ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৮

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৮
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

অধরার জ্ঞান ফিরেছে এইটা দেখে নার্স দৌড়ে গিয়ে খবর দিলো মিস্টার রিহান চৌধুরীকে। মিস্টার রিহান চৌধুরী অধরার কেবিনে এসে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে অধরাকে। অধরা রিহান কে দেখে একটু চমকে গিয়ে বলে উঠলো
— আপনি কে? আমি এখানে কেনো? কে নিয়ে এসেছে আমায়?
অধরাকে বিচলিত দেখে রিহান অধরাকে শান্ত করতে বললো
— ম্যাম শান্ত হয়ে যান। আপনি এক্সিডেন্ট করে ছিলেন। আপনাকে এখানে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। দয়া করে শান্ত হয়ে যান।
মিস্টার রিহান চৌধুরী পেশায় একজন ডক্টর‌। রিহানের অধিনে অধরার চিকিৎসা চলছে। রিহান অধরাকে ইনজেকশন দিয়ে দিলো। অতঃপর অধরা শান্ত হয়ে শুয়ে পরলো।

— হ্যালো অয়ন! অধরার কোনো খোঁজ পেয়েছো?
ভিশন বিচলিত কন্ঠে ফোনের ওপার থেকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ইরা। ইরার প্রশ্নের উত্তরে অয়ন বলল
— না। এখনও পাইনি। কোথায় যেতে পারেও? আমার ভিশন দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। ও ঠিক আছে তো? রাত প্রায় পেড়িয়ে যাচ্ছে। এখনও অধরার কোনো খবর নেই।
— অয়ন শান্ত হয়ে যাও প্লিজ। কি হয়েছে তোমার আর অধরার মাঝে? আমাকে বলো।
— কি হয়েছে মানে?
— মানে অধরা আপু চলে গেলো কেনো এমন হুট করে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তোমার জন্য। আজ তোমার জন্য আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার আর অধরার সম্পর্ক নষ্টের পিছনে তুমি দায়ী। যদি অধরার আগে তুমি আমার জীবনে না আসতে তবে এমনটা কখনও হতো না। আর আমিও অধরাকে হারিয়ে ফেলতাম না।
অয়নের কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে ইরা অবাক হয়ে যায়। ইরা বুঝতে পারছে না তার কারনে অয়নের থেকে অধরা দূরে চলে গেছে এর মানে কি? ইরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই সব কি বলছো? আমার জন্য মানে? আমি কি করেছি?

— তুমি কিছু করো নি তাই না? অধরা তোমাকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করে‌। এতোটাই সন্দেহ ওর মনের মধ্যে জন্ম নেয় যে ও আমাকে ফলো করা শুরু করে। আমি কোথায় যাচ্ছি? কার সাথে কথা? বলছি সব। মনে আছে রিসোর্টের কথা? একটা মেয়ে আমাদের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো? জানো সে কে? তোমার বড় বোন অধরা। অধরা ও দিন ওখান থেকে বাড়িতে ফিরে অস্বাভাবিক আচরন করে। আমি তখন বুঝতে পারি নাই কেনো এমন করছে? অধরা সকাল বেলা আমাকে নিয়ে চলে যায় কোর্টে। সেখান থেকে আমায় ডিভোর্স পেপারের সাইন করতে বলে। আমি করি নাই। অধরা সাইন করে চলে যায়। তারপর থেকে বেপাত্তা। তুমি তো জানো অধরা কতটা রাগি। যা বলে তাই করে। আমি ওকে আটকাতে পারি না কখনও। তাই নিরব ছিলাম। রাগ কমার অপেক্ষা করতে করতে আমি আমার অধরাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। জানি না ও কেমন আছে? কোথায় আছে?

* অয়ন নিজেকে সামলাতে পারলো না। বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেললো। প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা সত্যি ভয়ানক। অয়নের অপরাধ অধরাকে সবটা না বলা। যদি আজ অয়ন অধরাকে ইরার সম্পর্কে সবটা বলে দিতো তবে আজ গল্পটা এমন হতো না। ইরা কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে কলটা কেটে দিলো। অয়ন রাস্তার মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। “এতোটা অসহায় কেনো মনে হচ্ছে আজ? অধরা তুমি কি আর কখনো আমার কাছে ফিরবে না? আর কখনও বলবে না ভালোবাসি! প্লিজ অধরা একটি বার ফিরে এসো। বিশ্বাস করো সব ভূল গুলো সুধরে নিয়ে ভালোবাসা দিবো তোমায়”। অয়নের এমন চিৎকারে কোনো মানে হয় না। অয়ন যা করেছে তার কোনো ক্ষমা হয় না। অয়ন নিজের জন্য অধরাকে হারিয়েছে।

* সকাল হতেই অয়ন নিজের রুমের বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পায়। অয়ন রুম থেকে দৌড়ে বাহিরে চলে আসে। প্রথমে অয়ন ভেবেছে হয়তো অধরা ফিরে এসেছে। অয়ন রুমের বাহিরে আসতেই দেখতে পেলো অধরার বাবা মা আর কয়েক জন পুলিশ এসেছে। অয়নকে দেখতে পেতেই অধরার বাবা দৌড়ে অয়নের কাছে চলে আসে। অধরার বাবা কান্না ভেজা কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলেন

— কোথায় রেখে এসেছো আমার মেয়ে কে? তোমার পরক্রিয়ার সম্পর্ক আছে এটা আমাদের কাছে পরিস্কার। প্লিজ অয়ন আমি তোমার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। আমার মেয়ে আর কখনও আসবে না তোমার জীবনে। আর কখনও তোমাকে বিরক্ত করবে না ও। আমরা কথা দিচ্ছি। প্লিজ অয়ন ফিরিয়ে দাও আমাদের কাছে আমার মেয়েকে। প্লিজ! যা চাও তাই দিবো তোমায়। প্লিজ! ওর কোনো ক্ষতি করো না প্লিজ!
অয়নের সামনে অধরার বাবা হাত জোড় করে কেঁদে ফেললো। অধরার বাবা তার মেয়েকে চায়। এক বাবার কাছে তার সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নয়। অধরার বাবার কথা শুনে অয়নের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। অয়ন বুঝতে পারছে না উনি এসব কি বলছে? অয়ন অধরার বাবার হাত ধরে বলল

— বাবা এসব কি বলছেন আপনি? আমি অধরাকে রেখে এসেছি মানে? অধরা আপনাদের মেয়ে আর আমার স্ত্রী। আমি ওকে ভালোবাসি বাবা। আর আমি পরক্রিয়া করি নাই। বিশ্বাস করেন বাবা। আমি সত্যি কোনো ভাবে অধরাকে ঠকাই…………
অয়নের কথা শেষ করার আগেই অয়নের বাবা সোফা থেকে উঠে এসে অয়নের গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দিলো। অগ্নি দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি

— অধরার সন্ধান যদি তোর কাছে না থাকে তবে কার কাছে আছে? তুই নিজের রাস্তা পরিষ্কার করতে অধরার কোনো ক্ষতি করতেই পারিস। সত্যি করে বল অধরা কোথায়? অয়ন সত্যি করে বল তা না হলে আমার মরা মুখ দেখবি তুই। আমার মাথা হেট করে ফেলেছিস তুই। আর কোনো সম্মান নেই যা আঁকড়ে ধরে আমি বেঁচে থাকবো। সত্যিটা বলে দে অয়ন। এখনও সময় আছে।
* বাবার কথা শুনে অয়ন গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। “এসব কি অভিযোগ করছেন তারা? এতো টুকু বিশ্বাস আমার উপর নেই? আমি অধরাকে….! এই সব কথা বলার আগে একটিবার কি ভাবা উচিত ছিলো না ওনাদের”? অয়নকে নিশ্চুপ দেখে অধরার বাবা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ইন্সপেক্টর নিয়ে যান ওকে। প্লিজ যে করেই হোক আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। প্লিজ।
অধরার বাবার কথা মতো পুলিশ অয়নের হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে সবার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। অয়ন তার বাবা, মা, বোন এর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো‌। একটা ভূলে সবার চোখে অয়ন আজ অপরাধী। অয়ন আপন মনে বলছে ” সত্যি তো অধরা আমার সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। আমি ওকে কোথাও রেখে এসেছি। আমি দায়ী। এই সাজা আমার কাছে কিছুই না। সাধারন একটা ব্যাপার। কিন্তু এই সাজার পরে কি আমি একটি বারের জন্য আমার অধরাকে দেখতে পাবো? অধরার চলে যাওয়া কষ্টের থেকে এই কষ্টটা মিছক কষ্ট মাত্র”। পুলিশ গাড়ি করে অয়নকে থানায় নিয়ে যায়।

* হসপিটালের বেডে বসে আছে অধরা। অয়নের কথা মনে পড়ছে খুব। “অয়ন কোথায় আছে? একটি বার কি অয়ন তার খোঁজ করছে? নাকি ইরার সাথে দিব্বি ভালো আছে! মুক্তি দিয়ে এসেছি যখন তখন তো ভালোই থাকবে”। অয়নের কথা মনে পরতেই অধরার চোখের পাতা ভিজে যায়। অধরা নিজেকে নিজে বোঝাচ্ছে “আমিতো চেয়েছি অয়ন সব সময় ভালো থাকুক। এখন তো অয়ন ভালো আছে। আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি? আর পাবো না কষ্ট। একাকী জীবন অয়নের আতিত বুকে নিয়ে ভালো থাকার অভিনয় করে কাটিয়ে দিবো আমি”।
অধরা বসে বসে অয়নের সাথে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা ভাবছে। হঠাৎ করে অধরার কেবিনে রিহানের উপস্থিতি। রিহান অধরার কেবিনে এসে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৭

— আপনি এখন কেমন বোধ করছেন?
— হুম ভালো।
— আপনাকে একটা খবর দেয়া হয়নি। আপনি ভয় পাবেন না। আপনার স্বামীর কোনো ঠিকানা আমাদের দিন। আমরা তাকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।
— তার প্রয়োজন পরবে না। আমাকে বলুন আমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? আমি কি আর বাঁচবো না?
— আরে না না। এমন কোনো কথা না। আসলে আপনার………………

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৯