মনের কোণে পর্ব ৩৪

মনের কোণে পর্ব ৩৪
আফনান লারা

নাবিল হাত ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে এসেছে।লিখি তখন ফোন নিয়ে আসিফকে কল করে ফিসফিস করে বললো মশলা আরও ঢালতে।
নাবিল সোফায় বসলোনা আসিফের ভয়ে।সে সোজা রুমে চলে গেছে।এদিকে আসিফ তো লিখির কথা শুনার পর তাকে কাজে লেগে পড়তেই হবে।
সে নাবিলের পিছু রুমে চলে আসলো।নাবিল ওকে দেখে বিরক্ত হয়েছে কিন্তু বুঝতে দেয়নি।
আসিফ লুডুর কোর্ট নিয়ে নাবিলের পাশে বসে লিখিকেও ডাক দিয়েছে।লিখিও মৌমাছির মতন এসে হাজির।দুইটা টিমে খেলবে তারা।
এখন আর একজন তো পাওয়া যাবেনা।তাই লিখি বললো সে আসিফের টিমে।নাবিল একা এক টিমে।

নাবিল গাল ফুলিয়ে শেষে রাজিও হলো।
লিখি আর আসিফ মিলে ওর পিছু নিলো।হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
লিখি মনে করেছে নাবিলকে আসিফকে দিয়ে হারিয়ে মনমত জেলাস করাবে।কিন্তু পাশা উল্টে শেষে নাবিল জিতে গেলো।
লিখি আশ্চর্য হয়ে গেছে নাবিলের জেতা দেখে।আসিফ চোরের মতন বারবার ওকে দেখছিল বকুনির ভয়ে।নাবিল খাটে হেলান দিয়ে বসে বললো,’কেমন দিলাম শালাবাবু? ‘!
‘আপনি তো লুডু তে একবারে পাকা খেলোয়াড়’
‘তোমার বোনও তোমায় বাঁচাতে পারেনি’
‘লিখি চলো আমরা দুজন খেলি।নাবিল ভাইয়াকে নেয়া যাবেনা,উনি ভাল খেলেন।’
‘এ কেমন কথা আসিফ?চলো এবার আমি আর তুমি এক টিম আর লিখি এক টিম’
পরিস্থিতি সামলাতে লিখি উঠে বললো,’লাগবেনা খেলার।আমি একা কেন খেলতে যাবো?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অনাবিলদের এখনও আসার নাম নেই।
পথ অনেক দীর্ঘ।তারা ক্লান্ত হয়ে কারেই ঘুমিয়ে পড়েছে শেষে।এখনও দু তিন ঘন্টা বাকি।
রাত তখন এগারোটা বাজে।ডিনার শেষে সবাই শুতেও চলে গেছে।লিখি শাড়ী পরে ঘুমাতে পারেনা।কিন্তু এখন তো ঘুমানোর সময়।নাবিলের বাবা আসতে অনেক দেরি।তাই মন খারাপ করে সে বিছানার কোণায় বসেছিল গালে হাত দিয়ে।নাবিল বালিশ জড়িয়ে চোখ বুজে রেখেছে।
লিখি কখনও মশা তাড়াচ্ছে হাত দিয়ে তো কখনও হাত চুলকাচ্ছে। তার নড়াচড়া টের পেয়ে নাবিল কপাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,’ঘুুমাবেনা?নাকি আসিফ ভাইকে মনে পড়ছে?’
‘জ্বলে?’
‘একটুও না।আমি কি তোমাকে লাভ করি নাকি যে জ্বলবে?’
লিখি তখনই চট করে নাবিলের দিকে ফিরে গালে হাত রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’তবে তাই হোক।আপনি থাকেন আমি একটু আসিফের সাথে ভেলপুরি খেয়ে আসি।আপনি আসতে পারবেননা,আসলে ভাবলো জেলাস হচ্ছেন’
নাবিল পড়লো বিপাকে।লিখি ওর সামনে দিয়ে ডেং ডেং করে চলে গেছে ওকে কথার জালে ফাঁসিয়ে।না পারছে আসিফের সাথে ওকে যেতে দিতে আর না পারছে নিজে সহ যেতে।লিখি ফোন বের করে আসিফকে কল করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেটের পাশে দাঁড়ালো।

আসিফ গভীর ঘুমে ছিল।ফোন বেজে যাচ্ছে তার কোনো খবর নেই।
একবার তো চোখ মেলে কলটাই কেটে দিলো।এরপর আবারও কল আসায় বাধ্য হয়ে উঠে বসে কলটা রিসিভ করেছে।
‘কই তুমি?কল ধরছিলেনা ক্যান?এত জলদি তোমার মতন টিনেজ ঘুমায়?বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে’
‘আরে আমি তো বারোটার দিকে উঠে গেমস খেলবো তাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলাম আগেই।কি বলবে বলো’
‘বের হও বাসা থেকে।আমিও বের হয়েছি।আমরা ভেলপুরি খেতে যাবো’
‘কিহ?এত রাতে?
‘হ্যাঁ,জলদি আসো’
‘পাবা?’
‘না পেলেও আসো।হুদাই হাঁটবো,তাও আসো ‘

আসিফ ঠিক আছে বলে কলটা রাখলো।তারপর চোখ ডলতে ডলতে বের ও হয়েছে।লিখি বারবার পেছনে তাকাচ্ছিল।তার কেন যেন মনে হয় নাবিল ঠিক আসবে।
কিন্তু এতক্ষণেও যখন সে আসলো না তখন লিখি নিশ্চিত হলো এই ভেবে যে আজ আর নাবিল আসবেনা।সে জেলাস না হয়ত।
আসিফ ঘুমের ঘোরে এলোমেলো হয়ে বাসা থেকে বের হতেই লিখিকে দেখলো।তারপর ওকে নিয়ে সামনের দিকে চললো।
আসিফের কথা মতন ভেলপুরি পাওয়া গেলোনা তবে সরষে ভাজা মুড়ির ঝালমুড়ি পাওয়া গেলো।
লিখি ঝালমুড়ি হাতে যেইনা ডান পাশে তাকিয়েছে তখনই তার মনে হলো কেউ ছিল ওখানে।পরে কোথাও কাউকে না দেখে নিজের মনের ভুল মনে করে আসিফের দিকে ফিরে দাঁড়ালো আবার।
আসিফের একটা কল আসায় সে টাকা দিয়ে একটু দূরে গেছে কথা বলতে বলতে।
লিখি একা দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিল কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছিল না।তার বারবার মনে হয় নাবিল আছে এখানে।তাই অন্ধকারের ঐ জায়গাটার দিকে এগোলো দেখবে বলে।

গাছটার কাছে এসে দাঁড়াতেই সে একটা ছেলের দেখা পেলো তবে ওটা নাবিল না,অন্য কেউ।তাও নেশাখোরের মতন লাগে।
লিখি ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেছে কিন্তু ছেলেটা হঠাৎ ওর হাত চেপে ধরে বললো,’চল আমার সাথে,তোকে জাহান্নাম দেখাবো’
কথাটা শুনে লিখির ভয় আরও বেড়ে গেছে।হাত ছাড়াতে ছাড়াতে আসিফকে ডাক দিলো কয়েকবার।আসিফ তখন অনেকদূরে।সে লিখির ডাক শুনেনি।মনযোগ দিয়ে ফোনে কথা বলছিল।
লিখি হাত ছাড়াতে ছাড়াতে নিচে বসে গেছে তাও ছেলেটা ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রোডের পাশে পড়ে থাকা একটা নির্জন জায়গার দিকে।
তখন লিখিকে আরও জোরে টান দিবে সেসময়ে নাবিল এসে হাত আটকালো ওর।চোখ বড় করে এক ধাক্কা দিয়ে ফেললো ছেলেটাকে।লিখি নিচে বসে হাত ধরে দেখছে।জোরাজুরিতে ওর হাত ছড়ে গেছে।নাবিল ওকে এমন অবস্থায় দেখে তুলে দাঁড় করিয়ে বললো,’কই তোমার আসিফ?বাঁচাতে আসলোনা?’
লিখি চুপ হয়ে ছিল।ঐ ছেলেটা এতটাই নেশা করেছিল যে ধাক্কা খেয়ে জঙ্গলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।আসিফ ফোনের কথা শেষ করে মাত্র আসলো এদিকে।

‘আরে নাবিল ভাইয়া যে।লিখি তো বলছিল আপনি আসবেনই না’
‘এত বড় ছেলে থাকতে যখন লিখির নিরাপত্তা থাকেনা তখন তো তার হাসবেন্ডকেই আসতে হয়’
‘কেন?কি হলো আবার?’
লিখি মুখ গোমড়া করে যেতে যেেত বললো,’কিছু হয়নি,তুমি যাও’
নাবিল ইশারা করে পড়ে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে লিখির পিছু পিছু চলে গেছে।লিখি রাগে আর হাতের ব্যাথায় দ্রুত হাঁটছে।নাবিল ও চেয়েও দ্রুত হেঁটে পথ আটকে বললো,’আমি না আসলে কি হতো?’
‘কি হতো!আমি চলে যেতাম ঐ ছেলের সাথে।’
‘দেখি হাত দেখি’

লিখি হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো।নাবিল ভাবছে তার আবার কি দোষ।রুমে এসে লিখি আগে শাড়ীটা বদলে সেলোয়ার সুট পরে ধপ করে শুয়ে পড়েছে কোনো কথা না বলেই।নাবিল সারা বাসা খুঁজে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজে বের করে লিখির পাশে এসে বসে ওর হাত ধরলো মলম লাগাবে বলে।লিখি তখনও জেগে ছিল, নাবিল ওর হাত ধরে মলম লাগাচ্ছে তা টের পেয়েও সে কোনো রিয়েকশান দেখায়নি।নাবিল মলম লাগাতে লাগাতে বললো,’দেখো হাত ধরেছি মলম লাগাতে,আবার বলবানা যে হাত ধরা মানে ভালবাসি’
লিখি হাত সরিয়ে রাগী স্বরে বললো,’তবে ওখানে গেলেন কেন?তার মানে আপনি জেলাস?’
‘সেটা ভেবে যদি তুমি খুশি হও তবে তা ভেবে নাও।তবে আমি তোমার কথা ভেবেই পিছু নিয়েছিলাম।এর বেশি কিছুনা।আমার কাছে তোমার সেফটি আগে’
‘আসিফ দিতে পারতোনা?ও তো ছেলে’
‘ছেলে হলেও রেসপন্সবিলিটি বলে একটা ব্যাপার আছে।সে ছোট বলে তার মাঝে এখনও এসব হয়নি,কিন্তু আমার হয়েছে।আমার কাছে তোমার প্রতি একটা দায়িত্ব আছে, কারণ তুমি আমার স্ত্রী। একা রাতে কাজিনের সাথে বেরিয়েছো আমাকে জেলাস ফিল করাতে কিন্তু রাতে কত বিপদ থাকে তা জানো?’

‘আপনি স্বীকার কেন করেন না?আমাকে বাদ দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে নাকি আপনার?’
‘একজনকে বিয়ে করে তার পরিবার রাজি করাতে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়েছে, আমি আরেকটা বিয়ে করার সময় পাবো কই?’
লিখি মাথা নিচু করে বালিশের সাথে লাগিয়ে বললো,’যান,স্বীকার করতে হবেনা।আমি বুঝতে পেরেছি আপনি আমায় ভালবাসেননা।যেটা দরকার শুধু সেটাই করেন,এর বেশি কিছু করেননা।আমি কেবল দায়িত্ব ‘
নাবিল বক্স নিয়ে চলে গেছিলো।কিছু আর বলেনি।সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়ন পড়লে একজনকে মেনে নিতে হয়।নিজ থেকে এগোতে হয়।নাবিলের মনে হলো তার সেটা করা উচিত।
বক্সটা রেখে বিছানায় এসে শোয়ার আগে লিখির গায়ে চাদর টেনে দিলো সে।তারপর ওর মাথায় হাত রেখে বললো,’আই এম সরি’
লিখি তো অবাক।যেন আকাশ থেকে পড়লো।লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো,’কিসের জন্য সরি?’

‘আমি তোমায় বুঝতে পারিনি তাই’
‘তো এখন বুঝেছেন?’
‘হুম’
‘কি বুঝেছেন?’
‘যে তুমি ঘাঁড়ত্যাড়া’

মনের কোণে পর্ব ৩৩

(মনের কোণে ছোট উপন্যাস।যার কারণে কয়েকদিনেই শেষ হতে চলেছে।নতুন জুটি আসার পালা♥স্পর্শ আর রিমকে আনবো নাকি নতুন জুটি?)

মনের কোণে পর্ব ৩৫