অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব 

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব 
নন্দিনী নীলা

নিবিড় আমাকে টেনে রেস্টুরেন্টের বাইরে এনে নিজের গাড়িতে ওঠার জন্য ঝামেলা করতে লাগলো। আমি উঠছিনা দেখে চিল্লাচিল্লি করতে লাগল। আমি ও নাছোড়বান্দা উনার হুকুম আমি কেন মানতে যাব।
নিবিড় এবার বলল, ‘ ছোঁয়া প্লিজ গাড়িতে উঠো। সবাই কেমন করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখো। মনে হচ্ছে আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।’

আমি হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, ‘ সত্যি তো ভাবছি ওনাদের ভাবনা একদম ঠিক আছে। আমাকে তো কিডন্যাপ করার মতোই নিচ্ছেন। না হলে আমি যাব না মাকে জোর জবরদস্তি করছেন কেন?’
দাঁত চেপে বলল নিবিড়, ‘ গাড়িতে উঠ তারপর বলছি।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি বললাম, ‘ শুনেন আপনাকে না আপনার কাকা ফোন দিল‌। তার সাথে কি কথা বললেন যে তার পর থেকেই তাড়াহুড়া শুরু করে দিলেন? সত্যি করে বলেন তার সাথে কি কথা বলেছেন!’
‘ বলেছি আজকে তোমাকে ধরে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেব।’
‘ কিহহহ? বিস্মিত গলায় বললাম।

জোর করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠানো হলো। আমিতো সাথে সাথে বেরোনোর জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু নিবিড় গাড়িতে উঠে গাড়ি লক করে দিয়েছে এখন আর আমি বের হতে পারছি না। দরজার হ্যান্ডেল ধরে আমি ঝাকাচ্ছি আর চিৎকার চেচামেচি করছি।

আবির গালে হাত দিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ও ভাবছে ভাই কি পাগল হয়ে গেল নাকি এখানে এসে এমন করছে কেন? নতুন চাচির সাথে ভাইয়ের যে কোন কানেকশন আছে সেটাই বুঝতে পারছেও। ও ত মিটিমিটি হাসছে আর ভাবছে চাচি কি ভাবি হয়ে যাবে নাকি?

ভাইয়ের সাথে আজকে এখানে এসেছে আমি কত কিছু জানতে পারলাম। ভাইয়া সবসময় আমাকে চুপ করিয়ে রাখে না। কথায় কথায় ধমক বকা দেওয়া। এবার আমি ভাইয়াকে চুপ করে রাখতে পারবো। অনেক কিছু হাতাতে পারব। ফট করে ফোনটা বের করে দুজনের কয়েকটা ছবি তুলে নিল।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিবিড় ছোঁয়ায় হাত ধরে টেনে আনলো।
ছোঁয়া দুই হাতে কাঁচের মধ্যে বারি মারছিল। নিবিড় হাত টেনে ধরে বলে, ‘আমার গাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে নাকি একবার আমার ফোন ভেঙে ক্ষান্ত হ‌ও নাই। এখন আমার গাড়ির ভাঙার চেষ্টা করছো‌!’

আবির ফোনটা লুকিয়ে ফেলল আবার। আর দুজনের ঝগড়া দেখতে লাগল গালে হাত দিয়ে।
আমি নিবিড়ের দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি যদি পারতাম ওই ফোনটার মত এই গাড়িটা এখন হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা আছাড় মারতাম। পারছিনা বলে বারি মারছি। আর যদি পারতাম এতক্ষণ আপনার ফোনটার মতোই এই গাড়িটাও ভেঙে গুড়িগুড়ি হয়ে যেত।’

নিবিড় বলল, ‘ আহ কি শখ! তুমি আমার গাড়িটা ভাঙতে আর আমি বসে বসে আঙুল চুষতাম তাই না। বেশি বাড়াবাড়ি করবে না তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি না চাও বিয়েটা ভেঙে যাক। আমি তোমার বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করছি।

তাই আমার কথা মত আর আমার ইশারায় চলো। বিয়েটা হবে না দেখো‌। আর যদি তা না করো তাহলে কিন্তু তোমার বিয়ে আমার কাকার সাথে হবে আর সেটা কেউ আটকাতে পারবেনা। আর তুমি যদি এখন আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়ে আমি আমার কাকার সাথেই দিব‌। তাই নিজের ভালো চাও তো আমার কাজে বাঁধা দিও না।’

আমি চোখ ছোট করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। নিবিড় গাড়ি স্টার্ট করল। আর ওর চাচা আমাকে পছন্দ করেছে সেই সব বলল সাথে আমার বয়স তার থেকে কম বলে তিনি একটু অমত। এজন্য দুটানায় ভুগছেন‌ আর বাসার সবাই নাকি তাকে রাজি করানোর জন্য লাফালাফি করছে। সবাই চাই বিয়েটা হোক।

কিছুক্ষণ আগে নিবিড় ও চাইতো। কিন্তু এখন আর চায় না কারণ আমার মত বেয়াদ্দপ মেয়ে নাকি ওনার চাচার যোগ্য না। আমি সাথে সাথে কটমট চোখে উনার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না। বিয়েটা যেহেতু ভাঙতে সাহায্য করবে আমি আর তার সাথে তর্ক করে একজন সাহায্য কারিকে হারাতে চায় না। একবার বিয়েটা ভেঙ্গে যাক তারপর উনাকে দেখে নিবো।

নিবিড় আমাকে বাসায় সামনে নামিয়ে দিলো। আমি নামার আগে বললাম, ‘ আমার ব্যাগ কখন দেবেন?’
নিবিড় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোমার ব্যাপার তো আর আমি ব্যবহার করবো না। তাই নো টেনশন তোমার ব্যাগ সহি সালামত আছে। পেয়ে যাবে এখন কীভাবে দেব আমি কি নিয়ে আসছি সাথে করে?’
আমি বুঝতে পারলাম আসলেই তো। এখন কিভাবে দেবে।

আমি বললাম, ‘ আচ্ছা নেক্সট যেদিন দেখা হবে সেদিন নিয়ে আসবেন অবশ্যই।’
‘ ওকে দেখা যাবে আর তুমি তোমার মামিকে বলে দিও কাকার সাথে থেকেছো এতক্ষণ।’
আমি কিছু বললাম না চলে আসতে গেলাম পেছন থেকে আবির চিৎকার করে বলল, ‘ হবু চাচি- ভাবি বাই।’

আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। চোখ ছোট ছোট করে পেছনে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি বললে তুমি?’
আবির বলল, ‘ সরি আসলে কোনটা হবে বুঝতে পারছিনা। তাই দুটাই বললাম।’
আমি দাঁত চেপে বললাম, ‘ তুই কিসের ভিত্তিতে আমাকে ভাবি বললে। একদম আমাকে ভাবি চাচী কোনটাই বলবে না। আমি না তোমার ভাবি হবো আর না তোমার চাচি হবো।’

আবির মুখটা পাংশুটে করে বলল, ‘ তাহলে তোমাকে কি বলব নাম ধরে ডাকবো নাকি?’
আমি বললাম, ‘ কেন তুমি আমাকে আপু বলতে পারো।’
পাশ থেকে নিবিড় আবিরের দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ এই তুই তোর কোন ভাইয়ের বউ হিসাবে ওকে ভাবি বলতে গেলি?’

আবির গর্বিত গলায় বলল, ‘এটা কেমন কথা ভাই। আমার তো একটাই ভাই তুমি। তোমার বউ ছাড়া আমি আর কাকে ভাবি বলবো?’
নিবিড় পেছনের দিকে এগিয়ে এসে আবিরের কানের লতিতে ধরে বললো, ‘ওই বেয়াদব মেয়ে এটা কোন দিক দিয়ে তার ভাইয়ের যোগ্য যে তুই ওকে ভাবি বলে বসলি। তোর কানের লতি আজ টেনে আমি লম্বা করে ফেলব।’

আবির ব্যাথায় আহ করে উঠে বলল, ‘আই এ্যাম সরি ভাইয়া প্লিজ ছেড়ে দাও। আমি আর জীবনে কাউকে ভাবি বলবো না। এমনকি তোমার সত্যি ব‌‌উকেও ভাবি বলবো না‌।’

একথা শুনে নিবিড় কান আরো জোরে চেপে ধরল আর বলল, ‘ কি বললি তুই আমার বউ কে তুই ভাবি বলবি না? এই তুই আমার বউকে ভাবি বলবি না তো কি বলবি হ্যাঁ!’
আবির এবার বলল, ‘ আমি কোন কথাই বলব না দয়া করে আমার কান ছাড়। কি মুশকিলে পড়ে গেলাম। ‘

আমি এগিয়ে এসে বললাম, ‘ আপনারা যান না কেন আমার মামি যদি বেরিয়ে আপনাদের দেখে তাহলে তো বুঝেই যাবে যে আমি আপনাদের সাথে ছিলাম।’
নিবিড় আবিরের কান ছেড়ে নিজের সিটে বসে সিট বেল লাগিয়ে নেয় আর গাড়ি স্টার্ট করে।

গাড়ি কিছুদূর যেতেই অনবরত নিবিড়ের ফোনে কল আসতে থাকে। নিবিড় ফোন ধরার জন্য গাড়ি পার্ক করে ফোন কানে নেই।
সাথে সাথে রাফসানের গলা পাওয়া যায়, ‘ হ্যালো কই তুই আমি তো রেস্টুরেন্টে বসে আছি। তোদের তো কোথাও দেখছি না কোথায় আছিস?’
নিবিড় আমতা আমতা করে বলে, ‘ হ্যালো কাকা আসলে হয়েছে কি?’

‘ কি হয়েছে?’
‘ কাকা আসলে তুমি যখন ফোন করলে। তখনই দেখলাম ছোঁয়া আই মিন চা মানে মেয়েটা চলে যাচ্ছে আমি তার কাছে গেলাম তিনি বাসায় চলে যাবে নাকি এখনি।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১১

আমি তোমার জন্য ওয়েট করতে বললাম সে বলল এখন পারবে না এখন নাকি বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। একাই চলে যেতে চাইছিল আমি কি করবো একা কি ছাড়া যায় নাকি। তাই আমি তাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এলাম। এখন বাড়ি আসছি তুমি বাড়ি আসো।’
বলে নিবিড় ঠাস ফোনটা কেটে দিলো।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১২