অতঃপর প্রেম পর্ব ১৩+১৪+১৫

অতঃপর প্রেম পর্ব ১৩+১৪+১৫
লেখনীতে আয়ানা আরা

আজ এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ভাবী আর ভাইয়ারাও চলে এসেছে বাসায়। আর সেই অজানা ব্যক্তিটাকে এখনো খুজে বের করতে পারি নি।

রোদ শুয়ে শুয়ে মেহেকের ছবি দেখচ্ছিলো তখনই নিশা এসে হাত থেকে ফোনটাকে থাবা দিয়ে নিয়ে নেয়। রোদ লাফ দিয়ে উঠে বলে,’নিশা তুমি এইখানে কি করছো?’
নিশা একবার ফোন আরেকবার রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,’এইটা তো মেহেক কিন্তু ওর ছবি তোমার কাছে কেনো?’
রোদ নিশার থেকে ফোন নিয়ে চেঁচিয়ে বলে,’স্টুপিড তোমাকে কতবার বলেছি আমার জিনিসে হাত দিবা না।’
নিশা অশ্রু ভরা চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে। রোদ আবারো রাগি গলায় বলে,’গেট আউট।’
নিশা আর এক মিনিটও ওইখানে না থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
পরেরদিন-

আজকে মেডিক্যালে এক্সাম তাই আমি তাড়াতাড়ি চলে আসি। এসে দেখি নিশা মুখ কালো করে বসে আছে। আমি ওর কাছে যেয়ে বলি,’কি হয়েছে তোমার?’
ও মুখ ঘুরিয়ে বলে,’কেনো করলে এমনটা?’
আমি অবাক হয়ে বলি,’মানে আমি আবার কি করেছি?’
ও অশ্রু ভরা নয়নে তাকিয়ে বলে,’বুঝেও না বুঝার ভান করো না তোমার আর রোদের মাঝে যে সম্পর্ক আছে সেটা আমি জানি।’
ওর কথায় আমি অনেক অবাক হই। আমি ওকে বলি,’তুমি পাগল হয়েছো?স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক কেনো থাকবে?’
‘মিথ্যা বলবে না আমাকে আমি জানি সব। আমি তো তোমাকে ভালো ফ্রেন্ড ভাবতাম আর তুমি নিজেই আমার পিঠে ছুড়ি মারলে। আই হেট ইউ মেহেকে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই বলে অন্য সিটে বসে পড়লো। ওর কথাগুলো আমাকে ভাবনার মধ্যে ফেলে দিলো যার জন্য আমি ভালো করে পরীক্ষাও দিতে পারিনি। আমি ঠিক করি ছুটির পর রোদ স্যারের সাথে দেখা করবো। যেই বলা সেই কাজ আমি ছুটির পর রোদক স্যারের সাথে দেখা করতে যাই। দেখি সে কারো সাথে কথা বলছে তাই আমি লুকিয়ে পরি। যদিও এটা করা ঠিক না। উনার এমন একটা কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। কারণ তিনি বলছিলেন,’মেহেক কে আমি আমার ভালোবাসার কথা বলবো অনেক তাড়াতাড়ি কৈশিক। ও আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক আই ডোন্ট কেয়ার।’

আমি উনার কথা শুনে পুরোপুরি জমে যাই। তারমানে উনি আমাকে ভালোবাসে?আমি মনে মনে খুশি হই। কিন্তু নিশার কথা ভেবেই খারাপ লাগে। তাই আর এক মিনিটও দাঁড়িয়ে না থেকে আমি ওইখান থেকে চলে আসি। আমি আর কোথাও না যেয়ে সোজা বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে জানতে পারি কালকে ভাবীর বাড়ির লোকজন আসবে। আমি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি অজানা ব্যক্তির মেসেজ।
প্রিয় মেহুপাখি,
অনেক তো লুকোচুরি খেলা হয়েছে কাল নাহয় এই খেলার অন্তিম টানা যাক। আমি এটাও জানি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। যাই হোক কালকে এই ঠিকানায় চলে আসবা।

ইতি
তোমার ভালোবাসা।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এই মানুষ সাদ আনান রোদ!আমি কি করবো নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। আমি কি উনাকে ভালোবাসি আদোও?নিশা তো রোদ স্যারকে অনেক ভালোবাসে।আমি কি করে ওর ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে পারি?
আমি ব্যালকনিতে যেয়ে নিজের প্রথম ভালোবাসার কথা ভাবতে লাগলাম। কিভাবে সে আমাকে ঠকিয়ে চলে গেছিলো।
আমার তখন মাত্র ১৬ বছর ছিলো। বয়সটা আবেগে ভরপুর। আমিও কারো মোহে পরে গিয়েছিলাম। সেটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো সেই সময়। যার জন্য জীবনের একটা বছর ব্যয় হয়েছিলো আমার। শুধু মাত্র তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।

নিশা আজ রোদদের বাড়িতেই থাকবে। ও ওর ফুপির বাসায় প্রায়সময়ই এসে থাকে। ওর ফুপি ওকে বলে,’নিশু রোদকে এই কফিটা দিয়ে আয় ওর তো আবার মেডিক্যাল থেকে আসলে কফি না খেলে চলে না।’
নিশাও লক্ষি মেয়ের মতো কফি নিয়ে রোদের রুমের দিকে পা বাড়ায়। সাথে ভেবেছে ও কিছু কথা বলবে রোদের সাথে। রোদের রুমে এসে কফি টেবিলে রাখতে যায় তখন ওর চোখে কিছু পেপারস পড়ে। ও পেপারস গুলো হাত নিয়ে যা দেখে তাতে অনেক অবাক হয়। এইগুলা তো বিয়ের পেপারস। নিশার চোখে তখনই মেহেকের নামটা পরে। আরো কিছু দেখতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে রোদ এসে পেপারস গুলো নিয়ে নিশাকে ধাক্কা মেরে হুংকার দিয়ে বলে,’তোমাকে বলেছিলাম না আমার জিনিসে হাত না দিতে?’
নিশা বলে,’রোদ এইগুলা কিসের পেপারস? তুমি কোনোভাবে আমাকে ঠকাচ্ছো না তো?’
রোদ বলে,’কখনো ভালোই তো বাসি নি আবার ঠকাবো। যেহেতু জেনেই গেছো সব কিছু তাহলে এটাও জেনে রাখো আমি মেহেককে ভালোবাসি।’

নিশা নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে দৌড়ে নিজের রুমে যেয়ে। গেট লাগিয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো। রোদও নিশার পিছে দৌড়ে গিয়েছে যাতে ও কোনো কিছু করতে না পারে। রোদ যেয়ে দেখে নিশা দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। ও দরজা ধাক্কাতে লাগে। তখন রোদের মা মিসেস রুবা এসে দেখে রোদ দরজা ধাক্কাচ্ছে। সে ব্যস্ত হয়ে রোদকে বলে,’কি হয়েছে এইখানে রোদ?’
রোদ জবাব না দিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে। ছেলেকে এইভাবে অস্থির দেখে খটকা লাগে মিসেস রুবার। সে বলে,’কি হয়েছে কি বলবি তো?’

তখনই নিশা দরজা খুলে। রোদ ঢুকে নিশার দুই বাহু ঝাকিয়ে বলে,’সমস্যা কি তোর?উলটা পালটা কিছু করতে বসিস নি তো?’
নিশা তাচ্ছিল্যর হেসে বলে,’আমি কারো জন্য নিজের জীবন নষ্ট করতে পারবো না।’
তারপর মিসেস রুবার দিকে তাকিয়ে বলে,’ফুপি তোমার ছেলের একটা মেয়েকে পছন্দ তুমি ওর সাথে রোদের বিয়ে দিও।’
‘কি বলছিস তুই এইগুলা নিশু?’

‘জানো না তুমি ফুপি। তোমার ছেলে তো আমাকে বিয়ে করার আগেই একজনকে বিয়ে করে ফেলেছে। বিশ্বাস না রুমে যেয়ে দেখো।’
মিসেস রুবা কোনো কিছু না বলে দৌড়ে রুমে যায়। কিছু পেপারস হাত নিয়ে আসে সাথে।
সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,’এইসব কি রোদ?’
‘আম্মু এইটা একটা এক্সিডেন্ট। হ্যা এটা সত্যি মেহেককে আমি ভালোবাসি কিন্তু…
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি।রোদ সোফায় গম্ভির মুখ করে বসে আছে। আব্বুর হাতে বিয়ের পেপারস। আব্বু আমাকে গম্ভির গলায় বলে,’এইসব কি মেহেক?বিয়ে করেছো তুমি?’
আমি ছলছল চোখে আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলে,’আব্বু শুনো এইটা একটা এক্সিডেন্ট….
রোদ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,’আপনারা আমার কথা শুনুন।’
আব্বু বলেন,’বলো কি বলবা।’

রোদ একে একে ওইদিনের ঘটা সব কিছু বলতে থাকে। সব শুনে সবাই অনেক অবাক হয়ে যায়। আব্বু গম্ভির গলায় বলেন,’এখন এইসব বলে কি হবে?যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। তোমাদের বিয়েও হয়ে গেছে। আর বাহিরে এই খবর যেতে কতক্ষন?তোমার আর মেহেকেরও তো বদনাম হবে।’
মিসেস রুবা বললেন,’আমি একটা কথা বলতে চাই।’
‘হুম বলুন।’

‘আমি মেহেককে আমার ছেলের বউ করে নিতে চাই। তাহলে ওদের দুইজনেরই সম্মান বেঁচে যাবে।’
মিসেস রুবার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। মেহের সাহেব গম্ভির মুখ করে কিছুক্ষন চিন্তা করে বলেন,’ঠিকাছে আমি রাজী।’
তারপর আমার আর রোদের বিয়ে পাকা পক্ক করে চলে যান তারা। বিয়ের ডেট একমাস পর ঠিক করেছেন। পুরোটা সময়ই আমি চুপ ছিলাম। সবাই চলে যেতেই আমি দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। মিসেস মিলা (আম্মু) মেহের সাহেবকে বলেন,’এই বিয়েটা ঠিক করে কোনো ভুল করোনি তো?’

মেহের সাহেব চিন্তিত মুখে বলেন,’কিই বা করবো বলো বাহিরে এই খবর চলে গেলে রোদকে তো আর সমাজ কিছু বলবে না কিন্তু মেহেক কে তো জীবন্ত লাশ বানিয়ে দেবে।’
দুইজনেই একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
পরেরদিন-

আমি মেডিক্যালে যেয়ে ক্লাসে চুপচাপ এক কোণায় বসে আছি। রোদ স্যার ক্লাস নিচ্ছেন আর আড়চোখে আমাকে দেখছেন।
ছুটির পর আমি বাসায় যাওয়ার সময় আমাকে কেউ হেঁচকা টান দিয়ে ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। আমি জানি এটা রোদ স্যার ছাড়া আর কেউ না। তাই নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরি। রোদ স্যার বলেন,’কি শুরু করেছো হুম?কেনো এড়িয়ে যাচ্ছো আমাকে?’
আমি নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলি,’ছাড়ুন আমার হাত। আপনাকে আমি ঘৃণা করি আপনার জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে আর নিশাকেও আপনি ঠকিয়েছেন।’
তিনি আমার হাত ছেড়ে দেওয়ার বদলে আর শক্ত করে চেপে বলেন,’কি বলো আবার কাকে ঠকিয়েছি?’
‘নিশাকে।’

‘নিশাকে আমি কখনো ঠকাইনি।নিশাকে আমি কখনো ভালোইবাসিনি আর ঠকানো তো দূরেই থাক।’
‘ওর মনে এখন কি ঝড় বইছে আপনি কিভাবে বুঝবেন সেটা?’
রোদ স্যার আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলেন,’আচ্ছা ঠিকাছে তোমাকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিলাম নিজের মনের কথা ভেবে দেখো এতো মানুষকে নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না।’
এই বলে তিনি চলে যান। আমি নিজের হাত ধরে ভাবতে লাগলাম। সত্যিই কি আমি উনাকে ভালোবাসি? এইসব ভাবতে ভাবতে যেতে লাগলাম তখনই আমার কানে নিশার আওয়াজ ভেসে আসে। নিশাকে কাউকে বলছে,’ছাড়ো কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।’
আমি ভালো করে দেখি নিশাকে কথাগুলো একটা ছেলেকে বলছে। ছেলেটা বলে,’নিশা বেইবি তোমার ওই ফুপাতো ভাইকে কবে বিয়ে করবা আমাদের উদ্দেশ্য কি ভুলে গিয়েছো?’

‘না ভুলিনি কিন্তু রোদ তো আবার মেহেককে বিয়ে করবে বলেছে।’
‘এখন কি করবা?ওর সম্পত্তি পেলেই আমরা এইখান থেকে চলে যাবো।’
ছেলেটার চেহারা ভালো করে দেখতে পাই নি কিন্তু এখন আমার কাছে সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় যে নিশা লোভে পড়ে রোদকে বিয়ে করছে। আমি ওইখানে আর এক মিনিটও না থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।
বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম নিশা কিভাবে এমনটা করতে পারে। যদি ও অন্য ছেলেকেই ভালোবাসতো তাহলে কেনো এমনটা করলো।

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়। আর আমি বুঝতেও পারছি যে আমি রোদ স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছি। নিজের চাইতেও বেশি। রোদ স্যার আমার ফোনে একটা ঠিকানা মেসেজ করে দিয়ে বলেছে এই ঠিকানায় চলে আসতে। আমিও তার কথামত ওইখানে চলে আসি। কিছুক্ষন পর উনিও চলে এসে বলে,’সো মিসেস মেহেক এইবার বলুন।’
আমি বললাম,’আমি নিজের মনের কথা বুঝতে পেরেছি রোদ।’
‘কি বুঝতে পেরেছেন?আমাকে ভালোবাসেন নাকি ঘৃণা করেন।’
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,’এই এক সপ্তাহে আমি বুঝে গিয়েছি আমি আপনাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসি।’
রোদ স্যার মুচকি হাসলেন।

‘এখন নিশার কথা চিন্তা করছেন না?চ
আমি মাথা নিচু করে বললাম,’না’
‘গুড। আর কালকে রেডি হয়ে থেকেন বিয়ের শপিং এ যাবো।’
‘বিয়ে হতে আরো ২৩ দিন আছে।’
‘আমি এই বিয়ের জন্য অনেক এক্সাইটেড তাই কালকেই শপিং এ যাবো।’
আমি হেসে বললাম,’আচ্ছা ঠিকাছে।’
আমি বাসায় এসে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেয়ে দেখি আম্মু মুচকি মুচকি হাসছে। আমি তার কাছে যেয়ে বলি,’কি হয়েছে হাসছো কেনো?’

ভাবী লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলে। আমি দুইজনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলি,’আরে ভাই বলবা তো কি হয়েছে?’
আম্মু বলে,’আমাদের বাড়িতে নতুন সদস্য আসতে চলেছে।’
আমি খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে হাত তালি দিয়ে বলি,’ইয়েএ মানে আমি ফুপিমা হতে চলেছি।’
ভাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি উনার কাছে যেয়ে বলি,’থাক এতো লজ্জা পেতে হবে না। ভাইয়া জানে?’
ভাবী বলেন,’না।’
‘ওহ আচ্ছা।’
আমি রুমে এসে মোমো কে ফোন করি। মোমো ফোন উঠাতেই বলি,’দোস্ত আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।’
অপর পাশ থেকে মোমোর চিৎকার ভেসে আসে।
‘কিইই সত্যি বলছিস??’

‘হ্যা।’
‘দোস্ত দেখ না তোর কোনো দেবর আছে কিনা আমার সাথে সেটিং করিয়ে দে।’
‘শখ কতো।’
‘দুলাভাইয়ের নাম কি?’
আমি লাজুক হেসে বলি,’রোদ।’
মোমো হাসে। আমি বলি,’তোর দাওয়াত রইলো।’
‘হ্যা তা তো অবশ্যই। কবে থেকে ভেবে রেখেছিলাম তোর বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে খাবো সেই শখ পূরণ হতে চলেছে। আলহামদুল্লিল্লাহ।’
মোমোর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কেটে দিলাম।
দেখতে দেখতে বাকি ২৩ টা দিন কেটে গেলো। আজ রোদ আর আমার গায়ে হলুদ। সারা বাসা তোড়জোড় চলছে। রোথিরাও এসেছে। রোশান ভাইয়াকে সোফায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আমার কিছুটা খটকা লাগে। তার জন্য তার সাথে কথা বলার জন্য একটা স্পেস খুজি।

রোশান ভাইয়া আর আমি মুখমুখি বসে আছি। আমি তাকে বলি,’আপনি মনমরা হয়ে বসে আছেন কেনো?’
রোশান ভাইয়া মলিন হেসে বললেন,’ভালোবাসার মানুষ কাল অন্য কারো হয়ে যাবে তাই।’
আমি একটা ঝটকা খাই।
‘মানে?’
‘একটা কাহিনি শুনবা মেহেক?’
‘বলুন।’

‘একটা ছেলের বয়স যখন বারো কি চৌদ্দ তখন থেকে ছেলেটা তার কাজিনকে বউ বউ বলে সারা বাড়ি ঘুরতো। কাজিনের বয়সও বেশি ছিলো না। এইভাবেই দিন যেতে থাকে ছেলেটার তার কাজিনের উপর এক্সট্রা কেয়ার,ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তারপর ছেলেটার পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এটার জন্যই যে তার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে ভাবতেও পারে নি ছেলেটা। কিন্তু সে চায় তার ভালোবাসার মানুষটা সুখে থাকুক তার ভালোবাসার মানুষের সাথে।’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি স্নান হেসে উঠে চলে যান। আমি উনার যাওয়ার পানে হা করে এখনো তাকিয়ে আছি৷ ভাবছি কাহিনিটা যদি সত্যি হয় তাহলে সেই ছেলেটার মনে এখন কি চলছে। এর মাঝেই আম্মু আমাকে ডেকে নিয়ে চলে যায়।

পার্লারের মহিলারে এসে আমাকে সাজিয়ে চলে গিয়েছে। সবাই ঠিক করেছে রোদ স্যার আর আমার হলুদ একসাথেই হবে।সবাই রেডি হতেই হলুদ স্টেজ যেইখানে করা হয়েছে ওইখানে নিয়ে যায় আমাকে। আমাকে স্টেজে বসানো হয়। কিছুক্ষন পর রোদের পরিবারে সবাই এসে পরে। রোদকে আমার পাশে বসানো হয়। সবাই একে একে আমাদের দুইজনকে হলুদ লাগাচ্ছে। তার মাঝেই আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে। আমি মেসেজ ওপেন করে দেখি নিশার মেসেজ। সে লিখেছে
অভিনন্দন মেহেক,

অনেক খুশিই তো আছো দেখছি রোদকে নিয়ে। আমিও কিন্তু এসেছি। আমি তোমার জন্য সেন্টারে যেই ছাদ আছে সেইখানে আসো তোমার জন্য গিফট এনেছি। ওয়েটিং ফর ইউ…
নিশার মেসেজ দেখে আমার মনে কিছুটা খটকা লাগে। যদি আসতেই হতো তাহলে সবার সামনে আসতো। কিন্তু আমার যেতে হবে। তাই আমি আসতে করে সবার আড়ালে সেন্টারের ছাদে চলে আসলাম। ছাদে এসে দেখি নিশা খুশি মনে দাঁড়িয়ে আছে তাও আবার ছাদের শেষ প্রান্তে। আমি ওর কাছে যেয়ে বলি,’কি করছো তুমি নিশা। পরে যাবে তো!’

নিশা একটা রহস্যময় হাসি দেয়। যে হাসির মানে আমি বুঝতে পারি না। আমি কিছুক্ষনের জন্য ভুলে যাই ও লোভি। আমি ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই। এটাই যে আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে ভাবতেও পারিনি। নিশা আমার টান দিয়ে ছাদের শেষ প্রান্তে নিয়ে আসে। ছাদে কোনো রেলিং না থাকার কারণে আমার অর্ধেক পা বাহিরে আর অর্ধেক পা ভিতরে। ও ছেড়ে দিলেই আমি পরে যাবো ছাদ থেকে। নিশা বলে,’হাহ কি ভেবেছিলে আমি রোদকে আর তোমাকে সুখে থাকতে দিবো। তুমি মরলেই আমার পথের কাটা সরে যাবে।’
আমি করুণ কন্ঠে বললাম,’এমন করো না নিশা। তুমি না আমার ফ্রেন্ড?’

নিশা গর্জে বলে উঠে,’কিসের ফ্রেন্ড?এই ফ্রেন্ড মানি না আমি।’
হঠাৎই আমার চোখ নিশার পিছনে থাকা লোকটার দিকে যায়। লোকটাকে দেখে আমি জমে যাই। এই লোকটা এইখানে কেনো?কারণ এই লোকটা আর কেউ না আমার প্রাক্তন!ও এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’নিশা বেইবি ছেড়ে দেও ওর হাত।’
আমি বলি,’কুশ তুমি? তুমি এইখানে কেনো?তারমানে তুমি যার জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে সেই নিশা।’
কুশ বাকা হাসি দিয়ে বলে,’ইয়েস।’

আমি আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই কুশ চোখের ইশারায় নিশাকে আমার হাত ছেড়ে দিতে বলে। নিশাও আমার হাত ছেড়ে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠি।
আমার চিৎকার শুনে সবাই ছাদে এসে পরে। রোদ ছাদে এসে দেখে নিশা দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাসছে। রোদ দৌড়ে যেয়ে দেখে মেহেকের রক্তে মাখা দেহ পরে আছে মাটিতে। মেহেদীও দৌড়ে এসে দেখে তার আদরের বোনের রক্তে মাখা দেহ। সে যেয়ে নিশাকে সাজোরে থাপ্পড় মারে।তারপর কুশের কলার চেপে চিৎকার করে বলে,’সাহস কি করে হয় তোদের। তোদের দুইজনকে জেলের ভাত না খাওয়ালে আমার নামও মেহেদী না।’
নিশার মা বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বা বলবে তাদের মেয়ের যে এটা থেকেও বড় কিছু প্রাপ্য। রোদ দৌড়ে নিচে চলে যায়। নিচে যেয়ে মেহেকের রক্তাক্ত দেহ তুলে নেয়।

অতঃপর প্রেম পর্ব ১০+১১+১২

সবাই একসাথে ওটির সামনে বসে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। রোদ চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষন আগেই নিশা আর কুশ পালিয়ে গেছে। এখন বাড়ির মেয়ের চিন্তা করবে নাকি অপরাধীকে খুজে বের করবে ভেবে পাচ্ছে না মেহের সাহেব তাই সে পুলিশ লাগিয়েছে ওদের পিছনে। কিছুক্ষন পর ডক্টর চিন্তা মাখা মুখ করে বেরিয়ে বলে,’বাঁচার চান্স খুবই কম কিন্তু…
উনার কথাটা বলতে দেরী কিন্তু রোদের গর্জে উঠতে দেরী নেই।
‘হাউ ডেয়ার ইউ। সাহস কি করে হয় আপনার এটা বলার ওর বাঁচার সম্ভবনা খুব কম।’
‘ আমার পুরা কথা শুনুন আগে।’

মেহেদী উঠে তাড়াতাড়ি রোদকে ধরে। ওকে শান্ত করে। ডক্টর বলেন,’দেখুন আমাদের সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। আল্লাহ কে ডাকুন এইসব চিন্তায় ভুলে যাবেন না জন্ম মৃত্যু সব কিছুই সৃষ্টি কর্তার হাতে।’
মেহেদী বলে,’আপনি কি জানি বলতে চাচ্ছিলেন ডক্টর?’
‘হুম বলছি,পেশেন্টের যদি আগামী বারো ঘন্টায় জ্ঞান না ফিরে তাহলে সে কোমায় চলে যেতে পারে।’
আশার আলো জেগেছিলো তাদের মনে তাও নিভে গেলো। চারদিকেই অন্ধকার। রোদ কিছু না বলে চুপচাপ উঠে মসজিদে চলে যায় এশার নামাজ পড়তে। এশার জামাত শেষ কিন্তু তাও রোদের উঠার নাম নেই। কিছু কিছু মানুষ তো বলাবলি করছে লোকটা পাগল কিনা তবুও রোদের ভিতর কোনো হেলদোল নেই। এটাই হয়তো ভালোবাসা…..

অতঃপর প্রেম শেষ পর্ব