অন্যরকম তুমি পর্ব ৫

অন্যরকম তুমি পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

তনু আর সাগরের সাথে ছোঁয়া বেরিয়ে পড়ে ভর্তি হতে। টেন এ ভর্তি হবে ও।
আজকে আবারও সাহস করে ওই ধবধবে সাদা রুমের কাবাড থেকে কালো জিন্স আর গোলাপি টপস নিয়ে পড়ে নিয়েছে। সাদু বকলে বকবে। কিন্তু এই শাড়ি পড়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব না।
শাশুড়ী তনুকে বলে দিয়েছে ফেরার পথে ছোঁয়ার জন্য কিছু ড্রেস নিতে। আর ছোঁয়াকে পার্লারে নিয়ে নাক ফুটে করতে।
ছোঁয়া ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। কান ফুটো করার সময় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলো। এখনো নিশ্চয় আটও ব্যাথা পাবে।

সাদা কুকুরটাকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে ছোঁয়। ঘরটা যেহেতু ওর তাহলে ঘরের সব জিনিস গুলোও ওর।
দশ মিনিট পরেই স্কুলের কাছে পৌঁছে যায় ওরা। ইয়া বড় মাঠ। ছোঁয়া আগে যে স্কুলে পড়তো সেখানে কোনো মাঠ ছিলো না। আর এরকম বিল্ডিং ও ছিলো না। টিনের স্কুল ছিলো।
এতে বড় মাঠ আর এতে বড় স্কুল দেখে ছোঁয়া খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
তনু ছোঁয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। এই যেরকম ছটফট করছে যেকোনো মুহুর্তে এদিক সেদিক চলে যেতে পারে।
সাগর তনুর হাতটা শক্ত করে ধরেছে। আর কুকুরটাকে গাড়িতেই রেখে এসেছে।
সাদির চেনা এই স্কুলের হেডটিচার। ফোন করে আগেই সব জানিয়েছিলো। তাই ভর্তি করতে বেশি সময় লাগে না।
ভর্তি শেষে তনু আর ছোঁয়া বাইনা করে ফুসকা খাবে। সাগর ডিরেক্ট না করে দেয়। কে শোনে কার কথা?
দুজন দৌড়ে গিয়ে ফুসকা স্টলে বসে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে চার প্লেট ফুসকা দিন তো।
ছোঁয়া বলে।
” চার প্লেট কেনো? আমি খাবো না এসব।
নাক সিঁটকে বলে সাগর।
“তোকে কে দিবে? চার প্লেট তো আমাদের দুজনের জন্য।
তনু মুখ বাঁকিয়ে বলে।
সাগর খানিকটা লজ্জা পায়।
ফুসকা দিতেই দুইরমনি পাল্লা করে ফুসকা খাচ্ছে। নাকের জল চোখের জলে এক হয়ে গেছে তবুও তাদের থামাথামির নাম নেই।
সাগর বেশ বিরক্ত হয়। উঠে যায় দোকানে পানির বোতল কিনছে।
ফিরে এসে দেখে দুজন শশা খাচ্ছে ঝাল কমানোর জন্য।
সাগর ওদের হাতে পানি দেয়।

” এতো ঝাল খাওয়ার কি দরকার?
“দরজার আছে ভাইয়া। ফুসকা খাওয়ার মজাই তো এটা। নাকের পানি চোখের পানি যদি ফুসকার সাথে না মিশে তাহলে সেটা মজা লাগে না।
ছোঁয়া হেসে বলে। তনুও তাল মিলায়।
“ভাগ্যিস ভাইয়ার সাথে নেই। থাকলে তোমার কথা শুনে কি বলতো জানো?
” হুমম জানি
আপনার ভাইয়া হলো একটা আস্ত করলার বস্তা। তার মুখ দিয়ে তেঁতো কথাই তো বের হবে বলো?
তিনজনই হেসে ফেলে।
কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরে আসে ওরা। নাক ফুটো করার কথা ভুলে গেছে।
ছোঁয়া রুমে আসতেই দেখে সিমির কল। মুখে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার।
“আপি কেমন আছো?
” আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
“আমিও ভালো। বিয়েটা কেনো করলে না? বরটা খুব স্মার্ট ছিলো তো। আমার কিন্তু দারুণ লাগে।
” পছন্দ হয়েছে?
সিমি আলতো হেসে বলে।
“হুমম খুব।
” আলহামদুলিল্লাহ। তুই যে খুঁতখুঁতানি মেয়ে। ভেবেছিলাম আবার যদি পছন্দ না হয়।
“তুমি কোথায় এখন?
” বাড়িতে।
“কবে আসলে?
” তোর বিদায়ের পরেই।
“এমনটা করার খুব দরকার ছিলো।
” হুমম ছিলো।

“জানো আপি এই বাড়িতে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে। তিন বছর হবে হয়ত বা তার কমও হতে পারে। নাম পরি। পরির চোখ, হাসি, হাঁটা সবটাই কেমন জানি তোমার মতো।
ছোঁয়ার কথা শুনে চমকে ওঠে সিমি। বুকেট ভেতর চিনচিন করে ওঠে।
” তাই?
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে সিমি।
“বাচ্চাটার না মা নেই। আমাকে মাম্মা বলে ডাকে।
মা নেই শুনে সিমির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় কিছু ঘৃণ্য স্মৃতি। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
” বাবাও নেই বোধহয়।
“বাবা নেই কেনো?
সিমি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে।
“দুই দিন হয়ে গেলো এসেছে ওর বাবাকে দেখি নি। বাচ্চাটা খুব একা রে।
ছোঁয়া মন খারাপ করে বলে।
” আমাকে একবার দেখাবি?
“বাবা আমাকে নিতে আসলে আমি পরিকে নিয়েই যাবো।

তারপর আরও কিছু খন কথা বলে ফোন রেখে দেয় ছোঁয়া। আর সিমি ভাবতে থাকে বাচ্চাটার কথা।
বিআরটিসি কোম্পানিতে এমডি পদে জয়েন করেছে সাদি। নিজের কেবিনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তেমন কাজ নেই। বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু বস যেতে দেয় নি।
” মে আই কাম ইন?
“ইয়েস কামিন
চোখ বন্ধ রেখেই বলে সাদি।
” দোস্ত আই এম ইন লাভ
আবির এক প্রকার দৌড়ে এসে বলে।
সাদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় আবিরের দিকে।
“তোর আর আমার মধ্যে এরকম সম্পর্ক না যে তোর এরকম কথা শুনে আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠবো।
সাদি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে।
” ওহহহ তাই তো।
কিন্তু কি কারবো বল তো?
আমি আবার তোকে না জানিয়ে কিছু করতে পারি না।
বাঁকা হেসে বলে আবির।
“আমার বোনের থেকে দুরে থাকবি। ইটস মাই ওয়ার্নিং।
আঙুল তুলে চোয়াল শক্ত করে বলে সাদি।
” কুল কুল

সাদির আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে বলে আবির।
“তোর বোনকে আমার ভালো লাগে না। একদম তোর মতো।
আমি তো ওই পিচ্চিটার প্রেমে পড়েছি।
বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে আবির।
সাদি উঠে দাঁড়ায়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
” ইলেকশনে দাঁড়াচ্ছি। বিপুল ভোটে পাশ করবো। আর তার আগেই পিচ্চিটাকে
সাদি ফোনটা হাতে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। আর কিছু শোনার নেই ওর।

ছোঁয়া পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে। পরি ফোনে গেমস খেলছে আর খাচ্ছে।
“আচ্ছা সোনা তোমার বাবা কে?
ছোঁয়া পরিকে প্রশ্ন করে। পরি ফোন থেকে মুখ তুলে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” আমার বাবার নাম সিফাত। (আমলা বাবাল নাম ছিপাত)
আলো পাপাল নাম পাদি
ছোঁয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে। সাদি উচ্চারণ করতে পারে না পরি। ছোঁয়খে হাসতে দেখে পরিও হাসে।
“আবার বলো মা।
” পাদি পাদি পাদি পাদি
পরি বলতেই থাকে আর ছোঁয়া হাসতে থাকে।
তখনই হুরমুর করে রুমে ঢুকে সাদি।
দুজনই চুপসে যায়। কারণ সাদির চুল গুলো এলোমেলো শার্টের ইন খুলে গেছে এক পাশের। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।
ছোঁয়ার মুখের ওপর একটা শপিং ব্যাগ ছুঁড়ে মারে সাদি। ছোঁয়া চমকে ওঠে।
“বোরকা ছাড়া যেনো এক পাও বাড়ির বাইরে যা যায়। নাহলে পা কেটে রেখো দেবে। ইডিয়েট।
বলেই আবার গটগট করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
ছোঁয়া আরও পরি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কি হলো বেপারটা?

” পাপা বতলো কেনো? (পাপা বকলো কেনো?)
ছোঁয়াকে প্রশ্ন করে পরি।
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“এটাকে বকা বলে না মা। এটাকে বলে টর্নেডো। ছোটমট একটা ঘুর্ণিঝড় বয়ে গেলো।
বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে ছোঁয়া।
” মা আবার তোমার পাপার নামটা বলো তো?
“পাদি পাদি পাদি পাদি।
” এই নাম তোমায় কে শিখেয়েছে?
সাদি কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে পানি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। এবার কি হবে?
“বলো মা? কে শিখিয়েছে?
” মাম্মা

বলেই পরি এক দৌড় দেয়।
ছোঁয়া চোখ পাকিয়ে পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
পরি তো পালিয়ে গেলো এখন ও কি করবে? কোথায় পালাবে?
সাদির দিকে তাকানোর সাহস নেই।
আস্তে করে খাবারের থালাটা বিছানায় নামিয়ে এক দৌড় দিতে যায় ছোঁয়া।
কিন্তু দৌড় দেওয়ার আগেই ঠাস করে পড়ে যায়।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“আমার নাম কি?
ছোঁয়ার দিকে এগোতে এগোতে বলে সাদি।

অন্যরকম তুমি পর্ব ৪

ছোঁয়ার বুক টিপটিপ করছে। এই লোকটার চেহারা দেখলেই ভয়েরা দলের বেঁঊে হাজির হয়।
” কি নাম আমার?
ধমক দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।

অন্যরকম তুমি বোনাস পর্ব