর হূরের বাবা গাড়ি নিয়ে চলে আসে। এরিশ হূরের বাবাকে দেখে বলে

” চাচ্চু তোমার মেয়ে বাসায় যাবে না। আমাকে দেখে দৌড় দিয়েছে তাই ধরে রেখেছি।
হূরের বাবা গাড়ি থেকে নামে আর এরিশও হূরকে ছেড়ে দেয়। হূরের বাবা গাড়ি থেকে নামে হূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসে।
হূরকে দেখে এরিশের মা ছুটে আসে। আর হূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” পাজি মেয়ে জানিস কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এতো রাগ কিসের? হূরের মা দূরে এক কোনে হূরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হূরের দিদুন বলে
” এতো রাগ কেন? মেয়েদের এতো রাগ থাকতে নাই। এত বড় মেয়ে কান্ড দেখ। বুদ্ধি নাই?
বলেই নিজের মতো পান চিবুতে লাগে। হূর কাউকে কিছু না বলে তার মার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর এরিশের মা এরিশকে উদ্দেশ্য করে বলে

” তোকে যদি আর কোনো দিন হূরের সাথে লাগতে দেখেছি তো দেখিস৷ হূরের বাবা বলে
” আজকে তোমাদের জন্য আমার মেয়ে এমন কাজ করেছে। যদি আমার আর আমার মেয়ের থেকে কারো সমস্যা হলে সে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে পারো। সেটা এবার যেই হোক না কেন । এরিশের বাবা বলে
“আর আজকের পর যাকে দেখব হূরের সাথে,খারাপ ব্যবহার করতে তার খবর আছে। হূরও আমাদের পরিবারের একজন৷ আমাদের পরিবারেরই মেয়ে। আর এরিশ তোকেও বলছি। মৃধার আম্মু দুই কাপ চা করে দাও মাথা ধরেছে
বলেই এরিশের বাবা আর হূরের বাবা চলে যায়।

অপর দিকে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা ছাঁদে চলে আসে হূর। দিন শেষে এখানেই ফিরতে হলো। সে যে বাধ্য। কারণ একটাই তার যাওয়ার জায়গা নেই। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা আমেজে। হূর চুপচাপ নিজের মতো দোলনায় গিয়ে বসে পরে। চোখ দুটোও আজ খুব ক্লান্ত। চোখ গুলো বুজে ফেলে হূর। ইচ্ছে করছে না আর এই আলোটা একটু অন্ধকার হলে ভালো হয়। তাই আবার উঠে ছাদের লাইট ওফ করতে যাবে তখনই হূর দেখে এরিশ। ছাঁদে এক সাইডে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। এর জন্যই হয়তো ছাদের লাইট ওন। এরিশ পিছনে তাকিয়ে দেখে হূর। হূরকে দেখে এরিশ সিগারেট ফেলে দেয় আর বলে

” তুই এখন এখানে? হূর এরিশের কোনো কথার জবাব না দিয়ে নিচে চলে আসে। আসলে সত্যি কথা বলতে বর্তমানে এরিশের সাথে কোনো ভেজাল করতে চাচ্ছে না হূর।
রুমে এসে গায়ে চাদর টেনে নিয়ে শুয়ে পরে লাইটা ওফ করে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ করেই হূরের রুমে আসে কেউ। হূরের মা এসেছে। এসে দেখে হূর ঘুমিয়ে গিয়েছে। লাইটের আলোর কারণে, এতে হূরের একটু সমস্যা হয় আর অন্য পাশে ঘুরিয়ে ঘুমিয়ে পরে। হূরের মা হূরের পাশে বসে গায়ের চাদরটা ভালো মতো টেনে দেয়। আর কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হূরের বাবা তখন তার রুমের দিকে যাচ্ছিল হূরের মাকে দেখে থমকে যায়। মা মেয়েকে দেখে এক গাল হেসে সে চলে যায়। কিছু সময় পর হূরের মাও রুমের লাইট ওফ করে চলে যায়।

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১+২+৩

সকাল সকাল আজ আর নাশতার টেবিলে আসেনি হূর। হূর তার বাবা আর কাকাইকে বিদায় দিয়ে সোজা ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে যায়। এরিশের মা কিছু মুখে দিতে বললে হূর বলে, সে ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবে। কেউ কিছু বলে না।
ভার্সিতে পৌঁছে সোজা লাইব্রেরীতে চলে আসে
। খাওয়ার আর ইচ্ছে নেই । আর নিজের মতো একটা বই খুজে পড়তে লাগে হূর। তখনই অহি এসে চেয়ার টেনে বসে পরে হূরের পাশে। হূর একপলক তাকিয়ে আবার মন দেয় নিজের পড়ায়। হূরকে দেখে অহি বলে
” আর কিছু দিন পর চশমা নিতে হবে। ভাই তোর ফোন আছে না ফোন চালা। এত বই কেন? অনিক ঠিকিই বলে তুই এ্যাবনরমাল হয়ে যাচ্ছিস। আচ্ছা ২ দিন যাবৎ অনিক আসছে না কেন?? হূর বলে

” ওর বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে, তিথি কোথায়? অহি বলে
” কি বলিস কবে? কিভাবে?? হূর বলে
” কালকে বলেছে। দেখতে যাবি আঙ্কেল কে?? অহি বলে।
” আচ্ছা আগে তিথি আসুক।কি ভাবে কি হলো এটা বল। তারপর হূর অহিকে সব বলে
তিথি আসলে তিনজনই বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্য। অহি কিছু ফল কিনে নেয়। হূর আজ প্রতিদিনের তোলনায় খুবই কম কথা বলছে। হসপিটালে গিয়ে অনিক কে ফোন দিতেই অনিক নিচে
আসে আর হূরকে দেখে খুশিতে হাত ধরে বলে
” দোস্ত তোর জন্য বাবা ঠিক হয়েছে ধন্যবাদ। হূর নিজের হাত অনিকের থেকে ছাড়িয়ে বলে
” আগে আঙ্কেলর সাথে দেখা করব চল।

অনিকের বাবাকে দেখে এসে ভার্সিটি শেষ করে দাড়িয়ে আছে হূর। একটু পর নাকি ড্রাইভার চাচ্চু আসবে। তখনই পিছন থেকে কেউ হূরের চোখ বাঁধে

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৭+৮+৯