ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১০+১১+১২

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১০+১১+১২
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

এরিশ বলে
” এই ভালো কথা তোর বিএফ মানে নীলআদ্রের কি খবর? সে জানে দিদুন তোর বিয়ে ঠিক করেছিল? রুমে গিয়ে ফোন করে কান্না করতে করতে বলিসনি, নীল বেইবি, জান, আমার বাবু তোমার আম্মু উফফস্ সরি সরি তোমার জিএফ মানে আমার বিয়ে ঠিক হয়েগিয়েছে। আমাকে এসে নিয়ে যাও। নয়তো আমি কচু গাছের সাথে গালায় দড়ি দিয়া আত্মহত্যা করব। আর সুইসাইড নোটে তোমার নাম লিখে যাবো।
হূর রেগে বলে
” চুপ করবেন আপনি!! কতবার বলবো আমার বিএফ নেই। এরিশ বলে
” তাহলে বুঝ তুই কেমন তোর বিএফ নাই।
এরিশকে উদ্দেশ্য করে হূর বলে
” আপনার কি?? এরিশ হূরের কথার জবাব না দিয়ে ড্রাইভিং-এ মনযোগ দেয়।

সেই কখন থেকে রেস্টুরেন্টে বসে আছে হূর আর এরিশ। এরিশ আইসক্রিম খাচ্ছে আর ফোন নিয়ে পরে আছে। হূর হাস ফাস করছে। ভার্সিটি না মিস হয়ে যায় যদি টাইম পেরিয়েছে অনেক সময়।
হঠাৎ করেই হূরের নজর যায় এরিশের দিকে। সে ব্যস্ত নিজের মতো ফোন চালাতে। মাঝে মাঝে সামনে আসা তার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করছে। ঠোঁটের কোনে ছোট একটা হাসি। এরিশ হূরের দিকে তাকাতেই হূর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আর সাথে সাথে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে
” আর কতক্ষণ?? তখনই রেস্টুরেন্টে আসে অহি, তিথি, আবির আর আকাশ । হূর ওদের দেখে অবাক হয়ে যায় । আকাশ তাড়াতাড়ি করে বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“দোস্ত জলদি চল লেট হচ্ছে। এরিশ বলে
” হুমমমম। হূর বলে
” আমরা আবার কোথায় যাবো?? তিথি লাজুক হেসে বলে
” আজ আমি আর আবির গোপনে বিয়ে করব। অহি বলে
” তুই আর আমি, এরিশ ভাইয়া আর আকাশ ভাইয়া ওদের বিয়ের সাক্ষী হিসাবে থাকবো।
হূর অবাক হয়ে বলে
” যদি আঙ্কেল আন্টির কানে এই কথা যায়। আবির বলে
” পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া?? আকাশ সবাই তাড়া দিয়ে বলে
” সে সব কথা পরে, হবে এখন চল চল।

সবাই কাজি অফিসে চলে আসে।
কাজী যখন বলে কবুল বলতে, তিথি তখন চুপ হূর তিথিকে বলে
” এই তিথি কবুল বল। অহি বলে
” হূর তুই বলেদে তিথির হয়ে। হূর বলে
” আজব তো! আমি কেন কবুল বলতে যাবো? আমি বিয়ে করছি? আমার বিয়ে নাকি যে কবুল বলতে যাবো??? আকাশ বলে
” আচ্ছা থাক বলতে হবে না। এরিশ বলে
” কেন বলবে না!? তিন কবুল এক সাথে বলবে। এক কবুল ২ কবুল আর ৩ কবুল এইভাবে। আবির বলে
” আলহামদুলিল্লাহ। সবাই অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকায় আবির বলে
” আরে আমিতো অনেক খুশি যে এরিশের মতো বন্ধু পেয়েছি। তিন দুগনে ছয় কবুল এক সাথে। আমি বলে দিলাম তিথির আর আমারটা। এখন তাড়াতাড়ি বলো কোথায় আমাদের সাইন লাগবে??

পেপারে সাইন কারার পর। এরিশ বলে
” হূর চলো বাসায় যাবে। হূর অবাক হয়ে বলে
“তুই থেকে সোজা তুমি?? এরিশ বলে
” তোর সাথে কথা বলাই বেকার। বেশি পকপক করবি রাস্তায় থেকে একটা পাগল এনে তোদেরও বিয়ে করিয়ে দিব।
হূর বিরক্ত হয়ে বলে
” আপনি এতো বকবক করবেন আপনাকে ফেলেই আমি চলে যাবো। এরিশ আবির আর আকাশকে হাগ করে বিদায় দিয়ে চলে আসে। সাথে হূর আবির আর তিথিকে শুভেচ্ছা দিলেও তার বিশ্বাস হচ্ছে না, তিথি এমন কিছু করবে। কারণ সব কিছু তার পরিবার ঠিক করে। এরিশ হূরকে দেখে বলে

” কি এমন ভাবছিস?? হূর বলে
” না তিথিই কত সাহসি। এরিশ বলে
” আর তুই একটা বোকা। হূর ভ্রু-কুচকে বলে
” কি ভাবে বোকা? আমি আবার কি করলাম?? এরিশ হাই তুলতে তুলতে বললো
” কারণ তুই আসলেই বোকা। ওরা একজন আরেকজনকে লাভ করে তাই বিয়ে করে নিয়েছে । আমার কি মনে হয় জানিস?? তোর মাথায় ব্রেন নাই। হূর মেকি হাসি দিয়ে বলে
” হ্যা ঐটাতো আপনার হাটুতে। এরিশ বলে
” চুপ। থাক নয়তো বিনা রকেটে তোকে চাঁদে পাঠাবো। হূর কিছু বলতে চেও বলে না। হূর বলে
” ওয়াও। পাঠান না বারণ কে করেছে?? আমি আপনার জন্য একটা এলিয়ান নিয়ে আসবো।
এরিশ বলে

” তুই চুপ করবি? হূর ওড়না দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে।
দুপুরের দিকে দুজনেই বাসায় আসে। এরিশ সোজা রুমে চলে যায়। হূর বাসায় ফিরতেই আলাইনা এসে জড়িয়ে ধরে হূরকে,। হূরও কোলে তুলে নেয় আলাইনা কে। তা দেখে এরিশের মা বলে
” এত বড় মেয়ে বোনের কোলে উঠেছে, এই আলাইনা নাম। আর হূর যা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবি। হূর বলে
” না কাকি মা আমি খেয়ে এসেছি। আলাইনা হূরের কোল থেকে নেমে চুপ করে রান্না ঘরে চলে যায় সাথে হূর নিজের রুমে।
তখন হয়তো বিকেল ৩ঃ৩০ কি ৪০ হবে, হূর নিচে নামে পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। কিচেনে যেতেই দেখে এরিশ কিছু খুঁজছে। হূর। হালকা কাশি দেয়

” এহেম এহেম। আর এরিশ পিছনে তাকায় হূরের কনঠ শুনে। হাতে চকলেট। তা দেখে হূর জোরে ডাক দিয়ে বলে
” আলাইনা,,,, তো। আর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ হূরের মুখ চেপেঁ ধরে। হূর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। অপর দিকে বাসার সবাই এই সময়টা ঘুমে থাকে , তাই কেউ এখন নেই। হূর এরিশের হাতে মারছে। এরিশ বলে
” তুই এতো বজ্জাত কেন?৷ আলাইনা দেখলে কাচা চিবিয়ে খাবে আমাকে। হূর কোনো রকম নিজেকে ছাড়িয়ে দেয় দৌড় কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই এরিশ ধরে ফেলে হূরকে। হূর বলে
” আচ্ছা আচ্ছা, বলবো না। হাত ছাড়ুন কেউ দেখলে ভুলভাবে। এরিশ কিছু একটা ভেবে হূরের হাত ছেড়ে দিয়ে বাসায় থেকে বেরিয়ে পরে বাইক। হূর পরপর দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে।
পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে। হূর নিজের রুমে যাওয়ার আগে চোখ যায় এরিশের রুমে সোফার উপরে। হূর যেই না রুমে প্রবেশ করবে তখনই এরিশ পিছন থেকে বলে

” এই তুই আমার রুমের সামনে কি করিস?? হূর চমকে পিছনে তাকিয়ে বলে
” আপনি না মাত্র বাইক নিয়ে বেরহলেন। এরিশ হূরেকে বলে
” হ্যা ফোনটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম৷ আর এখনে এসে দেখে তুই। তা কি চুরি করার ধান্দায় আছিস শুনি?? হূর বলে
” আমি কেন চুরি করতে যাবো?? আমিতো জাস্ট আপনার ঐ শার্ট টা দেখছিলাম কেমন চেনা চেনা লাগছে। এরিশ বলে
” পরতে দেখছিস তাই লেগেছে এমন, যা নিজের রুমে যা। হূর চলে যেতেই এরিশ ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়।

রাতের বেলা ছাঁদে দোলনায় বসে আছে হূর আর আলাইনা। আলাইনা চকলেট মিল্কসেক খাচ্ছে আর হূর কফি। আলাইনা বলে
” আপুই সকালে তো সবাই বললো তোমাকে বিয়প দিয়ে দিবে। তা আমাকে কবে বিয়ে দিবে? আলাইনার এমন কথা শুনে টাশকি খেয়ে যায় হূর। তখনই ছাদেঁ আসে এরিশ। এরিশকে দেখেই আলাইনা বলে
” আসছে প্যারিস হাসের পেক পেক। এরিশ বলে
” কি বললিরে বুড়ি?? আলাইনা বলে
” আমি বুড়ি?? এরিশ এসে আলাইনার চুল ধরে টেনে দিয়ে বলে
” না ঠাকুমা। আলাইনা ঠাস করে এরিশের হাতে মেরে বলে
” বেয়াদব বৎস, ঠাকুমা যেহতু বলেছ। তাহলে বসো ঠাকুমারঝুলি খুলি গল্প শুনো। এরিশ বলে
” ইশশশশ আসছে। যা ঘুমাতে যা। আলাইনা বলে
” তুমি যে আমার কথার মাঝে বা পা ঢুকাও না কোন দিন যেন এই পা কেটে তোমার হাতে ধরিয়ে দেই। যাও নিচে যাও আর আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসো। এরিশ বলে

” আমি কেন যাবো তুই খাবি তুই যা। আলাইনা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই এরিশ বলে
” যাচ্ছি যাচ্ছি, তাও এমন রাক্ষসীর মতো তাকাস না। আলাইনা বলে
” তুমি যাবে?? এরিশও চলে যায়
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাড়াতেই ধাক্কা লাগে হূরের। গলার চেনটা নেই। আর দুইদিন যাবৎ সেই ব্যক্তির খোঁজ খবরও নেই!! হূরের মনে আছে কালকে রাতে ছাঁদে যখন আলাইনার সাথে ছিল তখনও চেনটা ছিল। হয়তো ছাঁদে কেথাও একটা পরেছে!! হূর তাড়াতাড়ি করে পা বাড়ায় ছাঁদের দিকে। আজ ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গিয়েছে। হূর খেয়াল করে দেখে দোলনার পাশে চেনটা পরে আছে। হূর সেটা তুলে গলায় পরে নেয়। নিচে বাগানের দিকে তাকাতেই হূর দেখে,
এরিশ পুশআপ দিচ্ছে আর আলাইনা বসে আছে এরিশের পিঠে আর বলছে
” দিন দিন খেতে খেতে গোপালভার হয়ে যাচ্ছো!! পেট টা দেখছ কেমন ফুটবলের মতো হয়ে গিয়েছে। কম কম খেতে পারো না। এরিশ বলে

” তুই এখন আমার খাবারের হিসাবও করবি?? আলাইনা বলে
” চুপ করো!! ডায়েট করবা তুমি। হূর ছাঁদ থেকে বলে
” আলাইনা ডায়েট তোমার এরিশ ভাইয়া দ্বারা হবে না। আর কালকে দেখলাম ফ্রিজ থেকে চকলেট নিয়ে খেতে। এরিশ হূরের দিকে তাকাতেই হূর রুমে দৌড়। আলইনা বলে
” ঐ দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকাও!! কার পারমিশনে চকলেট খেয়ছ?? এরিশ বলে
” বোইন আমার ভুল হয়েগিয়েছে নাম এবার। আলাইনা বলে
” তোমাকে তো আমি দাড়াও। আলাইনা নামতেই এরিশ উঠে দৌড়। আলইনা বলে
” এরিশ ভাইয়া এখানো আসো। এরিশ বলে
” পাগল নাকি, আমার এখন স্পেস লাগবে তুই জ্বালিয়ে দিস৷ আলাইনা বলে
” দারওয়ান চাচ্চুকে বলবো রকেট কিনে আনতে ঐটায় চড়ে চাঁদ ভ্রমণ করাবো। এরিশ নিজের রুমে ঢুকবে তখনই হূর নিচের দিকে যাচ্ছে। এরিশকে দেখা

মাত্রই হূর নিজের রুমের দিকে যেতে লাগে আবার। তখনই এরিশ হূরের বেনি ধরে টান দিয়ে বলে
” দুইবোন মিলে কি পেয়েছিস আমাকে?? একজন রকেটে বসিয়ে চাঁদে পাঠাবে, আরেকজন ফসিয়ে দিচ্ছে দিনদুপুরে চুরির নাম করে!! তখনই কেউ এরিশকে পিছন থেকে মার লাগিয়ে দেয়। এরিশ পিছনে তাকিয়ে দেখে আলাইনা। তার দিদুনের লাঠি হাতে দাড়িয়ে আছে। আলইনাকে দেখা মাত্র এরিশ হূরকে ছেড়ে দেয় দৌড়। আলাইনাও পিছু পিছু ছুটছে৷ এরিশ বলে
” সরি সরি জীবনে আর তোর চকলেট খাবো না। আজকে আসার সময় অনেক গুলো চকলেট কিনে আনবো। আলাইনা থেমে যায় আর বলে
” যাও মাফ করে দিলাম। অন্য দিকে ওদের কাহিনী দেখে হাসছে। এরিশ রুমে যেতে যেতে বলে
” দেখনিব তোকে। হূর হাসি দিয়ে বলে
” তো দেখেন না বারণ কে করছে ?? দেখুন ভালো করে দেখুন।
এরিশ হূরের দিকে ঝুকে কানে কানে বলে
” আফিয়া আফারার হূর, বি-রেডি বেইবি। বলেই নিজের রুমে চলে যায় আর হূর এখনো তাকিয়ে আছে। আলাইনা বলে
” কি বললো তোমাকে?? হূর বলে
” না কিছু না। নিচে চলো।

ক্লাস নেই সবাই যার যার মতো গল্প করছে। তখনই হূরের নজর যায় বাইরের দিকে তার দিকেই কেউ তাকিয়ে আছে। হুমম এটা আর কেউ না সেই অজানা ব্যক্তি হূরকে তাকাতে দেখেই সে সেখান থেকে চলে যায়। হূরও আজ দেখে ছাড়বে কে এই ব্যক্তি। হূরও অহি, তিথি আর অনিককে কিছু না বলেই চলে আসে ক্লাস রুমের বাইরে। ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে ডান দিকে তাকাতেই দেখা মিলে সেই ব্যক্তির। হূরও নিজের পায়ের গতি বাড়ায়। ব্যক্তিটা পিছনে তাকিয়ে হূরকে আসতে দেখতেই নিচে নামতে লাগে। হূর পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে
” এই যে শুনছেন?? কিন্তু তার কোনো সারা শব্দ নেই। হূরও নামতে লাগে নিচে নামতেই একটা মেয়ে এসে হূরের হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলে

” তোমার জন্য। বলেই চলে যায়। হূর চিঠিটা ওপেন করে দেখে
” ইচ্ছে ছিল আরো কিছু দিন লুকোচুরি খেলব। কিন্তু মানুষটা তুমি এখন একান্তই আমার তাই না হয় এই খেলা বাদ দিয়ে সামনে আসা যাক। কি বলো?? বিকেল পাঁচটায় তোমার বাসার পার্কে অপেক্ষা করব।
আর হ্যা নীল শাড়িটা পড়তে ভুলবে না কেমন?? তো বিকেলে দেখা হচ্ছে। ভালোবাসি।
হূর চিরকুট টা পড়ে ভাবে। সে যাবে আজকে সে জানবেই কে এই ব্যক্তি!! তখনই কেউ হূর কে ডাকে।
” হূর পরি তুমি এখানে?? হূর পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে নীলআদ্র। নীলআদ্র বলে
” হূর বিকেলে ফ্রি আছো?? হূর বলে
” কেন? নীলআদ্র হাসি দিয়ে বলে

” তোমাদের ঐদিকের পার্কে যাবো। বিকেলে পার্কে আসিয় কেমন?? হূর বলে
” না, আমি যেত পারবো না, আমার ক্লাস আছে বায়। নীলআদ্র বলে
“তবুও আমি অপেক্ষা করব। হূর চুপচাপ উপরে৷ উঠতে লাগে। হূর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিল তখনই হঠাৎ করে হূর সামনে তাকাতেই দেখে আবিদ। আজ অনেক দিন পর আবিদের সাথে দেখা । আবিদকে দেখা মাত্রই হূর দুইপা পিছিয়ে যায়, সাথে আবিদের কিছু চেলাপেলাও আছে। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। অহি আর তিথি কেও বলে আসেনি। আবিদ হূরকে দেখে বলে
” ভয় হচ্ছে? হূর বলে
” আমার ভয় হবে কেন?? আমি কিছু করেছি। পথ ছাড়ুন। আদিব হাসি দিয়ে বলে
” পথ আটকে কেউ রাখেনি যেতে পারো। হূর আদিবদের পাশ কাটিয়ে চলে আসে।

ক্লাস শেষে হূর পানি খেতে খেতে নিচে নামছে৷ অনিক লাইব্রেরীতে গিয়েছে। অহি বলে
” দোস্ত আমি বিয়ে করব। আমি আর এই প্যারা নিতে পারবো না। হূর অহির দিকে তাকিয়ে বলে
” তো করনা বারণ কে করেছে। তিথি বলে
” আরে আমাদের ছাড়া বিয়ে করে এতিম এতিম লাগবে না ওর?? হূর কিছু বলতে যাবে তখনই কারো সাথে ধাক্কা লাগে আর ফলস্বরূপ পানির বোতল থেকে পানি গুলো গিয়ে সব পরে সেই ব্যক্তির গায়ে। হূর সামনে তাকাতেই দেখে এরিশ। সাথে আকাশ আর আবিরও দাড়িয়ে। হূর বলে
” সরি সরি ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে করেনি। এরিশ ধমক দিয়ে বলে
” কানের নিচে এমন একটা দিব না ২৪ ঘন্টার আগে দুনিয়ায় ঘুরা শেষ করে পাতাললোক অব্দি ঘুরে আসবি। তুই আমার কোন জন্মের বোন?? আকাশ বলে
” আরে এরিশ যেতেদে। এরিশ কিছু না বলে চোখ পাকিয়ে চলে যায়। এরিশ যেতেই হূর বলে
” ফালতু লোক একটা। জঘন্য অতি নগন্য। অহি হাসি দিয়ে বলে
” হয়েছে এবার চল।

নীল শাড়ি খোলা চুল হাতে চুড়ি, বাইরে হাত বারিয়ে বৃষ্টি ধরছে হূর। মনে হাজারো প্রশ্ন। মানুষটা কে? কেমন?? আচ্ছা হূরকি তাকে চিনে? নাকি সে সত্যি
হূর রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু বাইরে বৃষ্টি। এই বৃষ্টি মাথায় করে পার্কে যাবে? কিন্তু কিছু করার নেই যেতেই হবে। কারণ সে আজ দেখে ছাড়বে কে সেই অজানা ব্যক্তি!?
চুপচাপ নিজের মতো বেরিয়ে পরলো হূর। বাসায় কারো প্রশ্নের জবাব দিতে হয়নি। কারণ ড্রয়িং রুমে কেউ ছিল না। হূর এক হাতে ছাতা আরেক হাতে শাড়ির কুঁচি ধরে হাটছে। বেশি দূর না আরেকটু৷ পার্ক সম্পূর্ণ ফাঁকা। বৃষ্টির কারণে কোনো পাখির আনাগোনাও নেই। হূর একটু সামনে আগেতেই দূরে থেকে দেখতে পায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে গাছের নিচে যদিও ভিজে একাকার। হূরকে দেখে হূরের দিকেই আসছে সে। হ্যা এটা আর কেউ না সেই ব্যক্তি । সাদা পান্ঞ্জাবি কালো মাস্ক

হূর এক হাতে ছাতা আরেক হাতে শাড়ির কুঁচি ধরে হাটছে। বেশি দূর না আরেকটু৷ পার্ক সম্পূর্ণ ফাঁকা। বৃষ্টির কারণে কোনো পাখির আনাগোনাও নেই। হূর একটু সামনে আগেতেই দূরে থেকে দেখতে পায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে গাছের নিচে যদিও ভিজে একাকার। হূরকে দেখে হূরের দিকেই আসছে সে। হ্যা এটা আর কেউ না সেই ব্যক্তি । সাদা পান্ঞ্জাবি কালো মাস্ক। মাঝে মাঝে আবার বাতস। ব্যক্তিটা যতো কাছে আসছে হূরের ভয়টা দিগুণ বারছে। লোকটা কাছে আসতেই হূর লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনি এখানে? এরিশ মাস্ক টা খুলে বলে
” হুমম আমি হূরপরি। হূর এবার বুঝে যায় এটা এরিশই ছিল। হূর বলে
” এইসবের মানে কি?? এরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
” খুব সোজা আই লাভ ইউ। হূর বলে

” আপনি বললেই তো আর হলো না। আর আপনি যা বলছেন সেটা কখনোই সম্ভব না৷ একে তো পরিবারে ঝামেলা হবে, আর দ্বিতীয় আপনাকে আমি লাইক করি না । এরিশ মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” হুমম তা আর বলতে হবে না। যদি কিছু ফিল নাই করতি তাহলে আর বৃষ্টি মাথায় করে এখানে আসতি না। হূর এখন এর জবাব কি দিবে। কিছু সময় চুপ করে হূর বলে
” আপনি কে সেটা জানার জন্যই এখানে আসা। এরিশ হূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
” হুমমম তা মানলাম। কিন্তু আমি যে বললাম নীল শাড়ি পরে আসতে তাহলে সেই শাড়ি পরে আসার কি দরকার ছিল? বা এই বৃষ্টির মাঝেই বা কেন? হূর কি বলবে!! এর উত্তর তার কাছে নেই। হূর বলে

” বাসায় গিয়ে দিয় দিব আপনার শাড়ি। এরিশ হূরের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে বলে
” শাড়ি দিবি ভালো কথা, বারণ করবো না কিন্তু দিলে এখনই দিতে হবে নয়তো আমি নিব না। এরিশের এমন কথা শুনে হূর রেগে বলে
” আপনি একটা জঘন্য রকম খারাপ মানুষ। এরিশ হূরের হাত ধরে বলে
” আই নো বেইবি। এতটা সময় হূরও ভিজে গিয়েছিস। এরিশ বলে
” এখন কথা না বলে বাসায় চল নয়তো জ্বর, স্বর্দি লাগবে। হূর বলে
” দেখুন আপনি যা বলছেন তা কখনোই সম্ভব না। এরিশ বলে
” কেন তুই মানুষ না পেত্নী? তোর জ্বর, স্বর্দি লাগবে না!!? হূর রেগে বলে
” আহাম্মক, আমি সেটা বলিনি আপনি যে বলেন আপনি আমাকে লাইক করেন ঐটা বলছি। এরিশও এবার রাগ জড়ানো কন্ঠে বলে
” একটা কথা বলবি কানের নিচে দিব সোজা এই কাঁদায় গরাগরি খাবি। বাসায় চল।
হূর এরিশকে কিছু না বলেই আগে আগে হাটতে লাগে। এরিশও তাকিয়ে আছে হূরের যাওয়ার পানে। পরে নিজেও যেতে লাগে হূরের সাথে।

বাসায় এসে হূর মাথা মুছে ফ্রেশ হয়৷ তারপর নিজের গলার চেন টা খুলে পা বাড়ায় এরিশের রুমের দিকে। হূর ভাবে যদি আবার কিছু করে বসে। তাও পর্দা সরিয়ে উুকিঁ দিয়ে দেখছে এরিশ আছে কি না?! তখনই হূরের হাতের নিচে আরেকজন উুঁকি দেয়। হূর তাকিয়ে দেখে আলাইনা। আলাইনা হূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আপ্পি তুমি কি চুরি করতে এসেছে?? হূর আলাইনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে
” আমি কেন চুরি করব!? তুমি এখানে?? আলাইনা চোখ ছোট ছোট করে বলে
” আমি এখানে! তুমি কি কর?? নিশ্চয়ই কিছু একটা কান্ড করেছ,। হূর বলে
” না, আমি কি করব! সব করেছে তোমার ঐ এরিশ নামক প্যারিস ভাই।

তখনই কেউ হালকা কাশি দেয়। আলাইনা আর হূর তাকিয়ে দেখে এরিশ দাড়িয়ে। আলাইনা হূরের দিকে তাকিয়ে বলে
” লে হালুয়া। অখে বায় আমি যাই নিচে। বলেই আলাইনা দৌড়। আলাইনাকে দৌড়ে দিতে দেখে হূরও দৌড় দিতে যাবে তখনই এরিশ হূরের হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসে আর দরজটা বন্ধ করে দেয় । সেটা দেখে হূর বলে
” এই এই কি করছেন? কেউ দেখে ফেলবে। ছাড়ুন ছাড়ুন। এরিশ হূরকে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ। হূর বলে
“, কেউ দেখলে কি না কি ভাববে? এরিশ বলে
” কি আর ভাববে? তোকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমার আর কিছু করতে হবে না৷ আর দরজা বন্ধ কেউ দেখবে না। হূর এরিশকে বলে

” পথ ছাড়ুন। এরিশ ভ্রু কুচকে বলে
” এই তুই কি আসলেই অন্ধ?? আমি কি পথ ধরে রেখেছি!? আর আমার রুমে এইভাবে বিড়ালের বাচ্চার মতো কি করছিলি?? তখনই হূরের মনে পরে চেনটার কথা। চেনটা এরিশের দিকে এগিয়ে দেয় আর বলে
” এই যে এটা দিতে এসেছিলাম। এরিশ বলে
” তোর কাছে ২ টা সুযোগ আছে….. ১ এটাকে চুপচাপ পরে থাক। ২….. ইচ্ছে না হলে ফেলেদে। আর হ্যা এটা ফেলে দিলে একটা চড় এইদিক সেইদিক যাবে না সব তোর গালে বসবে। হূর বলে
” এটা কেমন কথা!? এরিশ হূরের হাত ধরে একটা চুমু দিয়ে বলে
” সত্যি তো বললাম৷ হূর নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে

” এই স্বভাবটা পাল্টান। হুটহাট চুমু হাত ধরা। এইসব কি?? কেউ দেখলে কি ভাববে?? এরিশ হূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” কথাটা মানতে পারছি না। কারণ আমার প্রতিটা স্পর্শ পবিত্র। দেখলে দেখুক। হূর বলে
” মানে!! এরিশ হূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তোকে বলতে আমি বাধ্য না। আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যা দুই মিনিট সময়।
হূরকে আর পায়কে তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে যায় হূর কিন্তু সব কেমন আজব আজব লাগছে!? হূরের তো এখানে রাগ করার কথা ছিল৷ রিয়াকশন টা আলাদা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কাজ করছে কিছুটা ভালোলাগা, কিছু টা ভয়, আবার কিছুটা সংশয়। হূর জানে এটা কখনোই ফ্যামেলি মানবে না। কারণটা সবারই জানা। তাও এরিশ কেন এমন করছে।
এইসব ভাবছে আর নিচে গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে পরে আলাইনার সাথে। আলাইনাকে দেখে হূর বলে

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৭+৮+৯

” আমাকে একা ফেলে পালালে কেন? আলাইনা বলে
” পালালাম কই? নিচে আসলাম। আম্মু না আলাইনা বলে ডাকলো?? হূর বলে
” অহহ আচ্ছা খেয়াল করিনি। তখনই এরিশ নিচে আসে আর তার আম্মুকে ডাকতে লাগে
” আম্মু….আম্মু এক কাপ কফি নিয়ে আসো না। আলাইনা রেগে এরিশের দিকে তাকিয়ে বলে
” এমন ষাঁড়ের মতো না চেঁচিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে বললেই তো পারো?? আমি এখন সিরিয়াল দেখছি। যাও ডিসট্রাব করবা না। এরিশ আলাইনার চুল টেনে বলে

” ঐ তোর বয়সই বা কত? সিরিয়াল দেখছিস?? আলাইনা বলে
” এরিশ ভাইয়া নামক প্যারিস ভাইয়া চুল ছাড়ো আমার নয়তো আমি বড় বাবাইকে বলে দিব তুমি সিগারেট খাও। আমি নিজে দেখেছি। পরে বাঁশ খেয় পান্ডার মতো।
সাথে সাথে এরিশ আলাইনার চুল ছেড়ে দেয়। আর রান্না ঘরে যেতে যেতে মিন মিন করে বলে
” আজ যদি যতীন্দ্রমোহন বাগচী বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো নতুন করে এমন কিছু লিখতেন।
“বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ
চাঁদের জায়গায় চাঁদ রয়েছে বাঁশগুলো সব কই??” এই আলুর বাচ্চির জন্য জীবনটা আমার শেষ।
অপর দিকে হূর আলাইনার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আলাইনা বলে
” হূর আপ্পি চুপ করো না। হূরও আলাইনাকে একা ছেড়ে দেয় আর রুমে চলে আসে।

ভার্সিটি গিয়ে ক্লাসে ব্যস্ত হূর তখনই হূরের নজর যায় বাইরে দেখে এরিশ দাড়িয়ে। এরিশ হূরকে ইশারায় বলে বাইরে আসতে। হূর ইশারায় বলে না। এরিশ বলে
” তুই আসবি নাকি আমি আসবো?? হূর বলে
” না না। আমি আসছি। হূর কিছু বলতে যাবে তখনই
ক্লাস টিচার বলে
” হূর কি হয়েছে কোন সমস্যা?? তখনই এরিশ টিচারের পারমিশন নিয়ে ভিতরে আসে আর বলে
” স্যার বাসায় থেকে কল এসেছে। হূর আর আমাকে এখনই বাসায় ফিরতে বলেছে। টিচার বলে
” আচ্ছা হূর যাও। হূর তো ইচ্ছে মতো বকছে এরিশকে অহি আর তিথিও কিছু বলে না৷

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১৩+১৪+১৫