অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৪

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৪
নন্দিনী নীলা

‘আমার জিনিস আমি বললে দেবেন না তো কে বললে দেবেন? আর আপনি যে কতোটা অকৃতজ্ঞ আর অহংকারী সেটা তো আমি একটু আগেই বুঝতে পেরেছি। আমার জিনিস আমাকে দেন আমি আর জীবন আপনার মুখ্য দর্শন করতে চাই না।’
আমার কথা শোনে নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘কি বললে তুমি আমাকে আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ।’

‘ হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা মানলাম আমি তোমার সাথে কি করেছি যে আমি অকৃতজ্ঞ হয়ে গেছি?’
আমি ফুঁসে উঠে বললাম, ‘একটু আগে একজন অসহায় মানুষকে আপনি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন সে খুব বেশি ব্যথা না পেলেও পেয়েছে। আপনি তাকে টাকা দিয়ে পার পেতে চাই ছিলেন। একটু ভালো করে কথা বললে কি হত? তা না টাকার গরম দেখাচ্ছি লেন। ধনী হয়েছেন তাই বলে সব জায়গায় কি সবাইকে শুধু টাকা দেখাবেন? ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় রক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাড়ির হেন্ডেলে একটা ঘুসি মেরে বলল, ‘ আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ ঠিক আছে। নামো আমার গাড়ি থেকে।’

আমি চোখ বড় বড় করে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। এখন গাড়ি থেকে আমার কিছুতেই নামা যাবে না। আমি বাইরে জসিমকে দেখতে পেয়েছ দৌড়ে আসছে এদিকে। এখন আমাকে নিবিড়ের সাথে পালাতে হবে আমি যদি গাড়ি থেকে নেমে যায় তাহলে আমি ধরা পড়ে যাব। আর আমি কিছুতেই ওই শয়তানটার হাতে ধরা পড়তে চাই না।
নিবিড় আমার হাত শক্ত করে ধরে ধাক্কা মেরে বলল, ‘ গেট আউট অফ মাই কার।’

আমি অসহায় মুখ করে নিবিড় দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না। জীবনে তো কোনদিন ভালো কিছু করেন নাই। আজকে একটা অন্তত ভালো কাজ। সাহায্য করেন আমাকে। আমাকে গাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি খুব বড় বিপদে পড়ে যাব আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।’

নিবিড় আমার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল, ‘নো আমি ভালো কাজ করি না আমি তো খারাপ। আর আমি না কাউকে সাহায্য করে আমিতো অকৃতজ্ঞ। বের হও আমার গাড়ি থেকে তোমার যা খুশি তাই হোক আই ডোন্ট কেয়ার।’

আমি করুন কন্ঠে বললাম, ‘ এতটা নির্দয় হবেন না প্লিজ। ওই দেখুন জসিম ছুটে আসছে ও যদি আমাকে একবার দেখতে পায় আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। আর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে। জানেন ও একটা খুব খারাপ ছেলে। মদ খেয়ে মাতলামি করে। আমাকে আগে অনেক ডিস্টার্ব করতৌ। মামি ওর সাথে হাত মিলিয়েছে। আপনার কাকার সাথে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে বলে এখন ওর কাছে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে প্লিজ আমাকে বাঁচান।’

নিবিড় এবার গাড়ি খুলে ধাক্কা দিয়ে আমাকে গাড়ি থেকে বের করে বললো, ‘ আমার মতন নির্দয় মানুষ কাউকে সাহায্য করে না। তোমাকে আমি সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আর শোনো তখন আমি তোমাকে টাকা দেখেছিলাম তোমাকে রাগানোর জন্য কারণ তুমি মুখটা যে ভাবে বেঁধে রাখো না কেন? নিবিড়ের থেকে পালাতে পারবে না। তোমাকে প্রথমে এক নজর দেখে আমি চিনে ফেলে ছিলাম যে তুমি ছোঁয়া। এর জন্য আমি তোমার প্রতি এতটা উদাস হয়েছিলাম আর তোমাক ইচ্ছে করে টাকা দেখিয়েছি।’

আমি নিজের ভুল ভাবনার জন্য লজ্জিত কন্ঠে বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর কখনো আপনার কে কিছু বলবো না। কখনো আপনাকে খারাপ কিছু বলবো না। আপনার সাথে তো আর তর্ক করতেও যাব না আজকে আমি তোমাকে বাঁচিয়ে নিন প্লিজ।’

আমি হাতজোড় করে নিবিড় কে এসব বলছি তখনই দেখতে পেলাম জসিম শয়তানটা আমাকে দেখে ফেলেছে আর শয়তান টা আমাকে দেখিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ডার্লিং তুমি ওইখানে কেন? আমাকে বিয়ে না করে তুমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছো ডার্লিং?’

জসিমের বাচ্চা রাস্তার ওপাশে আছে আমি এপাশে জসিম এবার আমার দিকে ছুট লাগাবে রোড ক্রস করলেই ও আমার কাছে চলে আসবে। আমি ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি আর এদিকে তখনই নিবিড় আমার হাত ধরে একটানে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে গাড়ি লক করে দিল। সাথে সাথেই এপাশে চলে এলো জসিম এসে গাড়ির দরজা ধাক্কাতে লাগলো চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু আমি গাড়ির ভেতর থেকে ঠিক কিছুই শুনতে পেলাম না।

গাড়ির লক করা বাইরের কোনো কথা আমি শুনতে পাচ্ছি না। কিন্তু জসিম এমন জোরে দরজা ধাকাচ্ছে যেন গাড়ি ভেঙে ফেলবে এ দিকে নিবিড় আমাকে সিট ব্রেল বাঁধতে বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শয়তান জসিমকে ফেলে আমাকে নিয়ে চলে এলো। জসিমকে ছেড়ে আসতে আমার জানে প্রাণ ফিরে এলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।

নিবিড় আমাকে পেছন থেকে একটা পানির বোতল এনে দিল আমি পানির বোতল পেয়ে গপগপ করে পানি খেতে লাগলাম। একদম বোতলের মুখ লাগিয়ে খেয়েছি। সেটা দেখে নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটা ছেলের পানির বোতলের মুখ লাগিয়ে খেতে লজ্জা করে না তোমার!’

নিবিড়ের কথা শোনে আমি বোকা চোখের নিবিড়ের দিকে তাকালাম। আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘সরি আসলে খুব পানি পিপাসা পেয়েছিল মনে ছিল না এটা অন্য কারো বোতল। বিশেষ করে এটা কোন ছেলের বোতল তাই বুঝিনি। বুঝলে কি আর আমি আপনার মুখ লাগানো এঁটো বোতলের মুখ লাগাতাম?’
নিবিড় বলল, ‘ কি বললে তুমি আমার এঁটো? আমার বোতলে আমি মুখ লাগাব না তো কে লাগাবে।’

‘ আমি….
নিবিড় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘তুমি আবার আমার সাথে ঝগরা করছো। তর্ক করছো একটু আগে কি বলছিলে নামিয়ে দেব নাকি গাড়ি থেকে?’

আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘ নানানা সরি প্লিজ। আর কোন কথাই বলব না। এই যে মুখে হাত দিলাম।’
বলেই নিজের আঙ্গুল নিজের মুখে দিয়ে মুখ অফ রাখলাম। মনে মনে তো আমি ফুঁসছে বিপদে পড়েছি বলে এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে আমারও দিন আসবে তখন আমিও এর সুদে আসলে উসুল করব।
নিবিড় ড্রাইভ করতে করতে উঁচু গলায় বলে উঠলো

, ‘মনে মনে আমাকে কিভাবে শায়েস্তা করবে তা ভাবা বন্ধ না করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দেব।’
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,’আপনি আমার মনের কথা কিভাবে জানলেন?’
নিবিড় বলল, ‘আমার পাশে বসে আমাকে নিয়ে শয়তানি প্ল্যান করবে আর আমি তা ধরতে পারবো না ভাবলে কি করে? ‘
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, ‘ আমি কিছু বলিনি বিশ্বাস করুন।’

‘আর কিছু না ভাবলে বিশ্বাস করব।’
‘আচ্ছা আর কোন প্ল্যান করব না সত্যি করে বলছি।’
নিবিড় আমার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলল না।
মনে মনে একটা কিছু ভাববো তা ভেবে ও শান্তি নাই। কি লোক রে বাবা এ দেখি মনের খবরও
জেনে যায়।

নিবিড় আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় যাবে এখন ঠিকানা দাও!’
আমি বললাম, ‘আমি যে বাসায় থাকি সেখানে তখন ঢুকতে পারবো না। আপনি আমাকে লিলি দের বাসায় নিয়ে যান। আর আপনার ফোনটা একটু দেন ওকে আমি ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই আমি আসতেছি।’

‘কেন তোমার ফোন তো আমি দিয়ে দিয়েছি। আমার ফোন দেওয়া লাগবে কেন?’
‘ খালি ফোন থাকলে হয় নাকি ফোনে তো টাকা লাগবে। ফোনেতে ব্যালেন্স নাই ফোন দেবো কিভাবে।’
‘ এত সুন্দর একটা সু পাত্রের সাথে তোমার মামি তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। তুমি কেন পালিয়ে এলে?’
‘ সুপাত্র না গাজা খোর একটা।’

নিবিড় শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে ফোন টা বাড়িয়ে দিলো। আমি লিলি কে কল দিলাম কিন্তু ফোন দিয়ে যা শুনলাম তা শুনে সেখানে যাওয়ার রাস্তা টা আমার বন্ধ হয়ে গেল। লিলি নাকি ওর চৌদ্দগোষ্ঠী নিয়ে নানীর বাড়ি গেছে। রাগ আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে এখন আমি যাব কোথায়?’

সেখানে যেতে পারবেনা শুনে তো নিবিড় হাসতে হাসতে শেষ। আমার দিকে তাকিয়ে টিটকারি মারা গলায় বলল, ‘আচ্ছা এখন তাহলে কোথায় যাবে? তাহলে তোমাকে তোমার মামার বাড়ি রেখে আসি ওই সুন্দর ছেলেটাকে বিয়ে করে সংসারী হও।’

‘ওই মাতাল গাঁজাখোর টাকে বিয়ে করলে আজীবনের মাতলামি দেখতে দেখতে আমি মরে যাব। না বাবা ওকে বিয়ে করার থেকে আমার পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মরা ভালো।’
‘তাহলে কি কোন পুকুরের সামনে নিয়ে যাব?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (২)

আমি কান্না করে দিয়ে বললাম,’আপনি সত্যিই এত নির্দয় আর পাষাণ। মরার জন্য আমাকে পুকুরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কোথায় আমাকে সান্তনা দেবেন। একটা পথ দেখাবেন তা না মরে যেতে বলছেন।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৫