অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৭

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা

উড়ণচন্ডী ছোয়ার শুধু একটু সুযোগ চাই উড়ার। সুযোগ পেলেই সে আকাশে ডানা মেলতে প্রস্তুত। সে বেশি কথা বলে, সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে, একটুও স্থির থাকতে পারে না। তবে তার মন পরিষ্কার। কেউ একবার তাকে ধমক দিয়ে পরেরবার ভালোবেসে ডাকলেই তার রাগ উড়ে যায়। সে রেগে থাকতে পারে না।

পরিকে সে স্কুলে পাঠাবে। তার মনে বাচ্চারা কথা শেখার পরপরই তাদের বিদ্যালয়ে দেওয়া উচিত। আর পরিকে তো আরও দেওয়া উচিত। কারণ সে প্রচন্ড পাকা। এতো পাকা মেয়ে নিশ্চয় পড়ালেখায়ও ভালো হবে।
তাছাড়া এতে ছোঁয়ারও লাভ আছে। সে সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকতে পারছে না। এভাবে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে বাঁচা যায় না কি? মুক্ত আকাশে উড়াল দিতে চায় তার। এমনিতে সে উড়াল দিতে গেলে জল্লাদ শাশুড়ী ডানা কেটে দিবে৷ আর নিরামিষ বর করলা খাইয়ে দেবে। পরিকে স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসার কথা বললে অবশ্যই কেউ কিছু বলবে না। আরও খুশি হবে। এমনটাই ধারণা তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোঁয়া তার মনোভাব খাবার টেবিলে সবার সামনে প্রকাশ করে ফেলে। তনু ফিক করে হেসে ফেলে। বাকিরা গম্ভীর ভাবে বিষয়টা ভাবছে। তনুকে হাসতে দেখে সাবিনা বেগম চোখ পাকিঁয়ে তাকায়। ছোঁয়াও এগিয়ে এসে বলে
“হাসছো কেনো? আমি তো ভালোর জন্যই বলছি। তাছাড়া আমি পরিকে সাথে করে নিয়ে যাবো এবং নিয়ে আসবো। তোমাদের কোনো চিন্তা নেই।
তনু বলে ওঠে

” ভাবি তুমি পরিকে স্কুলে নিয়ে যাবে? ও এখনো সেরেলাক খায়। তিন বছর সবে ওর। ওকে কোনো স্কুলেই নিবে না।
ছোঁয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। ওর এই চার দেয়ালেই বন্দি হয়ে থাকতে হবে। এখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই?
সাগর বলে ওঠে

“ভাইয়ার সামনে বলো না প্লিজ। তোমায় উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো তোমায়।
আরও কিছু বলতো চেয়েছিলো কিন্তু সাবিনার গরম চোখে চোখ পড়তেই থেমে যায়। মাথা নিচু করে খেতে শুরু করে। সাদির কথা বলতেই ছোঁয়া ভেংচি কাঁটে।
সাবিনা তার স্বামীর প্লেটে আরও দুটো রুটি দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়ে যাও তোমার বরকে ডেকে আনো।
ছোঁয়া ধপ করে দাদাশ্বশুরের পাশে বসে পড়ে।

“একটু আগে ধমক খেয়েছি
পেট ভরে গেছে আর খেতে চাই না। ছেলে তো একটা বানিয়েছেন আস্ত হনুমান। মায়াদয়া নেই শরীরে। এই আমি ছোঁয়া এক পুরুষে আসক্ত বলে সংসার করছি নাহলে কবেই ফুড়ুৎ করে উড়াল দিতাম।

নেহাৎ ভালো মেয়ে আমি
সেলিম মুখ টিপে হাসে। আব্দুল্লাহ সাগর তনু শব্দ করে হেসে ওঠে। সাবিনা দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
সাদি পরির হাত ধরে পেছনে দাঁড়িয়েছে। একটু আগেই এসেছে সে। ছোঁয়ার বক্তব্য শুনতে পেয়েছে সে। দিন দিন মেয়েটার প্রতি বিরক্ত আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। এর অতিরিক্ত কথা শুনলেই ইচ্ছে করে মাথায় তুলে আছাড় মারতে। বেয়াদব একটা
পরি এক দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে আসে

” মাম্মা তুমি চলে যাবে?
ছোঁয়া চমকে ওঠে। বিচ্ছুটা এখানে মানে তার জল্লাদ পাপাও এসেছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ছোঁয়া আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে। সাদির রসকষহীন চেহারা দেখে শুকনো ঢোক গিলে সেলিমের পেছনে গিয়ে বসে পড়ে।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে চেয়ারে বসে পড়ে। পরিকেও পাশে বসিয়ে দেয়।
তারপর দক্ষ হাতে পরির প্লেটে রুটি ডিম এবং কয়েক টুকরো করলা ভাজি দেয়।
বেপারটা ভালো লাগে না ছোঁয়ার। এই টুকু বাচ্চা এভাবে খাবে কিভাবে? তাছাড়া সে রুটি খাবে কিভাবে? তাও আবার করলা দিয়ে।

সাবিনা সাদির প্লেটে করলা ভাজি আর রুটি দিচ্ছে। সাথে আস্ত একটা করলা সিদ্ধ।
সাদি কাটা চামচ আর ছুড়ি দিয়ে রুটি কাটতে কাটতে গম্ভীর গলায় বলে
“ওই মেয়েকে চলে যেতে বলো। এখানে তার কোনো প্রয়োজন নেই। আগাছা সে,বাবা কি বলেছিলে?
আমার পরিকে সে দেখে রাখবে? মুরোদ আছে তার? বকবক করা ছাড়া আর কি পারে সে?
ছোঁয়া রেগে যায়। কোমরে আঁচল গুঁজে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঝগড়া করবে এবার সাদির সাথে এটাই তার মত।
ছোঁয়ার অবস্থা দেখে সাবিনা বলে ওঠে

” এটা তোমার নিজের বাড়ি না। এখানে যে যা বলবে চুপচাপ মেনে নিতে হবে। কোমরে আঁচলে গুঁজে ঝগড়ার প্রস্তুতি নেওয়া যাবে না৷
ছোঁয়া ভেংচি কেটে পরিকে কোলে তুলে নেয় এবং তার প্লেট হাতে তুলে নেয়
“এটা আমার শশুড় বাড়ি। আপনার ছেলেকেও কম কথা বলতো বলবেন। বকবক পছন্দ না আমার। উনিও এই বাড়ির আগাছা। ওনাকে চলে যেতে বলুন।

বাবা ঠিক বলেছি?
দাদাভাই কথায় যুক্তি আছে?
সাদি কাটা চামচ শক্ত করে ধরে। সেলিম আর আব্দুল্লাহ দুজন দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কি উওর দেবে তারা?
ছোঁয়া পরিকে নিয়ে ফ্লোরে বসে। কোলে বসায় পরিকে। তারপর খাইয়ে দিতে থাকে।
সাবিনা শুকনো ঢোক গিলে। ছেলে তার রেগে গেছে। মেয়েটার গায়ে হাত না তুলে।
সাদি এক প্রকার চিৎকার করে বলে ওঠে

” তাকে আমি বিয়ে করেছি। তার জন্যই সে শশুড় বাড়ি পেয়েছে। নাহলে
সাদিকে থামিয়ে ছোঁয়া হাসি হাসি মুখ করে বলে ওঠে
“সাদু বেবি আমাকে বিয়ে করেছেন? ইসসস লজ্জা জনক বেপার। এটা বড়দের সামনে এভাবে বলতে নেই। আপনার বউ লজ্জা পায়। ভাগ্যিস ফুলসজ্জা হয় নি
সেলিম কেশে ওঠে। তনু মাথা নিচু করে ফেলে।

সাদি চামচ ফেলে হনহনিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। সাবিনা তেরে আসে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া বলে ওঠে
” শাশুড়ী ঝগড়া করতে আসবেন না। এটা আমারও শশুড় বাড়ি আপনারও তাই। বেশি কথা পছন্দ করি না আমি। কথা কম বললে হায়াত বাড়ে। আপনাকে তো দীর্ঘ দিন বাঁচতে হবে বলুন। আমার ছেলের বউদের সাথে ঝগড়া করতে হবে তো।
সাবিনা কটমট করতে করতে চলে যায়। পরি প্রশ্ন করে

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৬

“মাম্মা ফুলসজ্জা কি?
ছোঁয়া গোল গোল চোখ করে পরির দিকে তাকায়।
“আমিও তো জানি না। রাতে আমি তুমি দুজন মিলে তোমার পাপাকে জাপ্টে ধরবো। তারপর সে বলবে। কেমন?
পরি মাথা নাড়ায়।
ছোঁয়া চুমু খায় পরির গালে।

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৮