অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৩২

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৩২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

ফ্লোরে পরে আছে পলাশের নিথর শরীরটা। ওসি সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন বডিটার ঠিক পাশে। দুজন হাবিলদার ছাড়া রুমের মধ্যে আর কাউকে এলাও করা হয়নি। ফারিয়া বডিটা দেখেই নাকমুখ কুঁচকে ফেলেছে। কী নিষ্ঠুরতা! তুহিন বডিটাকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে বিশাল আকৃতির রুমটাতে ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। বিছানা, টি-টেবিল, সোফা সব ঠিকঠাক আছে। ঘরের আসবাবপত্র খুব বেশি লন্ডভন্ড হয়নি। বোঝা যাচ্ছে, ভিক্টিম নিজেকে প্রটেক্ট করার খুব বেশি সময় পায়নি। কিংবা শক্তি পায়নি।

এসে সবাইকে জেরা করে যেটুকু জানতে পেরেছে সে অনুযায়ী খু’নের সময় কেউ কিছুই টের পায়নি। সকালে রুম সার্ভিসের লোক রুমে নক করার পরেই প্রথম জানা যায় হোটেলে একটা মা’র্ডা’র হয়েছে। খু’নিকে দেখতে পায়নি কেউ। তমাল আর ফারিয়াকে গোটা ঘরটা সার্চ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ব্লা’ডমার্ক কালেক্ট করার অর্ডার করে ওয়াশরুমে গেল তুহিন। প্রত্যেকটা জিনিস এমনকি কমোডটাও দেখে নিল ভালোভাবে। তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই না পেয়ে আবার ফিরে এলো লা’শের কাছে। ওসি খানিকটা এগিয়ে এসে বলল, ‘কিন্তু এটাতো আপনার ডিভিশনের মধ্যে পড়েনা। আপনাকে কেন ডেকে পাঠানো হলো বুঝতে পারলাম না।’
তুহিন লাশটার দিকে তাকিয়ে থেকেই অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, ‘ কারণ শেকড়টা আমার ডিভিশনে। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে ডালপালা এদিকে চলে এসছে। চিন্তা নেই। পরের কোন একটা কেইসে খু’নিকে বলে দেব শেকড়টা এই ডিভিশনে রেখে ডালপালা যাতে আমার ডিভিশনে পাঠিয়ে দেয়। শোধবোধ। নাকি সুদ চাই আপনার?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফিক করে হেসে ফেলল এক হাবিলদার। আরেকজন হাসতে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে। মনে মনে মারাত্মক লজ্জা পেলেন ওসি। জেনেশুনে এরকম উদ্ভট প্রশ্ন করার জন্যে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ইতস্তত করে দাঁড়িয়ে রইল নিজের জায়গায়। তুহিন এক হাঁটু ভেঙ্গে বসল লা’শের সামনে। ওসির উদ্দেশ্যে বলল, ‘নামধাম সব জেনেছেন?’
‘ ইয়েস স্যার। হোটেল রেজিস্ট্রি করা আছে পলাশ মীর্জা নামে।’
কোন প্রতিক্রিয়া করল না তুহিন। যেন মোটামুটি আন্দাজ করাই ছিল নামটা। ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ পলাশের র’ক্তা’ক্ত মুখটার দিকে। কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে সে। সারা মুখ জুড়ে আবছা আবছা সাদা পাউডার জাতীয় কিছু দেখতে পাচ্ছে। কী এগুলো? নিজের তর্জনী আঙুলে সামান্য পাউডার লাগিয়ে নিজের নাকের কাছে এনে ধরল তুহিন। অজান্তেই কুঁচকে গেল ওর নাক। হেরোইন! ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল তুহিন। পলাশের শরীরের ভয়ানক ক্ষতগুলো পরীক্ষা করল আরো একবার।

ওসি বলল, ‘কল পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা সবাইকে হোটেলে আটকে রেখেছি স্যার। কাউকে বের হতে দেইনি।’
তুহিন চিন্তিত ভঙ্গিতে থুতনি চুলকে বলল, ‘ তাতে বিশেষ কোন উপকার হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছেনা। খু’নটা করে খু’নি সকাল অবধি এই হোটেলেই বসে ছিল বলে আপনার মনে হচ্ছে? এই আশায় যে কখন জানাজানি হবে, কখন পুলিশ এসে সবাইকে আটকে দেবে, তারপর সে পালাবে?’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘তবে আটকে রেখে ভালো করেছেন। জিজ্ঞেস করার আছে আপনাকে অনেক কিছু।’
মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ওসির কিন্তু তুহিনের পরবর্তী কথা শুনে স্বস্তি পেল। যাক, লোকটা একেবারেই অকাজের ভাবছে না ওকে। তাই খানিকটা উৎসাহিত হয়ে বলল, ‘ স্যার আমরা রেজিস্ট্রার চেক করে দেখেছি। পাঁচতলায় যে কয়েকটা রুম বুক করা আছে তারমধ্যে থেকে কেউ ঘর ছাড়েনি। তবে বেরিয়েছেন দুজন।’

তুহিন ভ্রু উঁচু করে বলল, ‘আর বাকি ফ্লোরগুলো?’
‘ তাতো দেখিনি স্যার।’
‘ দেখা উচিত ছিল। খু’নি অন্য ফ্লোরেও উঠে থাকতে পারে। যদিও সম্ভাবনা কম। যাই হোক, আমি দেখছি।’
এরমধ্যেই তমাল আর ফারিয়ার কাজও হয়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ শেখ গাড়ি আর লোক পাঠিয়েছে?’
‘ জ্বি স্যার! পাঠিয়েছে। আপনি বললেই এসে লা’শটা নিয়ে যাবে।’
‘ আসতে বলো। আর এভিডেন্সগুলো নিয়ে তুমিও চলে যাও। কাজ শুরু করে দিতে হবে এক্ষুনি। প্রতিটা সেকেন্ড এখন ইম্পর্টেন্ট।’
‘ রাইট স্যার!’
বলে কল করার জন্যে কিছুটা সরে দাঁড়ালো ফারিয়া। তুহিন তমালকে বলল, ‘হোটেলের প্রতিটা ঘরে যাও। সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করো। ঐ স্কেচটা দেখাও সকলকে। এই হোটেলেই যেহুতু উঠেছে। কেউতো দেখে থাকবে ওকে।’

তমাল চলে যাচ্ছিল। তখনই তুহিন বলে উঠল, ‘ আর রুদ্রর ছবিটাও।’
তমালকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুহিন বলল, ‘ওকে পুরোপুরি সন্দেহের বাইরে ফেলে দেওয়ার মতো বিশেষ কিছু ঘটেনি এখনো।’
থতমত খেয়ে গেল তমাল ইতস্তত করে বলল, ‘জ্বি স্যার।’
তমালকে ওর কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিচে নামতেই প্রায় দৌড়ে এলো ম্যানেজার। হাপাতে হাপাতে বলল, ‘দুঃখিত স্যার। প্রচন্ড ইমার্জেন্সি এসে গিয়েছিল। তাই বেরোতে হয়েছে। কখন এসছেন?’
‘ অনেক্ষণ।’
তার প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ না দেখিয়ে কাজের কথায় এলো তুহিন। বলল, ‘ আমি রেজিস্ট্রার দেখতে চাই। কাল রাতে কে কে রুম ছেড়েছে। আর এটাও জানা দরকার কে কে এক্সিট করেছে কিন্তু এখানো ইন্টার করেনি।’
ম্যানেজার বিনয়ের হাসি হেসে বলল, ‘শিওর স্যার। চলুন।’

রেজিস্ট্রার থেকে জানা গেল মাত্র একজনই ঘর ছেড়েছে। কিন্তু সেটা কাল সন্ধ্যায়। তবে রাতে এক্সিট করে এখনো অবধি ইন্টার না করা রুমের সংখ্যা চারটা। নামগুলো শুনে সন্তুষ্ট হতে পারল না তুহিন। কারণ ওখানে রুদ্রর নাম নেই।রিসিপশনে বসা তরুণীকে ভালোভাবে লক্ষ্মীপুরের সম্ভাব্য খুনির স্কেচটা দেখিয়ে তুহিন বলল, ‘দেখুন তো যে চারজন বেরিয়েছে রাতে তারমধ্যে এই লোকটা ছিলো কি-না।’
মেয়েটা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখল স্কেচটা। এরপর মাথা নেড়ে বলল, ‘না স্যার। এই লোক এই হোটেলে রুম নেয়নি।’
ভ্রুকুটি করল তুহিন। সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘আর ইউ শিওর?’
‘ আই গ্যারান্টি ইট!’

বোকার মতো দু সেকেন্ড তাকিয়ে রইল তুহিন তমালের দিকে। এরপর হঠাৎই কিছু একটা ভেবে দ্রুত রুদ্রর ছবিটা বের করে তুলে ধরল মেয়েটার সামনে। বলল, ‘একে?’
মেয়েটা স্হির চোখে তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে। দুচোখে মুগ্ধতা। বিরক্ত হলো তুহিন। বুঝল এই মেয়েও পিছলেছে। একে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে হবে। হাত দিয়ে টেবিলে পরপর দুবার আওয়াজ করে মেয়েটাকে স্বপ্ন থেকে ফিরিয়ে আনল তুহিন। গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘দেখেছেন একে?’
লজ্জিত হল মেয়েটা। ইতস্তত করে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সরি স্যার। কিন্তু ইনিও ঘর নেননি।’

তুহিনের মেজাজ ভয়ংকর খারাপ হলো এবার। এটা কী মজা হচ্ছে নাকি? জায়গায় জায়গায় খুনির চেহারা বদলে যাচ্ছে কীকরে? ম্যাজিক না-কি? খুনের হিস্ট্রি, পলিটিক্স সব এক অথচ জিওগ্রাফিটা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে কীকরে? ভানুমতির খেল দেখাচ্ছে খু’নি?

তমাল এসে তুহিনের মুখ দেখেই ঘাবড়ে গেল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে লোকটার। এখন কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। তুহিন ঘাড় ফিরিয়ে তমালকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরও রেগে গেল। ঝাঝালো কন্ঠে বলল, ‘চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেন? বলে ফেলো!’
নড়েচড়ে উঠল তমাল। আরেকটু এগিয়ে এসে বলল, ‘স্কেচের লোকটাকে কেউ দেখেনি স্যার। আর না রুদ্রকে। দুজনের কেউই আসেনি এই হোটেলে। ওদের নাকি কাউকে দেখে সন্দেহ অবধি হয়নি।’
বাহ! ষোল কলা পূর্ণ। দাঁত নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করল তুহিন। ঐ চারজনের নাম্বারে ডায়াল করে দুজনকে পাওয়া গেল। তারা এক্ষুনি আসছে হোটেলে। সুতরাং আপাত দৃষ্টাতে ধরে নেওয়া যাচ্ছে এরা খুনি নয়। বাকি রইল দুজন। রেজিস্ট্রার থেকে চারজনেরই সব ইনফরমেশন নিয়ে যাচাই করা আর যে দুজন আসছে তাদের সাথে কথা বলার দায়িত্ব তমালের ঘাড়ে দিয়ে ভয়ানক খারাপ মেজাজ নিয়ে তুহিন বেরিয়ে এলো হোটেল থেকে। খু’নির ওপর ভয়ানক রাগ হচ্ছে এখন ওর। কেন জানি রুদ্রর চেহারাটাই ভেসে উঠছে চোখের সামনে। যাকে কোনদিন সামনাসামনি দেখেই নি তাকেই বহু জন্মের শত্রু মনে হচ্ছে। রুদ্রকে ওর চাই। এই কেসের দায়ে না হলেও বাকি অপরাধগুলোর সুত্র ধরে হলেও চাই। বাই হুক অর বাই ক্রুক।

নিজের চ্যায়ারটাতে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর দু’পা তুলে চোখ বন্ধ করে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে তুহিন। একটা লোককে এমন নির্মমভাবে খু’ন করে নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেল কিন্তু কেউ কোন খোঁজ পেলোনা। রিডিকিউলাস!
অথচ যখন খুনের খবরটা ওদের কাছে এসে প‍ৌঁছেছে। ততক্ষণে খুনি পগারপার। এখন একমাত্র শেখই ভরসা। দেখা যাক উনি কোন চমকপ্রদ তথ্য দিতে পারে কি-না। তুহিনের ভাবনার সুত্র ছেদ করে বেজে উঠল মোবাইল ফোন। মহিউদ্দিন শেখের কল। মুচকি হেসে কলটা রিসিভ করল। কৌতুকের স্বরে বলল, ‘কোথায় যেন পড়েছিলাম খারাপ মানুষ সহজে মরেনা। আপনার কথাই ভাবছিলাম আর আপনিই ফোন করলেন।’

‘ কম্প্লিমেন্টের জন্যে থ্যাংক ইউ। এবার কাজের কথা শোন।’
মহিউদ্দিনের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে সতর্ক হয়ে উঠল তুহিন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে নিশ্চয়। কৌতুক ছেড়ে নিজেও গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ হ্যাঁ বলুন।’
‘ তোমার ধারণা মোটামুটি ঠিক ছিল। মুখে হে’রো’ই’ন গুজে দিয়েছিল সবার আগে। এরপর বাকি কাজটা করতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। আর যেসব স্যাম্বল পাঠিয়েছিলে তাতে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়নি।’

তুহিন চোখ বুজে বসে রইল। আজ ওর হতাশ হওয়া দিবস। তুহিনকে চুপ থাকতে দেখে মহিউদ্দিন হেসে বলল, ‘এতো হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইন্টারেস্টিং খবর আছে।’
তুহিন নিরুৎসুক কন্ঠে বলল, ‘বলে ফেলুন।’
‘ গুলশানের দ্বিতীয় খু’ন আর মীরপুরের খু’টার সাথে এই খু’নটার দারুণ মিল আছে। প্রায় একই রকমভাবে মারা হয়েছে।’
চমকে উঠল তুহিন। দ্রুত টেবিল থেকে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসল। অবাক কন্ঠে বলল, ‘হুবহু একরকম?’
‘ আরে ভাই এটা মা’র্ডা’র। পরীক্ষার খাতায় টুকে লেখা রচনা না যে হুবহু একরকম হবে। যতটা সম্ভব একইরকম। প্রথমে তীব্র নেশা করিয়েছে। তারপর_’

ভ্রু কুঁচকে চুপচাপ কয়েক সেকেন্ড বসে রইল তুহিন। দ্রুত চিন্তা চলছে মাথায়। মহিউদ্দিন বুঝল এই ছেলে এখন চিন্তা করতে ব্যস্ত। ওর চিন্তায় কোনরকম ব্যাঘাত না ঘটিয়ে ফোন কেটে দিল মহিউদ্দিন। তুহিন আস্তে করে নামিয়ে রাখল ফোনটা। টেবিলে রাখার আগেই মেসেজ টোন বেজে উঠল। ইরার মেসেজ। লিখেছে, ‘রাতে ঘুমাও নি। খাবারটা ঠিকমতো খেয়ে নিও প্লিজ। ডিসটার্ব করার জন্যে সরি।’
মৃদু হাসল তুহিন। ছোট্ট একটা রিপ্লে লিখে টেবিলে রাখল। তখনই দরজায় নক করে তমাল বলল, ‘স্যার আসব?’
‘এসো।’
তমাল কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই তুহিন বলল, ‘অপ্রয়োজনীয় একটাও শব্দ ব্যবহার না করে রিপোর্ট করে ফেলো।’

বাপরে! ভয়ানক চটে আছে। গলা পরিস্কার করে তমাল বলল, ‘স্যার! চারজনের মধ্যে দুজনের সাথে সরাসরি কথা হয়েছে। তৃতীয়জন মহিলা। বয়স পয়ত্রিশ। কিন্তু চতুর্থজনের ইনফরমেশনগুলো নকল স্যার। ব্যাটা জালি মাল। তবে চিন্তা নেই স্যার, খোঁজ চলছে। এখন একটু সময় বেশি লাগবে এই যা।’
ঠোঁট বাকিয়ে হাসল তুহিন। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল, ‘মীর্জার কী খবর?’
‘শওকত মীর্জা এখন দুবাই আছ। আর আপনি ঠিক বলেছেন। এই পলাশ ঐ শওকতের ছোট ভাই। শুনেছি শওকতের ছেলেও বাংলাদেশে আছে। কিন্তু কোথায় আছে জানিনা।’
চেয়ারে হেলান দিল তুহিন। মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘দেশে থাকলে পরবর্তী টার্গেট ঐ হবে। এতে আর কোন সন্দেহ আছে বলে মনে হচ্ছেনা। দেখো বাছাধন কোথায় আছে। খোঁজ নাও। আমার মনে হচ্ছে মরার আগেই যদি ওকে আমরা পেয়ে যাই। তাহলে খু’নিকে পাওয়া কঠিন হবেনা। তবে আপাতত শেখ দুটো ফাইল পাঠিয়েছে। ওগুলো একটু চেক করো।’

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৩১

‘ ওকে স্যার।’
তুহিনের সামনের চেয়ারে ল্যাপটপ খুলে বসল তমাল।
তুহিন চোখ বন্ধ করে কলম ঘোরাতে ঘোরাতে আবার মগ্ন হয়ে গেল গভীর চিন্তায়। ব্যাপারটা ক্রমশ ঘোলা হয়ে উঠছে। নয়টা খু’ন হয়ে গেছে। অথচ সম্ভাব্য খু’নিদের কারো সঙ্গে কারো চেহারা মিলছে না। তাহলে ধরে নেওয়া যাক চেহারা বদলাচ্ছে খুনি। মেকআপ করে, ছদ্মবেশে। সেটা কে? রুদ্র? তিনটে গ্রুপের সমস্ত ফাইল ঘেটে যা দাঁড়িয়েছে তাতে দুজন ছাড়া বাকি যারা খু’ন হয়েছে তাদের মা’রা’র প্রপার রিজন একমাত্র ওর কাছেই আছে। অথচ ওর সাথে আবার লক্ষ্মীপুরের খু’নির ডিএনএ ম্যাচ করছেনা। কিন্তু সব খুনের এক এবং একমাত্র কারণ রাশেদ আমেরের ঐ নতুন প্রজেক্ট। এটাও অস্বীকার করা যাচ্ছেনা। আবার মহিউদ্দিন বলছে বাকি খুনগুলো আলাদাভাবে হলেও তিনটে খু’নের ধরণ এক। সবটা মিলে কী হচ্ছে? জগাখিচুড়ি!

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৩৩

1 COMMENT

Comments are closed.