অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৬

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা

সংসারে সবার মন জয় করে চলা খুব কঠিন কাজ। আর শাশুড়ী যদি হয় সাবিনা বেগমের মতো তাহলে তো কথাই নাই। মন জয় তো দূরের কথা মনের আশেপাশেও জায়গা হবে না। এই যে ছোঁয়া সুন্দর করে রান্না করেছে ডাল, ভাত, আলু ভাজি, পাঙ্গাশ মাছ, মুরগীর মাংস।

বড়লোকদের বড়বড় কারবার। এতো খাবার কে খাবে? তবুও রান্না করতে হবে।
শাশুড়ীর অর্ডার বলে কথা।
এখন সে থালাবাসন ধুচ্ছে। এতো এতো থালাবাসন।
সাবিনা গম্ভীর মুখ করে রান্নাঘরের সামনে বসে আছে। পুরোটা সময় এখানেই বসে ছিলো। মাঝেমধ্যে মনি এসেছে দুই একবার ছোঁয়াকে সাহায্য করতে। কিন্তু সাবিনাকে টপকে ছোঁয়া ওবদি পৌঁছাতে পারে নি। ছোঁয়া একটু পরপর শাশুড়ীর দিকে তাকাচ্ছে। রোবট না কি উনি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পাষাণ শাশুড়ী। একটু তো সাহায্য করতে পারতো। সাহায্য না করলো একটু কথা বলতে তো পারে। তাতে ছোঁয়ার কাজ করতে সুবিধা হতো।
ছোঁয়া এতোখন খুব কষ্টে চুপ ছিলো। এবার আর চুপ করে থাকতে পারে না। একটু হেসে বলেই ফেলে
“শাশুড়ী আপনার কি গলা ব্যাথা করছে? টি*পে দিবো একটু?
সাবিনা রেগে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া দাঁত কেলিয়ে বলে

” শাশুড়ী আপনি কিন্তু নেগেটিভ ভাববেন না। আমার মন অতো দুষ্টু না। কথা বলছেন না। চুপচাপ আছেন। তাই ভাবলাম গলা ব্যাথা করছে মনে হয়। তাই কথা বলতে পারছেন না।
“চুপচাপ কাজ করো। বেশি কথা আমার পছন্দ না।
ছোঁয়া থালাবাসন রেখে আরাম করে তাকের ওপর বসে। পাঙ্গাশ মাছের পাতিল থেকে এক টুকরো মাছ তুলে সেটা মুখে নিয়ে বলে

” আপনার আর আপনার সাদুর কি কি পছন্দ আমাকে বলুন। আমি আরামসে শুনছি। আপনার আম্মুও আপনার মুখে মধু দেয় নি আপনিও আপনার ছেলের মুখে মধু দেন নি। তো শুনি এবার দুজন মধুহীন মানুষের পছন্দের তালিকা।
সাবিনা দাঁড়িয়ে যায়। এই মেয়ের সাহস দেখে তিনি অবাক হয়ে গেছে। শাশুড়ীর মুখের ওপর এভাবে টরটর করছে।
“ভদ্রতা শিখো নি তুমি?

হঠাৎ সাদির কন্ঠে চমকে ওঠে ছোঁয়া। এক লাফে নেমে যায়। সাদি পানির বোতল হাতে নিয়ে সাবিনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে এসেছিলো পানি নিতে। ছোঁয়ার কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। এই সময় এই বেডাকে এখানে আসতে কে বলেছে?
সাবিনা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে

” দেখ দেখ তোর বউয়ের ব্যবহার দেখ।কিভাবে কথা বলছে দেখ একবার।
সাদি শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার ছোট্ট মনে একটা প্রশ্ন জাগে। এবং সে এটা দমন করতে না পেরে বলেই ফেলে

“কথা তো শুনতে হয়। সাদুবেবি দেখবে কি করে?
সাবিনা চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দেয়। সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায়।
ছোঁয়া কথাটা বলেও বিপদে পড়লো। এখন কতোখন এভাবে তাকিয়ে থাকবে কে জানে?
ছোঁয়া আড়চোখে একবার সাদির দিকে তাকায়। নাহহহ এখনো তাকিয়ে আছে।

” আমি জানি আমি সুন্দর। তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকবেন? নজর লেগে যাবে তো সাদু বেবি
সাদি এবার আর সহ্য করতে পারে না। ধমক দিয়ে ফেলে
“সাট আপ ইডিয়ট

কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। দুই কানে হাত চেপে ধরে। হাতে মাছের ঝোল লেগে ছিলো তা কান আর চুলে মেখে যায়। সাবিনা মনে মনে খুশি হয়। এই মেয়েকে সারাক্ষণ ধমকে ধমকে রাখা উচিত। বেয়াদব মেয়ে একটা।
সাদি হাতের পানির বোতল দেয়ালে ছুঁড়ে হনহনিয়ে চলে যায়। বোতল দেয়ালে লেগে চেপ্টা হয়ে ছোঁয়ার পায়ের কাছে এসে পড়েছে। ভয়ে ছোঁয়া কাঁপছে। সাবিনা বেগমও ভয় পেয়ে গেছে। ছেলে তার বরাবরই একটু বেশি মেজাজি। তবে বোতলটা যদি ছোঁয়ার লাগতো তাহলে?

বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টেনে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়। ছোঁয়াকে কাঁপতে দেখে একটুখানি মায়া হয়।
” কথাবার্তা সাবধানে বলবা। এটা তোমার বাবার বাড়ি না।
ছোঁয়া সাবিনার দিকে এক পলক তাকায়। সাবিনা ছোঁয়ার হাত ধরে তাকে বেসিনের সামনে নিয়ে যায়। হাত ধুঁয়িয়ে দেয়। কান আর চুল থেকে ঝোল মুছে দেয়। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়েই আছে। মনটা তার ভালো হয়ে গেছে। ভয়ও চলে গেছে। শাশুড়ী রসকষহীন হলেও একটুখানি ভালোও আছে।

“মুখ কম চালাবে। বেশি কথা পছন্দ না আমার সাদুর।
ছোঁয়া টুপ করে সাবিনার গালে চুমু খায়। সাবিনা বড়বড় চোখ করে তাকায়।
সাবিনার দুই গাল টেনে দিয়ে বলে
” আমার সুইট শাশুড়ী।

আপনার ছেলেকেও একটা চুমু দিয়ে আসি। আপনারা দুজনই প্রচুর সুইট
বলেই ছোঁয়া এক দৌড় দেয়। সাবিনা থামাতে পারে না।
“আজকেএই মেয়ে মারা পড়বেই। কোন দুঃখে একে হাত ধুঁয়িয়ে দিতে গিয়েছিলাম? আস্ত বাঁদর একটা।
সাবিনা বিরবির করে বলে।
সাদি অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। পরি ফ্লোরে বসে খেলছে। কুকুর বিড়াল খাচ্ছে। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সব কিছু দেখে নেয় একবার।

তারপর নিজের হাতের বোতলটা পেছনে নিয়ে নেয়।
হেলেদুলে এগিয়ে যায় সাদির দিকে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাদি গরম চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়া বাঁকা হাসে।
সাদি বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে বলে

” সরো সামনে থেকে।
ছোঁয়া চোখ মুখ শক্ত করে জোরে ধমক দিয়ে ওঠে
“সাট আপ ইডিয়ট
তারপর হাতের বোতলটা দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে। দেয়াল ওবদি যায় না বোতলটা। বিছানায় গিয়ে পড়ে।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
পরি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
ছোঁয়া হতাশ হয়। এটলিস্ট পরি ভয় পেতে পারতো।
সাদি ট্রাই ঠিক করতে করতে বলে

” ড্রামা শেষ?
ছোঁয়া কথা বলে না। সে মোটামুটি লজ্জা পেয়েছে। সে আইডিয়া করেছিলো পরি ভয় পাবে। এবং কেঁদে ফেলবে। এটা দেখে সাদি বিচলিত হয়ে উঠবে। কিন্তু উল্টে মজা পেলো বাচ্চাটা।
ছোঁয়া নিরবে সাদির সামনে থেকে সরে যায়। পরির পাশে বসে পড়ে।

“আমার পারসোনাল রুম লাগবে। আপনার সাথে থাকতে পারবো না।
সাদি একদম পারফেক্ট রেডি হয়ে হাতে কিছু ফাইল তুলে নিয়ে বলে
” পাশের রুমটা তোমার।
ছোঁয়া বিরক্ত হয়। সব প্রশ্নের উওর একদম ঠোঁটের কাছে এসেই থাকে। সময়ই নেয় না। মানুষ না রোবট উনি?
সাদির ফোন বেজে ওঠে। সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোন রিসিভ করে।

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৫

“হ্যাঁ সিমি
সব ঠিকঠাক
বলতে বলতে চলে যায়। ছোঁয়া অবাক হয়ে তাকায়। সিমি? মানে তার আপুর সাথে কথা বলছে? সে জানে তার বোন কোথায়? তাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে?
তাহলে ছোঁয়াকে কেনো বলি দিলে?

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৭