ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৯

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৯
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ
— আসলে আপনার এতো বড় এক্সিডেন্ট হয়ে যাবার পরেও আল্লাহর রহমতে আপনার সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়নি। আপনার সন্তান একদম সুস্থ আছে।
রিহান চৌধুরীর কথা শুনে অধরা অবাক হয়ে যায়। অধরা রিহানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রিহান কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরার অবাক দৃষ্টি রিহানের মনে প্রশ্ন তুললো। “একজন নারীর কাছে মা হবার খবরটা সুখকর। এই খবরটা একটা নারীর কাছে সুখের আনন্দ নিয়ে আসে। মনের মধ্যে মা হয়ে ওঠার অনুভূতি জন্ম দেয়। তবে অধরা কেনো অবাক হলো? উনি কি এই সন্তান নিতে চায় না? উনি কি এই খবর শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না”? আপন মনে কথা গুলো ভাবছে রিহান। অধরাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিহানা অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কিছু বলবেন ম্যাম?
অধরা হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে একদম শুকনো কন্ঠে রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আপনি যা বলছেন তা সত্যি তো? আমি মা হতে চলেছি?
— জ্বি সত্যি বলছি। আমি মিথ্যে কেনো বলবো?
— ওহহহ।
অধরা নিজের মাথার উপর ঘুরতে থাকা চলন্ত পাখার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চিন্তা করে অধরা এই খবরে সে খুশি হবে নাকি দুঃখ পাবে? অধরা ভাবছে “এই সন্তান কখনও তার বাবার ভালোবাসা পাবে না। পাবে না বাবার আদর। এই সন্তান অয়নের ভালোবাসার একটা অংশ। হ্যাঁ আমাদের খুব আদরের সন্তান। আমাদের খুব ইচ্ছে ছিলো আমাদের দুজনের ভালোবাসার মাঝে ছোট্ট একটা বেবি অনেক ভালোবাসা নিয়ে আসুক।
আমাদের দুজনকে মা বাবা হবার সাধ মিটিয়ে আসুক একটা বেবি। একজন নারীর এই সময়টা তার স্বামীকে পাশে চায়। হ্যাঁ নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পাশে নিয়ে একটা নারী সন্তান জন্ম দেয়ার মতো মৃত্যুর যন্ত্রণা হাসি মুখে সহ্য করতে পারে যদি তার ভালোবাসার মানুষটি তার পাশে থাকে। জরিয়ে রাখে নিজের বুকের ভিতর বেশ শক্ত করে। কিন্তু আজ অয়ন নেই। অয়ন আমার থেকে অনেকটা দূরে। আমি একা ওকে কি করে মানুষ করবো? আমি পারবো তো”? অধরাকে নিশ্চুপ হয়ে থাকতে দেখে রিহান চৌধুরী একটু মৃদু হেসে উঠলেন। উনি মৃদু হেসে অধরাকে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বললেন
— এতো চিন্তা করতে হবে না আপনাকে। আপনি সন্তান নষ্ট করতে চাইলে আমাদের এখানে ব্যবস্থা আছে। সমস্যা হবে না কোনো। তাই একদম টেনশন ফ্রি থাকুন।
রিহানের কথাটা অধরার কান উবদি পৌচ্ছাতেই অধরার বুকটা কেঁপে উঠলো। “মা হয়ে নিজের সন্তানকে খুন করবো? মা মানে সন্তানকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করার নাম। মা মানে নিজের সব কিছু দিয়ে সন্তানকে ভালোবাসার নাম। আমি সেই মা হয়ে নিজের হাতে নিজের সন্তানকে খুন করবো? না এমনটা হবে কি করে? আমার সন্তান রোজ হাশরের মাঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলবে মা তুমি খুনি। আমার হত্যা কারি। আমি তো কোনো পাপ করি নাই। আমার স্বামীর আমানত হিসেবে তার সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করেছি। আমি আমার সন্তানের খুনি হতে পারবো না”। অধরা রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। রিহান এবার বেশ অবাক হয়ে যায় অধরার দিকে তাকিয়ে। রিহান বুঝে উঠতে পারছে না যে আসলে অধরা কি নিয়ে চিন্তা করছে? রিহান ভাবছে সে তো অধরাকে সব বলল তাও কেনো অধরা এতো ভাবনায় আছে? তবে কি অধরার ভাবনার কারন অন্য কিছু? রিহান অধরাকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠলো
— বললাম তো সমস্যা নেই। আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন। কোনো ক্ষতি হবে না আপনার। একদম সেফলি সব কিছু করা হবে। ভয় নেই একদম।
রিহানের কথা শেষ হতেই অধরা বাঁকা হাসি দিলো। বাঁকা হাসি দিয়ে অধরা রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আপনি কি ভাবছেন আমি নিজের সন্তানকে খুন করতে চাই? আমি এই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই না? ভূল ভাবছেন মিস্টার। এটা আমার কোনো পাপ না যে গোপনে আমি তা নষ্ট করে সমাজ থেকে আড়াল করবো। আমি কোনো নষ্ট মেয়ে না যে আমার সন্তান নষ্টামির ফসল। আমার সন্তান আমার ভালোবাসার মানুষের দেয়া উপহার। যা আমার কাছে সব চেয়ে দামি। হ্যাঁ আমার মন খারাপ কারন যেই মানুষটিকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে বিশ্বাস করেছি। সেই মানুষটি আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছে। ঠকিয়েছে আমায়।
 আজ এই মুহূর্তে আমি তাকে পাশে পেতে চেয়েছি। একটু ভালোবাসা চাই তার থেকে। কিন্তু দেখুন আমার কপালটা কেমন। আজ সে আছে হ্যাঁ ভালোই আছে আমার থেকে দূরে। তবে আমি ভালো‌ নেই। তাকে মুক্তি দিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেছি তার জীবন থেকে। চাইলে হয়তো থাকতে পারতাম কিন্তু না। ওর চোখে চোখ রেখে কখনও আমি কথা বলতে পারতাম না। জানেন আমায় শুধু আমার স্বামী ঠকায়নি। ও তো পরের ছেলে আমাকে তো আমার নিজের বোন ঠকিয়েছে। হারিয়ে দিয়েছে আমায় ভালোবাসা নামক খেলায়। আমি তার কথাই চিন্তা করছি যার মনের মধ্যে অন্য কারোর বসো বাস।
* কথাটা শেষ করে অধরা চোখের জল মুছে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। হসপিটালে আর কত দিন থাকবে সে? এখন মোটামুটি সুস্থ বোধ করছে সে। তাই এখান‌ থেকে যেতে হবে।
— বল অধরার সাথে কি করেছিস তুই? উত্তর দে!..
পুলিশ অয়নকে থানায় এনে টর্চার করতে লাগলো। প্রচুর পরিমাণে মারধর করছে অয়নকে। অয়ন মার খেয়েই চলেছে নিরবে। কোনো কথা তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না। আসলে যখন পরিস্থিতি বিপরীত মুখী হয়ে যায়।
তখন আপনি চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেও কোনো লাভ হবে না। অয়নের মুখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসছে। পুলিশ বেশ বিরক্ত হয়ে যায়। “আর কতক্ষন চূপ করে থাকবে এই অয়ন”? ভাবছে পুলিশ। ঘন্টা খানেক টর্চার করে অয়নকে পেলের মধ্যে বেঁধে রেখে চলে যায় সবাই। অয়ন ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পরে আছে চোখ বন্ধ করে। কষ্ট বলতে অয়নের শুধু একটাই একটিবার অধরার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে চায় সে। অয়ন সেলের মধ্যে পরে থাকে। হঠাৎ করে অয়নের কানে ভেসে আসে একটি মেয়ের কন্ঠে। বাহিরে চিৎকার করছে সে। অয়ন ফ্লোর থেকে সেলের বাহিরের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অয়ন দেখতে পেলো ইরা এসেছে। ইরাকে দেখে অয়ন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইরা অয়নের অবস্থা দেখে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে‌ বলছে
— এই সব কি করেছেন? মানুষ আপনারা? কোনো প্রমান আছে অয়ন অধরা আপুকে কোথাও রেখে এসেছে? কিছু করেছে? আরে আপনারা কি করে বুঝবেন অয়ন অধরাকে কতটা ভালোবাসে! যে মানুষটা অধরা আপু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় নিজে কোলে করে হাসপাতাল উবদি নিয়ে আসে। যে অয়ন অধরার কিছু হলে পাগল হয়ে যায়। সে কিনা অধরা আপুকে খুন করবে! আরে কাকে সাজা দিচ্ছেন? ঐ মানুষটা তো ভিতর থেকে মরে গেছে। ওকে মুক্তি দিন প্লিজ।
— সরি কোর্টের বেল নোটিশ ছাড়া অয়নকে ছাড়া যাবে না। আর আপনার মন গড়া গল্প অন্য কোথাও শুনাবেন এখানে নয়। এখন যেতে পারেন। ধন্যবাদ।
ইরা পুলিশের কড়া কন্ঠের কথা শুনে বেশ নোটিশের কাগজটা টেবিলের উপর ছুড়ে দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে ইরা পুলিশ কে বলল
— এই নিন কথিত কাগজ সাথে করে নিয়েই এসেছি। ছেড়ে দিন অয়নকে।
* পুলিশ কাগজ দেখে অয়নকে ছেড়ে দিলো। অয়নের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অয়ন এক পা এর উপর ভর করে জেল থেকে বেরিয়ে আসলো। ইরা দৌড়ে এসে অয়নের হাত নিজের কাঁধে তুলে নিলো। অয়নকে ধরে ইরা কোনো মতে অয়নকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। অয়ন হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।
ইরা অয়নের পাশে বসে আছে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার। অয়নের এমন অবস্থার জন্য ইরা নিজেকে দায়ী করছে। ইরা ভাবছে আজ যদি অয়নকে তার কথা গুলো না বলতো তবে অয়নের সংসারটা ভেঙে যেতো না।
* অধরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাবে হঠাৎ করে অধরার হাত জোড়া পিছন থেকে কেউ একজন বেশ শক্ত করে চেপে ধরে। অধরা ভিশন অবাক হয়ে যায়। অধরা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো……………………