প্রিয়কাহন পর্ব ২০

প্রিয়কাহন পর্ব ২০
লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
প্রিয়তা অভীর হাত চেপে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই বন্ধন আরও দৃঢ় হলো। অভী হাসলো ওর বোকামো দেখে। দুষ্টু হেসে বললো,
‘ এবার? পারলে ছাড়িয়ে নাও নিজেকে আমার কাছ থেকে?’
ভয়ে কাঠ হয়ে গেলো প্রিয়তা। নিজেকে বুঝ দিলো এটা কি সেই অভী যে ফ্লার্ট এর ‘ফ’ ও জানতো না? এখন তো মনে হচ্ছে এতদিনের পুষে রাখা অভী সম্পর্কে সব ধারনাই ওর ভুল। এ শুধু ফ্লার্ট পারে বললে ভুল হবে, ভালোই ফ্লার্ট পারে। শুধু সুযোগের অভাবে এই নিপুন গুণটা প্রকাশ করতে পারেনি৷ প্রিয়তা পুনরায় নিজেকে ছাড়ানোর প্রয়াস চালালো,  ব্যার্থ প্রয়াস। অভী তা দেখে বললো,
‘ খামোখা নড়াচড়া করো না। অন্যথায় তুমি নিজেই কিন্তু ক্লোজ হচ্ছো আমার!’
কথাটা স্নায়ু ধারন করতেই প্রিয়তা দম ফেলে হাল ছাড়লো। আসলেই বেশি কাছাকাছি চলে এসেছিলো নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে। রিনরিনে স্বরে বললো,
‘ এখানে কেন আনলেন আমায়?’
অভী দম ফেলে বললো,
‘ এমনেই!’
ভ্রু কুঁচকালো প্রিয়তা। কথাটা ঠাওর করতে পারলো না৷ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সে। বললো,
‘ এটা আবার কেমন কথা? এমনিতেই কেনো আনবেন আমায়?
‘ কেনো এভাবেই তোমায় আনতে পারবো না?’
‘ মোটেও না।’
অভী ভ্রু নাচিয়ে খানিকাটা জড়ানো কন্ঠে বললো,
‘ তাহলে তোমাকে এখানে আনার কারন এখন বানিয়ে নেই?’
কথাটি বলে অভী কোমড় চেপে টেনে আনলো প্রিয়তাকে। প্রিয়তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো এবার। খেয়াল করলো শরীর মৃদুমাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপছে।  অসাড় হয়ে আসছে শরীর। অভী প্রিয়তার ভয়ার্ত মুখ দেখে হাসলো। সে এতকিছু ভেবে প্রিয়তাকে এভাবে নিজের কাছে টানেনি৷ না ছেলেটার মনে অশ্লীল কোনো চিন্তা ছিলো। তবে কেন যেন মেয়েটার ভয়ার্ত মুখ দেখতে ভালোলাগে অভীর। ভীষণ ভালোলাগে। পাত্রীদৃষ্টির প্রথম সাক্ষাৎ এ প্রিয়তা যখন জ্ঞান হারিয়েছিলো তখন সেটা বিরক্তির মনে হলেও পরপর তার কাজে সেটা অজান্তেই ভালোলাগার জায়গা করে নিয়েছিলো। অভী প্রিয়তার মুখে পড়া খুচরো চুল ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিলো৷ বললো,
‘ রিল্যাক্স,  কাছে টেনে প্রেম ট্রেম করবো না৷ এমনিতেও এসব ব্যাপারে রুদ্র বা অদ্রির মতো আমার পিএইচডি করা নেই। তাই তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারো। আমি শুধু দেখতে চেয়েছি তুমি আমার কতটুকু ডোজে সজ্ঞানে থাকতে পারবে। নাহলে দেখা যাবে বিয়ের প্রথম রাতেও তুমি জ্ঞান হারাবে।’
স্পষ্ট খোঁচা মারার ইঙ্গিত।  প্রিয়তার মুখ হয়ে গেলো বারবিডলের মতে চুপসানো। তারপর সেও দ্বিরুক্তি নিয়ে বললো,
‘ আমায় বিয়ে করা নিয়ে এত কনফিডেন্স? ‘
অভী হেসে উঠলো এ কথা শুনে। প্রতিউত্তরে বললো,
‘ ইয়েস ম্যাম!’
‘ এবার ছাড়েন তো! আমায় এমনিতেই যেমন এখানে এনেছিলেন এমনিতেই নাহয় যেতে দিন? আই’ম শিউর আমার অদিটা চিন্তায় ফেটে যাচ্ছে।’
ছেড়ে দিলো অভী প্রিয়তাকে। সবিনয়ে বললো,
‘ যান ম্যাডাম, নাহলে শালী সাহেবা এখানে এসে আমায় তার বাজখাই গলা শুনিয়ে যাবে!’
অদ্রির কাছে যেতেই প্রশ্ন সে জর্জরিত করে ফেললো প্রিয়তাকে। প্রশ্নগুলো এরূপ ছিলো যে,
‘ প্রিয়ু তুই ঠিকাছিস? ওই হারামখোর অভী তোকে পিস পিস করে দেয়নি তো বিয়ে করবি না বলে? নাকি এটা বলেছে আমার সাথে অন্তু ভাইয়াকে প্রেম করতে দিবে না? কি করেছে সে বলতো? চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।’
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তখনই পেছনে সুরসুর করে এসে পড়লো অভী। অদ্রি কড়া চোখে তাকালো মেঘের সাথে ভেসে আসা অপ্রেমিক হবু দুলাভাইয়ের দিকে। প্রিয়তার হাত চেপে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ ইনি এখানে কি করছে?’
‘ আমি কি জানি? তুই জিজ্ঞেস কর?’
প্রিয়তার ঠোঁটে চাপা হাসি। অভী এসে বললো,
‘ রিক্সায় উঠিয়ে দিচ্ছি চলো।’
আকাশের মেঘ পাতলা হচ্ছে ভীষণ। বাতাসে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক। মাত্র ৪০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় প্রিয়তাকে রিক্সা তার বাসায় পৌঁছে দিতে রাজি হলো। প্রিয়তা রিক্সায় উঠলো নির্দ্বিধায়৷ তবে ক্ষোভ জমেছে অদ্রির। অভী রিক্সাওয়ালাকে মানিব্যাগ থেকে ৪০ টাকা বের করে দিয়ে বললো,
‘ এই নিন। ‘
এবার ক্ষেপে গেলো অদ্রি। চেঁচিয়ে বললো,
‘ আপনি কেন ভাড়া দিচ্ছেন রিক্সার? আমরা গরীব নাকি? নাকি উড়ে এসে অধিকার জমাতে এসেছেন আমার প্রিয়ুর উপর?’
এটা সত্যি মনে মনে অদ্রি অভীকে ভয় পায়। একটু না- অনেকটা বেশিই ভয় পায়। তবুও একথা অদ্রি এত সাহস করে কিভাবে বললো কে জানে? তাজ্জবের বিষয় হলেও অভী তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই করলো না অদ্রি বোম্বাই মরিচ টাইপ ব্যাবহারে। শান্ত,  নীরব শীতল চোখে অদ্রির দিকে তাকিয়ে সে মানিব্যাগটা পকেটে গুজলো। এতে আরও একবার কাবু হয়ে গেলো অদ্রি। অভী বললো,
‘ রিক্সা ভাড়াটা প্রিয়তার হয়ে মিটিয়েছি, তোমার না৷ তোমার যদি এতই আপত্তি- সময় আছে, চুপচাপ নেমে আরেকটা রিক্সা ভাড়া করে চলে যাও কেমন?’
রাগে আর অপমানে তিরিক্ষি হয়ে উঠলো অদ্রির মুখ৷ তবুও কিছু বললো না। অভী তাকালো প্রিয়তার দিকে। ইশারায় বলে দিলো নিজের যত্ন নিতে। ওর পরীক্ষা চলছে কিছুদিন হয়তো ব্যাস্ত থাকবে। মাঝে মাঝে না কথা বলেও অজস্র অনুভুতি ব্যক্ত করা যায়, সেগুলো সবই এক-একটি সুন্দর চিরকুটের প্রেমকথন হিসেবে লুকায়িত।
নাকে মুখে জল খেয়ে প্রিয়তাদের সেমিস্টারের পূর্ব প্রস্তুতি চললো, রুদ্র অদ্রির মতো ভয়াবহ ইমোশনাল ফিলোসফাররাও পড়াশোনা করছে কাদা জল খেয়ে।  এদিকে অভীদের টা চলমান। সবমিলিয়ে কারওই কারও সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ নেই৷
প্রিয়তা বিষন্ন মনে ভাবতে থাকলো এসব কিছু৷ চাঁদ উঠেছে  আকাশে। জানান দিচ্ছে পূর্নিমার।  প্রিয়তা খেয়ে দেয়ে নিজের ডায়েরী নিয়ে বসলো। লিখার চেষ্টা করলো কিছু। বহুদিন ধরে কিছু লেখা হয়না৷ আজ সে লিখবে। লিখবে তার অগোছালো অনুভূতিগুলোর কথা। অদ্রি পাশের রুমে ল্যাপটপে এসাইমেন্টের কাজ করছে।  রুদ্র ঘুমাচ্ছে তার নিজের রুমে৷ তুশি রুশিকে একটু আগেই চড় থাপ্পড় মেরে ফুপি নিয়ে গেলো৷ ওরা কিছুতেই আজ ঘুমাবে না বলে পণ করেছিলো।  তবে তা সফল হলো না৷ গান চলছে রেডিওতে। অর্নবের সুন্দর একটি গান।
নিজের পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মগ্ন প্রিয়তার ধ্যান ভাঙলো মোবাইলের আওয়াজে। সেটা বেজে চলছে৷ বেজে চলছে বিরামহীনভাবে। প্রিয়তাকে আলসেমি ধরলো।  এত রাতে কারও কল ধরার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হলো না৷ বাবা- মা সবাই ঘুমাচ্ছে এতক্ষণে। গভীর ঘুম। তাদেরও হয়তো ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এই শব্দ। অগত্যাই সে উঠলো। অপরিচিত নম্বর দেখে বিস্মিত হলেও না জানি কেন রিসিভ করলো। তখনই অপরপাশ থেকে অভী ঝাঁঝালো গলায় বললো,
‘ নিচে আসো প্রিয়তা। আমি তোমাদের বাড়ির পেছনের বাগানে দাঁড়িয়ে আছি।’
পারিবারিক একটা সমস্যার জন্য বিড়ম্বনায় আছি আমি। আজও গল্পটা লিখেছি বেশ কষ্ট করে। রিচেক করা হয়নি। ভুলক্রুটি মার্জনীয়।
দুদিনের ছুটি নিলাম আমার ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাটির জন্য৷ গল্প একেবারে শুক্রবার দিবো। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।  আসসালামু আলাইকুম।