প্রেয়সী পর্ব ৪১

প্রেয়সী পর্ব ৪১
নন্দিনী নীলা

মধু চোখ পিটপিট করে তাকালো। কোথায় আছে সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে। ও চোখ মেলতেই মুখের সামনে ফুয়াদ কে বসে থাকতে দেখল। ফুয়াদ কে দেখতেই ওর ভয় কেটে গেল ও ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আমি কোথায়?”
ফুয়াদ ওর হাত ধরে টেনে তুলে বসালো। মধু ফুয়াদের হাত ধরে আবার উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,” বাপি ভাইয়া কোথায়?”

ফুয়াদ ওর হাত ধরে ওকে আস্বস্ত করে বলল,,” ওরা চলে গেছে। তুমি শান্ত হ‌ও।”
মধু ফুয়াদের হাত শক্ত করে ধরে ছিল। ওরা চলে গেছে শুনে মধু অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল ফুয়াদের দিকে।
” আমাকে রেখেই চলে গেল?”
পাশ থেকে তিন্নি বলে উঠল,,” এমনি এমনি কি রেখে গেছে নাকি! তোকে রাখার জন্য ভাইয়ার কচ যুদ্ধ করতে হয়েছে। তোর ভাই, বাপি শত চেষ্টা করেও আমার ভাইয়ের কাছ থেকে তোকে নিতে পারে নাই। আর পারবেও না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মধু তিন্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে ফুয়াদের দিকে তাকাল। ফুয়াদ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মধুর কি হলো কে জানে ও আচমকাই ফুয়াদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। আর বলতে লাগল,,” থ্যাংকিউ।”
ফুয়াদ মধু কে দুহাতে জড়িয়ে ধরে তিন্নি কে উদ্দেশ্য করে বলল,,” তিন্নি তোর বান্ধবী মনে হয় আমার প্রেমে পরেই গেল।”
তিন্নি মধু কে ফুয়াদের বুকে মাথা রাখতে দেখেই রুম ত্যাগ করেছে। তাই তিন্নির উত্তর এল না।
মধু শার্টের উপর দিয়েই ফুয়াদের বুকে কামড়ে ধরল।

ফুয়াদ ওর কাঁধ ধরে টেনে বুক থেকে সরিয়ে বলল,,” রাক্ষু’সী র মতো কাম’ড়াকা’মড়ি করছো কেন? খিদে পেলে বলো খাবার দিচ্ছি আমি তো খাবার নয় আমাকে খেতে চাচ্ছ কেন?”
মধু নাক ফুলিয়ে বলল,,” আমি আপনার প্রেমে পরি নাই আর না পরব।”
” আমার প্রেমে তো তুমি হাবুডুবু খাচ্ছ সুইটহার্ট। যাইহোক খাবে চলো।”
মধু রুমে চোখ বুলিয়ে বলল,,” আমি আপনার রুমে কীভাবে এলাম?”

” ভাইয়ের এক ধমক খেয়েই তো অজ্ঞান হয়ে গেলে। কি আর করব গার্লফ্রেন্ড বলে কথা তাই কোলে করেই অজ্ঞান গার্লফ্রেন্ড কে রুমে আশ্রয় দিলাম।”
” আপনি তাদের কীভাবে তাড়ালেন?”
” শশুর মশাইয়ের কাছে তো বিয়ের প্রস্তাব ও দিয়ে দিয়েছি। তাকে বলেছি বিয়েতে সম্মতি দিন তাহলেই মেয়ে ফেরত পাবেন তাও অনলি তিন দুইদিনের জন্য। তারপর আবার আমার ব‌উ আমি আমার কাছে নিয়ে আসব।”

” আপনাকে বিয়ে করবে কে?”
” তুমি!”
” আমাকে পাগলে ধরেছে নাকি আমি আপনাকে বিয়ে করব না যান তো।” বলেই মধু বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। বাইরে পা বাড়াবে পেছনে থেকে ফুয়াদ ওর হাত ধরে আটকে বলল,,” বিয়ে তো করতেই হবে জান। এখন বলো তো তখন জ্ঞান কেন হারালে?”

মধু থতমত খেয়ে আমতা আমতা করতে লাগল। ফুয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মধু বলল,” ভয়ে আমি ভাইয়াকে অনেক ভয় পাই তো।”
ফুয়াদ ওর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কোলের উপর ফেলে বলল,,” সুইটহার্ট তুমি মিথ্যা টাও ঠিকমতো বলতে পারো না। আর অভিনয়ে ও কাঁচা। তুমি অজ্ঞান হ‌ও নি। তখন সবটাই অভিনয় করেছ। জ্ঞান হারানোর অভিনয়। যাতে তোমায় আমার কাছ থেকে কেউ দূরে নিয়ে যেতে না পারে।

তুমি নিজ ইচ্ছায় আমার কাছে থেকে গেলে। তুমি জানতে ভাইয়ের সাথে চলে যাওয়া মানে আমার থেকে দূরে যাওয়া। যেটা তুমি চাও না। তাই এতো সুন্দর অভিনয় করলে তাই না সুইটহার্ট? কিন্তু মানতেই হয় তুমি ভালো অভিনয় করো কেউ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেনি তুমি নাটক করছিলে।”

মধু চুরি করতে গিয়ে ধরা খাওয়ার মতো আঁতকে উঠল। এভাবে ফুয়াদের কাছে ধরা খাবে স্বপ্নেও ভাবেনি। ও ঢোক গিলে যথেষ্ট রাগী চোখ মুখ করে বলল,,” দেখুন মনগড়া কাহিনী বানাবেন না।আমি যেতে চাই না ঠিক আছে কিন্তু সেটা শুধুমাত্র ভয় থেকে। আপনার জন্য নয়। আপনার থেকে দূরে থাকাই আমার জন্য আনন্দের। আমি চলে যেতে পারলেই শান্তি পেতাম আপনার জ্বালাতন সহ্য করতে হতো না কিন্তু আমি এখন বাড়ি ফিরে গেলে বাপি আর ভাই আমাকে শুধু বকবে না মারবে ও। আমি চাই খালামনির সাথে বাসায় ফিরতে তিনি তাদের‌ কন্ট্রোল করতে পারবে।”

” সুইটহার্ট তুমি ধরা পরে গেছ। তুমি নিজেও জানো তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার সঙ্গতা তোমার পছন্দ তুমি আমার কাছাকাছি থাকার জন্য এতো বাহানা করছো। কিন্তু তুমি অনেক জেদি স্বীকার করবে না সহজে।”
মধু ঝামটা মেরে ফুয়াদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে,,” নো আমি আপনাকে ভালোবাসি না।”
বলেই রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।

বাইরে আসতেই দেখতে পেল মিতুল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে রাগে‌। মধু কে বের হতে দেখতেই ওর হাত মুচড়ে ধরে টেনে নিচে নিয়ে এল।
” আন্টি মধুকে এই মুহূর্তে বাসা থেকে বের করে দিন। ওর জন্য ফুয়াদ আমাকে বিয়ে করতে চায় না। ও ফুয়াদ কে বশ করেছে। ওর জন্য ফুয়াদ আপনার কথার বাইরে গিয়েছে। সব এই মেয়েটা করেছে। আপনাদের বাসায় আশ্রয় নিয়ে আপনাদের ই সর্বনাশ করছে। ওকে আর এক সেকেন্ড ও এই বাসায় রাখবেন না প্লিজ।”

নাফিসা বেগম সত্যি মধু কে টেনে বাসার বাইরে বের করে দিল। মধু কে উনি একটুও সহ্য করতে পারছেন না। ফুয়াদ মধুর জন্য মধুর ভাই আর বাবার সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করেছে।যে মেয়ের জন্য আমার বড়ো ছেলেকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল সেই মেয়েকে উনি কীভাবে সহ্য করবে। এই মেয়ের জন্য ফুয়াদ সবাইকে ভুলে বাইরে থেকেছে। এই মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব ও দিয়ে দিয়েছে। গার্জেন হিসেবে উনাকে ও তোয়াক্কা করেনি ছেলে এখনি এই দশা এই মেয়ে বাড়ির ব‌উ হয়ে এলে সব শেষ হয়ে যাবে। উনার সোনার ছেলে এখনি মাকে গোনায় ধরে না আর কি ধরবে?

মধু শান্ত নরম মনের নাফিসা বেগমকে চিনেছে এতো দিন। তার হঠাৎ এমন আচরণ হজম করতে পারছে না। এই বাসায় আসার পর তার আদর ভালোবাসা পেয়েছে সব সময় তার এতো কঠোর আচরণ ওকে আঘাতে জর্জরিত করে তুলল ও পাথরের ন্যায় সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বাইরে বের করে নাফিসা বেগম দরজা আটকে দিয়েছে। মধু হতবাক হয়ে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দেখে ফাহাদ মায়ের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করে দৌড়ে ফুয়াদ কে খবর দিতে গেল। ফুয়াদ বিছানায় কেবল গা এলিয়ে দিয়েছিল ফাহাদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দৌড়ে নিচে নামল। মা এতোটা কঠোর হতে পারে ও কল্পনা করতে পারছে না।

মায়ের পাশে পৈশাচিক হাসি দিতে মিতুল কে দেখে ওর মাথায় রক্ত চড়ে গেল। ও দাঁতে দাঁত চেপে মিতুল কে বলল,,” আমার মায়ের সুন্দর মাথাটা নষ্ট করতে তুমি হাজির তাহলে?”
মিতুল নাফিসা বেগম কে আটকাতে বলল ফুয়াদ কে যাতে মধুর কাছে যেতে না পারে।
নাফিসা বেগম এগিয়ে এসে ফুয়াদকে কসম দিয়ে আটকাতে চাইল ফুয়াদ রাগী গলায় বলল,,

” উফফ মা সব সিকোয়েন্সে তোমার কসম না দিলে চলে না? আমার জীবনের অর্ধেক সুখ তুমি কসম দিয়ে কেড়ে নিতে চাও? তুমি কি চাও না তোমার ছেলে খুশি থাকুন নাকি চাও সারাজীবন জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাক।”
নাফিসা বেগম বললেন,,” আমি তোর জন্মদাত্রী। আমি তোর সুখ কেন কেড়ে নেব?”
” মধু কে আমি ভালোবাসি মা। ওকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নাও।”

বলেই মিতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আমি এমন কোন মেয়েকে চাইনা যে সব সময় কুট কাচালি নিয়ে থাকে।”
” হ্যালো ওই ফুয়াদ কে আমি ছাড়ব না। আমার বোন কে আমার সামনে জোর করে রেখে দিল যেন আমার থেকে ওর অধিকার বেশি। আমার বোনের উপর যেন আমার কোন অধিকার নাই।”
রাগে ফেটে পরে বলল মামুন।

ফোনের অপরপাশে লোকটা কুটিল হেসে বলল,” জার্নালিস্ট আবরার ফুয়াদ দেখি দিন দিন শত্রু বাড়িয়ে তুলেছে। দেখো মিস্টার মামুন তোমার বোনের অধিকার তুমি না পেলেও আমি চাই। তাই সেই ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।”
” ফুয়াদ কে রাস্তা থেকে সরাতেই হবে ওর জন্য আমাদের অর্ধেক কাজ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। রমেশচন্দ্র কে ধরিয়ে দিল ওর জন্য এখন কাজ করা যাচ্ছে না। ও কাজের দিকেও আমাদের জীবনে এন্টি নিয়েছে এখন আমার বোনকেও হাতিয়ে নিতে চাইছে। তুমি ওর পেছনে গোয়েন্দা রেখেছ কিন্তু কিছুই তো করতে পারছ না।”

প্রেয়সী পর্ব ৪০

” তোমার বোনকে নিয়ে হেডলাইন হলে তোমার কোন সমস্যা আছে?”
” গোপনে খারাপ কাজ করলেও সমাজে একটা সম্মান আছে আমাদের। তাই বোনকে নিয়ে এসব করে ফুয়াদ কে ফাঁসাতে চাই না। আমার বোনের সম্মান মানে আমাদের সম্মান। ওকে বাদ দিয়ে ওই ফুয়াদ কে একা যা করার করো।”
ওপাশ থেকে কল কেটে গেল। মামুন অকথ্য ভাষায় গালি দিল ফোনের লোকটাকে। মুখের উপর ফোন কেটে দিল ওকে বিন্দুমাত্র সম্মান দেয় না।

প্রেয়সী পর্ব ৪১ শেষ অংশ