অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (২)

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (২)
নন্দিনী নীলা

দরজা খুলে ভেতরে আসতেই আমি নিচে পড়ে গেলাম আর পড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম, ‘ তোমার আক্কেল জ্ঞান নাই একজনকে যে বন্ধ করে রেখেছো তার কি খিদে পায় না? আবার এখন আমাকে নিচে ফেলে দিলে।’

‘ তুই দরজার সাথে লেপ্টে বসে ছিলি কেন জানিস না আমি এখন আসব।’
‘ এমনভাবে বলছ যেন আসার আগে আমাকে জানিয়ে আসছো। ‘
‘ এই শোন এই যে এখানে তোর জন্য শাড়ি আছে জসিম নিজে পছন্দ করে এনেছে তাড়াতাড়ি গুলো পড়ে রেডি হয়ে নে।’
‘পারবোনা!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘যা বলছি চুপচার তাই কর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। শেষবারের মতো খাইয়ে দেই।’
বলেই মামি দরজা খুলে রেখে চলে গেল।
আমি দরজার সামনে থেকে উঁকি মেরে দেখলাম, ড্রইংরুম একদম ফাঁকা। আমি এখন এখান থেকে পালাতে পারবোনা কি বুঝতে পারছিনা‌। বারান্দায় থেকে আমি দেখতে পেয়েছি শয়তান জসিমের বাচ্চা বাসার সামনেই ঘুরঘুর করছে। একদম জামাই সেজে ঘুরছে।

আমি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে যেভাবে আছি এভাবেই শুধু ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম দরজা খুলে বের হতে আমার রবিনের সাথে দেখা হবে। ও নিশ্চয়ই বাইরে ছিল আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করল,’ আপু কি হয়েছে তোমার কোথায় যাচ্ছে এভাবে ছুটে?’

আমি কথার উত্তর না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে আসলাম। ও কথা বলতে চাইছিল আমি ওকে চুপ করে আমার সাথে আসতে বলেছি।

নিচতলায় নিয়ে এসে ওকে বললাম, ‘ রবিন ভাই আমার আমি পালিয়ে যাচ্ছি। তুই মামাকে দেখে রাখিস। আমি এই বিয়েটা করতে পারব না রে। জসিমকে বিয়ে করে আমার জীবন আমি নষ্ট করতে পারবোনা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না আমাকে এখনই পালাতে হবে যেভাবেই হোক। এখানে থাকলে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। ‘

রবিন ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘আপু তুমি কিভাবে পালাবে নিচে তো জসিম ভাইয়ের লোকেরা ঘোরাফেরা করছে।’
আমি বললাম, ‘সেসব নিয়ে তুই চিন্তা করিস না তুই বাসায় যা। ওই দেখো মামি চিৎকার করছে। জেনে গেছে আমি পালিয়েছি। তুই মামীকে গিয়ে সামলা। জসিম কে এখনি জানি মামি জানাতে না পারো আমি পালিয়েছি। তুই শুধু আমার এইটুকু সাহায্য কর মামি যেন এখনই জসিমের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।’

রবিন বলল, ‘আচ্ছা তুমি পালিয়ে যাও আমি দেখছি কিছু করতে পারি কিনা।’
শেষবারের মতো ভাই টাকে জড়িয়ে ধরে চলে এলাম ও আমার মামাতো ভাই হলেও। আমাকে নিজের আপন বোনের মত ভালবাসে ছোট বেলা থেকে। মামি চেষ্টা করেও নিজের ছেলেকে নিজের মতো বানাতে পারে নি।

নিচতলায় আসতেই নিচতলার সে আন্টির সাথে দেখা হলো যিনি প্রতিদিন আমাদের বাসায় যায় এটা ওটা চাইতে।
আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করে ওঠে,’ আরে ছোঁয়া না। তুমি সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছ?’
আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘ না মানে আসলে ওই….

কি বলব বুঝতে পারছি না। এমনিতে আমার যাওয়ার তাড়া আর উনি আবার আমাকে আটকে দিচ্ছে। আমি তাড়াহুড়ো গলায় বললাম, ‘দোকানে যাচ্ছি আন্টি। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলি।’

উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ওনাকে পাশ কাটিয়ে বাইরে ছিলাম উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আশে পাশে আমি জসিম কে দেখছি না এটাই সুযোগ আমি দৌড়ে হাঁটা দিলাম। হাতে একটা টাকাও নাই কিভাবে যাব । আমি সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটছি তখনি ধাক্কা খেলাম কারো সাথে। পাশ ঘুরে তাকাতেই থমকে গেলাম এটা তো জসিম। আমি তারাতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম।

জসিম রেগে গিয়ে একটা বকা দিল আমায় আমি আর তার দিকে তাকালাম না। মুখটা বেঁধে এসে ভালো করেছি। না হলে এখন দেখলেই শয়তানটা আমাকে চিনে ফেলত।

আমাকে চিনতে না পেরে জসিম চলে গেল আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। আমি এখন এই হাঁটতে হাঁটতে না যেতে পারব লিলির বাসায় আর না যেতে পারব নিজের বাসায়। কি করবো কতক্ষণই বা হাঁটবো কোথায় যাবে। আর এখন জসিম মামার বাসায় যাবে যদি গিয়ে জানতে পারলাম আমি পালিয়েছি তাহলেই ত নিজের দলবল নিয়ে চলে আসবো আমার পেছনে ধাওয়া করতে।

ও জানার আগেই আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। ওকে শেষবার বলেছিলাম খুব ভালো কর ওকে বুঝেছিলাম। আমার পেছনে যেন পরে না থাকে। আর মামী কেউ যেন লোভ না দেখায়। ও আমার কথা শোনেনি সে আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মামির কথায়‌।

আমি শয়তান জসিমকে কিভাবে শায়েস্তা করবো। আর কোথায় যাবো এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছি জানিনা হঠাৎ করে তীব্র হর্নে আমি চমকে উঠলাম। সাথে সাথে আমি ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম। আর রাস্তা থেকে সরে আসার আগেই ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।

খুব ব্যথা বেশি না পেলে ও পায়ের হাঁটুতে হাতের কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছি। গাড়ি থেকে লোকটা ধড়ফড়িয়ে নেমে আসলো আরে এসে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘ আই এম ভেরি সরি। আপনি ঠিক আছেন?’
আমি লোকটার দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে নিবিড়।

নিবিড় চিনতে পারে নাই কারন আমার মুখ ওড়না দিয়ে বাঁধা। আমি চুপ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে নিবিড় বিরক্তিকর কন্ঠে বলল, ‘দেখুন এখানে সম্পন্ন দোষ আপনার আপনি রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছেন। তাই এটা নিয়ে আবার আমাকে ফোর্স করবেন না। আপনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন তার জন্য আমি কিছু টাকা দিয়ে দিচ্ছি আপনি ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েন।’

আমার প্রচন্ড রাগ হল টাকার কথা বলায়‌। সব সময় এই লোকটা দেমাক আমাকে নিয়ে চলে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বা শুধু আমাকে পছন্দ করে না বলে আমার সাথে এমন করে। এখন তো আর আমাকে চেনে নাই অচেনা একজন মানুষ ব্যথা পেয়েছে কোথায় সাহায্য করে চেষ্টা করবে তা না টাকা দেখি পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। অকৃতজ্ঞ একটা।

আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নিবিড় পকেট থেকে আমাকে 1000 টাকার দুইটা নোট হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর গাড়িতে উঠার জন্য পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি টাকা গুলা হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে জ্বলন্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি‌। নিবিড় গাড়িতে উঠার সাথে সাথে আমি ছুটে নিবিড়ের অপরপাশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।

আমাকে গাড়িতে উঠতে দেখে নিবিড় চিৎকার করে উঠল, হোয়াট আর ইউ ডুইং। হুয়াই আর ইউ গেটিং ইন দা কার‌।’
আমি উনার প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। উনার দেওয়া দুই হাজার টাকা আবার উনার দিকে ছুড়ে মেরে মুখের বাধন খুলে ফেললাম। প্রচন্ড গরম লাগছিল গরমের মধ্যে মুখ বেঁধে ছিলাম তার মধ্যে টেনশনে ছিলাম সব মিলিয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। মুখের বাধন খুলতেই নিবিড় আমাকে চিনে ফেলল ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিস্মিত গলায় বলল, ‘ তুমিইইই!’

‘ হ্যাঁ আমি।’
‘ ইউ তুমি এখানে কি করছো? মনে হচ্ছে পালিয়ে যাচ্ছ!’
‘ হ্যাঁ পালিয়ে যাচ্ছি।’
‘ বাট হোয়াই? বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। এখন আর পালানোর কি দরকার? ওয়েট ওয়েট এখন কি নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাচ্ছো নাকি?’

আমি বিরক্তকর কন্ঠে বললাম, ‘আমি আপনার মত এত ফালতু না। ফালতু কাজ আমি সময় ব্যয় করি না। আমি একাই পালিয়ে যাচ্ছি।’
‘ কেন?’
‘ আগে আপনার বাসায় চলেন তারপর বলছি।’

‘হোয়াট! আমার বাসা যাব মানে কি? তুমি কি আমার সাথে আমার বাসায় যেতে চাইছ নাকি।’
‘ আপনার বাসায় যাব না আমি আপনার বাসার সামনে থাকব। আপনি বাসার ভেতরে গিয়ে আমার ব্যাগটা নিয়ে আসবেন তারপর আমি চলে যাব।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (১)

‘ তুমি বললে আমি তোমাকে ব্যাগ দিয়ে দেবো নাকি
আমি দেবো সেটা বলেছি আর আমি কালকে এমনিতেও তোমাকে কলেজে ব্যাগ দিয়ে দিতাম
আমি জানি তো কাল তুমি কলেজ আসবে এখন আমার সাথে তোমাকে আমার বাসায় যেতে হবে কেন?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৪