প্রেয়সী পর্ব ৪১ শেষ অংশ 

প্রেয়সী পর্ব ৪১ শেষ অংশ 
নন্দিনী নীলা

সকাল থেকে না খেয়ে আছে মধু তার উপর যা সব ফেইস করছে তাতে ওর অবস্থা নাজেহাল। ও থমকানো মুখভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সদর দরজার সামনে। সমুদ্র বাইরে থেকে তখনি বাসায় ঢুকে। দরজার সামনে এসে মধুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কপাল কুঁচকে আসে। মধু একা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? ও তো ফুয়াদের সাথে ছিল! হতবুদ্ধি গলায় মধুকে ডেকে এগিয়ে আসতে লাগে। এদিকে মধু সমুদ্রের আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র বিস্মিত নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

কাছে এসে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করল,,,” তুমি এখানে কীভাবে? ছোটো কোথায়? একা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
এক দমে এত্ত গুলো প্রশ্ন করে থামল সমুদ্র। মধু কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ টলমল করছে নোনা জলে। পলক পরতেই তা গাল গড়িয়ে পড়ল। সমুদ্র হতভম্ব হয়ে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে‌। ওর চোখে জল দেখে ও পুরাই থমকে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কি হলো কাঁদছ কেন?”
মধু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল মুছে নিল। তারপর ধীরে সুস্থে কিছু বলতে মুখ খুলবে তখনি দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ফুয়াদ। ফুয়াদ কে নাফিসা বেগম কোন ভাবেই বাইরে আসতে দিচ্ছিল না। ফুয়াদ মাকে জোর করে রুমে নিয়ে যায় তারপর অনেক বলে তিন্নি আর ফাহাদ কে দরজার বাইরে পাহারা রেখে বাইরে আসে। ওর বুক কাঁপছিল মধু আবার অভিমান করে কোন দিকে চলে না যায়।

ফুয়াদ দরজা খোলে মধুকে দরজার সম্মুখে দাঁড়ানো দেখতেই ওর ভয় কাটে। ও সমুদ্রকে খেয়াল করেই না। ও পিঠ করে দাঁড়ানো মধুর বাহু ধরে এক টানে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। মধু আচমকা টানে চমকে আছড়ে পড়ে ফুয়াদের বক্ষস্থলে। ফুয়াদের বুকে মাথা রাখতেই ওর হৃদস্পন্দন এর অস্বাভাবিক গতিবেগ খেয়াল করে। ফুয়াদ হার্টবিট অস্থির হয়ে বিট করছে।

ফুয়াদ ওকে বুকে জড়িয়ে অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,” তুমি ঠিক আছো?”
মধু মূর্তির মতো চুপ করে ওর বুকে মিশে আছে। সমুদ্র গলা খাঁকারি বলল,,” ছোটো তোর বড়ো ভাই এখানে আছে। একটু আশেপাশে দেখে শুনে কাজ কর। তোর না হয় লজ্জা নাই কিন্তু আমার তো লজ্জা করে রে।”
ফুয়াদ সমুদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,,” তুমি কোথা থেকে আসলে?”

” বাইরে গেছিলাম এসে দেখি মধু এখানে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা কি বলত? কিছু ই তো আমি বুঝতে পারছি না।”
ফুয়াদ মধু কে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকল। সমুদ্র কে বলল পরে বলবে সব। সমুদ্র আচ্ছা বলে চলে গেছে। ফুয়াদ তিন্নিকে খাবার নিয়ে ওর রুমে আসতে বলে মধু কে নিয়ে চলে গেল রুমে। এদিকে মিতুল সবটাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করল। ওর মাথা রাগে ধপাধপ করছে।

ফুয়াদ মধুকে হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল ওর চোখের সামনে। ও চেয়ে চেয়ে দেখল শুধু। এতো কষ্ট করে আন্টিকে ম্যানেজ করে আপদ বাসা থেকে বের করল কিন্তু তাও সফল হতে পারল না। রাগে ও ফ্লোরে লাথি মেরে নাফিসার কাছে গেল আরো কান বিষ দিতে।

ফুয়াদ মধু কে রুমে নিয়ে আসার পর থেকে মধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। থামার নাম‌ই নিচ্ছে না। মধু নরম বিছানায় বসে আছে পা ভাঁজ করে। আর নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে। ফুয়াদ প্রথমে ওর হাত ধরে শান্ত করতে চাইল। তারপর কান্না থামাতে বলেছে কিন্তু মধু ওর কোন কথাই কানে নিচ্ছে না। ও এক নাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। ওর কান্না থামছেই না। নাফিসা আন্টি ওকে এতো ভালোবাসা দিয়েছিল সে এখন ওকে সহ্য‌ই করতে পারছে না। ওকে এতো ঘৃণা করে এখন ওকে বাসা থেকেই ওই ভাবে বের করে দিল ও কিছুইতে এই কষ্ট টা মানতে পারছে না।

তিন্নি কে খাবার বাড়তে দেখে ওর মা আনিতা বেগম ওর হাত থেকে থালা কেড়ে নিয়ে বলল,,” কার জন্য খাবার বাড়ছিস?”
” মা প্লেট দাও প্লিজ। ফুয়াদ ভাইয়া নিতে বলেছে।”
” না যার জন্য আমাদের সংসারে এতো সমস্যা হচ্ছে তার জন্য কোন খাবার যাবে না। ফুয়াদ কে বল ওই মেয়েকে বাসা থেকে বের করতে।”

তিন্নি মায়ের কঠিন চেহারা দেখেই নিজেই চমকে গেছে। মুখ বেজার করে ফুয়াদের রুমে আসলো। ফুয়াদ মধু কে থামাতে না পেরে রুমে পায়চারি করছিল। তখনি তিন্নি রুমে এসে ঢুকে বিরস মুখে। ফুয়াদ ওকে দেখতেই বলে,,” তিন্নি তোকে না খাবার নিয়ে আসতে বললাম। খাবার ক‌ই?”
তিন্নি ওর কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,,” ভাইয়া আম্মু তো খাবার দেয়নি। বলেছে মধু কে কোন খাবার দিবে না।”
রাগে ফুয়াদের মুখ লাল হয়ে উঠল। ওর পরিবারের মানুষ জন এতোটা কঠিন আর নির্দয় হয়ে গেছে যে একজন ক্ষুধার্ত মানুষ কেও খেতে দিতে চাইছে না।

ও বিলিভ করতে পারছে না পরিবারের সবাই ওর বিরুদ্ধে চলে গেছে। ফুয়াদ অনলাইনে পিজ্জা অর্ডার করে আনল তারপর মধু কে দিল। অনেক ক্ষুধার্ত দিল মধু তাই খাবার পেতেই কোন কিছু না ভেবে গপাগপ গেল। খাবার খেয়ে ওর মন বলল বাসায় থাকার পর ও কেন ওকে বাইরের পিজ্জা খেতে হলো? ও ভাবনা টা মনে আসতেই ও ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,,” খাবার বাইরে থেকে আনছেন কেন?”

ফুয়াদ বলল,,” বাসার মানুষেরা খাবার না দিলে তে বাইরে থেকেই আনতে হবে।”
” মানে?” অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল মধু।
ফুয়াদ বলল,,” খেয়েছ ক্লান্তি লাগলে ঘুমাও। এতো প্রশ্ন করো না।”
” আমি আপনার রুমে ঘুমাব না।”
” তো কোথায় ঘুমাবে?”

” আগে যেখানে থাকতাম। তিন্নির রুমে।” বলেই মধু রুমের বাইরে যেতে পা বাড়াল। ফুয়াদ পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরে বলল,,” আগের আর এখন কার মধ্যে অনেক তফাৎ। তোমাকে ওখানে রাখার রিস্ক নিতে পারব না।”
মধু কপাল কুঁচকে বলল,,” কিসের রিস্ক?”
ফুয়াদ ওকে টেনে বিছানার বসিয়ে বলল,,”তোমার এতো সব জানতে হবে না। তুমি এখানে ঘুমাও। রাতেও এখানেই থাকবে। আমি ভাইয়ের রুমে থাকব।”

মধু বলল,,” আমাকে আবার তাড়িয়ে না দেয় সেই ভয়ে এসব করছেন তাই না?”
ফুয়াদ উত্তর দিল না।
মধু বলল,” এসব করলেও আমি আপনাকে ভালোবাসবো না। কখনোই না।”
ফুয়াদ ওর কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে ব্যঙ্গ করে হাসল। মধু ওর হাসি দেখে ছোট ছোটো ছোটো করে বলল,,” হাসির কি বললাম?”

ফুয়াদ মধুর দুগালে‌ হাত রেখে চট করেই কপালে চুমু খেয়ে বসল। মধু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ নির্বাক দৃষ্টি ফেলে।
” আচ্ছা রেস্ট করো। আম্মুকে নিয়ে ভেবো না তিনি এখন রেগে আছে রাগ কমলেই আবার কাছে টেনে নিবে।”
বলেই ফুয়াদ বাইরে থেকে দরজা আটকে চলে গেল।

ফুয়াদ চলে যেতেই মিতুল দরজার সামনে এসে দাঁড়াল আর লক খোলার চেষ্টা করতে লাগল। খুলতে না পেরে রাগে গজগজ করতে লাগল। ফুয়াদ মিতুলের হাত মুচড়ে ধরে দরজার সামনে থেকে টেনে সরিয়ে এনে ফেলল।
মিতুল হাত ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করে বলল,,”ফুয়াদ হাত ছাড়ো ভেঙে যাবে তো।”

ফুয়াদ মিতুলের হাত ছেড়ে ওর গলা চেপে ধরল। মিতুল চোখ উল্টে হাঁসফাঁস করতে লাগল।
” তুমি যে মধুর ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়ে এসব করছো? আমি সবটাই জেনে গেছি। আমি জানব না ভেবেছিলে?”
মিতুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে এভাবে ফুয়াদের কাছে ধরা খাবে কল্পনাতে ও ভাবেনি। ফুয়াদ এসব জানল কি করে?

লাস্ট মুহুর্তে এসে ফুয়াদ ওর গলা ছেড়ে দিল। মিতুল গলা ধরে কাঁশতে লাগল।
ফুয়াদ বলল,,” মধুর ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়ে কি ভেবেছ আমাকে পাবে?”
মিতুল ঢোক গিলে অস্বীকার করে বলল,,” এসব কি বলছ ফুয়াদ? আমি এসব কেন করব? আমি তো তাদের চিনতাম‌ই না। না‌ জেনে আমার উপর ব্লেম দিতে পারো না তুমি।”

ফুয়াদ ওর হাত মুচড়ে ধরল আবার আর বলল,,”তুমি মধুর ভাইকে মধুর ঠিকানা দাও নি?”
মিতুল ফুয়াদের লাল চোখের চাহনি ও রাগী কন্ঠস্বর শুনে ভয়ে গুটিয়ে গেল। ও তোতলানো গলায় বলল,,” বিশ্বাস করো আমি শুধু বলেছিলাম এখানে মধু আছে। কিন্তু ওরা আমার জানার আগেই এখানে মধু আছে জেনে গিয়েছিল। আমিতো তাদের খোঁজ বিয়ে বাড়িতে পেয়েছি। তাও ওই আন্টির মাধ্যমে। তিনিই বলেছে সব। আমি শুধু তাকে নিশ্চিত করেছিলাম।”
নাফিসা বেগম কে দেখতেই ফুয়াদ মিতুলের হাত ছেড়ে সমুদ্রের রুমে চলে গেল।

নাফিসা বেগম এসে মিতুল কে চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,,” ফুয়াদ কি বলছিল?”
মিতুল ঢোক গিলে বলল,,” ক‌ই কিছু না তো।”
” দেখে মনে হলো।”

প্রেয়সী পর্ব ৪১

” আসলে আন্টি আমাকে এখন সহ্য করতে পারেনা তো তাই চলে যেতে বলছিল।” মাথা নিচু করে অসহায় মুখ করে বলল মিতুল।
নাফিসা বেগম বললেন,,” ও বললেই হলো নাকি তুমি এখন থেকে এখানেই থাকবে। দেখি ও কি করে!”
নাফিসা বেগম এর কথা শুনে মিতুল শয়তানি হাসি দিল। ও তো এটাই চাইছিল এখানে থাকতে চাইছিল। ওর চাওয়া পূর্ণ হয়েছে। আন্টি বলেছেন মানে ও এখানেই থাকতে পারবে।

প্রেয়সী পর্ব ৪২