অদ্ভুত প্রেমানুভূতি পর্ব ৪ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

অদ্ভুত প্রেমানুভূতি পর্ব ৪
Suraiya Aayat

আসাদ আর আরূশির দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে….
অন্য সময় হলে আরূশি হয়তো জিনস আর শার্ট পড়ে অফিসে যেত কিন্তু সদ্য বিবাহিত হওয়ার কারণে জিন্স আর শার্ট পরে নি, শাড়িই পরেছে….
ওরা দুজনে রেডি হয়ে টেবিলে খেতে বসলে আসাদের মা আরুশিকে জিজ্ঞাসা করল….
__মামনি তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
__আরূশী মুচকি হেসে: আমিতো অফিসে যাচ্ছি মামনি৷
__সেকিরে! নতুন বউ অফিসে যাচ্ছিস এটা কিন্তু ঠিক না , বড্ড বেমানান…

এই দুই দিনের মধ্যে আরোশী আসাদের মা আর ওর বাবার সাথে বেশ ভালোই ভাব জমিয়ে নিয়েছে, এখন ওর সঙ্গে আসাদের মায়ের সম্পর্কটাও এমন হয়ে গেছে যে আরোশী কি করতে যাবে সেটা সামান্য ইশারাতেই আসাদের মা বুঝতে পারে….
আরোশী একবার আসাদের দিকে তাকাল, আসাদ মন দিয়ে ব্রেকফাস্ট করছে আর এমন একটা ভাব করছে যেন ওরা কি কথা বলছে ওর কোন কিছুই কানে যাচ্ছেনা ৷ ও যেন অন্য একটা জগত এর মধ্যে আছে…

__আমি না গেলে অফিসের মালিক কে সামলাবে কে শুনি?
আসাদের মায়ের দিকে চোখ মেরে….
আসাদের মায়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আরুশি কি বুঝাতে চাইছে, তাই উনি ও আরুশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো,,,,
তাইতো আমিতো ভুলেই গেছিলাম তোকে তো অফিসের সাথে অফিসের মালিককেও সামলাতে হবে৷
আসাদ এই মুহূর্তে প্রচণ্ড রেগে গেল ওদের কথোপকথন শুনে ৷ ও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারছে যে এই দুদিনের মধ্যে আরোশি ওর মায়ের সঙ্গে প্রচণ্ড ভাব জমিয়ে ফেলেছে , এখন দুজনে প্ল্যান করে সমস্ত কিছু করছে….
__আমার খাওয়া হয়ে গেছে বলে ব্লেজার হাতে নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল….
__ তুই না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন? কিছুই তো খেলিনা, আরুশিকে নিয়ে যা দুজন তো একই জায়গায় যাচ্ছিস ৷
__ আমার গাড়িতে ওর জন্য কোন জায়গা নেই বলে বেরিয়ে গেল…
আরুশি ও খাবার ছেড়ে উঠে পরল…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__ আমি যাই মামনি বলে আসাদের পিছনে ছুটল….
আসাদ গাড়ি রিস্টার্ট দিতে যাবে তখনই আরুশি গাড়ির দরজা খুলে আসাদের পাশে বসে গেল…..
__ এই তুমি আমার গাড়িতে আসলে কেন, নামো গাড়ি থেকে….
__আমি নামবো না আপনার কোন সমস্যা?
__এই তুমি নামক মেয়েটা আমার যত সমস্যা, নামো৷
__ আমি নামবো না , আপনি দেখি আমাকে কি করে নামান গাড়ি থেকে ৷ নামাতে হলে আমাকে কোলে করে নামান,তখন আমি আপনার গলা জড়িয়ে আপনার ঠোঁটে ছোট্ট করে একটা কিস দিয়ে দেবো তখন দেখবেন কেমন লাগে !
__অসভ্য মেয়ে একটা ৷ বলে আসাদ আর কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো কারণ ও জানে আরোশী সেটা বলেছে মানে ওটা করেই ছাড়বে ৷ আর কিছু হোক না হোক আরুশিকে সে কিছুতেই নিজের কাছে আসতে দেবে না ৷
আরুশি মুচকি মুচকি হাসলো…..

অফিসে ঢুকতেই আসাদ ওর রুমে গেল, গিয়ে দেখল ওর চেয়ারের পাশে আর একটা চেয়ার রাখা….
অফিসের একটা স্টাফকে ডেকে আসাদ জিজ্ঞাসা করল-
এখানে দুটো চেয়ার কেন? আমার তো কখনো দুটো চেয়ার এর প্রয়োজন হয়নি তাহলে এসব কেন?
আরোশী কেবিন এর মধ্যে: ঢুকে প্রয়োজন হয়নি তবে এখন থেকে প্রয়োজন হবে কারণ আমি এখন থেকে আপনার পাশে বসে কাজ করব ৷
কিন্তু আমি তোমার সাথে কাজ করব না , এই আপনি এক্ষুনি চেয়ারটা এখান থেকে নিয়ে যান তো ৷
না আপনি কোথাও নিয়ে যাবেন না, এটা এখানেই থাকবে আর আমি এখানে বসবো বলে অফিসের লোকটাকে রূম থেকে বার করে দিল ৷
সব সময় আমার মজা ভালো লাগেনা, আমি আর তুমি কোনদিনও একই রুমে একই সাথে বসবো না৷
এখানে তুমি থাকবে না হয় আমি ৷
তাহলে কোম্পানির ডিলে শুধু আপনারই নাম থাকবে আমার নয়, এবার আপনি বলুন আপনি কি করবেন?
আসাদ কিছু বলল না কারণ এগ্রিমেন্ট সেভাবেই করা যে আরুশি চাইলেই কোম্পানি কে আলাদা করে নিতে পারে তাই বাধ্য হয়ে আসাদ আরুশির পাসেই বসলো….

আসাদ এখান কাজ করছে কিন্তু আরূশি ওর পাশে বসে কাজ করছে ৷ কাজে অত্যন্ত মনোযোগ তার ৷ তাহলেও এই মুহূর্তে ওর খুবই বিরক্তি লাগছে কাজ করতে তাই মুডটাকে ভালো করার জন্য ঠিক করল যে আসাদকে জ্বালাবে ৷ যেই ভাবা সেই কাজ……
আরোশী হুট করে চেয়ার থেকে নেমে আসাদের কোলে গিয়ে বসে পরলো….
এই মেয়ে তুমি আমার কোলে উঠে যাও কেন বারবার, নামো ৷
না আমি আপনার কোল থেকে নামব না, আপনি আমাকে একটা কিস দেবেন তার পর নামব ৷
একটা থাপ্পড় দিয়ে সব কটা দাঁত ফেলে দেবো, নামো বলছি ৷ না হলে কিন্তু আমি ফেলে দেবো ৷
আমি জানি আপনি আমাকে ফেলবেন না তাই আমাকে এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, তাড়াতাড়ি যা বলেছি তা করুন তো, আমার আবার বেশি অপেক্ষা করতে ভালো লাগেনা ৷
শেষবারের মত জিজ্ঞাসা করছি তুমি কোল থেকে নামবে কি?
না আমি নামব না ৷

আরূশি কোনোভাবেই নামছে না দেখে অসাদ আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ফেলে দিল…
অনেক উপর থেকে ফেলে দেওয়ার কারনে আরুশির বেশ ভালোই লেগেছে আর তার ওপরে রয়েছে কালকের পড়ে যাওয়াই সেই ব্যথা ৷ সবকিছু মিলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা পর্যন্ত পাচ্ছে না ৷
নিজের কষ্টটাকে চেপে রাখতে না পেরে চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল , তবে আসাদের দেখার আগেই মুছে ফেলল , কোন মুহূর্তে নিজেকে অন্যের সামনে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না এতে ওর জেতার আবশ্যিকতা সেটাও কমে যায় ৷ এটা ও বেশ ভালোই জানে…
আসাদ ভেবেছিল আরুশিকে আসতে করে কোল থেকে নামিয়ে দিবে কিন্তু এতো জোরে যে আরুশি পড়ে যাবে সেটা ভাবি নি ৷ তবে আরুশির লাইফটা হেল করার জন্য ওর প্রয়াস সফল….
আরুশি অনেক কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালো…..

আরূশি ভেবেছিলো ফেলে দেওয়ার পর হয়তো আসাদ ওকে ধরে তুলবে কিন্তু তাও করেনি, অবশ্য ওর কাছ থেকে এসমস্ত আশা করাই বেকার…..
আরুশি নিশ্চুপ ভাবে কাজ করছে আর আসাদের পাশে বসে আছে ৷ এদিকে ব্যথাটাও আরও বেড়ে চলেছে আর হয়তো পাচ্ছে না নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল করে রাখতে ৷ এক্ষুনি হয়তো কেঁদে ফেলবে, সেই জন্য আসাদকে কিছু না বলো ওর পাশ থেকে উঠে গেল বেরিয়ে গেল অফিস থেকে……
আরোশী হঠাৎ করে কিছু না বলে উঠে যাওয়ায় আসাদ অবাক হলো কিন্তু ওর কোনো যায় আসে না..
বিকেল চারটে রেস্টুরেন্টের জ্বর নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আরুশি , আর ওর সামনে বসে আছে সাদাফ…..
সাদাফ: তোর কি খুব শরীর খারাপ লাগছে? আর বেশ অনেকক্ষণ ধরে দেখছি মাথা নিচু করে বসে আছিস , কফি ছাড়া কিছু খেলিনা , আমাকে বল কি সমস্যা..

আরুশি মাথা দুলিয়ে বলল: না কোন সমস্যা নয় এমনি ভাল লাগছে না…
সাদাফ আরুশির হাতে হাত রাখতেই….
আমার থেকেও আজকাল সব কিছু লুকাচ্ছিস এটা তোর কাছ থেকে আশা করিনি ৷
তুই রাগ করছিস কেন? আসলে কোমরে খুব ব্যথা সেই জন্যই ৷
কি করে হলো কোমরে ব্যথা ? কালকে তো তুই ভালোই ছিলি ৷
কালকে ভালো ছিলাম না, কালকেও ব্যথা ছিল তবে সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় টা চালিয়ে গিয়েছিলাম ৷
ব্যাথাটা কমে ছিল তবে আজকে আবার বেড়ে গেল কেন? ওষুধ বা পেইনকিলার নিসনি?
নিয়েছিলাম বাট আজকে অফিসে উনার কলে বষাতে উনি আমাকে কল থেকে ফেলে দিয়েছেন খুব জোরে তাই ব্যথাটা যেন আরো বেড়ে গেছে….

তুই ওই লোকটার জন্য আর কত কিছু করবি কেন বলতে? তুই আমার কাছে কেন চলে আসিস না কেন?
আরুশি অবাক হলো সাদাফ এর কথা শুনে তারপর বলল : তোর কাছে ফিরে আসবে মানে ঠিক বুঝলাম না!
সাদাফের মনে পড়ে গেল যে ও তো এখন আরুশিকে ওর ভালবাসার কথা জানায় নি তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল : আমি বলতে চাইছি যে তুই ওনাকে ছেড়ে তো চলে আসতে পারিস আঙ্কেলের কাছে৷
না কখনোই না, ছ’মাস চ্যালেঞ্জ ৷আমার কাছে অনেক সময় আছে ৷ উনাকে আমি পাল্টাবো, আর এই ছয় মাসে তবে আমি বাপির কাছে ফিরে যাবো….
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আয় তুই , আমি চাইনা তূই ওনার কাছে বেশি দিন থাকিস , না জানি কখন তোর কী ক্ষতি করে দেয়….

অদ্ভুত প্রেমানুভূতি পর্ব ৩

ওরা দুজন কথা বলছে, আরোশী সাদাফ এর সামনে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে ঠিকই কিন্তু গা টা বেশ গরম গরম হয়ে আসছে, জ্বর জ্বর লাগছে৷
বেশিক্ষণ যে ওর পক্ষে বসে থাকা সম্ভব হবে না সেটা ও ভালই বুঝতে পারছে……
আমার না আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না, অনেকক্ষণই হল আমি না এখন উঠি ৷
আচ্ছা শোন আমি তোকে ড্রপ করে দিচ্ছি৷
তার ঠিক দরকার হবে না, তুই বাড়ি চলে যা ৷
একটাও বেশি কথা নয় , আমি তোকে দিয়ে আসব এটাই ফাইনাল ৷
আরোশী আর না করতে পারল না কারন না বললে সাদাফ খুব রাগ করবে সেটা ও খুব ভাল করেই জানে তাই ও বলল আচ্ছা চল
কিছুদূর হেঁটে যেতেই আরূশির মাথাটা ঘুরে গেল, তবে পড়ে যাওয়ার আগেই শাদাফ ধরে ফেলল, কিন্তু ততক্ষণে আরোশী জ্ঞান হারিয়েছে….

সন্ধে সাড়ে ছটা,,,,,
আসাদের বাড়ির ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছে সবাই, সবার মুখে চিন্তা শুধুমাত্র আসাদ ছাড়া ৷
মেয়েটা যে কোথায় গেল জানিনা, তার ওপরে সকালে কিছু খাইনি,দুপুরে লাঞ্চ করেছে কি তাও জানিনা৷
মেয়েটা দুপুরে লাঞ্চ করেছে?
আমি কি করে জানব লাঞ্চ করেছে কি করেনি?
বাহ ভালো উত্তর দিলি নিজের বউ নিজেই জানিস না তুই কি আমার স্বামী!
আর কিছু বলতে যাবে তখনি দরজায় বেল বেজে উঠল ৷

অদ্ভুত প্রেমানুভূতি পর্ব ৫