অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৫

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৫
নন্দিনী নীলা

নিবিড় আমাকে ওর একটা বান্ধবীর বাসার সামনে নিয়ে এলো। আমি কোথায় যাব এসব নিয়ে যখন পাগলপ্রায় অবস্থা তখন নিবিড় বলল, ‘ শোন তুমি চাইলে আমি তোমাকে আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকতে দিতে পারি।’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ফ্রেন্ডের বাসায় মানে। আপনি আমাকে ‌ আপনার ছেলে বন্ধুদের বাসায় রেখে আসতে চাইছেন?’
নিবিড় বিরক্ত মাখা গলায় বলল, ‘ ইডিয়েট, আমাকে কি শুধু ছেলে ফ্রেন্ড! আমার কি মেয়ে ফ্রেন্ড নাই?’
আমি নিজের বোকামি কথা বলে ফেলেছি বুঝতে পেরে বললাম, ‘আচ্ছা চলুন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আচ্ছা চলুন বলে দিয়েও তো এবার আমার টেনশন হচ্ছে নিবিড়ের বন্ধু যে দুইটা মেয়ে দুজনের একজনও তো আমাকে সহ্য করতে পারে না। আফিয়া মেয়েটা তো আমাকে তার চিরশত্রু মনে করে। আর তার সাথে থাকা মেয়েটা কি যেন নাম মনে নাই সে আমাকে পছন্দ করে কিনা জানিনা কার বাসায় নিয়ে যাবে কে জানে।

ডাইভিং এর মাঝে হঠাৎ নিবিড় বলে উঠলো, ‘হোয়াটস প্রবলেম?’
আমি চকিতে মাথা উঁচু করে বললাম, ‘কিসের সমস্যা?’
‘কি ভাবছো?’

আমি বললাম, ‘ আপনি আপনার কোন বান্ধবী বাড়ি আমায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
নিবিড় বলল, ‘যেখানে তুমি থাকতে পারবে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি।’
‘আমাকে বলুন আগে। আপনার ঐ শাকচুন্নি আফিয়া বান্ধবীর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না তো আমাকে?’

নিবিড় বলল, ‘ আমার ফ্রেন্ডের ইন্সাইট করলে কিন্তু গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। তুমি আমার সাথে আর ঝগড়া তর্ক করবে না বলেছিলে।’
‘ হ্যাঁ আপনার সাথে ঝগড়া করছি কোথায়? আপনার সাথে তো সুন্দর করে কথা বলছি। আমি তো ওই শাকচুন্নি টা কে ….
নিবিড় রাগী গলায় বলল, ‘ আবার বের হ‌ও আমার গাড়ি….

আমি মুখে হাত দিয়ে বললাম, ‘সরি সরি আমি আর একটা কথা বলব নাই যে মুখ বন্ধ করলাম। আপনি যেখানে খুশি আমাকে আজকে রাত থাকার ব্যবস্থা করে দেন। শুধু ওই শাক.. সরি ওই আফিয়ার বাসায় আমাকে নিয়ে যাইয়েন না।’
নিবিড় শান্ত হলো আর আমাকে গরম চোখে শাসিয়ে দিল ইশারায় নেক্সট টাইম যদি আমি তার কথার অবাধ্য হয়েছি তো আমার আর কোন অনুরোধ‌ই তিনি গ্রহণ করবে না।

হঠাৎ একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নিবিড় গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ বাসায় থেকে কিছু খেয়ে পালিয়ে ছিলে?’
খাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই পেটে আমার খিদের যন্ত্রণার টের পেলাম। সেই সকালে খেয়েছিলাম দুপুরে খাওয়ার আগে নিবিড়রা এসেছিল। তারপর যা হয়েছে তারপর তো রুমে বন্দি অবস্থায় ছিলাম। পালিয়ে এসেছি তো খাওয়ার বাহানা দিয়ে। খেতে আর পারি নি।

আমি ক্ষুধার্ত মুখে নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘সকালের পরে আর খেতে পারেনি খুব খিদে পেয়েছে। পেট ব্যথা করছে খিদের যন্ত্রণায়।’
‘পালিয়ে আসার আগে কি পেট ভরে খেয়ে আসতে পারলে না। এখন আমার টাকা খরচ করে তোমাকে খাওয়াতে হবে।’অনিচ্ছা গলায় বলল নিবিড়।

উনি আমাকে খাওয়াতে চায় না সেটা তারই পানসে মুখটা দেখে আমি বুঝে গেছি।
আমি অনুরোধ গলায় বললাম, ‘কয় টাকা লাগে খেতে আমি পরে দিয়ে দেবো আপনাকে এবার তো চলুন।’

টাকার কথা বলতেই নিবিড় আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আচ্ছা। শুধু খাওয়ার টাকায় দিবা এই যে তোমাকে হেল্প করছি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় নিয়ে যাচ্ছি এই এত রাস্তা পাস করার জন্য আমার কতখানি তেল খরচ হচ্ছে জানো? শুধু খাবারের টাকা না। থাকার জন্য বাসা ভাড়া দিতে হবে। আর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে হবে।’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘সব দিতে হবে আচ্ছা সব মিলিয়ে কয় টাকা হবে?’
নিবিড় নির্বিকার গলায় বলল, ‘ ধরা 10/ 20 হাজার তো হবেই।’
আমি অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম এত টাকার অংক শুনে।

আমি গালে হাত দিয়ে বিশমিত গলায় বললাম,’ কি বললেন এত টাকা এই টাকা দিয়ে তো আমি আমার বাড়ি ওয়ালার পাঁচ মাসে ভাড়া দিয়ে দিতে পারব।’

‘তুমিতো ওই ভাঙাচোরা ফ্লাইটে থাকো আমি যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেটা তো ভিআইপি বাসা।’
‘আমার এত টাকার বাসায় যেতে পারবো না আমি না হয় আপনার এই গাড়িটিতে থাকবো। আর ওই দোকান থেকে আমি ভাত আর ডাল খাব আর আপনাকে ভাড়া হিসেবে 50 টাকা দিব।’

‘টাকার জন্য তুমি আমার গাড়িতে থাকতে চাও। আমি তোমাকে টাকা ছাড়া ফ্রি তে গাড়িতে থাকতে দেবো কেন? এটা কি তোমার শ্বশুরের ছেলের গাড়ি পাইছো?’
আমি নিবিড়ের কথাটা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না না বুঝতে পেরেই বলে উঠলাম, ‘হুম তাই পাইছি।’
নিবিড় হতবিহ্বল কন্ঠে বলল, ‘ হোয়াট?’

আমি ঢোক গিলে বললাম,’ খিদের যন্ত্রণায় মরে গেলাম এবার আপনি এতো কথা অফ করেন প্লিজ।’
নিবিড় গাড়িতে বেরিয়ে গেল। আমিও বেরিয়ে এলাম। ছোটখাটো রেষ্টুরেন্ট হলেও ভেতর টা খুব সুন্দর বাইরে থেকে মনে হয়নি এমনটা হবে।

আমরা একটা টেবিলে বসলাম। আর বসার পর থেকে আমি নিবিড় কে শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছি আমি শুধু ডাল ভাত খাব। আমি বেশি টাকা খরচ করতে পারবোনা। কিন্তু নিবিড় আমার কথা কানে নিল না সে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো।
আমি হাঁ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল, কি হয়েছে ?
আমি রাগী গলায় বললাম, ‘এটা কি হলো আপনি এত টাকার খাবার অর্ডার দিলেন কেন? আমি যা বললাম তার উল্টা। আমি এত খাবার খাব না আর এসব তো খাব‌ই না। আমার এত টাকা নাই বলছি না।’

নিবিড় নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, ‘তোমার জন্য এসব অর্ডার করতে চাইছিলাম না। আমার জন্য শুধু করতে চাইছিলাম কিন্তু এখানে শুনলাম ডালভাত এখানে পাওয়া যায় না। কম দামি কোন খাবার এখানে নাই তাই তোমার জন্য ও করলাম। এখন তোমার যদি খেতে মন চায় খাও না হলে আমি খাই।’

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, ‘আপনি জিজ্ঞেস করলেন কখন? আমার সাথে ছিটারি করেন?’
নিবিড় বলল, ‘ জিজ্ঞেস করতে হবে কেন মেনু দেখতে পাচ্ছ না। মেনু কার্ডে যা আছে এখানে সেই সব‌ই পাওয়া যায়। বিলিভ না হলে ধরো মেনু কার্ড পড়ে দেখো তোমার ডালভাত থাকলে তুমি আবার অর্ডার দিয়ে নাও।’

আমি মেনু কার্ডটা হাতে নিলাম আর উলটপালট করে কোথাও ডাল-ভাত পেলাম না। একটা রেসিপি তাও আমি ডাল ভাত পেলাম সেখানে ভাতের সাথে ডাল ইলিশ মাছ ভর্তা আর গরুর গোস্ত আল্লাহ। আমি ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম এখান থেকে শুধু ডাল আর ভাতটা আমাকে দেওয়া যাবে কিনা।

ওয়েটারকে ডাকতে যাব তখন নিবিড় আমাকে একটা ধমক দিল, ‘আমি যা অর্ডার করছি তাই খাবে চুপচাপ। বেশি কথা যেন না শুনি তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। মাইন্ড ইট।’

‘আমার কিন্তু সত্যি..
বলতে গিয়ে ও আমি বলতে পারলাম না নিবিড় আমার দিকে যেমন লাল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে চুপ করে রইলাম। খাবার নিয়ে আসতে আমার খিদে চাপ আর ও বেড়ে গেল আমি গপাগপ খেয়ে ফেললাম। টাকার চিন্তা বেমালুম ভুলে গেলাম।

নিবিড় আমাকে সেই আফিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড মেয়েটার বাসায় নিয়ে এসেছে মেয়েটা আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। সে হয় তো কল্পনাও করতে পারেননি নিবিড় এই রাতে আমাকে নিয়ে তার বাড়ি আসবে‌।

তার চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। বিস্ময়ের জন্য তিনি পাক্কা পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারলোনা। হা করে আমাদের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ করে নিবিড়কে টেনে একটু আমার থেকে দূরে নিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
দুজনে কি যেন ঘুজুরফুজুর করে তারপর আমার কাছে আসলো।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৪

আমার কাছে দুজনে এসে দাঁড়াল আমি দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় ওই মেয়েটা কে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ ইভা তাহলে ওকে নিয়ে যা কালকে সকালে এসে আমি ওকে নিয়ে যাব।’
ইভা মেয়েটা আমার হাত ধরে বলল, ‘ চলো ছোঁয়া আমার সাথে‌। নিবি তাহলে তুই চলে যা।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৬