ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৭+৮+৯

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৭+৮+৯
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

ভার্সিটি শেষ করে দাড়িয়ে আছে হূর। 4:30 বাজে একটু পর নাকি ড্রাইভার চাচ্চু আসবে। তখনই পিছন থেকে কেউ হূরের চোখ বাঁধে ,, হূর কিছু বলতে যাবে তখনই তার কানের কাছে মুখ এনে হালকা করে বলে
” আমি হূরপাখি ভয় পেয় না। হূর রুমালটা খুলার চেষ্টা করতে করতে বলে
” কে আপনি, আপনাকে আমি চিনি না। ছাড়ুন আমাকে, নয়তো আমি চিৎকার করবো। হূর আর কিছু বলতে যাবে তখনই সেই অচেনা ব্যক্তি তাকে কোলে তুলে নিয়ে কারে বসিয়ে দেয়। আর হাতটা বেঁধে দেয়।
হূর বলে
” এই ছাড়ুন আমাকে, আপনি কি মেয়ে পাচারের কাজে যুক্ত? ব্যক্তিটা কিছু না বলে কারের ডোরটা লাগিয়ে ড্রাভিং সিটে বসে পরে। হূর বলে

” কেউ আছো হেল্প!? ব্যক্তিটা কার ইস্টার্ট করে বলে
” দেখ হূর অযথা নিজের এনার্জি লোস্ট করে লাভ নাই। কারণ তোমার আওয়াজ আমি ছাড়া আর কেউ শুনতে পারবে না। তার থেকে ভালো তুমি চুপ থাকো আর গান শুনো।
হূর বকবক করেই যাচ্ছে, তাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? কে সে!! শেষে লোকটা বিরক্ত হয়ে। ললিপপ থেকে খোসা ছাড়িয়ে হূরের মুখে দিয়ে দেয়। আচমকা এমন হওয়াতে হূর চমকে যায়। কিন্তু যখন বুঝতে পারে এটা ললিপপ তখন হূর বলে
” বাচ্চাদের মতো আমাকে চকেলট খায়িয়ে সেন্সলেস করে পাচার করে দিবেন? দেখুন আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বলুন!? তখনই লোকটা আরেকটা ললিপপ হূরের মুখে পুরে দেয়। হূর বেচারি এখন কথা বলতে পারছে না। উম্মমমমমমম করছে। ব্যক্তিটা বিরক্ত হয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তুমিতো এতো-বকবক করো কেন? কখনোই তো দেখেনি এতো বকবক করতে দেখেনি। চুপ থাকতে পারো না?
অপর দিকে বিরক্তির চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে হূর। মুখটা ব্যথা হয়ে গিয়েছে । ঘন্টা দুয়েক পর যখন কারটা ইস্টপ হয় তখন আবার হূরকে সে কোলে তুলে নেয়। সারা রাস্তায় হূর আর একটা কথা বলে নাই। একটু পরই হূরকে কোল নিয়ে হাটতে লাগে। বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পর হূরকে নামিয়ে দেয়। আর হাতের বাঁধান খুলে দিয়ে দূরে আড়ালে চলে যায়৷ হূর কারো আওয়াজ না পেয়ে ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে। আশেপাশে কাউকে না দেখে ভয় পেয়ে যায়। ভয়টা আরো বেশি হয় যখন আচমকা আওয়াজ শুনা যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে হূর দেখে আতশবাজি ফুটছে। আর খুব সুন্দর করে লেখা

” হ্যাপি বার্থডে হূর পরি। হূর তো অবাক সে ভুলেই গিয়েছিল আজ তার বার্থডে। সন্ধ্যার সময় হালকা অন্ধকার তার মাঝে এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আশেপাশে তখন হাজারো জোনাকি পোকার আনাগোনা।
হূর নিজের হাত দিয়ে কয়েকটা জোনাকি পোকা আবদ্ধ করে নেয়,, তখনই কেউ একজন হূরের পিছন থেকে গোলায় একটা চেন পরিয়ে দেয়। হূর পিছনে ফিরে দেখে সেই লোকটা। সে খুব সুন্দর করে বলে
” আজকের দিনটা তোমার ছিল আর তুমিই ভুলে গিয়েছ! কিন্তু আমি তো ভুলিনি। হ্যাপি বার্থডে হূর, আমার হূর। হূরের চোখের কোনে পানি। এতটা তার জন্য কেউ করেনি। হূর বলে
” আমি জানি না আপনি কে, আমার কি হন, আমার ব্যাপারে এতটা কিভাবে জানেন। কিন্তু এতটা করার জন্য ধন্যবাদ। আমি সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম। । ছেলেটা হূরের চোখের পানি মুছে বলে
” উহহু, কাদঁবে না। আর শুনো রাত হয়েছে বাসায় ফিরতে তো হবে তোমার। সবাই টেনশন করবে। কেকটা না হয় তোমার নেক্সট বার্থডে তে একসাথে কাটলাম। চলো এখন।

হূরও কিছু বলেনা। কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে মানুষটাকে বিশ্বাস করতে। ছেলেটা আবার হূরের চোখ বেঁধে দিয়ে বলে
” এখন তোমাকে সত্যি সত্যি পাচার করে দিব কিন্তু তোমার বাসার লোকের কাছে । আর দেখ এই হাতাহাতি করো না। নয়তো আবার ঐ ভাবে রেখে দিব। হূর কিছু বলে না। চুপচাপ তার সাথে গিয়ে বসে। বাসার ঠিক একটু আগেই হূরকে কার থেকে নামিয়ে দেয়। আর কিছু না বলেই কার নিয়ে চলে যায়। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে কার টা অনেক দূর চলে গিয়েছে।
রাত অনেক। হূর ভাবছে বাসায় গিয়ে কাকে কি জবাব দিবে?? বাসায় ফিরতেই সম্পূর্ণ বাসা ফাঁকা৷ কেউ নেই । তখনই অহি, আর তিথি বেড়িয়ে আসে হ্যাপি বার্থডে বলতে বলতে। এরিশের মা আসে কেক নিয়ে। হূরের বাবা, কাকাই হূরের মা। সবাই মিলে কেক কাটে। হূর সবাইকে খায়িয়ে দিলেও হূরের মাকে দেয় না। হূরের মা নিজে কেক কেটে হূরকে খায়িয়ে দেয়। তখন হূরও একটু দেয়।
মৃধা, আর হূরের ছোট বোন এসে বলে

” উফফ এতো চিৎকার কেন করছ? হূর তার ছোট বোন আলাইনা কে ডেকে বলে
” আলাইনা আপ্পির কাছে আসো। আলাইনা বলে
” না মৃধা আপু বলেছে তোমার কাছে আসলে তুমি আমাকে মারবে। সবাই মৃধার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হূর বলে
” কিছু বলবো না আসো না একটু। আলাইনা হূরের কাছে গেলে হূর আলাইনাকে কেক খায়িয়ে চুমু দিয়ে বলে
” এইবার যাও। আলািনাও কি মনে করে হূরকে চুমু দিয়ে হ্যাপি বার্থডে বলে চলে যায়। মৃধা রেগে অনেক আগেই চলে গিয়েছে। হূরের দিদুন নিজের রুমে। হূর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে এরিশ আসছে। এরিশের মা বলে।
” এরিশ এখানে আয়, আজ হূরের বার্থডে।
এরিশ হূরকে দেখে বলে।
” এতো আদিখ্যেতার কি আছে? আজব!! আজকে তো আর ওর একার বার্থডে না।
আর এরিশ চলে যায়। হূর জানতো এমনটাই কিছু হবে তাই আর কিছু বলে না। এরিশকে তার কাকাই কিছু বলতে চাইলে হূর বলে বাদ দিতে। পরে সবাই হূরকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।

হূর নিজের রুমে এসে দেখে এরিশ বসে আছে। আর হূরের দিকে তাকিয়ে আছে হূর ধীর পায়ে এগিয়ে আসে এরিশের দিকে। এরিশকে দেখে বলে
” আপনি এখানে/? এরিশ ভ্রু কুচকে বলে
” কেন নিষেধ নাকি?? আর বাসায় ফিরতে লেট হলো কেন? ড্রেসও চেন্ঞ্জ করিসনি?কাঁধে ব্যাগ। আবার বার্থডে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে বার্থডে সেলিব্রেট করেছিস?? হূর বিরক্ত হয়ে বলে
” সমস্যা কি আপনার?? যখন তখন আমার রুমে কি করেন?? এরিশ বলে
” এই রুমে আমি হিরা মুক্তা রেখে গিয়েছি তাই আসি তোর সমস্যা?? বাসা টা কিন্তু আমার শুধু রোমটায় তুই থাকিস। হূর বলে
” বাসাটা আপনার না। বাবাই আর কাকাইয়ের। আপনি এটা বলেন এখানে কেন এসেছেন?? আর আপনিও তো বাইরে ছিলেন?? একই ড্রেস৷ জিএফ এর সাথে ছিলেন নাকি ডেটে??এরিশ দাড়িয়ে যায় আর হূরের দিকে আগাতে আগাতে বলে
“আমার বিল্লি আমাকেই মিওয়াও। হূর পিছাতে পিছাতে বলে

” এই আপনি আগাবেন না। এরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
” ভয় লাগে??হূর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ সিটি বাজাতে বাজাতে চলে যায় আবার কি মনে করে ফিরে আসে দেখে টেবিলের উপর ফলের ঝুড়ি রাখা। এরিশ এসে সেখান থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বলে
“এই নে এখানে যেই সব ফল রাখা আছে এগুলো তোর বার্থডে গিফট আমার তরফ থেকে। হূর ফলের ঝুড়িটা এরিশের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে

” যান আপনাকেই গিফট করে দিলাম। কিন্তু প্লিজ যান। এরিশ বলে
” আমার থাকার ইচ্ছেও নেই। ভালো কথা তোর বান্ধবী তিথির ফোন নাম্বার টা লাগবে। হূর বলে
” কেন লাইক করেন?? এরিশ বলে
” তাতে তোর কি?? তোর তো নীলআদ্র আছে। হূর এরিশকে রুম থেকে বেরকরে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে বলে
” দিব না নাম্বার যান ভাগেন এখান থেকে। এরিশ বলে
” তোকে দেখে নিব কালকে ৷ হূর দরজটা খুলে মুখ বের করে বলে
” এই যে এই দিকে তাকান। দেখছেন,? হয়েছে না। বায়। বলেই দরজা লাগিয়ে দেয়
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো হূর ছাঁদে আসে গাছে পানি দিতে। কাল সকালে আসা হয়নি। হূর পানি দিচ্ছে গাছে হঠাৎ করেই পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে এরিশ দাড়িয়ে আছে পাইপের উপর পা দিয়ে। হূর বলে

” এই পা সরান , আপনার জন্য পানি আসছে না। আর সাথে সাথে এরিশ সরে দাঁড়ায় ফলস্বরূপ পানিতো একরকম ভিজে একাকার হয়েগেছে হূর।
এরিশ হূরের এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে নিচে বসে পরে। হূর কিছু সয়ম এরিশের দিকে তাকিয়ে এরিশকেও ভিজিয়ে দেয়। আচমকা এমন হওয়াতে এরিশ তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ায়। হূর বলে
” হাসুন হাসুন, এরিশ দূরে সরে যায় আর বলে
” দেখ হূর, ভালো হচ্ছে না। হূর বলে
” কি ভালো হচ্ছে না, আপনি করলে ঠিক আমি করলেই দোষ?? তখনই ছাঁদে আসে এরিশের মা। দুজনকে এভাবে দেখে ধমক দিয়ে বলে

” কি শুরু করছিস দুজনে! এতো চিৎকার কেন? হূর বলে
” সব দোষ তোমার এই ছেলের। এরিশ আমতা আমতা করে বলে
” আমি, আমি কি করলাম আবার??? আমি কিছু করিনি। এরিশের মা রেগে বলে
” দুইটাই যা এখান থেকে, সকাল সকাল চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিস। হূর যা ফ্রেশ হয়েনে। নয়তো ঠান্ডা লাগবে। আর এরিশ তুইও।
এরিশ আর হূর দুজনেই চুপচাপ বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো নিচে চলে আসে
হূর যখন রুমে ঢুকবে তখনই এরিশ হূরকে বলে
” তোকে আমি দেখে নিব। হূর বলে
” আমিও ছাড় দিবো না, অকারণে ঝগড়া করবেন তো আমিও ছাড়ছি না। এরিশ হূরকে বেঙ্গ করে বলে
” আমিও ছাড়বো না। যা এখান থেকে পেঁচি। হূর এরিশকে বলে
” আপনি কি পেঁচা। আর রুমে চলে যায় হূর।

ভার্সিটিতে এসে অনিককে দেখে খুশি হয়ে যায় হূর। অনিককে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
” কিরে আঙ্কেল কেমন আছে?? অনিক বলে
” বলো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আচ্ছা শুন তিথি আর অহি কোথায়?? হূর বলে
” আসবে হয়তো একটু পর। আচ্ছা আমি লাইব্রেরিতে যাই তুই ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়ে আয়।
অনিক বলে
” তুই এই বই পড়তে পড়তে চোখ গুলো খাবি, । হূর চোখ পাকিয়ে অনিকের দিকে তাকালে অনিক বলে
” যাচ্ছি যাচ্ছি।

লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিয়ে বসে পরে হূর। তেমন কেউ নেই বলেই চলে। হঠাৎ করেই কেউ হূরের সামনে এসে বসে পড়ে। হূর সামনে তাকিয়ে দেখে সেই ব্যক্তি কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তার চোখ গুলো আজ নীল না বরংচ হালকা বাদামি। লোকটাকি লেন্স ব্যবহার করে?? ব্যক্তিটা ভ্রুর উপরে হালকা কিছু একটার দাগ কিন্তু চুলগুলোর কারণে বুঝা যাচ্ছে না তেমন। । ব্যক্তিটা ইশারায় বলে
” কি হয়েছে?? হূর বলে
” আপনি এখানে?? ব্যক্তিটা একটা সপিং ব্যাগ হূরের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে
” এটা তোমার বার্থডে গিফট। আচ্ছা আসি, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তোমার। বলেই উঠে দাড়ায়। হূর বলে
” আমি এটা নিতে পারবো না, আপনাকে আমি চিনি না। আর এই চুর পুলিশের গেম শেষ করুন।
হূরের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে ব্যক্তিটা পা বাড়ায় বাইরের দিকে। হূর ও ব্যাগটা টেবিলে রেখে যেই না বাইরে যাবে তখনই অনিক এসে হাজির। হূরকে দেখে বলে
” কিরে কোথায় যাস? হূর বলে
” তুই একটু থাক আমি আসছি।

বলেই বাইরে আসে। ২য় তালায় নামতেই হূর দেখে এরিশ নিজের শার্টের হাতা গুটাচ্ছে , আবির আর আকাশ দাড়িয়ে কথা বলছে এরিশের সাথে। হূর ভাবে হয়তো এরিশ সেই ব্যক্তিকে দেখেছে।হূর গিয়ে এরিশকে বলে
” ভাইয়া এখান দিয়ে গ্রিন শার্ট, মুখে মাস্ক পড়া কোনো ছেলেকে যেতে দেখেছেন? এরিশ ভ্রু কুচকে বলে
” আমি ছেলে হয়ে ছেলেদের খেয়াল করতে যাবো কেন?? মেয়ে হলে আলাদা হিসাব। হূর বলে
” আমি সেটা বলিনি। এখন বলেন দেখেছেন কিনা?।নয়তো বাসায় গিয়ে বলে দিব আপনি ভার্সিটি আসেন মেয়ে দেখতে। । এরিশ বলে
” আমি বলবো তুই ভার্সিটিতে আসিস গ্রিন -শার্ট পড়া ছেলে খুঁজতে। আবির বলে
” থাম থাম তোরা। হূর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাইয়া আপনি দেখেছেন?? আকাশ বলে

” নীলআদ্র হয়তো পড়েছে গ্রিন শার্ট। ঐ দেখো ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে । হূর উুকি দিয়ে নিচে তাকায় আর বলে
” না, উনি না। আচ্ছা আমি আসি অহি আর তিথিও চলে এসেছে হয়তো। আবির হূরকে ডাক দিয়ে বলে
” হূর তিথির নাম্বার টা দেওয়া যাবে?? হূর পিছনে তাকিয়ে বলে
” এরিশ ভাইয়া এর জন্য নাম্বার চেয়েছিল? আচ্ছা লিখুন। হূর নাম্বার দিয়ে লাইব্রেরিতে চলে আসে দেখে অনিক বসে বসে ফোন চালাচ্ছে। হূরকে দেখে অনিক বলে
” কোথায় গিয়েছিলি? আর কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই আমি দুইটাই খেয়ে ফেলেছি। হূর বলে
” ভালো করেছিস। অনেক বড় রাজকার্য করেছিস। তখনই অহি আর তিথি চলে আসে। তিথি বলে
” দোস্ত জানিস আজকে স্বপ্নে কি দেখেছি?? অনিক বলে

” স্বপ্ন টাকি আঙ্কেল ঠিক করে দিয়েছিল?? তিথি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” চুপ হারামি। তুই একটা আহাম্মক। স্বপ্ন বাবা ঠিক করে দিতে যাবে কেন?? অহি বলে
” ভুল কি বলেছে? তোর তো সবকিছু আঙ্কেলই ঠিক করে। হূর বলে
” চুপ কর আর তুই তিথি কনটিনিউ কর। বলেই টেবিলে রাখা সপিং ব্যাগটা নিজের ব্যাগে ভরে নেয় হূর। তিথি বলে
” স্বপ্নে দেখি আবির আমাকে কল দিয়েছে, অনিক বলে আমিও স্বপ্ন দেখেছি। সবাই একসাথে অনিকের দিকে তাকালে অনিক বলে
” আবির ভাইয়া তিথিকে কল দিয়ে বলেছে, আমাকে দেখলে এমন ড্যবড্যব করে তাকিয়ে থেক না। আমার লজ্জা লাগে। মানুষ কি বলবে । মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে এইভাবে হেনস্তা করো কেন??
তিথি তখন হূরের থেকে বইটা নিয়ে মারতে লাগে অনিক কে।
হূর বলে
” হয়েছে। এখন ক্লাসে চল। পরে সবাই ক্লাসে চলে যায়।

বাসায় এসে সরাসরি রুমের দরজা লাগিয়ে হূর বের করে সেই সপিং ব্যাগটা। সপিং ব্যাগটা খুলে দেখে
একটা নীল রঙের শাড়ি, সাথে নীল রঙের কাচের চুড়ি। কাঠগোলাপের একটা গাজরা। একটা পায়েল আর ঝুমকা। সাথে একটা চিরকুট
” আমার হূর পরিটা নীল পরির মতো সাজানোর একটা ছোট চেষ্টা। চিরকুট টা পরে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে হূরের। নীল রঙটা বরাবরই হূরের অনেক পছন্দের কাঠগোলাপ টাও তার অনেক পছন্দের যদিও আর্টিফিশিয়াল ।
ওয়াশরুম গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বেড়িয়ে আসে হূর। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হূরের নজর কারে তার গলার চেনটা। এটাতো কালকে সে পরিয়ে দিয়েছিল। হূর ভুলেই গিয়েছিল চেনটার কথা।হাতটা আপনাআপনি চেনটার কাছে চলে যায়। হুয়াইট ইস্টোন বসানো আর খুব সুন্দর করে লেখা হূর।

সব কিছু ঠিক থাকলেও হূরের মাইন্ডে চলছে অন্য কথা। একটা মানুষ একজনের ভালো লাগা খারাপ লগা কিভাবে জানে? আর সে হূরকে খুব ভালো করে চিনলেও হূর তাকে চিনে না?? তখনই আলাইনা হূরের রুমে নক করে।
” আপ্পি দরজাটা খুলো। হূর একটু অবাক হয় আলাইনা তাও তার রুমে! দরজাটা খুলে দিতেই দেখে আলাইনা দাড়িয়ে চুলগুলো এলোমেলো আর হাতে চিরুনি। হূরের হাতে চিরুনি দিয়ে বলে
” আপি চুলগুলো বেঁধে দাও না একটু। হূর বলে
” হুমম, আজকে আপির কাছে, ভয় করছে না?? আলাইনা বলে
” না তো। আম্মুকে বললাম বেঁধে দিতে সে কাজে ব্যস্ত তোমার কাছে আসতে বলেছে। হূর একটু অবাক হয় আলাইনার চুলগুলো বেঁধে দিয়ে বলে

” নাও হয়েগিয়েছে। আলাইনা হূরের হাত ধরে বলে
” আপি চলো গার্ডেনে যাই। সাইকেল চালাবো।
হূরও খুশি মনে নিচে আসে। সাইকেল টা বেশ বড় হূর বলে
” এটা তো তোমার না আলাইনা। আলাইনা বলে
” জানি জানি এরিশ ভাইয়ার। তুমি চালাবে আমি বসে থাকবো। হূরও বলে
” কিছু বলবে না তো তোমার ঐ এরিশ ভাইয়া? আলাইনা ভেংচি কেটে বলে
” ঐ এরিশ প্যারিশকে আমি ভয় পাইনা সে আমাকে ভয় পায়। বাসার সবাই আমাকে ভয় পায় কেউ কিছু বললে আমাকে বলবা আমি দেখ নিব। আমি বাসার লেডি বস। হূর হাত তালি দিয়ে বলে
” বাহ বাহ্। আলাইনা বলে

” যাও এখান সাইকেল চালাও। পারবে নাকি মৃধা আপুর মতো পরে যাবে?? হূর বলে
” অবশ্যই পারবো। আসো। হূর সাইকেল চালাচ্ছে আর আর আলাইনা মজা করছে । আর এইসব উপর থেকে দেখছে হূরের মা আর চাচি। হূর একটা রাউন্ড দিয়ে আসতেই সামনে পরে এরিশ। এরিশকে দেখে আলাইনা বলে
” ঐ এরিশ ভাইয়া সাইড দাও। এরিশ ব্যস্ত ছিল নিজের ফোনে৷ মাত্রই বাসায় ফিরেছে। এরিশকে দেখে হূর থেমে যায়। এরিশ বলে
” একটুর জন্যই যেতাম। আর সাইকেলটা চেনা চেনা লাগছে। আলাইনা বলে
“যা দেখ তাই তোমার চেনা চেনা লাগে। যাও বাসায় যাও। ফাজিল ছেলে ভার্সিটি শেষ হয়েছে সেই কখন। আর বাসায় ফিরছে এখন। আমার আপির কাছে কিছু শিখতে পারো না??
আলাইনার কথা শুনে হূর অবাক। এরিশ চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে
” যাচ্ছি মহারানি। আলাইনা বলে

” হ্যা যাও যাও, তোমাকে থাকতে বলছি নাকি? আর হূর আপি তুমি সাইকেল থামাবা না। সামনে কেউ পরলে সোজা সাইকেল চাপা দিয়ে দিবা। বাকিটা আমি দেখে নিব।
এরিশ আর হূর দুজনেই অবাক।
সকাল বেলা হূর ডাইনিং টেবিলে আসলেই হূরের দিদুন বলে
” হূর আজকে তোর ভার্সিটি যেতে হবে না বাসায়ই থাক। হূরের বাবা বলে
” কেন?? কিছু লাগবে মা তোমার? হূরের মা আলইনা কে খায়িয়ে দিচ্ছিল, হঠাৎ করে হূরকে বাসায় থেকে যাওয়ার কারণ কি সেটাই ভাবছে সে?? হূরের কাকি মার মনেও একই প্রশ্ন ।
হূরের কাকাই বলে
” যা বলার সরাসরি বলে ফেলো। হূরের দিদুন বলে
” হূরকে দেখতে আসবে। কথাটা শুনামাত্র সবাই অবাক। অপর দিকে নিজের খাওয়ায় ব্যস্ত এরিশ, আর মৃধা। হূরের চোখ পানিতে টলমল করছে। এরিশ বলে

” আচ্ছা দিদুন, ছেলে কে?? দিদুন বলে
” তোর রিনা আন্টির ছেলে, হূরকে অনেক পছন্দ করেছে। হূর কিছু না বলেই খাবারের টেবিল ছেড়ে চলে যায়। তা দেখে হূরের দিদুন বলে
” তেজ দেখছ মেয়ের। তোর ভাগ্য ভালো আমার নানতি তোকে পছন্দ করেছে। হূর কিছু না বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। এরিশ বলে
“তোমার নাতি যে কতটা ভালো তা আমরা সবাই জানি। আর আমি বলেছিনা, ঐ সিফাতের কথা যেন এই বাসায় আর না হয়। হূরের বয়সই বা কত?? সবে ১৯ বছরে পরল ২ দিন আগে।
হূরের দিদুন বলে
” মেয়েদের কুড়ি মানে বুড়ি। আলাইনা বলে।

” দিদুন তুমি এমন কেন?আর কুড়ি মানে তো বিশ? তাহলে তোমাকে বুড়ি বললে রাগো কেন? এইসব বাদ দিয়ে এটা হূর আপ্পি কি তোমার পান চুড়ি করে খেয়েছে নাকি রাতের বেলা যে তুমি চুপিচুপি করে ফ্রিজ থেকে আমার আইসক্রিম গুলো খাও সেটা বলে দিয়েছে সবাইকে? তুমি আপ্পিকে বিয়ে দিতে চাও কেন? আম্মু তো আমাকে বলে কথা না শুনলে বিয়ে দিয়ে দিবে, হূর আপ্পি তো সবার কথাই শুনে। আলাইনার কথা শুনে আলাইনার আম্মু বলে
” আলাইনা, আম্মু রুমে যাও।
এরিশ তার দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আমি এত-শত জানিনা। ঐ সিফাত যদি এই বাসায়
এসেছে তাহলে আমি আর এই বাসায় আসবো না।
বলেই উপরের দিকে পা বাড়ায়। হূরের মা হূরের দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে

” মা যেদিন আপনার ছেলে আমার মেয়েকে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল সেদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন হূরের জন্য যেন আপনার ছেলের সংসার অবহেলা না করি। আর আগে আমাকে সেই বাসায় যেতেও দিতেন না। হূরও আমার মেয়ে আপনার কথা রক্ষার জন্য হূরকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। যদি হূরের জন্য আপনার এতই সমস্যা হয় তাহলে বলে দিতেই পারেন আমি আমার মেয়েকে বলে দিব চলে যেতে। আর এটা ওর নিজের লাইফের ব্যপার সেটা হূরই ভালো জানবে।
আর সাথে সাথে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়, সাথে হূরের কাকিমাও যায়।

হূরের দিদুন বলে
” তা কোথায় যাবে শুনি এই মেয়ে? কে বিয়ে করবে? হূরের বাবা বলে
” হূর আমার মেয়ে, আর আমার মেয়ে আমার বাড়িতেই থাকবে। আর ছেলের অভাব নেই দুনিয়াতে । হূরের কাকাই বলে
” মা তুমি এমন কেন? হূরকে কেন মানতে পারো না?? হূরের দিদুন বলে
” কারো ভালো করতে নাই। তোদের সবাইকে কালা জাদু করেছে ঐ মেয়ে। হূরের বাবা বলে
” মা নিজের চিন্তা ভাবনা পাল্টাও। আর খাবার ছেড়ে উঠে চলে যায়। সাথে হূরের কাকাইও। মৃধা তো বিন্দাস খাচ্ছে।

হূরের রুমে দরজায় এই নিয়ে তিনবার নক করেছে এরিশ। এরিশের কন্ঠ শুনে হূর দরজা খুলে দেয় এরিশ বলে
” ভার্সিটি যাবি না? চল। হূর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে বলে
” আপনিই দিদুনকে বলেছেন না বিয়ের কথা?? আমি কি এমন ক্ষতি করেছি আপনার?? কেন এমনটা করেন? এরিশ বিরক্ত হয়ে বলে
” কানের নিচে দিব। চার লাইন না বুঝলে ভালো লাগে না? আমি দিদুনকে কিছু বলিনি। হূর কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলে
” তাহলে দিদুন এই কথা কেন বলবে?? এরিশ বলে
” আমি কি জানি? আমি কি অন্তর্যামী? বেশি বকবক করবি তোকে বাসায় ফেলে চলে যাবো। তারপর ঐ সিফাত এসে তোকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।
হূর নিজের চোখের পানি মুছে ব্যাগটা নিয়ে চলে আসে। ঐ সিফাতের থেকে ভালো এরিশের সাথে যাওয়া।

এরিশ ড্রাইভার চাচ্চু কে বলে দেয় আজ গাড়ি সে ড্রাইভ করবে। তাই আর সেও কিছু বলে না। হূর চুপচাপ পিছনের সিটে বসতে যাবে তখনই হূরের দিদুন আর মৃধা বাসায় থেকে বেড়িয়ে আসে আর হূরকে উদ্দেশ্য করে হূরের দিদুন বলে
” এই তোকে না আজ ভার্সিটি যেতে বারণ করেছি। এরিশ ভ্রু কুচকে বলে
” আমিও বলেছি সিফাত এই বাসায় আসবে না। হূরের দিদুন হাসি দিয়ে বলে
” আরে না দাদু ভাই এখানে আসবে না। রেস্টুরেন্টে দেখা করবে সাথে মৃধা যাবে। এরিশ কথাটা শুনেই বুঝতে পারে এইসব মৃধার কাজ। এরিশ মৃধার কাছে গিয়ে মৃধার গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে
” ভালো হয়ে যা। বাসায় থেকে বেরহওয়ার ফন্দি না?? বলেছি না তোর বাসার বাইরে পা রাখা বন্ধ। মৃধা কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ আরেকটা চড় বসিয়ে দেয় আর বলে

” ভিতরে যা, নয়তো আরেকটা দিব। মৃধা কেঁদে চলে যায়। এই প্রথম এরিশ তার গায়ে হাত তুললো। হূর দূর থেকে সব দেখে ভয়ে আছে। এরিশ তার দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে
” হূর আমার সাথেই যাবে। পারলে আটকে দেখাও সুইটহার্ট। আসি। আর তোমার নাতিকে মোমবাতি দিয়ে বল তার সাথে বিয়ে করে নিতে ।
বলেই চলে যায় হূরের কাছে। হূরের দিদুন রাগে ফুসতে ফুসতে বাসায় চলে যায় । হূর পিছনের সিটে বসতে যাবে তখনই এরিশ ধমক দিয়ে বলে
” ঐ আমাকে তোর ড্রাইভার মনে হয়? সামনে আয়। হূর কথা বাড়ায় না। হূর মনে মনে বলে
” যেই পরিমানে খেপে আছে। মনে হয় রাতে জিএফ এর সাথে ঝগড়া লেগেছে, নিজে পারেনি ঝগড়ায় তাই এমন করছে হয়তো।
হূর কারে বসতেই খুব জুড়ে কারের ডোরটা লাগায় এরিশ, ভয়ে কেঁপে উঠে হূরের। এরিশ তা দেখে বলে
” এত ভয় পেলে আর কিছু করতে হবে। হূর কিছু না বলে বাইরের দিকে মুখ করে রাখে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে হঠাৎ করেই হূর বলে উঠে

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ৪+৫+৬

” এই এই, আমরা কোথায় যাচ্ছি?? এরিশ সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে
” সামনে একটু কাজ আছে। তারপর হূর বলে
” তাহলে আমাকে এখানেই নামিয়ে দেন আমি একা চলে যাবো। এরিশ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” তোকে কার থেকে নামিয়ে আলাইনার কথা মতো সাইকেল চাপা না গাড়ি চাপা দিয়ে দিব। চুপচাপ বসে থাক। হূর মিনমিন করে বলে
” দজ্জাল এর মতো করে কথায় কথায়। তোমার কপালেও জুটবে একটা দজ্জাল বউ। এরিশ বলে
” এইসব কথা মনে মনে বলতে হয়। আর আমার একটা হূর আছে দজ্জাল বউ জুটবে না । হূর অবাক হয়ে বলে
” কি বললেন? এরিশ বলে
” কি বললাম!! আবার কি?? বললাম আমারও একটা হূর আছে। ওয়েট ওয়েট আবার নিজেকে ভাবিস না। তোর নাম টাই হূর৷ আর ও আমার কাছে সত্যিই হূর। হূর বলে

” আপনার এই ভূগোল শুনার কোনো ইচ্ছে আমার নাই। বুঝতে পেরেছি আপনার জিএফ আছে। এরিশ বলে
” উহুহ। হূর ভ্রু-কুচকে বলে
” তাহলে?? এরিশ বিরক্ত হয়ে বলে
” তোকে কেন বলতে যাবো?? হূর ভেংচি কেটে বলে
” তাহলে অর্ধেক কথা বেলন কেন?? এরিশ একটা হাসি দিয়ে বলে
” Kya karo wo Lady main ho adat se majbor। সাসপেন্স রাখতে ভালো লাগে।
হূর কিছু না বলে নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। এরিশ বলে

” এই ভালো কথা তের বিএফ মানে নীলআদ্রের কি খবর? সে জানে দিদুন তোর বিয়ে ঠিক করেছিল? রুমে গিয়ে ফোন করে কান্না করতে করতে বলিসনি, নীল বেইবি, জান, আমার বাবু তোমার আম্মু উফফস্ সরি সরি তোমার জিএফ মানে আমার বিয়ে ঠিক হয়েগিয়েছে। আমাকে এসে নিয়ে যাও। নয়তো আমি কচু গাছের সাথে গালায় দড়ি দিয়া আত্মহত্যা করব। আর সুইসাইড নোটে তোমার নাম লিখে যাবো।
হূর রেগে বলে
” চুপ করবেন আপনি!! কতবার বলবো আমার বিএফ নেই। এরিশ বলে
” তাহলে বুঝ তুই কেমন তোর বিএফ নাই।

ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১০+১১+১২