অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৮

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৮
লেখিকা:- তারা ইসলাম

রুদ্র মির্জা~এই নামটা অনেকের কাছে ভালোবাসার নাম।আবার অনেকের কাছে ঘৃণার।রুদ্র ছোট বেলা থেকেই ভীষণ গম্ভীর,রাগি,অনেকটা সিরিয়াস টাইপ ছিলো।সে সব সময় সোজাসুজি ভাবে কথা বলতে পছন্দ করতো।তার নিজের আবেগ,নিজের দুর্বলতা সব সময় নিজ একান্ত রাখতে পছন্দ করতো।সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করতো।কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সব পরিবর্তন হয়!তবে সব কথা একান্ত রাখার ব্যাপারটা সে এখনো পালটাতে পারে’নি।না-হলে কি দুই-বছরের কাছাকাছি এসেও তার পুলিশ হওয়ার ব্যাপারটা কেউ না যেনে থাকতো।সে ব্যাপারটাও একান্ত রেখেছে।সে ছোট বেলা থেকেই বড় হয়েছে একটা রাজনীতিগত পরিবারে।তাই যখন সে একুশ বছরে পা দিয়েছিলো তখন থেকেই বাবা ভাইয়ের দেখাদেখি সেও রাজনীতিতে যোগ দে।তবে সেটা ছিলো একটা ইচ্ছা কিংবা শখ থেকে।

তারা পারিবারিক রাজনীতিময় তাই সেও সেখানে মিশে গেছে।কিন্তু তার লক্ষ্য স্বপ্ন ছিলো আলাদা।সে শুধু ভালো সৎ পুলিশ হতে চেয়েছিলো।তা হয়েছেও কিন্তু পরিবারের কাউকে জানানো হয়’নি সে খুব সাবধানে সব সামলিয়েছে।তার জেলা থেকে অনেকটা দুরত্বে একটা জেলায় তার পোষ্ট হয়েছে।যেখানে তাদের একটা ফ্ল্যাট ও আছে তাই সেখানে থাকতে তার অসুবিধা হয়’নি।আর পরিবার থেকে ও সেটা লুকিয়ে রাখতে বেশি কষ্ট করতে হয়’নি।তার বড় পুলিশ অফিসারের সাথে ভালো সম্পর্ক। তাই তার প্রফেশনটা আড়ালে রাখতে পেরেছে।আর তার কাজের জন্য এখন অনেক শক্রু ও তৈরি হয়ে গেছে।তাই সে চাইনা তার সৎপথে চলার কারণে তার পরিবারের কারোর ক্ষতি হুক।সে সব কিছু থেকে পরিবারকে দূরে রাখে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“রুদ্রের জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে সে রিলেশনেও গিয়েছিলো।কিন্তু তার ইগো কিংবা ব্যক্তিত্বের জন্য কোনো রিলেশন একমাসও ঠিকতে পারে’নি।রুদ্রকে কন্ট্রোল করা সহজ না।কারণ সে রুদ্র মির্জা।কিন্তু এখন সে নূরকে ভালোবাসতে চাই।থাকে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই।সে নূরকে এখনো সেভাবে ভালোবাসতে পারে’নি।কিন্তু সে নূরের মায়ায় পরে গেছে যাকে বলে গভীর মায়ায়।আর সে নূরের সাথেই স্বাভাবিক ভাবে সংসার করতে চাই।
“রুদ্র একের পর এক কেস সমাধান করে যাচ্ছিলো।কিন্তু এবারের কেস দুটো কোনো ভাবে সমাধান করতে পারছে না।এক-তো ডালিয়ার কেস আরেক রাসেলের কেসটা।এই দুটো কেস যেনো রুদ্রকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।

“রুদ্র তার সে ফ্ল্যাটে আছে যে ফ্ল্যাটটা তার বাবা তার তেইশতম জন্মদিনে গিফট করেছিলো।সে তার বাবার বাসা থেকে প্রায় এখানেই চলে আসে।এখান থেকে তার থানায় যেতে বেশিক্ষণ লাগে না।সে বাসা থেকে ব্যবসার কাজ আছে বলে বের হলেও এই ফ্ল্যাটে এসে রেডি হয়ে থানায় চলে যায়।তার গাড়ি থাকায় যাওয়া আসায় কষ্ট হয়’না।অবশ্য এখন তার অভ্যাস হয়ে গেছে।
“রুদ্র মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পরলো।তার আশে-পাশে সব ফাইল এলোমেলো হয়ে পরে আছে।কোনো ভাবেই সে কেস গুলা সমাধান করতে পারছে না।

ম্যাডাম এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হইয়া যাচ্ছে।আমি খু*ন করি পে*লি*বো ওই আমানের বা*চ্চা*রে কইয়া দিলাম
“শায়লা খাতুন রেগে চিল্লিয়ে বললেন- চুপ কর!সব তোর জন্যই হয়েছে।মুখ খুলা কে রাখতে বলেছিলো?কু*ত্তা*র বা*চ্ছা লা*ত্তি দিতে মন চাচ্ছে তোরে।যদি আমার ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সেদিন তোর মৃ*ত্যু।
“রাসেল ভয় পেয়ে গেলো তারপর ভয় নিয়েই বললো- ম্যাডাম আর হইবো না এবারের মতো আমারে বাঁ*চি’য়ে দেন বলেই শায়লা খাতুনের পায়ে ধরে নিচে বসে পরলো।
“শায়লা কিছু একটা ভেবে বললেন- ঠিক আছে এটা কিন্তু শেষবার।আমি কিন্ত আর বাঁ*চা’বো না।শুনেছি আমান মির্জা বিয়ে করেছে?কাকে করেছে জানিস?আর ঘরোয়া ভাবে নাকি করেছে কয়েকটা আত্নীয় ছাড়া কাউকে জানাই’নি আমি রফিক থেকে জেনেছি এসব।তো শুন আগে ওর বউকে উঠিয়ে আন।তারপর বাকি কাজ পরে বুঝিয়ে দিবো।

“রাসেল নিচে থেকে উঠে উচ্চস্বরে হেসে বললো- এই জন্যই আপনারে আমি বেশি ভালোবাসি ম্যাডাম।আপনার জন্য আমার জা*ন কু*র*বা*ন।বলেই সে শায়লা খাতুনের রুম ত্যাগ করলো।
“রাসেল যেতেই শায়লা খাতুন মনে মনে বললেন- আমি কেমন তুমি জানো না মিস্টার আমান মির্জা?আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া এত সহজ না।এবার তুমি সব হারাবে!বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলেন।

রুমের সব জিনিসপত্র এলোমেলো করছে ফারিয়া।তাকে সামলাতে ব্যর্থ চেষ্টা করছে রেয়ান।
“রেয়ান বললো- প্লিজ পুতুল এবার থাম।এভাবে হাইপার হস’না আমি নিতে পারছি না।
“ফারিয়া এবার কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পরে বলতে লাগলো- আমিও পারছি না এমন মানসিক কষ্ট নিতে।আমি মুক্তি চাই এর থেকে।হয় রুদ্রকে এনে দাও না’হয় আমাকে মে’রে ফেলো।তাও আমি আর নিতে পারছি না।
“রেয়ান বললো- শান্ত হো আমার পুতুল।আমি চেষ্টা করছি কিন্তু ওতো তার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিবে না।
“ফারিয়া এবার কান্নার মাঝে রেগে বললো- তাহলে ওর ওয়াইফকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দাও।

“ফারিয়ার কথা শুনে রেয়ান চমকে উঠলো!সে এটা কোনো ভাবেই করতে পারবে না কারণ সে তার নূরময়ীকে ভালোবেসে ফেলেছে।তাই নিজেকে সামলে বললো- দেখ আমি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলে দেখবো।মেয়েটা হয়তো সে বিয়েটা থেকে বের হয়ে আসতে চাই?কারণ বিয়েটা একটা ভুল-বুঝাবুঝির মধ্যে হয়েছে।
“ফারিয়া এবার ক্লান্ত হয়ে রেয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো- সত্যি তো?তুমি প্লিজ মেয়েটাকে বুঝিয়ে বলিও আমি মা’রা যাবো রুদ্রকে ছাড়া।তাকে প্লিজ বলিও ওর জীবন থেকে স’রে যেতে।
“রেয়ান বোনকে আগলে নিলো তবে কিছু বললো না।

“নূর আর কত কান্না করবা?এবার বন্ধ করো তোমার ন্যা’কা কান্না না-হলে কিন্তু আমি একদম ঠু*কে দি’বো।
“নূর কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো- আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই।
“রুদ্র কপালে চা*প*ড় লাগালো।রাত তখন ১২ টার কাছাকাছি।রুদ্র এবার রেগে বললো- কান্না বন্ধ করবা নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নি’বো।
“রুদ্রর কথা নূর তার দিকে তাকিয়ে বললো- এতদিন কয়-ছিলেন?
“রুদ্র এবার বিছানায় শুয়ে নূরের এক-হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো- ওও এই জন্যই বুঝি আমার মিসেস কান্না করছে।তাহলে শুনো কয়-ছিলাম আমার একটা ব্যবসার কাজে শহরে বাহিরে যেতে হয়েছিলো তাই।

“নূর এবার হেঁচকি তুলে বললো- কল রিসিভ করেন’নি কেন?
“রুদ্র এবার নূরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো- সে অনেক লম্বা কাহিনী পরে বলবো!আপাতত আমি প্রচুর কান্ত একটু ঘুম প্রয়োজন।বলেই সে চোখ বন্ধ করে নি’লো।
“নূর কোনো ভাবে নিজের কান্না আটকাতে পারছে না সে মনে মনে ভাবলো- সে ভয়ংকর ভাবে ফেঁসে গেছে এক শ*ক্ত ক’ঠো’র হৃদয় ছেলের মধ্যে।সে আস্তে আস্তে তাকে ভালোবেসে ফে’লছে।রুদ্রর প্রতি তার মনে থাকা সব অনুভূতি গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে।তাই তো কয়-দিন বাসায় না আসায় সে পা’গল হয়ে যা’চ্ছিলো।যেন তার দমবন্ধ হয়ে আসবে।কিন্তু নূরের অভিমান হলো রুদ্রর তো প্রয়োজন ছিলো তার রা’গ ভাঙ্গানো কিন্তু সে তো তাকে কিছু না বলেই ঘুমিয়ে পরলো।

“নূর যখন বুঝতে পারলো রুদ্র গাঢ় ঘুমে আছে।তখন সে আস্তে আস্তে করে তার থেকে সরে এসে বিছানা থেকে নে’মে বারান্দার দিকে হেটে গে’লো।
“একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নূর আর ভাবছে তার জীবনে কি থেকে কি হয়ে গে’লো আজ বিয়ের এক মাস চলে গে’লো।কিন্তু এই এক-মাসে না তার বাবা খুঁজ নিয়েছে না মা।সে এসব ভেবেই কেঁদে উঠলো যাকে বলে শব্দ ছাড়া কান্না।হুট করে তার জীবনে রুদ্র আসলো যাকে দেখলে সে একশো হাত দূরে থাকতো কালের পরিবর্তনে আজ তারা হাসবেন্ড-ওয়াইফ।তারা একটা স্বাভাবিক সংসার ও করছে।কিন্তু সেখানে নেই কোনো ভালোবাসা।আছে শুধু আকর্ষণ এছাড়া তো রুদ্র তাকে ভালোবাসে না।

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৭

এসব ভেবেই নূর আরও কাঁদতে লাগলো মনে মনে ভাবলো- রুদ্র কেন আমাকে ভালোবাসেন না?কেন উনি আমাকে অনূভব করেন না?কেন উনার কথা আমার বার বার মনে পরে?কেন উনি না থাকলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে?মেয়েরা আবেগী হয় তাই তারা বেশির ভাগ খুব তাড়াতাড়ি নিজের স্বামীর প্রেমে পরে যায়।নূর ও হয়তো রুদ্রর প্রেমে পরে গেছে।হয়তো তাকে ভালোওবেসে ফেলেছে?কিন্তু রুদ্র?সে কি আমাকে ভালোবাসতে পে’রেছে।কিন্তু উনি আমাকে উনার বউ হিসেবেই স্বাভাবিক আচরণ করেন।ভালোবাসেন বলে কোনোদিন মনে হয়’নি।মারিয়া ঠিকি বলেছে- রুদ্রর প্রেমে যে পরেছে সে ম’রেছে।কারণ রুদ্রকে নিজের করে রাখা অনেক কঠিন।নূর বুঝতে পারলো সেও ম’রতে যাচ্ছে।রুদ্রকে বুঝার সাধ্য তার নেই।এসব ভেবে সে আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকলো।

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৯