অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ১২

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ১২
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

ঘরের বাতি নেভানো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নির্জীবতা গ্রাস করে রেখেছে পুরো ঘর। ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ। বুকের ভেতর ত্রাসের খেলা। মুঠোফোন নামক যন্ত্রটি ডান হাতের মুঠোয় চেপে আছে তরী। আবারও তীব্র শব্দ হলো। তরী রুদ্ধশ্বাসে কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলো। কানে চেপে ধরতেই নিস্তব্ধতাকে জয়ী করে মাহমুদও নিরব রইলো। তরীর বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো বিন্দু বিন্দু ভালোলাগার শ্বাস। ক্ষণকাল পর নিরবতা ভাঙলো মাহমুদ। তার চিরাচরিত শান্ত স্বরেও ব্যাকুলতা প্রকাশ পেলো।

-“আসছেন না কেন, তরী?”
তরী ঘোরের মাঝে আটকে গেল। বুক ভার করা অনুভূতি হলো তার। হঠাৎই মন বিষিয়ে উঠলো। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তার যাওয়া উচিত ছিল। মানুষটিকে এভাবে অপেক্ষা করানো তার মোটেই উচিত হয়নি। তরতর করে কেমন বয়সের ঘর এক এক করে কমতে লাগলো। বুঝদার এক যুবতী হয়ে উঠলো ঘন আবেগের পসরা সাজানো কিশোরী। আবেশে নিভে এলো চোখের পাতা। চিকন ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে রিনিঝিনি স্বর বের হলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“আমি এক্ষুণি আসছি।”
তরীর মত পাল্টে গেল। ঘুমোতে যাওয়া বাদ দিয়ে মন ছাদের দিকে টা*ন*লো। ধীর পায়ে দরজায় পা বাড়ালো। সাবধানে দরজা খুলে বাইরে দিয়ে চাপিয়ে রাখলো। ফোনের আলো না জ্বালিয়ে অন্ধকারে পা বাড়িয়ে সিঁড়ির হাতল চেপে এক একটি সিঁড়ির ধাপ পার করে ছাদে পা রাখলো। কিছুর সাথে সজোরে ধাক্কা লাগতেই মৃদু চিৎকারে দু-কদম সিটকে পড়লো তরী। ছোট্ট প্রাণটি হাতে চলে এলো যেন।
তড়িৎ তরীর হাত চেপে ধরলো মাহমুদ। তাকে শান্ত করতে বলল,

-“আমি তরী, ভয় পাবেন না।”
বুকে হাত চেপে ঘন ঘন শ্বাস নিলো তরী। মাহমুদের স্বর শুনে কিছুটা শান্ত হলো। অন্ধকার হাতড়ে মাহমুদের সাথে ধাক্কা লাগলো তার। নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু চেঁচিয়ে বলল,
-“এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আপনি? এক্ষুণি ভয়ে জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রায়!”
অন্ধকারে তরীর রণচণ্ডী রূপ ঠাওর করা যাচ্ছে না। তবে কন্ঠের তেজ স্পষ্ট শ্রবণ করে হাসলো মাহমুদ। শব্দ হলো খুবই সামান্য। তরী আরেকটু রাগ দেখিয়ে বলল,

-“হাসছেন আপনি?”
মাহমুদ কথা না বলে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে তরীর মুখে ধরলো। চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকারে আলো পড়তেই চোখের পাতা নিভে গেল। মাহমুদ স্বাভাবিক ব্যাপারটিতেও মুগ্ধতা খুঁজে পেল। মুখটিতে স্নিগ্ধতায় ভরপুর, কতশত মায়া। দিন দিন তার দুর্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকের খাঁচায় বন্দি করে রাখতে। তবে সে তরীকে সময় দিতে চায়। তরী আলোর বিপরীতে চোখ পিটপিট করে তাকালো। রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গাল দুটো ফুলে উঠলো। গমগমে স্বরে বলল,

-“চোখে আলো ধরে রেখেছেন কেন?”
মাহমুদ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। তরীর প্রশ্নের জবাব দিলোনা। অনিমিখ চেয়ে থেকে আবদার করলো,
-“আরেকটু রা*গ করুন না, তরী!
আপনার তেজী রূপটাও যে ভীষণ ভালোলাগে।”
দূর থেকে হিমশীতল করা বাতাস শরীর ছুঁয়ে দিলো। তরীর চোখেমুখে লজ্জার জোয়ার নামলো। মুখ লুকানোর বৃথা চেষ্টায় কিছু সময় পার করলো। মাহমুদ আলো ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাক করতেই তরী সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এখন আর চোখে আলো লাগছেনা।

-“আপনি আমাদের সাথে বিয়েতে যাবেন, তরী?
চলুন না, একসাথে যাই! আপনাকে ছাড়া ভালোলাগবে না আমার।”
মাহমুদের চোখজোড়া শান্ত অথচ তরী কোথাও একটা ব্যাকুলতা টের পেলো। তার বুকের ভেতরটা ছটফটিয়ে ডানা ঝাপটালো। মলিন স্বরে জবাব দিলো,
-“বাবা যাওয়ার অনুমতি দেবেন না।”
মাহমুদ তরীর স্বীকারোক্তি চাইলো। শান্ত, দৃঢ় কন্ঠে শুধালো,

-“আপনি যেতে চান কি-না বলুন! আঙ্কেলকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।”
তরী মাথা নিচু করে সম্মতি জানালো। মাহমুদ প্রলম্বিত শ্বাস ছাড়লো। মেয়েটাকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা আজকাল। এই নিকষকৃষ্ণ অন্ধকারের বুকে তরীকে তার এক টুকরো চাঁদ মনে হয়। যে নরম আলো ছড়ইয়ে তার হৃদয় আলোকিত করে। মাহমুদ মৃদু আলোয় চোখজুড়ালো। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটাকে সবরকম ভাবেই চমৎকার লাগে, ভয়*ঙ্কর সুন্দর লাগে। তরী জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে উসখুস করছে। দ্বিধা নিয়ে বলল,

-“আমি আসছি।”
-“আরেকটু থাকুন না, তরী।”
মাহমুদের নিঃসংকোচ আবদার বরাবরের মতো আজও ফেলতে পারলোনা তরী। দ্বিরুক্তি না করে দাঁড়িয়ে রইলো। ক্রমশ তার অস্থিরতা বাড়লো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাত গভীর হচ্ছে। অথচ মাহমুদের হেলদোল নেই। পারলে সে সময়টাকেই থামিয়ে দিতো।
তরী করুণ সুরে বলল,

-“রাত অনেক হয়েছে। এবার যাওয়া উচিত। বাবা মা জেগে গেলে সমস্যা হবে।”
-“এত পালাই পালাই করেন কেন, তরী? ঠিক আছে চলুন।”
তরী সামনে হাঁটলো। মাহমুদ তার পিছুপিছু কাছ ঘেঁষে হাঁটতেই জমে গেল সে। চোয়াল শক্ত করে বাকি সিঁড়ি পার করলো। আরেকটু কাছাকাছি থাকলেই সে ঢলে পড়বে।

শুক্রবার, শনিবার দুদিন সরকারি বন্ধ পেয়ে বড়ো ভাইয়া আর ভাবি চলে এলেন। আয়েশা সুলতানা বিকেলে সময় করে বিল্ডিং এর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ইরাকে। সন্ধ্যার পর আসলেন তরীদের বাসায়। দরজায় বেল দিতেই তরী এসে দরজা খুললো। সকালেই ইরার সাথে দেখা করে এসেছে সে। তরী মিষ্টি হেসে বলল,
-“ভেতরে আসুন।”

আয়েশা সুলতানা ইরাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। বৈঠকখানায় তরীর বাবা বসে আছেন। ইরা সালাম দিল। বাবা গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দিয়ে উঠে পড়লেন। ভাবলেন মেয়েমানুষের আলাপ-আলোচনায় থেকে তিনি কী করবেন? উল্টো নতুন মেয়েটার হয়তো অস্বস্তি হবে।
ইরার একটুও অস্বস্তি হলোনা। বরং চমৎকার হেসে বলল,

-“আঙ্কেল কোথায় যাচ্ছেন? সবাই মিলে গল্প করি, বসুন।”
মেয়েটি যেন আদেশ দিল উনাকে। তরীর বাবা গম্ভীর, একগুঁয়ে ধাঁচের মানুষটি থতমত খেলেন। তবে চেহারায় তা প্রকাশ না করেই সোফার একপাশে বসে পড়লেন। ইরা মিটিমিটি হাসলো। সে বেশ বুঝতে পেরেছে উনি খানিকটা ভড়কে গিয়েছেন। তরী মায়ের সাথে চা-নাশতার ব্যবস্থা করে পাশে এসে বসলো। ইরা নিজ থেকেই কথা তুললো। তরীর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-“আঙ্কেল একটা আবদার করবো। বলুন রাখবেন?”
তরীর বাবা আশ্চর্য হচ্ছেন। মেয়েটা একের পর এক চমকে দিচ্ছে উনাকে। ঠিকঠাক পরিচয় হয়নি। অথচ অনায়াসে আবদার করছে। তরীটা যে ঠিক বিপরীত। খুব তাড়াতাড়ি কারো সাথে মিশতে পারেনা। তাই ভেবেছিলেন এই মেয়েটাও তেমনই হবে। কিন্তু তিনি ভুল। নিজের গম্ভীরভাব কিছুতেই ধরে রাখতে পারলেন না। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

-“বলো।”
-“আমার বোনের বিয়ে কিছুদিনের মধ্যে। আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। কিন্তু তরী আর মিঠু মায়েদের সাথে হলুদের আগেই চলে যাবে।”
-“সম্ভব নয়। মিঠু, তরী দুজনেরই পড়াশোনা আছে। তরী এবার লাস্ট সেমিস্টারের ছাত্রী।”
ইরা মলিন কন্ঠে বলল,
-“দুদিনে এমন কিছু হবেনা, দিন না আঙ্কেল! ওরা দুজন সেদিন অল্পকিছু মুহূর্তেই আমাকে বোন বানিয়ে এসেছে। এখন আমি কিভাবে ভাই-বোন রেখে অন্য বোনের বিয়েতে যাই? আমার তো বাবা নেই। আপনি অন্তত বাবা হয়ে আমার আবদারটি রাখুন!”

বাবা নেই শুনে তরীর বাবা কিছুটা নরম হলেন। বললেন,
-“আচ্ছা যখন যাবে, তখন দেখবে।”
-“এটা কি আবদার রাখা হলো? আপনি আবদার রাখলেনও না আবার ছুঁ*ড়েও ফেললেন না।”
অগত্যা মত দিতে হলো বাবাকে। রাশভারি গলায় বললেন,
-“ঠিক আছে যাবে।”

ইরার ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠলো। আয়েশা সুলতানা মনে মনে হাসলেন। মাহমুদের বাবাও ছিলেন এমন কাঠখোট্টা স্বভাবের। ঠিক এমনভাবে অল্প অল্প করে শশুরের মনেও জায়গা করে নিলো মেয়েটা। রামি নাচতে নাচতে মিঠুকে বলল,
-“জামাকাপড় এখন থেকে গুছিয়ে নে। সাথে কয়েকটা পলিথিন বাড়িয়ে নিস। তোর তো খাবার টোকানোর অভ্যাস আছে। সমস্যা নেই আমি আছি তো। সবাইকে বুঝিয়ে বলবো ছেলেটা হাবাত। বছরে একবারও ভালো খাবারের দেখা পায়না।”
মিঠু অগ্নি চোখে তাকিয়ে ভস্ম করে দিলো রামিকে।

-“তুই হাবাত, তোর বংশে যে কয়টা বেঁচে আছে সবগুলো হাবাতের দল। পলিথিন তোর লাগবে, মিঠুর নয়। মিঠু হলো জমিদারের বংশধর।”
রামি দু*হাত আঁজলা করে মুখ উগড়ে বমি করার ভান করে মিঠুর দিকে ছুঁড়ে মা*র*লো।
-“তোর জমিদারিতে বমি করি আমি।”

মিঠুর সকাল থেকেই সর্দি লেগেছিল। হাতের টিস্যু দিয়ে নাক মুছে রামির শরীরে ছুঁ*ড়ে বলল,
-“তোর মতো হাবাত কী চিনবে জমিদারির? তোরা চিনিস ভাত, সবগুলো ফ*কি*ন্নি*র জাত।”
অরু কোমরে হাত দিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো দুজনের ঝগড়া। একটু পরই গলায় গলায় ভাব হয়ে যাবে। বড়দের মতো দুজনকে ধমকে উঠলো অরু,

-“ঝগড়া বন্ধ করো। পি*টি*য়ে একেবারে চামড়া তুলে ফেলবো দুজনের।”
রামি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো অরুকে। বিদ্রুপ হেসে বলল,
-“চুনোপুঁটি আমাদের শাসন করতে এসেছে। যা ভাগ এখান থেকে।”
অরু নিজের অপমান বরদাস্ত করতে পারলোনা। বিছানার ঝাড়ু হাতে নিয়ে তাড়া করলো রামিকে। দুজনে মিলে চক্কর কা*ট*লো পুরো রুম। রামিকে হেনস্তা হতে দেখে পায়ে পা তুলে আরাম করে বসলো মিঠু। বসে বসে অরুকে ডিরেকশন দিচ্ছে রামিকে কিভাবে কিভাবে আক্র*মণ করলে ভালো হয়।

অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে সূর্য উঠলো পূব আকাশে। সকালের মিঠা রোদ বেলা বাড়ার সাথে সাথে উত্তাপ ছড়ালো। তরী ক্লাসের জন্য বের হলো। মাহমুদ নিচেই দাঁড়িয়ে আছে। ইদানীং তরী না নেমে আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর একসাথে যায়। তরী প্রথম প্রথম মাহমুদের সাথে যেতে না চাইলেও এখন তার আবদার ফেলতে পারেনা। ধারালো চোখ দুটো তাকে সম্মোহিত করে ফেলে। চুম্বকের মতো আকর্ষিত হয়। তরী এসে পড়তেই সিএনজি নিলো মাহমুদ। সিএনজিতে ঠিকঠাক উঠে বসতেই তরীর বাবা এসে পড়লেন। তিনিও সামনের দিকেই যাবেন। ইমার্জেন্সি কল পেয়ে বাসা থেকে বের হলেন। মাহমুদ উনাকে পেছনে বসতে বলে সামনে ড্রাইভারের সাথে চলে গেল।
তরীর বাবা মাহমুদের সাথে আলাপ জুড়ে দিয়ে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-“বিয়ের অনুষ্ঠানে তুমিও যাচ্ছো?”
মাহমুদ ভদ্রছেলের মতো গলার স্বর নিচু রেখেই জবাব দিলো,
-“জি আঙ্কেল। মা আর রামিকে এখান থেকে আমিই নিয়ে যাবো।”
তরীর বাবা বললেন,
-“তোমাদের সাথে তরী আর মিঠুও যাচ্ছে। ওদের খেয়াল রেখো। বিশেষ করে মিঠুর খেয়াল রাখবে। কখন কী ঘটিয়ে বসে। মনে বাঁদরামি ছাড়া আর কিছুই নেই ছেলেটার।”
মাহমুদ উনাকে আশ্বস্ত করে বলল,

-“চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি সামলে নেবো।”
তরীর বাবা গন্তব্য আসতেই নেমে গেলেন। মাহমুদ ফের পেছনে গিয়ে বসলো। আলতো হেসে তরীর ডান হাত মুঠোয় নিলো। চোখে চোখ রেখে গভীর স্বরে বলল,
-“দেখলেন তো তরী! আপনার বাবা কেমন করে আমায় দুদিনের জন্য আপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। এরপর সারাজীবনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ১১

তরী তাদের হাতের দৃঢ় বন্ধনে তাকালো৷ চোখ বুজে রইলো খানিকটা সময়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলল “আপনি যে আমার মন ব্যথার গোপন ঔষধ হয়ে উঠেছেন, মাহমুদ। এভাবেই শক্ত করে ধরে রাখুন আমায়।”
কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করলোনা। মাহমুদের চোখে চোখ রেখে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস তার নেই। তরী লজ্জায় লুটিয়ে পড়বে। মাহমুদের হাত থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলোনা। বাড়তে দিল গাঢ় অনুভূতি।

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ১৩