অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৪

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৪
নন্দিনী নীলা

সময়টা গোধূলি লগ্নের। আর একটু পরে আজান দেবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমি বাসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বিছানায় শুয়ে থাকা আমার এক স্টুডেন্ট। আজকে প্রাইভেট গিয়েছিল না ও নাকি খুব অসুস্থ এজন্য দেখতে এসেছিলাম। সাদিয়াদের বাসা থেকে একটু দূরে ওদের বাসা। ওদের বাসা আসতে একটি স্ট্যান্ড পড়ে যেখানে মুদি দোকান চায়ের দোকান ও ফার্মেসি আছে।

তামান্নার মার দিকে তাকিয়ে বললাম,,”আন্টি আমি তাহলে আসি সন্ধ্যা হয়ে আসছে! তামান্না কে ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াবেন। ওর শরীর গা ভালো করে মুছে দিবেন।”
“আচ্ছা তুমি যাও। তামান্না একটু সুস্থ হলে পড়তে যা‌ইব।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তামান্নার পাশে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,”মায়ের কথা ঠিকমত শুনবে আর সুস্থ হয়ে প্রাইভেট আসবে ঠিক আছে।”
“আইচ্ছা ম্যাডাম আফা।”

ব্যাগের ভেতর থেকে চকলেট বের করে তামান্নার হাতে দিয়ে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। তামান্নার মা খাবার জন্য অনেক সাদা সাদি করেছিল আমি মানা করেছি। কিন্তু সে আমাকে শরবত খাইয়েছে যেটার আমি না করিনি আর।
স্ট্যান্ডে আসতে ওড়না দিয়ে ভালো করে গা ঢেকে আর নিলাম। এখানে অনেক লোকজন।

ছেলে মানুষের অভাব নাই এজন্য এটুকু পার হতে আমার খুব অস্বস্তি হতে লাগলো। সবাই যে খুব ভালো তা না অনেকেই কেমন বাজে নজর চেয়ে আছে এজন্য আমার অস্বস্তি বেড়ে গেল। দ্রুত পায়ে আমি স্ট্যান্ড পার করছিলাম কিন্তু আমাকে থেমে যেতে হলো। রাজিব স্যার আমাকে ডেকে উঠেছে তার ফার্মেসি দোকানে থেকে। সবার মাঝে এমন ভাবে ডেকেছে না দাঁড়িয়ে উপায় পেলাম না। আমি দাঁড়িয়ে তার দোকানে দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম।

তার দোকানে দুজন ছেলে বসা ছিল তিনি কি যেন ইশারা সকরতেই দুজনেই চলে গেল। তার ডাকাডাকির কি জন্য বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেলাম।
“কথা না বলেই চলে যাচ্ছ যে। এখন ত আর স্কুলে কথা বলার উপায় নাই।”

ওনার কথার মানেটা বুঝতে পারলাম আজ এক সপ্তাহ ধরে উনি স্কুলে যান না শুনছিলাম উনি জবটা নাকি ছেড়ে দিয়েছে। কারণ জানার ইচ্ছেও নাই তাই আর সেইসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কিন্তু উনি স্কুল থেকে চলে এসেছে শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। ওনার মধ্যে একটা গায়ে পড়া ভাব আছে যেটা আমার একটুও পছন্দ না। এমন লোকের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো।

“বসো!”
আমি বসলাম না দাঁড়িয়ে থেকে বললাম,”কেমন আছেন?”
“আছি মুটামুটি। খুব প্রেসার আছি। চাকরিটা ছাড়তাম না কিন্তু চাচার সাথে এবার বিশাল বড় একটা ঝগড়া দ্বন্দ্ব হয়েছে এখন তার স্কুলে আমি কিভাবে কাজ করি‌। তাই ছাড়তে বাধ্য হলাম পারিবারিক কারণে। নিজের ফার্মাসিতে এখন সারাদিন বসে কাটাই।”

“ওহ।”
“তোমাকে খুব মিস করি। আগে তো তাও প্রতিদিন দেখা হতো।কথা হতো। এখন তো তাও হয় না। স্কুলটা পড়েছে ওই পাশে এজন্য তুমি এ দিকে আসই না। আজকে তোমাকে দেখে তো আমি চমকে গিয়েছিলাম। কোথায় গিয়েছিলে?”
“তামান্না কে দেখতে গিয়েছিলাম।”
“ও তোমার স্টুডেন্ট?”
“হ্যা।”

“দাঁড়িয়ে কেন বসো। কত দিন পর কথা বলছি একটু আড্ডা দেই না হয়।”
“সরি, সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন বাড়ি ফিরতে হবে। ভালো থাকবেন আসি।”
রাজিব স্যারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলাম। তিনি পেছনে অবশ্য ডেকেছিলেন আমাকে দুইবার আমি পাত্তা দেয়নি আজান পড়ে গেছে এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।

বাড়িতে এসে আরেকটা ঝামেলা দেখতে পেলাম। সাদিয়ার বাপ চাচা আজকে ঝগড়া নয় চেয়ার পেতে বসে আছে। তাদের সাথে সাদিয়ার চাচাতো ভাই আহিল আছে। কিছু নিয়ে খুব জরুরী আলাপ করছে। আমি সে দিকটায় এক বার তাকিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলাম। এদিকে আমাকে দেখে তিন জোড়া চোখে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমার চোখে সেটা পড়লোই না।

আমি রুমে আসতেই দেখতে পেলাম সাদিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,”কিছু হয়েছে কি সাদিয়া?”
সাদিয়া ঘার দুলিয়ে না বলে চলে গেল। একটু পরে সাদিয়ার চাচি এল আমার কাছে।
তিনি বললেন,” আহিল এগুলা কি বলতাছে মাইয়া। বাইরে আহো তোমার লাগে জরুরি কথা আছে।”

আমি কপাল কুঁচকে বললাম,” কি হয়েছে আন্টি আপনি রেগে আছেন কেন? ”
তিনি রাগী চোখে তাকিয়ে আমাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। আমি চমকে উঠলাম। দুয়ারে দাড়াতেই দেখতে পেলাম সবাই আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। শুধু একজনবাদে সেই হলো সাদিয়ার মা।
তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে খুব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল,,” ছোঁয়া একটা সত্যি কথা কইবা?”

আমি তাদের এমন ব্যবহারে কিছুই বুঝতে পারছি না। বোকা চোখে তাকিয়ে আছি সাদিয়ার মায়ের দিকে। তিনি বললেন,” রাজিব স্যারের লগে কি তোমার কোন সম্পর্ক আছে?”
কথাটা যেন বজ্রপাতে মত কানে লাগল‌‌ আমি বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালাম তার দিকে।
“কিসের সম্পর্ক। ঠিক বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলুন।”

আর কে কি বলবে আমার কথার প্রেক্ষিতে আহিল বসা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠল। আমি আহিলের চিৎকার শুনে মৃদু কেঁপে উঠলাম। নিজেকে মনে হচ্ছে এখানে জেরা করা আসামী। আহিল কে থামালো আহিলের বাবা।

এবার সাদিয়ার বাবা বললেন,”আমি বলি। তোরা সব চুপ থাক। ছোঁয়া তুমি আমাদের বাড়িতে থাকো আজ থেকে সাত-আট মাস হয়ে এলো। এটা ঠিক তুমি নিজের যাবতীয় খরচ টাকা পয়সা দিয়েই থাকো। কিন্তু আমাদের বাড়িতে থাকো তাহলে তো তোমার ভালো-মন্দ তোমাকে দেখে রাখাটা আমাদের একটা কর্তব্য।

তুমি আমাদের বাড়ি একটা মেয়ে হয়ে উঠেছ। তুমি তো জানো আহিল তোমাকে পছন্দ করে‌। বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিল তোমাকে। প্রথমে আমরা জানতাম না তুমি বিবাহিত কিন্তু পরে জানানোর পর আমরা সেসব নিয়ে কথা বাড়ায়নি। তুমি স্বামী সংসার রেখে কেন এখানে এসে পড়ে আছো সেসব নিয়ে আমরা কিছু বলিনি তোমার জীবন তোমার ইচ্ছা। সেখানে তোমাকে জোর করে জানার অধিকার আমাদের নাই।

কিন্তু আমরা নিজেরাই ধারণা করে নিয়েছি হয়তোবা স্বামীর সাথে কোন সমস্যা করে তুমি এসেছ। ফিরে যাবে কিন্তু একদিন করতে করতে অনেক দেরি হয়ে গেল তোমাকে কারো সাথে যোগাযোগ করতে অবধি দেখি না। তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই নি তোমাকে তোমার মতই ছেড়ে দিয়েছি।

কিন্তু তাই বলে তুমি বিবাহিত হয়ে আমাদের বাড়ির ছেলেকে অবজ্ঞা করে বাইরের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করবে এটা তো আমরা মেনে নিতে পারি না। সবাই জানে তুমি বিবাহিত এখন আরেকটা ছেলের সাথে তোমার মেলামেশা এসব নিশ্চয়ই কেউ ভালো চোখে দেখবে না। এখন তুমি আমাদের বাসায় থেকে এমন নোংরামি কাজ করলে সবার কাছে আমরাই ছোটো হয়ে যাব খারাপ হবো। বলবে এমন একটা নোংরা চরিত্রের মেয়েকে আমরা কেন বাড়িতে ঠাই দিয়েছি। স্বামী সংসার ফেলে রেখে এখানে এসে পরপুরুষের সাথে নোংরামি শুরু করেছে।”

প্রথমে শান্ত স্বরে সাথে কথা শুরু করলে উনার কথা আস্তে আস্তে কঠোর হয়ে আসলো। রাগ জেদ নিয়ে কথাটা শেষ করলেন। আমি স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনলাম কি রিঅ্যাকশন করব পারছি না। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। পাঁচ মিনিট আমি কথা বলতে পারলাম না কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমন মিথ্যা এলিগ্রেশন কে দিল আমার নামে! আহিল? আমি আহিলের দিকে না তীক্ষ্ণ চোখে দেখালাম। আহিল রাগে ফুসফুস করছে।

“আমি ঠিক জানিনা কি দেখে আপনাদের মনে হলো আমি নোংরা চরিত্রে মেয়ে। হয়তোবা আমি আপনাদের চোখে খারাপ একটা মেয়ে কিন্তু সজ্ঞানে আমি খারাপ কোন কাজ করিনি। কার সাথে কি নোংরামি করেছি আপনাদের চোখে পড়েছে আমি জানিনা। কিন্তু তেমন কোন সম্পর্ক আমার কারো সাথে নেই। আমি শুধু মাত্র একজন মানুষকে ভালোবাসি এ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করার কথা আমি ভাবতেও পারি না।

হয়তোবা আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আমি আপনাদেরকে বিশ্বাস করাতেও চাইবো না। আপনাদের যদি মনে হয় আমি এই বাসায় থাকলে আপনাদের মান সম্মান নষ্ট হবে। সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না। তাহলে বলতে পারেন আমি কাল সকালেই চলে যাব। এই রাতে আমি চলে যাওয়ার কথা বলতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করবেন। আজকে রাতটা আমাকে বাসায় থাকতে দিন। এতদিন যেহেতু সহ্য করতে পারলেন আর একটা রাত আমাকে একটু সহ্য করুন।”

কান্না দলা পাকিয়ে আসছে একটু দম নিয়ে আবার বললাম,,
“আর আপনারা বললেন আমি কারো সাথে কেন যোগাযোগ করি না। কেউ কেন আমার খোঁজ খবর নেয় না। আসলে আমার খোঁজখবর নেয়ার মত কেউ নাই এই পৃথিবীতে। যার কেউ নাই তার খোঁজখবর কে নেবে? কিন্তু আমি একজনের আশায় বসে আছি আমি জানি সেই মানুষটা আমাকে খুজবে। সেই মানুষটা আশায় আমি পথ চেয়ে আছি।

জানিনা কবে সে আসবে আর এই অপেক্ষার শেষ হবে কবে।আমার অজানা ভুলের জন্য সবার কাছে ক্ষমাই চাইছি পারলে মাফ করবে।”

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩

আমি আর এক দণ্ড দাঁড়ালাম না ছুটে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দিলাম। সাদিয়ার চাচী অনেক কথাই বলেছে আমি সেগুলো গায়ে মাখিনি নিজের মতো কথা বলে আমি চলে এসেছি। এই বাসায় আর একটা দিনও থাকবো না। কাল ভোর হলে বেরিয়ে যাবে বাসা থেকে। বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা আওয়াজ আসছে। সাদিয়া দরজা ধাক্কা দিচ্ছে দরজা খুলতে বলছে। আমি খুললাম না। চুপ করে বিছানায় বসে রইলাম। কাঁদলাম ও না নিজের ব্যাগ
গুছাতে লাগলাম।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫