অন্যরকম তুমি গল্পের লিঙ্ক || তানিশা সুলতানা

অন্যরকম তুমি পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

সাদাত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেতেই বুকের ভেতর ধক করে ওঠে ছোঁয়ার। একটু নরেচরে বসে ছোঁয়া। ভয় পাওয়ারই কথা। মাএ ষোলো বছর বয়স ছোঁয়ার। বিয়ে সম্পর্কে ওর কোনো ধারণা না থাকলেও ফুলসজ্জা সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা আছে।
ছোঁয়ার চাচাতো বোন বিথির কাছে শুনেছে ছোঁয়া। বিথির হাসবেন্ড ফুলসজ্জার রাতেই খুব মেরে ছিলো বিথিকে। মারার কারণটা ছিলো সেদিন মিথির পিরিয়ড চলছিলো। এতে বেচারি বিথির কোনো দোষ ছিলো না। তবুও মার খেয়েছিলো বিথি।
সাদাতের বোন আর কাজিনরা একটু আগে ছোঁয়াকে যখন এই রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে গেছিলো তখন বলেছে আজ ওদের বাসর রাত। বর যা বলবে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই শুনবে।

ছোঁয়া মাথা নেরে সায় জানিয়েছে।
বাবার বাড়ি থেকে আসার সময়ও মা কাকিমা দাদিমা সবাই পই পই করে বলে দিয়েছে। বর যা বলবে তাই শুনবি।
মিথি জড়োসরো হয়ে বসে। মাথায় থাকা লাল রংয়ের ঘোমটাটা আরও একটু টেনে দেয়। ভয়ে বুকটা টিপটিপ করছে।
সাদাত রুমে ঢুকে ধাপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। বিকট শব্দে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ঘোমড়াটার আড়াল থেকে এক পলক তাকায় সাদাতের দিকে। কেমন জানি উসকো খুশকো দেখাচ্ছে সাদাকে, ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। চোখ জোড়াও খুলে রাখতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখনই ঢলে পড়ে যাবে।
উনি কি অসুস্থ?
ছোঁয়ার মন থেকে প্রশ্নটি উদয় হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দরজা বন্ধ করে সাদাত দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের সাদা শার্টটা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। কপালের রগটা ফুলে উঠেছে। চোখের সাদা আংশ টকটকে লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে রক্ত।
ছোঁয়া ঢোক গিলে। কাচুমাচু হয়ে বসে।
এই ভয়ংকর লোকটার সাথে থাকবে কি করে ছোঁয়া?
“আআপনি কি অসুস্থ ভাইয়া? কিছু লাগবে আপনার?
রিনরিনিয়ে প্রশ্ন করে ছোঁয়া।
সাদাত ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদাতের চাহনি দেখে থেকে থমকে যায় ছোঁয়া। ভয়ে জমে যায়। লাল লাল চোখ দুটো পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। ভ্রু দুটো আড়াআড়ি ভাবে কুচকে আছে।
মনে হচ্ছে এখুনি ছোঁয়াকে টুপ করে গিলে খেয়ে নেবে।
ছোঁয়া মনে মনে নিজেকে বকতে থাকে। কি দরকার ছিলো প্রশ্ন করার?
একপা একপা কর এগিয়ে যায় সাদাত ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার ভয় বাড়তে থাকে। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। মাথার ঘোমটাটা কখন পড়ে গেছে সে খেয়াল নেই ছোঁয়ার। মাথা নিচু করে আছে। ছোঁয়ারর দৃষ্টি সাদাতে পায়ের দিকে।
খাটের কাছে চলো এসেছে সাদাত জুতো না খুলেই হাঁটু মুরে বিছানায় বসে। বলিষ্ঠ হাত দিয়ে এক টানে খাটের সাথে ঝুলানো ফুল গুলো ছিঁয়ে ফেলে।
দুই হাতে কান চেপে ধরে ছোঁয়া।
সাদাত বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
ছোঁয়া একটু পিছিয়ে যেতে নেয়। সাদাত হাত ধরে ফেলে ছোঁয়ার। চমকে তাকায় সাদাতের দিকে।
” কককি করছেন টা কি আপনি?
ছোঁয়া ধরে আসা গলায় বলে।

সাদাত উওর দেয় না।ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছোঁয়াকে। খাটের মাঝখানে পড়ে যায় ছোঁয়া। হকচকিয়ে ওঠে। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদাতের দিকে। সাদাত সেদিকে পাত্তা দেয় না।
একটা বালিশ ছোঁয়ার পেটের ওপর রেখে তাতে ভর দিয়ে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে ছোঁয়া। সাদাতের দুই বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে ছোঁয়া। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সরাতে চাইছে সাদাতকে। কিন্তু এক চুলও নরাতে পারছে না।
” ককি কররছেন কি আপনি?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ছোঁয়া
উওর দেয় না সাদাত। ছোঁয়ার হাত দুটো শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে। মুখটা এগিয়ে নেয় ছোঁয়ার মুখের দিকে। বিশ্রি গন্ধ বের হচ্ছে সাদাতের মুখ থেকে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছোঁয়ার। মুখ ঘুরিয়ে নেয় ছোঁয়া।
নিজেকে অসহায় লাগছে খুব। কান্না চেপে রাখতে পারছে না।
“প্লিজ ছেড়ে দিন আমায়। লাগছে আমার।
চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে ছোঁয়ার। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে।
সাদাত একটা হাত ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া ছাড়া পেতেই সেই হাত দিয়ে সাদাতকে সরানোর জন্য ধাক্কা দেয়। কিন্তু এক চুলও সরাতে পারে না।

” প্লিজ ছেড়ে দিন।
কেঁদে কেঁদে বলে ছোঁয়া।
সাদাত ছোঁয়ার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দেয় বাম হাতের তালু দিয়ে।
ছোঁয়ার বুক থেকে আঁচলটা সরিয়ে কাঁধে হাত গলিয়ে দেয়।
ছোঁয়া আর নিতে পারছে না। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
“কেনো এমন করছেন? আমি কি করেছি?
সাদাত ছোঁয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সাদাতের পুরো নিঃশ্বাসটা ছোঁয়ার ঘাড়ে পড়ছে। ভীষণ অস্বস্তিতে পরে যায় ছোঁয়া।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে কান্না করতে থাকে। সাদাতের পুরো শরীরের ভর ছোঁয়ার ওপর ছেড়ে দেয়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ছোঁয়ার দম আটকে আসছে।
হাত ছেড়ে দেয়।
এভাবে বেশ কিছুখন কেটে যায়। তারপর হুট করে ঝড়ের গতিতে উঠল বসে সাদাত। দুই হাতে মাথা চেপে বসে থাকে।
” তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারিস না। ছাড়বো না তোকে আদি। খুন করবো তোকে আমি।
বিরবির করে বলছে সাদাত।

ছোঁয়া তারাহুরো করে উঠে শরীরে আঁচল জড়িয়ে নেয়। ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
এই অমানুষটা কেনো করলো এমন? আবারও এমন করবে না তো?
আতঙ্কে ওঠে ছোঁয়া।
এখানে থাকা যাবে না আর।
বিছানা থেকে নামতেই দরজায় টোকা পড়ে। নিশ্চয় বাবা এসেছে।
আমাকে এখানে পাঠানোর সময় তো বলেছিলো ছোঁয়ারে রে তুই ওনাদের সাথে যা বুঝলি আমি পরে গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো।
এখন নিশ্চয় নিতে এসেছে। কান্নার মাঝেও হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার মুখে।
এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
বাবা আমি আর এখানে থাকবো না
বলে সামনে তাকাতেই ছোঁয়ার হাসি গায়েব হয়ে যায়। কারণ দরজার কাছে ছোঁয়ার বাবা নয় বরং গম্ভীর মধ্য বয়সি এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার খাবারের প্লেট।
এই মহিলাটি সাদাতের মা। ছোঁয়াকে এই বাড়িতে আনার পর উনিই মিষ্টি খাইয়েছিলেন।
“এখানেই থাকতে হবে তোমাকে৷ বিয়ে হয়ে গেছে তোমার।
কর্কশ গলায় বলেন উনি। মাথা নিচু করে ফেলে ছোঁয়া। ইচ্ছে করছে মুখের ওপর বলতে ” আপনার এই অমানুষ ছেলের সাথে আমি জীবনেও থাকবো না”
কিন্তু গুরুজন উনি। মুখের ওপর বলাটা ঠিক হবে না।
সালমা বেগম ছোঁয়াকে ভালোভাবে পরখ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বাড়ির গুরুজনদের সামনে যাওয়ার আগে আয়না দিয়ে নিজেকে একবার পরখ করে মাথায় ঘোমটা টেনে তবেই যাবে।
বুঝলে?

ছোঁয়া মাথা কাত করে বোঝায় বুঝেছি।
“এই খাবারগুলো সাদুকে খাওয়াবে। আমার ছেলে সকাল থেকে কিছুই খায় নি।
ছোঁয়ার হাতে খাবারের প্লেট দিয়েই উনি দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া দীর্ঘ ফেলে।
ওর ও সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি। ভীষণ খিধে পেয়েছে।
এখন কি করবে? এই খাবার গুলো নিজেই খেয়ে নেবে না কি সাদাতকে ডেকে খেতে বলবে?
ডাকলে যদি আবারও ওমন করে?
থাক আর রিক্সা নেবে না ছোঁয়া।
ডানপাশ থাকা সোফার পেছনে বসে পড়ে ছোঁয়া। এখানে বসেই খাবারটা খেয়ে নেবে এবং রাতে এখানেই ঘুমবে৷ যাতে ওই লোকটা ওকে দেখতে না পায়।
প্লেটের ঢাকনা সরাতেই ছোঁয়ার খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে যায়। খুব সামান্য পরিমাণ ভাত আর তার পাশে করলা ভাজি, করলা ভর্তা, করলা দিয়ে মাছের ঝোল।
“আচ্ছা ওই দজ্জাল শাশুড়ী কি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলো না কি? যে আমি ওনার ছেলেকে খাবার না দিয়ে আমিই খেয়ে নেবো?

কি ধরি বাজ শাশুড়ীরে? এটাও জেনে গেলো।
একটুখানি খাবো বলে করলার গোডাউন দিয়ে গেলো।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে আবার খাবারটা ঢেকে রাখে ছোঁয়া। এবার আস্তে আস্তে পা ফেলে খাটের দিকে এগোয়। খাবারটা কোনোরকমে খাটের পাশে থাকা টেবিলে রেখে আবার দৌড়ে গিয়ে সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়বে।
নিশ্বাস বন্ধ করে প্লেটটা টেবিলের ওপর রাখে ছোঁয়া। আর তখনই একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। সাথে সাথে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ছোঁয়া।

অন্যরকম তুমি পর্ব ২

2 COMMENTS

Comments are closed.