অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (১)

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (১)
নন্দিনী নীলা

মামির সামনে সরাসরি বলে উঠল রাফসান তিনি আমার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চায়। আমি আগে হলে হয়তো এই কথাটা শুনে খুশি হতাম কিন্তু এবার আমি খুশি হতে পারছিনা কারণ একটু আগে
নিবিড় আমাকে আমার ব্যাগটা নয় শুধু ফোনটা ফেরত দিয়েছে।

আর ফেরত দেয়ার সাথে সাথে ফোনে মেসেজ করেছে। আমি যেন কাকার সাথে কোনভাবে একা কথা না বলি। উফফ কি বিরক্ত কর উনি আবার এখানে বাদ সাধলেন কেন? আর এইরকম ভাবে উনার কাকাই বা আমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়েছে কেন সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওনাকে আমি জিজ্ঞেস করতে পারছিনা আমি যে বিয়েতে রাজি নয় সেইটা কি উনি জানিয়ে দিয়েছেন। যে কথাটা কিভাবে শুরু করব সেটাই বুঝতে পারছি না।

আমার মনে হচ্ছে উনার জন্য আমার এই বিয়েটা ভাঙ্গা হবে না। কেন যে উনাকে বিশ্বাস করতে গেলাম। আমি ফোন নিয়ে ঘটর মটর করছি তখনই দরজার সামনে এসে দাড়ালো রাফসান। আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তিনি এসে বিছানায় বসলো আয়েশ করে। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে এদিক ওদিক দেখচ্ছি।
রাফসান বলল, ‘ দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।’

আমি বসবো না তাই বললাম, ‘ সমস্যা নাই কাকা আপনি বসুন।’
নিজের মুখ দিয়ে এভাবে কাকা শব্দটা বের হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি‌‌। আমি মুখে হাত দিয়ে শুকনো ঢোক গিললাম। রাফসান আমার দিকে বিহ্বল চোখে তাকালো। আমি মুখে হাত দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমিও পেছন পেছন এলাম। রুম থেকে বের হবো তখন আমার ফোনে আর একটা মেসেজ আসলো। মেসেজ ওপেন করে দেখলাম মেসেজ পাঠিয়েছে নিবিড়।

‘তুমি বিয়েটা করতে চাও না। সেই সব কিছু বলো না এখন। যা বলে শুধু শুনো। কাকাকে আমি যা বলার বলে দেব। তুমি যদি এখন সরাসরি না করে দাও তাহলে কাকার আত্মসম্মানে লাগবে। কাকা এমনিতেও বিয়েটা করতে চাচ্ছে না এজন্যই বারবার তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে। তোমার মত জানার জন্য কিন্তু আমার এখন মনে হয় তুমি সরাসরি না করার থেকে আমি না হলে তো তুমি মুখের উপর না করে দিলে কাকার আত্মসম্মানে লাগবে। ‘

আমি মেসেজটা পড়ে বাইরে এসে দেখলাম হে রাফসান চলে যাচ্ছে তার পেছনে নিবিড়ও কিছু না বোঝো চলে যাচ্ছে।
মামী আছে রান্নাঘরে। তিনি খেতে দেওয়ার জন্য রান্না করতে বসেছে। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি গালে হাত দিয়ে। অবশেষে যাই হোক তবে বিয়েটা মনে হয় ভাঙতে পারলাম। মুখ দিয়ে কাকা শব্দ বের হয়ে ভালই হয়েছে। উনিও বুঝতে পেরেছে উনাকে আমি কাকার নজরে দেখি উনি আমার হাজব্যান্ড হওয়ার উপযুক্ত না।

আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। উফ শান্তি শান্তি লাগছে। উনারা আজকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবে বিয়েটা হচ্ছে না কালকে আমি চলে যাব এখান থেকে। মামির প্যারা থেকে বাঁচতে পারব।
আমি দরজা বন্ধ করতে যাব তখন নিবিড় ধাপ করে আমার সামনে এসে আমার হাত টেনে বাইরে টেনে নিল।

আমাকে আচমকা এমন টেনে বাসা থেকে বের করে বাইরে আনার জন্য বললাম, ‘আপনার মাথা একেবারে গেসে নাকি। আপনি আমাকে এমন টেনে বের করে আনলেন কেন? মামি যদি দেখে নিতো তাহলে কি হতো?’
নিবিড় আমার চোখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল, ‘ তুমি কাকাকে কি বলেছো? কাকা এতো রেগে চলে গেল কেন? ‘

আমি হাত ঝামটা মেরে বললাম, ‘কিছুই বলিনি। শুধু বলেছি কাকা। কাকা বলে সম্বোধন করতেই‌ চলে গেছে আমার সাথে আর কথা বলেনি।’
নিবিড় থমকানো গলায় বলল, ‘ হোয়াট?’
‘আপনাকে আর আমার বিয়ে ভাঙার জন্য কষ্ট করতে হবে না আমি মনে হয় কাজটা করে দিছি। কাল কলেজ আমার ব্যাগ নিয়ে আসবেন।’

মামি রুমে থেকে ডাকাডাকি করছে আমি নিবিড় কে রেখে রেখে চলে গেলাম রুমে।
মামি আমার দিকে প্রশ্ন ছিল ছুঁড়ল, ‘ সবাই ক‌ই গেল?’
আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম, ‘ চলে গেছে!’

মামি হতভম্ব গলায় বলল , ‘ কি আমি এত কিছু রান্না করলাম আর কিছু না খেয়ে চলে গেল!’
আমি এগিয়ে এসে খাবারের দিকে তাকিয়ে বললাম,’ এমন ভাবে বললে মনে হলো বিশ পদ রান্না করে নিয়ে এসেছো। কিন্তু তোমার এখানে তো আমি এক শুধু আমার রান্না করা সবজি আর ভাত দেখতে পাচ্ছি তাহলে তুমি রান্নাটা করলে কি?’
মামি কটমট করে বলল, ‘ বেশি কথা কইবি না।’

‘আইচ্ছা মামি তুমি একটু তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নাও। আমার মনে হয় না বেশি লেট করলে খাবারগুলো খেতে পারবে আর।’
মামি অবাক গলায় বলল, ‘কেন খেতে পারব না কেন তুই কি সব খাবার একাই খাওয়ার চেষ্টা করছিস নাকি।’
‘না আসলে একটু পর তোমার কাছে এমন কোন সংবাদ আসতে পারি যে তুমি খাওয়ার পরিস্থিতিতেই থাকলে না। তাই আরকি।’

মামি বলল, ‘ তোর কথা বার্তা তো আমার ভালো ঠেকছে না রে। ওদের সাথে কিছু উল্টা পাল্টা কিছু করিস নি তো। ওরা যদি তো সাথে বিয়েটা ভেঙে দেয় মনে রাখিস আমি লাভলী তোকে সেই জসিমের সাথে তাকে বিয়ে দেবো।’
‘ কি কি বললে তুমি সেই লম্পট গুন্ডা জসিমের সাথে তুমি আমার বিয়ে দেবে?’
‘হ্যাঁ দেবো।’

‘তুমি আর আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে রাখতে পারবে না মামা শুধু আমার না। সে তোমার হাজব্যান্ড তোমার ছেলের বাপ আমি কেন শুধু মামার কথা ভেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে যাব। আমি জানি তুমি মামার কিছুই করবেনা শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাচ্ছ। আর তুমি আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছো মায়ের শেষ স্মৃতির গহনাগুলো নিতে। কিন্তু তোমার কপাল খারাপ গহনা গুলো এখন আর আমার কাছে নাই তাই তো সেই গুলো হাতাতে পারছ না।’

‘তুই ওদের সাথে কি করেছি সত্যি করে বল। এত ভালো ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক করলাম তুমিও সুখে থাকতি আমরা সুখে থাকতাম। কিন্তু তোর তো সহ্য হলো না বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস।’
‘তোমার মত মহিলার সাথে আমি কথাই বলতে চাই না আমি এখনই চলে যাব। আর শুনো ঠিকই বলেছ আমি ওই ছেলেটাকে এমন কথা বলেছি ছেলের পরিবার আজকে ফোন দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিবে।’

বলে রুমে চলে এলাম আর বাইরে মামী চিৎকার করে বলছে, ‘হায় আল্লাহ কি সর্বনাশ করলো। কতোভালো পোলাটা পাইছিলাম আজ সেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিল।’
আমি দরজার কাছে সাবা চিৎকার করে বললাম, ‘ এতই যেহেতু পছন্দ হয়েছে তুমি নিজেই বিয়ে করে নিতা। আমি কাকার বয়সী কারো বউ হতে পারব না। ‘

মামি রেগে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে গালের মধ্যে ঠাস করে থাপ্পর মেরে বলল, ‘ কাজটা তুই ঠিক করিস নি বিয়ে যেহেতু ভেঙে দিয়েছিস ওই জসিমের সাথে হলেও তোকে আজকে আমি বিয়ে দেবো। আমাকে বড়লোক আর সুখে থাকার শেষ রাস্তা যেহেতু তুই হতে দিলি না তোকে আমি মদ গাজা খাওয়ার লম্পট জসিমের হাতে তুলে দেবো।’

মামির থাপ্পর আমি প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি তবুও আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সাহসের সাথে বললাম, ‘ তোমার কোন অধিকার নেই আমাকে ওই গাঞ্জাখোর জসিমের হাতে তুলে দেওয়ার। আমি এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাব।’

‘তুই বলবি আর আমি তোকে ছেড়ে দেবো তাই না। এতদিন খুব ভালোভাবে তোকে বলেছি এবার তুই আমার খারাপ রুপ দেখবি না। তোর মামীকে তুই ভালো করে চিনিস নিজের কাজ হাসিলের জন্য সবকিছু করতে পারে আর জসিম গাঞ্জাখোর হলেও ওর হাতে যথেষ্ট টাকা আছে ও বলেছিল তোকে ওর সাথে বিয়ে দিলে ও আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে।’

আমি চিৎকার করে বললাম, ‘মামি তুমি এটা করতে পারো না।’
‘ আমি কি করতে পারি একটু পরেই দেখতে পাবি।’বলে মামি আমাকে ধাক্কাদিয়ে রুমের ভেতরে ফেলে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো। আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলাম কিন্তু ব্যাথা অনুভব করার দেখার টাইম এখন নাই আমি ছুটে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।

‘ মামী তুমি কিন্তু এসব ঠিক করছো না দয়া করে দরজা খোলো আমাকে যেতে দাও আর অন্যায় করোনা।’
মামীর কোন সাড়া শব্দ পেলাম না আমি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করলাম কতক্ষণ।

এদিকে মামীর কাছে সত্যি ফোন আসলো নিবিড় দিছো র বাসা থেকে বিয়ে ভেঙে দিল তারা। মামী তাদের অপেক্ষা করেনি তাদের ফোন আসার আগেই তিনি জসিম কি কল দিয়ে বাসায় আসতে বলেছে। এতদিন পর জসিম মামীর ফোন পেয়ে অবাক। মামী যখন কল দিয়ে তাকে বলেছে যে তোর সাথে আজকে ছোঁয়ার বিয়ে।

বিয়ে যদি করতে চাস তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। জসিমকে আর পায় কে সাথে সাথে জসিম ছুট্টে চলে এসেছে। এসেই হাবলাটা খুশিতে মামীর পা ধরে সালাম করা শুরু করে দিয়েছে। মামি জসিম কে বলেছে টাকা ফেল আর আপদটাকে বিয়ে করে নিয়ে যা।

জসিম বলেছেন এত টাকা দিতে পারবে না অগ্রিম নাকি এক লাখ টাকা দেবে আমি তখন বাদ সেধেছে। তখন ও বলেছে ওর কাছে নাকি তিন লাখ টাকা ছিল ২লাখ একা নাকি একজন হাওলাত নিছে। মামী অনেক ভেবে-চিন্তে রাজি হয় আর বলে বিয়ের বাজার সদাই করে দিতে আর মেয়ের জন্য জিনিস নিয়ে সন্ধায় আসতে।

খুশিমনে জসিম ফিরে যায়।
আমি রুমের ভেতর থেকে ওদের পরিকল্পনা সব শুনতে পাচ্ছি রাগে আমার শরীর কাঁপছে মন চাচ্ছে জসিমের মাথা ফাটিয়ে দিতে।

এক বিপদ যেতে না যেতেই আরেক বিপদ আল্লাহ এই গাজা খোর জসিমের হাত থেকে আমাকে তুমি রক্ষা করো এখানে থেকে পালানোর একটা ব্যবস্থা করে দাও প্লিজ।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১২

আমাকে যে ফ্লোরে ফেলে গে ছিল আমি সেই ফ্লোরে দরজার সামনে বসে ছিলাম। জসিম সন্ধ্যায় বিয়ের পোশাক দিয়ে গেলে মামী আমার রুমে দরজা খোলে। আমি দরজার সাথে লেপ্টে বসে ছিলাম এজন্য দরজা খুলে ধাক্কা দিতে আমি ঠাস করে পড়ে যায়।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ (২)