অবাধ্য প্রেম পর্ব ১২

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১২
নন্দিনী নীলা

বাসায় ঢুকতেই মামি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কিরে ছেলে তোরে কিছু গিফট গিফট করে নাই।’ বলেই মামি আমাকে চেক করতে লাগলো।
আমি বিরক্তকর গলায় বললাম, ‘ কিছুই পাবে না।’

মামি ব্রু কুঁচকে বললো, ‘ কেন? তুই নেস নি! আমি তোকে বলেছিলাম যা দিব সব নিয়ে আসবি। তুই জানিস নি কেন?’
আমি মামির সামনে থেকে সরে এসে বললাম, ‘ কিছু দিলে তো আনবো কিছুই দেয়নি।’
মামি মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে বলল, সত্যি। এত ধনী। হবু ব‌উয়ের সাথে দেখা করতে এলো অথচ স্বর্ণের একটা আংটি অব্দি দিল না। কি খাইস্টা গো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি মামির সামনে থেকে রুমে চলে এলাম। আর মামি বাইরে আহারে আহারে বলছে। তার খুব আশা ছিল আজকে নিশ্চয়ই রাফসান আমাকে স্বর্ণের কিছু দেবে প্রপোজ টপোজ করবে নিশ্চয় কালকে অনেক পছন্দ করে গেছে। কিন্তু তার কোনটাই হয়নি দেখে মামী খুব আশাহত হয়েছে। আর আমি খুব খুশি হয়েছি‌।

শাড়িটা খুলে বের হতেই। মামি রান্না করতে ছিল কিন্তু যেই শুনেছে রাফসান আমাকে কিছুই দেয়নি সে রান্না-বান্না সব বাদ দিয়ে সোফায় বসে আছে আমাকে বের হতে দেখে বলল, ‘ মাথাটা খুব ধরেছে রান্নাটা একটু করতো ছোঁয়া।’

আমি মামির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এক্সকিউজ দেওয়ার কি দরকার। তুমি যে ভান ধরে আছো সেটা তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর তুমি তো আমাকে ধমক দিয়েই কাজ করাতে পারো। এখন আবার এত সুন্দর করে কথা বলার কি আছে‌।’

‘একদম মুখে মুখে কথা বলবি না। এমনি আমার মাথাটা গরম আছে। তুই তো পেট পুরে খেয়ে এসেছিস বুঝবি কি?’
‘কে বলেছে আমি খেয়ে এসেছি। কিছুই খাইনি। আমার খুব খিদে পেয়েছে। ভেবেছিলাম কিছু হয়তো রান্না করে রেখেছো। কিন্তু আগে যদি জানতাম আমাকে রান্না করে খেতে হবে জানলে নিজের টাকা খরচ করে খেয়ে আসতাম।’

মামি অবাক গলায় বলল, ‘ কিছু খাওয়ায় ও নি? হায় আল্লাহ কোন বাড়ি বিয়ে ঠিক করলাম এ তো হবু ব‌উ কেই কিছু দেয় না আমাদের কি আর দেবে।’
‘ কোটিপতি দেখে তো বিয়ে ঠিক করছ। এখন আফসোস করছো কেন আহাজারি পারছ কেন?’
‘তুই মিছা কতা ক‌ইতাছিস তোরে আমি বিশ্বাস করিনা।’

‘ না করলে আমার কিছু করার নাই। শুধু একটা কথা শুনে রাখ যদি আমি রেস্টুরেন্টে ভালো কিছু খেয়ে আসতাম তাহলে তোমার বাসার পঁচা ভাত খাইতে চাইতাম না।’
মামি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,’ আজকে তোরে কয়বার পচা ভাত খাইতে দিছি যে বললি। আর শোন আমরা জমিদার না যে তোমার মত লাক সাহেবের বেটিরে প্রতি বেলায় গরম ভাত দিমু।’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘তোমার সাথে আমি বারতি কথাই বলতে চাই না।’
রান্না ঘরে চলে এলাম ওখানে থাকলে আরো ফালতু প্যাঁচাল পাড়তে হবে মামির সাথে। কিন্তু এখন আমার মামির সাথে ঝগড়া করার মুড নাই।

মাছটা ভাজা কড়াই তে আছে। তরকারি কিছু কাটা। বাকি গুলো কাটার আগেই মনে হয় দরজা খুলতে গেছিল। দরজা খুলে যা বুঝেছ তারপরে মনে হয় না আর রান্না ঘরে এসেছে।

নিবিড় বাসায় ঢুকার আগে রেস্টুরেন্টে যা যা ঘটেছে তা নিয়ে আবিরকে মুখ খুলতে একদম নিষেধ করে দিয়েছে। কিচ্ছু যদি কাউকে বলেছে তাহলে ওর খবর আছে। আবির ও কম যায় না স্বীকার করেছে কিন্তু বড় মাপের অ্যামাউন্ট চাইছে। যদি না দেয় তো মুখ খুলবে। এখন ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে হবে যেভাবেই হোক। তাই নিবিড় বাধ্য হয়েই ওর কথায় রাজি হয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে।

আর কঠিন গলায় বলেছে, ‘ আমি যে ছোঁয়াকে আগে থেকে চিনি। আর বিয়েটা যে হবে না এই বিষয়ে যেন ঘুনাক্ষরে কেউ টের না পায়। আর তুই আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে হেল্প করবি। বিয়েটা ভাঙতে যা যা করা লাগে সব করে দিবি।’
‘ আচ্ছা দেব তুমি শুধু আমার চাওয়া গুলো পুরন করে দিও ভাইয়া। ‘

‘টাকা তো দিল আমার কি চাওয়ার আছে তোর?’
আবির দাঁত কেলিয়ে বলল, ‘সেটা পরে দেখা যাবে চলো।’
বলে আগে ভেতরে চলে গেল ওর সয়তানি মনের বুদ্ধি ঠিকই ধরতে পারছে কিছুটা নিবিড়। পরে ওকে টাইট দেওয়া যাবে বড় ভাইয়ের সাথে ধান্দামী করা তাই না।

নিবিড় কে সবাই সোফায় বসিয়ে ওকে জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করছে হবু চাচি কেমন লাগলো? কি কথা বলল! মেয়েটা রাজি নাকি হ্যান ত্যান।
হবু চাচি শুনলেই নিবিড়ের মাথাটা গরম হয়ে আসছে। নিবিড় এদের সাথে আর কি কথা বলবে এর আগেও চিৎকার করে উঠল, ‘ চুপ করো প্লিজ। হবু চাচি হবু চাচি করছো কেন? অসহ্য লাগছে সরো আমার সামনে থেকে।’

সবাই বোকা চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো। নিবিড় হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সবাই হা করে ওর যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছে। অকারণ রাগের মানে কেউ বুঝতে পারছে না। অপর পাশের সোফায় বসে ‌ ছিল আবির ও ভাইয়ের রাগ দেখে মিটি মিটি হাসছে। কেউ এই রাগের মানে বুঝতে না পারলেও আবিরের বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে না। ও শুধু মজা নিচ্ছে।

রাফসান বাড়ি এসে নিবিড়ের কাছে এসে একটু বকাঝকা করতে লাগলো। আর একটু সময় ছোঁয়া কে ধরে রাখতে পারলি না।

নিবিড় কাকাকে এতো রাগে দেখে আর ছোঁয়া যে বিয়েতে রাজী না সে সব কিছু বলতে পারল না। শুধু বলল, ‘ তুমি ঠান্ডা হও। কাকা তারপরে আমি তোমাকে কিছু কথা বলব।’
রাফসান রাগান্বিত মুখে চলে গেল।

পরদিন দুপুরের দিকে রাফসান আর নিবিড় বাসায় এসে হাজির। দুপুরের রান্না করে আমি কেবল রুমে যাচ্ছিলাম তখনই কলিংবেল বেজে ওঠে আমি মামিকে ডাকাডাকি করি। মামি রুমে ফোনে কথা বলছিলো আমাকে খুলতে বলে‌।
ওইভাবে আমি দরজা খুলতে চলে আসি।

এই সময় আবার কে আসতে গেলে শিওর পাশের বাসার আন্টি উনিত দিনে দুইবার করে হলেও এটা ওটা চাইতে আসে। উনি নিশ্চয়ই আবার এসেছে জ্বালাতে। বিরক্তিকর মুখে দরজা খুলেই চমকে উঠি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি নিবিড় রাফসান। আচমকা দুজনকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই।

আমি কি ঠিক দেখছি নাকি ভুল দেখছি শিউর হওয়ার জন্য আমি নিজের হাতে নিজের চিমটি কাটতে যাব তখনই নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে খুব ভদ্র কন্ঠে বলে উঠে , ‘আসসালামু আলাইকুম!’

আমি নিবিড়ের এত ভদ্র আর সুন্দর করে কথা বলাটা নিতে পারলাম না‌। বড় বড় করে ভীতু চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কোন কথাই বললাম না। চুপ করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। না তাদের ভেতরে আসতে বলছি।
আমাকে এমন বিস্মিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফসান বলল, ‘ আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?’

আমি প্রচুর লজ্জা পেলাম শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম, ‘ সরি আপনারা ভেতরে আসুন।’
বলেই রাস্তা করে করে দিলাম ভেতরে আসার জন্য। রাফসান আগেই ভেতরে চলে গেল। নিবিড় গেল না আমার দিকে এক পা এগিয়ে মাথা আমার দিকে ঝুঁকে নিচু কন্ঠৈ বলল, ‘ ভদ্রতা শেখোনি মাথায় কাপড় দিতে পারো না। এভাবে কেউ কারো সামনে আসে কাজের বুয়া লাগছে তোমাকে দেখতে।’

আমি জ্বলন্ত চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। আর রাগী গলায় বলতে লাগলাম, ‘কাজ করে গরমে মরতেছি। এখন ওনার জন্য আমার নাকি মাথায় কাপড় দিয়ে ঘুরতে হবে । আর কি বললেন কাজের বুয়া তো আমি কি আপনাদের জন্য পরী সেজে বসে থাকবো। শুনুন এই বিয়েটা তোমার একদম মত নাই তাই আপনাদের সামনে বিশেষ করে আপনার ওই চাচার সামনে আমি এত সেজেগুজে আসতে পারবো না।’

দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন গলায় বললাম।
নিবিড় বলল, ‘ বলি একটা বুঝো আরেকটা। আর সাজলেও তোমাকে পরী লাগে না।’
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ‘ আপনি আমার সাথে কি ঝগড়া করতে আসছেন?’

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব 

নিবিড় মাথা উঁচু করে চুল ঠিক করতে করতে বলল, ‘ কিন্তু আমাকে সব সময়‌ই হ্যান্ডসাম লাগে‌।’
বলে চলে গেল ভেতরে আমি ওনার দিকে হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৩ ( ১ )