অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ৪

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ৪
সাদিয়া মেহরুজ দোলা

সবেমাত্র চোখের পাতা এক করেছিলো আয়ন্তিকা। সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র সকালের এক ফালি রশ্মি এসে তার মুখশ্রীর ওপর প্রতিফলিত হয়! চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে সে সটান হয়ে বসে। ঘাড়ে চিনচিন ব্যাথা করছে তার। ডান দিকে তাকিয়ে বেডের মাঝখানে ঘুমিয়ে থাকা অহর্নিশের দিকে দৃষ্টিপাত স্থাপন করে সে। অহর্নিশ বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সন্তপর্ণে আয়ন্তিকা তার একহাত অহর্নিশের কপালে রাখে! জ্বর নেই দেখে স্বস্তির শ্বাস ত্যাগ করে সে। কাল সারারাত বসে অহর্নিশের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে আয়ন্তিকা,

আড়মোড়া ভেঙে বেড থেকে পা নামানোর পর উঠতে নিলেই আয়ন্তিকা তার কোমল হাতে কারো শক্তপোক্ত স্পর্শ অনুভব কর। চট জলদি পিছন তাকায় সে। অহর্নিশ তার চোখজোড়া খুলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ন্তিকা আমতা আমতা করে বলল,
-‘ কিছু বলবেন? কিছু চাই আপনার?’
অহর্নিশ ছোট্ট করে প্রতুত্তর করে ‘উঁহু ‘!
আয়ন্তিকা একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ তাহলে হাত ধরে আছেন কেনো? আপনি ঘুমান! আপনার রেষ্টের প্রয়োজন। ‘
-‘ তোমারও রেষ্টের প্রয়োজন আয়ন্তিকা। সারারাত জেগে ছিলে এখন একটু ঘুমাও। ‘
আয়ন্তিকা কিছুক্ষণ নিঃশব্দ পানে তাকিয়ে থাকে অহর্নিশের দিকে। এই লোক জানলো কিভাবে সে জেগে ছিলো সারারাত? অহর্নিশ তো রাতে জ্বরের ঘোরে গভীর ঘুমে কাতর ছিলো।
-‘ কি হলো?’

অহর্নিশের করা পাল্টা প্রশ্নে আয়ন্তিকা বিব্রতের মধ্যিখানে পড়ে যায়। তার ঘুম পাচ্ছে, খুব বেশি! তবে সে এখন ঘুমোতে চায়না। অহর্নিশের পাশে ঘুামালে সে অস্বস্তিতে কুপোকাত হয়ে যাবে। তার আরো সময় প্রয়োজন। প্রতিদিন সে যেই যেই সত্যের মুখোমুখি হচ্ছে তা হজম করতে তার একটু দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।
আয়ন্তিকা কে ভাবনার মাঝে মত্ত দেখে অহর্নিশ ভ্রু কুঁচকে নেয়! এই মেয়ে এতো কি ভাবে?কিছুক্ষণ পরই ভাবনার মাঝে মগ্ন হয়ে যায়। কথার মাঝে সে হারিয়ে যায় ভাবনার সাম্রাজ্যে। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নির্মূল করার প্রয়াস চালায় অহর্নিশ। আয়ন্তির এক হাত ধরে টান মেরে সে বেডে শুইয়ে দেয়, তার বাম পাশটায়! আয়ন্তিকা হতভম্ব! উঠে যেতে নিলে অহর্নিশ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরীয়ে ধরে। ধমকের সুরে সে বলল,

-‘ ছটফট করেছো তো আমার থেকে খারাপ আর কেও হবেনা, মাইন্ড ইট! ঘুমাতে বলেছি ঘুমাও। বেশি দাপাদাপি করলে ১৩ তলা থেকে ফেলে দিবো।’
অহর্নিশের ধমকানি কাতরতায় জর্জরিত করে দেয় আয়ন্তিকার ছোট্ট মন গহীন! সে চুপসে যায়। কান্না পাচ্ছে তার। অহর্নিশ কে পৃথিবীর সবথেকে খারাপ লোক উপাধিটা দেয়ার বড্ড ইচ্ছা জাগছে তার হৃদ মহল হতে! ফালি ফালি অস্বস্তি নিয়ে সে চেষ্টা করে ঘুমানোর। কিন্তু এই ঘুমানোটা বোধহয় আর হবেনা।অহর্নিশ এভাবে আষ্টেপৃষ্টে তাকে ধরে রাখলে কিছু সময় বাদে দেখা যেতে পারে শ্বাস রুখে আসছে তার।

কড়া রৌদ্দুরের আস্তরণ চারদিকে। তপ্তশ্বাস ফেলে আয়ন্তিকা গাড়ির কালো কাচ ভেদ করে বাহিরে দৃষ্টিপাত দেয়। ঢাকা শহরটা এর আগে বহুবার সে দেখেছে! অনেকবারই আসা হয়েছে এই ধুলোমাখা শহরে। ছোট মামার বাসায় নয়তো বড় মামার বাসায়। আর্নিয়া আপুর সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে আয়ন্তি ঢাকার অলি গলি অব্দি! তবে আজ প্রথম অহর্নিশের সাথে ঢাকা শহরের অজানা পথের দিকে বেড়িয়েছে।

বাহির থেকে নিজের দৃষ্টি সরায় আয়ন্তিকা। ঘুম থেকে ওঠার পর -পরই অহর্নিশ তাকে তাড়া দিয়েছে বাহিরে যাবে বলে! চটপট কোনো রকম সাওয়ার নিয়ে সে রেডি হয়ে নিয়েছে।
বাঁকা চোখে অহর্নিশের দিকে তাকাতেই দৃশ্যমান হয় অহর্নিশের সুর্দশন মুখশ্রী। গোলাপি ফর্সা মুখশ্রীতে এসির মাঝেও ঘামের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গোলাপি ঠোঁটজোড়া লাল রূপ ধারণ করেছে। আয়ন্তিকা ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে! কোমল কন্ঠ সে বলল,

-‘ অহর্নিশ ভাই! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?’
অহর্নিশ বাহির হতে দৃষ্টিপাত সরায়। শার্টের হাতা দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিয়ে সে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-‘ গেলেই দেখতে পাবে! অস্থিরতার কি আছে?’
পাংশুটে করে নেয় মুখ আয়ন্তিকা।
ত্যাড়া লোক! বললে এমন কি হতো? গাল ফুলিয়ে সে বসে রইল। দীর্ঘক্ষন একই স্থানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছেনা। তার ওপর আধাঘন্টা ধরে জ্যাম লেগে রয়েছে যা প্রচন্ড বিরক্তিকর!
অবশেষে জ্যাম ছুটে। শো শো করে বাতাসের বেগে গাড়ি চলতে শুরু করে! কিছু সময় বাদে গাড়ি এসে থামে একটা শপিং মলের সামনে। আয়ন্তিকা হা করে তাকিয়ে আছে। বাহিরের এই সুন্দর দৃশ্য সে আগে কখনো দেখেনি! অন্য জায়গা গুলোতে ঘোরা হলেও এই জায়গাটা নতুন লাগছে তার কাছে।

শাফি উজমার লাশ একটা বস্তায় ভরে নেয়। মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্ত গুলো সে তার সহকারী কে নির্দেশ দেয় পরিস্কার করতে। তার মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। জীবনে অনেক খুন করেছে। কিন্তু উজমাকে মারতে গিয়ে তার প্রথম বারের মতো হাত কেঁপেছে। উজমার নিষ্পাপ চেহারা তাকে বারংবার থামিয়ে দিচ্ছিলো তার কর্ম সম্পূর্ণ করার হতে!

শাফি চোখের কার্নিশ হতে জমা পানিটুকু মুছে নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সে কল দেয় নাহিয়া আহমেদ কে। দুই তিনবার রিং হওয়ার পরই রিসিভ করলেন তিনি। শাফি ধরা কন্ঠে বলল,
-‘ নানীমা, উজমারে মাইরা ফেলছি। লাশ কই হালামু?’
নাহিয়া আহমেদ নিজের চেহারায় কিছু সময়ের জন্য ভাবনা ভাবটা ফুটিয়ে তুলে। অতঃপর তিনি বললেন,
-‘ ঢাকায় লইয়া যা ছেড়ির লাশ। অহর্নিশের ঘরের সামনে ফালায় থুইবি(রাখবি)। ‘
-‘ আইচ্ছা! ‘
শাফি ফোন কেটে দেয়। শেষবারের মতো উজমার লাশের দিকে তাকিয়ে একজন কে ইশারা করে এই লাশটাকে গাড়িতে তুলতে। অতঃপর তাড়াহুড়ো করে সে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। কান্না পাচ্ছে তার! এখন না কাঁদলে চলবে না একদম।

আয়ন্তিকা কে সামনে রেখে একের পর এক ড্রেস দেখছে আর ছুঁড়ে ফেলছে অহর্নিশ! একটা ড্রেসও মনমতো লাগছে না তার। আয়ন্তিকা বোকার মতোন চাহনি নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এখানে যে তার পোশাক কিনতে আনা হয়েছে তা এতক্ষণে সে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসব কি করছে এই ভয়ংকর মানব? সে যে বিরক্তির সিমানা পার করে ফেলছে তা কি দেখতে পারছে না অহর্নিশ?
আয়ন্তিকা শেষে চুপ থাকতে না পেরে ব্যাকুল হয়ে বলল,

-‘ আর কতক্ষণ? আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। পা ব্যাথা করছে! ‘
অহর্নিশ চোখ বাকিয়ে একবার আয়ন্তিকার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
-‘ পিছে বসার জায়গা আছে আয়ন্তিকা! লুক, ওখানে বসো। ‘
-‘ আপনি একটা ড্রেস দেখছেন আর ছুঁড়োছুড়ি করছেন কেনো? শুধু শুধু তাদের কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যদি দোকানের মালিক দেখে তাহলে আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে! ‘

আয়ন্তিকা ধৈর্যহারা হয়ে হরহর করে বলল। সে নিজেও জানে কি বলেছে মাত্র! তবে পরবর্তীতে খেয়াল হওয়ার পর নিজে থতমত খায়। অহর্নিশের দিকে দৃষ্টিপাত দিতে দেখে তিনি এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। অহর্নিশ প্রশ্মাত্নক কন্ঠে বলল,
-‘ আমি নিজেকে নিজের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো? লাইক সিরিয়াসলি! ‘
আয়ন্তিকা বেকুব বনে যায়। চোখ গোলগাল করে ও জিজ্ঞেস করলো,

-‘ মানে? ‘
-‘ এটা আমার দোকান! এই শপিং মলের থার্ড ফ্লোর আমার। ‘
গম্ভীর কন্ঠস্বর ফের, আয়ন্তিকা বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। আর কত চমক অপেক্ষা করছে তার জন্য? নিজেকে ধাতস্থ করে সে। এবার সবকিছু ক্লিয়ার হয় তার কাছে। ড্রেস মাটিতে ছুঁড়ে ফেলার পরও দোকানের কর্মকর্তারা এরজন্যই অহর্নিশ কে কিছু বলছে না তাহলে!
নতজানু হয়ে থাকাকালীন কারো চিৎকার ভেসে আসে আয়ন্তিকার কানে! মাথা তুলে দেখে একজন মেয়ে অহর্নিশ কে জরীয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখমুখে প্রফুল্লতার ছাপ। মেয়েটা হেঁসে বলল,

-‘ অহর্নিশ, বেইব তুমি এখানে! কতদিন ধরে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। তুরান বলল তুমি নাকে গ্রামে গিয়েছিলে কবে ফিরলে?’
অহর্নিশ প্রতুত্তর করেনা। বরং মেয়েটাকে তার থেকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়। চোখমুখ স্পষ্ট তার শত বিরক্তিকর আভাস। বিরক্তি কন্ঠে ও বলল,
-‘ লারা, এসব কি? পাবলিক প্লেসে এভাবে জরীয়ে ধরিস কেনো? ‘
লারা চোখমুখ ছোট করে বলল,
-‘ এভাবে বলছো কেনো বেইবি? এমন তো না যে পাবলিক প্লেসে আগে আমি তোমায় কখনো জরীয়ে ধরিনি। ‘
অহর্নিশ কথার ধরন পাল্টে বলল,

-‘ এখানে কি তোমার? ‘
-‘ তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। ‘
আয়ন্তিকা সবকিছুর মাঝে নিরব দর্শক! লারা নামক মেয়েটার অতিরিক্ত ন্যাকামি তার কেনো যেনো ভালো লাগছে না। অহর্নিশ পিছন ফিরে তাকিয়ে তাকে হাতের ইশারায় ডাক দেয়। পায়ের বেগ বাড়িয়ে তাদের দুজনের মাঝে উপস্থিত হতেই লারা আয়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ এই মেয়েটা কে অহর্নিশ? ‘
-‘ মাই ওয়াইফ, সাইরিশ আয়ন্তিকা! ‘

আয়ন্তিকা আঁড়চোখে তাকায় অহর্নিশের দিকে। ‘মাই ওয়াইফ ‘ শব্দটা যখন অহর্নিশ তার অধর যুগল দিয়ে উচ্চারিত করলো তখন এক হীম ভালো লাগা তার মধ্য হতে বইয়ে গিয়েছে। তা কেনো হলো জানা নেই! জানতে চায় না আয়ন্তিকা। শুধু এই অনুভূতি টা তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান মনে হলো।
লারার মুখটা চুপসানো! আহত কন্ঠে সে বলল,

-‘ তু..তুমি বিয়ে করেছো? ‘
-‘ হ্যা! অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ১২ তারিখ গ্রামে গিয়েছিলাম সেদিনই বিয়ে হয়েছে আমার। ‘
লারা আর কিছু বলল না। মুখে ‘ আসছি ‘ বলে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে পড়লো কাঁচের দরজাটা টেনে নিয়ে। অহর্নিশ তপ্তশ্বাস ফেলে। আয়ন্তিকার দিকে দৃষ্টি দিয়ে সে বলল,
-‘ আসো এদিকে! ‘
মাথা নাড়ে আয়ন্তি। অহর্নিশের পিছনে সামনে এগিয়ে যায়। কিছু ড্রেস পছন্দ করে প্যাকিং করে নিয়ে অহর্নিশ তার হাত শক্ত করে ধরে বেড়িয়ে যায় শপিং মল থেকে! তবে সবচেয়ে উদ্ভটকর ব্যাপার হচ্ছে এবার আয়ন্তির মাঝে কোনে অস্বস্তি কাজ করছেনা অহর্নিশ তার হাত স্পর্শ করাতে।

সাহির কে ঘুম পাড়িয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় আর্নিয়া। টেবিল থেকে সাইলেন্ট করা ফোন হটাৎ কেঁপে উঠলো! সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আর্নিয়া ফোন হাতে তুলে নেয়। আননোন নাম্বার! ফোন রিসিভ করার পর পরপাশ থেকে ভারী কন্ঠে আগন্তুক বলল,
-‘ ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিস তাহলে! ‘
কন্ঠস্বরটা শোনা মাত্র আর্নিয়া রেগে যায়। রেগে সে চেঁচিয়ে বলল,
-‘ আফিম তোমাকে বলেছি না আমায় কল দেবেনা?’
-‘ আয়ন্তিকার সাথে কেনো বিয়ে দিলি তোরা ওর? ‘
-‘ বলতে বাধ্য নই! ‘
আফিম রাগে গজগজ করে। সে চিবিয়ে বলল,
-‘ আমাদের মাঝে আয়ন্তিকা কে এনে ভালো করিস নি। ওর যদি কিছু হয় কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো তোর পাগল ভাইকে মনে রাখিস! ‘
টুট টুট করে ফোন কেটে যেতেই আর্নিয়া ফোন ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। রাগে কপালের রগ সাড়ি আকারে ফুটে উঠেছে। তীব্র ঘৃণা চেপেছে আয়ন্তির প্রতি তার। আজ এই পরিস্থিতি আসতো না যদি না আয়ন্তিকা মাঝখান থেকে উজমাকে দেখে নিতো।

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ৩

নির্দিষ্ট এক রাস্তা ধরে হাঁটছে অহর্নিশ আয়ন্তিকা! গাড়ি তাদের মাঝপথে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অহর্নিশ উবার ডাকতে চাইলে তাতে ঘোর আপত্তি জানায় আয়ন্তিকা! তার গাড়িতে উঠতে ইচ্ছে করছেনা। হেঁটে যেতে চায় শোনার পর অহর্নিশ আর বিশেষ কোনো তর্কে জরায়নি। তাছাড়া এই রাস্তা হতে বাসা অত দূরে নয় বলে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা বরাদ্দ রাখে অহর্নিশ!

আয়ন্তিকা কিছুদূর যেতে ইটের সাথে অসাবধানতা বশত তার পা বেজে পড়ে যেতে নিলে হুড়মুড়িয়ে অহর্নিশ তার কোমল হাত আঁকড়ে ধরে। সে রাগ নিয়ে বলল,
-‘ দেখে চলতে পারো না? দৃষ্টি কই থাকে? এখন যদি পরে যেতে তাহলে আঘাতপ্রাপ্ত কে হতো? ষ্টুপিড! ‘
মুখশ্রী ছোট করে নেয় আয়ন্তিকা। সোজা হয়ে সঠিক ভাবে দাঁড়ানোর পর সে বলল,
-‘ খেয়াল করিনি ইটের টুকরো! ‘

অহর্নিশ কঠিন চোখে তাকিয়ে আয়ন্তিকার হাত আঁকড়ে ধরে। সামনে এগিয়ে যেতেই বিকট আওয়াজ কানে ভেসে আসে। আওয়াজ টা ঠিক কিসের হতে পারে তাদের দু’জনের মধ্যে কেও বুঝতে পারে না। কিছু সময় পর একটা গলি ধরে কয়েকজন লোক দৌড়ে আসে। তাদের থেকে অহর্নিশ চোখমুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। সে চিন্তিত নয়নে আয়ন্তিকার দিকে তাকায়! আয়ন্তিকার প্রশ্নাতীত চাহনি। কি হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না তার।

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ৫