অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২১

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২১
লেখিকা:- তারা ইসলাম

মাঝরাতের দিকে নূর ঘুমিয়ে পরলে রুদ্র তার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো- আমি তোমাকে ভালোবাসি নূর।সেখানে তোমার অতীত কি তাতে আমার কিছু যায় আসে না।তুমি নূর”সেখানে তোমার মা যত কু’ৎসি*ত হোক না কেন?তবুও আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো।
“তারপর আবার রুদ্র মনে মনে ভাবলো- সে যে তার অতীত জানতে পেরেছে তা তাকে জানানো যাবে না।নাহলে মেয়েটা একদম ভেঙ্গে পরবে।রুদ্র এবার মাথা থেকে সব ঝেড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

~ সকালে আমি আর রুদ্র একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।উনি খাবার অর্ডার করে ফোনে আমান ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন।আর আমি আশে-পাশে সব মানুষ গুলাকে নোটিস করছি,আর আবোল-তাবোল ভাবছি যেমন মনে মনে এদের দেখে ভাবলাম- এরা কারা?কোথা থেকে এলো?কাউকেই তো চিনি না?আচ্ছা এরা কি মঙ্গল*গ্রহ থেকে এসেছে ও মাই আল্লাহ আমার এমন ভাবনার মাঝেই কেউ আমার হাত ধরে টান দিলো।হুট করে এমন হওয়ায় আমি ভয়ে চমকে উঠলাম।আর হাতের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম হাত আমার রুদ্রই টেনে ধরেছেন।
“উনার এমন কাজে আমি রেগে বললাম- এভাবে হাত টান দিলেন কেন?আরেকটু হলেই তো ভয়ে আমি মা*রায় যেতাম।
“আমার কথা শুনে উনি চোখ ছোট ছোট করে বললেন- মন কোথায় থাকে?আর কি এত ভাবছো যে এভাবে চমকে উঠলে?কত-বার ডেকেছি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“উনার কথায় নিজেকে সামলে বললাম- একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি আবার কি ভাববো বলেই মুখ কালো করে ফে’ললাম।
“উনি এবার চোখ মুখ শক্ত করে বললেন- তোমার মতো গ’র্দ’ভই কেন আমার কপালে ছিলো কে জানে?
“উনার কথায় আমিও রেগে নাক ফুলিয়ে বললাম- আপনার মতো বদ’লোকই কেন আমার কপালে ছিলো কে জানে?ইস আমার কপাল’টাই খারাপ।কোথায় ভেবেছিলাম রকি জানুর মতো কাউকে বিয়ে করবো।কিন্তু গু*ন্ডা একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো।বলেই তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম”বুঝতে পারলাম ভুল টাইমে ভুল কথা বলে ফেলেছি এবার নিশ্চয় উনি আমার গ*র্দা*ন নিবেন।আর রকিও তো গু*ন্ডা।আমার ভাবনার দিকে মনোযোগ না দিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
“আমার কথায় উনার চোখ মুখ শ’ক্ত হয়ে এলো।তারপর রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- মিসেস নূর জামান”এটা রেস্টুরেন্ট বলে আজ বেঁ’চে গিয়েছো না-হলে এই মুহুর্তেই তোমাকে আমি ঠু*কে দিতাম।
“উনার কথায় ভয়ে আমি হাত দিয়ে সম্পূর্ণ চেহেরা ডেকে বললাম- বিশ্বাস করুন মির্জা সাহেব আমি এসব বলতে চাই’নি।কিন্তু ওই যে সত্যটা সব সময় মুখে চলে আসে বলেই আস্তে আস্তে চেহেরা থেকে হাত সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু উনি কিছু বললেন না শুধু রাগি চোখে তাকালেন”বুঝতে পারলাম মির্জা সাহেব রেগে আছেন।

“এরই মধ্যে খাবার চলে এলো~ খাওয়ার সময় উনি একটা কথাও বলেন’নি।শুধু আমি একাই বকবক করে গেলাম।পরে আমি ও বিরক্ত হয়ে আর কথা বলি’নি সব-সময় উনি এমন করেন”সব কিছু নিয়েই উনার বাড়াবাড়ি।
~ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে উনি গাড়িতে উঠে বসলেন তবে আমাকে বসতে বলেন’নি+গাড়ির দরজাটাও খুলে দেন’নি।আমি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও উনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন না তখন আমি তেজি গলায় বললাম- আপনি কথা বলছেন না কেন?দরজাটা কে খুলে দিবে?আর আপনি কথা বলবেন নাকি আমি চলে যাবো?
“আমার কথায় উনি বিচলিত হলেন না বরং শান্ত চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন- যা চলে যা।
“উনার কথায় এবার রাগ হলো তাই রাগ নিয়েই বললাম- আমি কিন্তু মজা করছি না!সত্যি সত্যি কিন্তু চলে যাবো বলে দিচ্ছি।
“উনি আগের থেকেও শান্ত গলায় বললেন- তুই বরং আহনাফের কাছেই ফিরে যা।আমার মতো গু*ন্ডা*র সাথে তোর থাকা লাগবে না বলেই একা গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন।
“উনি চলে যেতেই আমি বোকা বনে গেলাম”কি থেকে কি হয়ে গেলো?আমি কি উনাকে কথাটা সিরিয়াসলি বলেছিলাম নাকি?কিন্তু উনি রুদ্র মির্জা নিজের টাই বুঝেন।
“রাগ হলো আমার প্রচুর রাগ হলো তাই মনে মনে রেগে বললাম- শা*লা আবার আসিস নূর ভালোবাসি ভালোবাসি করতে যত্তসব।এসব ভেবেই রেগে আমি ওই স্তান ত্যাগ করলাম।

সওদাগর বাড়ির গেইট দিয়ে ডুকতেই আহনাফের মুখামুখি হয়ে গেলাম।উনি আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন- এলিজা গতকাল নাকি তুমি এখানে ফের’নি?কোথায় ছিলে?এখানে তো তোমার কোনো রিলেটিভ নেই?
“উনার কথায় বিরক্তি নিয়ে বললাম- আমি আমার জামাইয়ের সাথে ছিলাম হয়েছে বলেই জোরে জোরে হেটে বাড়ির ভেতর চলে আসলাম।
“নূরের কথায় আহনাফ মুচকি হাসলো আর মনে মনে বললো- মেয়েটা একদম বা*চ্চা স্বভাবের তবু তাকে আমার ভালো লাগে ভেবেই নিজের কাজে চলে গেলো।
“আমি রুমে এসে তপদা মে*রে এলোমেলো ভাবে শুয়ে রইলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম- এখানে কেন আসলাম?কেমন ছিলাম?কেমন হয়ে যাচ্ছি?কি হচ্ছে আমার সাথে তা আমি একদমই বুঝতে পারছি না।কিন্তু আমার এখন দূর্বল হলে যে চলবে না আম্মুকে খুঁজতে হবে সে ঠিকানায় যে আমাকে যেতেই হবে আজ।আমি চোখ বন্ধ করলাম আর ভাবতে লাগলাম আম্মুর সাথে দেখা হলে আমার রিয়েকশন,অনুভূতি কি হবে তা আমার জানা নেই?আম্মুর সাথে দেখা হবে ভাবতেই আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি বার বার।আচ্ছা উনি দেখতে কেমন?উনি কি আমাকে চিনবেন?আমাকে মেয়ে হিসেবে মেনে নিবেন?কি হবে তা’ আমার জানা নেই।আমি আস্তে আস্তে শুয়া থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আজ আমার অনেক কাজ।

লেয়ান সাহেব চিন্তিত অবস্থায় চেয়ারে বসে আছেন।এখন লান্স টাইম তবু উনি না খেয়ে বসে বসে ভাবতে লাগলেন- নূর যে তার আসল মা’কে দেখার জন্য এত ডেস্পারেট হয়ে যাবে তা উনি কখনো ভাবেন’নি।যে মেয়ে কখনো উনাকে মিথ্যা বলেন’নি সে মেয়ে কি’না তাকে এত বড় মিথ্যা বললো।
“সেদিন উনি নূরের ফোন বন্ধ পেয়ে রুদ্রকে কল করেছিলেন।আর সেদিনই জানতে পেরেছিলেন নূর রুদ্রর সাথে নেই।তা শুনে উনি অবাকের সাথে সাথে নূরের প্রতি অভিমানই করেছিলেন।আর রুদ্র যখন জিজ্ঞাস করলো নূর কেন সে এলাকাতে গেলো তখন উনি কোনো দ্বিধা ছাড়া সব সত্যি বলে দিয়েছিলেন।আর উনার থেকেই রুদ্র নূরের অতীত জানতে পেরেছিলেন।কিন্তু রুদ্র উনাকে কথা দিয়েছিলো যে কখনো নূরের হাত ছাড়বে আর মৃত্যু পর্যন্ত নূরকে সে আগলে রাখবে।তাই সেদিন উনি স্বস্তির নিশ্বাস পেলেছিলেন।রুদ্র যে কত ভালো আর বুঝদার ছেলে উনি বুঝে গিয়েছিলেন।নূরের জন্য রুদ্র একদম পারফেক্ট।এসব ভেবেই উনি বসা থেকে উঠে পরলেন লান্স করা প্রয়োজন উনার।

রেয়ান চোধুরি আর আহান চৌধুরি মুখোমুখি বসে আছেন চিন্তিত অবস্থায়।কারণ পুলিশ এখনো শায়লা খাতুন আর উনার মেয়েকে খুঁজে পান’নি এতেই উনাদের মন-মেজাজ খারাপ।
“নিরবতা ভেঙ্গে আহান চৌধুরি বললেন- মাই বা*চ্ছা অন্য কোনো কি উপায় নেই তাদের খুঁজে বের করার?
“রেয়ান কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফে’ললো।যার অর্থ আর কোনো উপায় নেই।
“আহান চৌধুরি বললে- আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখি তাদের খুঁজে পায় কি’না পুলিশ।ততদিনে ফারিয়া মামনির বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও।
“উনার কথা শুনে রেয়ান বললো- আমিও তাই বলতে চাইছিলাম বাবাই।আগামী সাপ্তাহে ওর বিয়ের তারিখ ঠিক করেছেন উনারা।তাই এখন থেকেই সব আয়োজন করতে হবে।
“আহান চৌধুরি বললেন- হুম
~ ব্যস তারপর আর কেউ কিছু বলেন’নি।

ম্যাডাম আপনের মাইয়ারে আমি এহনো খুঁইজ্জা পাই’নি।হে কোনায় লুকায় আছে কেডা জানে?
“শায়লা খাতুন রাসেলের কথায় চেহেরায় বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন- যেভাবে পারিস ওকে খুঁজে বের কর আমি কিছু শুনতে চাই’না।
“রাসেল বললো- হে আমি খুঁজবো সমস্যা নাই।কিন্তু একটা খবর কি জানেন ম্যাডাম?
“শায়লা খাতুন হালকা রেগে বললেন- এত কথা না ঘুরিয়ে আসল কথা বল কি খবর?
“রাসেল বললো- ম্যাডাম আপনের শক্রু জেসমিনরে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে বলেই অট্টহাসি দিলো।
“রাসেলের কথা শুনে প্রথমে শায়লা খাতুন কিছু না বুঝলেও পরে যখন কথার মানে বুঝতে পারলো তখন উনিও বাঁকা হাসলেন আর বললেন- কেন ধরে নিয়ে গেলো?

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২০

“রাসেল হাসি থামিয়ে বললো- তা তো জানি না?তবে কারোর থেকে জাই*ন্না আপনারে কমু।
“শায়লা খাতুন শুধু হাসলেন তবে কিছু বললেন না।উনি আজ মনে মনে অনেক খুশি কারণ তার চিরশক্রু যে জেলে গেছে ভেবেই তাচ্ছিল্য হাসলেন…….

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২২