অবাধ্য প্রেম পর্ব ১১

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১১
নন্দিনী নীলা

আবির উঠছে না দেখে নিবিড় বিরক্তি কর গলায় বলল, ‘ এখানে থম মেরে বসে আছিস কেন? যাবিনা!’
আবির বলল, ‘ভাইয়া কোথায় যাব চাচি তো এখানে বসে আছে?’
নিবিড় চমকানো গলায় বলল, ‘ এখানে বসে আছে কই?’

বলে নিবিড় এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। এবার রাগী গলায় আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুই কিন্তু আমার হাতে এবার মার খাবি আবির।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ তুমি রাগছো কেন ভাইয়া? এতক্ষণ এত কথা বললে চাচির সাথে আর এখন তুমি তাকে রেখে আশেপাশের খুজছি চাচিকে। তুমি কি পাগল হয়েছ নাকি?’
‘ কি বললি আমি পাগল হয়েছি?’

‘ তোমার সামনে তো হবু চাচি বসে আছে। তুমি চাচিকে কি আগে থেকেই চেনো কিভাবে চেনো ভাইয়া?’
নিবিড় থমকানো চোখের সামনে ছোঁয়ার মুখের দিকে তাকালো। ছোঁয়া হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে আছে। দুজনে চোখে বিস্ময়কর চাহনি।

নিবিড় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল, ‘হোয়াট ছোঁয়া?’
ছোঁয়া বলল, ‘ আপনার ঐ বুইড়া চাচা এই বয়সে আমার মত বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে গেছে ছিহ লজ্জা করেনা আপনাদের। দাদুর বয়সী একজন কে নাতনি বয়সী মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
নিবিড় থম মেরে বসে আছে। নড়ছে না পাথরের মূর্তির মত চেয়ারে বসে আছে। আবির একবার নিজের ভাইয়ের দিকে তো একবার নিজের হবু চাচী’র দিকে তাকাচ্ছে দুজনেই পাথরের মত বস আছে।

আমি তো হতভম্ব হয়ে গেছি। নিবিড়ের চাচা সেদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিল আর আমি আজকে তার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছি‌। এমনিতেই আমি বিয়ে করতে চাই নি। এখন এইসব শুনে আমার মন একটা কথা‌ই বলতেছে যে মরে গেলেও আমি এই বিয়ে করবো মানে করবো না।

নিবিড় কি কথা বলবে এর আগে ওর মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। ছোঁয়ার সাথে কাকার বিয়ের কথা শুনে নিবিড়ের মাথা গরম হয়ে আসছে।
ও ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাকার সাথে দেখা করার জন্য বউ সেজে এসেছে তাই না? বিয়েতে তো খুব ভালোই রাজি হয়েছো দেখছি। তাহলে আবার আমার কাছে কাকাকে বুইড়া বলে টিস করছো কেন ?’

আমি চট করেই চোখ তুলে নিবিড়ের দিকে তাকালাম আর বললাম, ‘ যা জানেন না তা নিয়ে একদম কথা বলবেন না। মাই লাইফ মাই রুলস তাই আমি যা খুশি তাই করবা আপনার কি? আমি বিয়েতে রাজি কিনা সেটা আমি বুঝব আপনাকে বুঝতে হবে না।’

নিবিড় চড়াও গলায় বলল, ‘ শুনো আমার এত ঠেকা পড়ে নাই তোমার বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করার‌। কিন্তু তোমার মত শয়তান ফাজিল মেয়েকে আমি আমার কাকার মত একটা শান্তশিষ্ট ভালো মনের মানুষের বিয়ে হতে দিতে পারিনা‌‌। তোমার সাথে কাকার বিয়েটা হলে কাকার জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে।

আর আমি তার একমাত্র ভাইপো হয় সেটা তো দেখতে পারি না। আমি তোমার মত দজ্জাল মেয়ে কে আমার কাকার লাইফে আসতে দেবো না বিয়েটা তো আমি হতে দেবো না।’

আমি নিবিড় এর কথা শুনে খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘সত্যি আপনি বিয়েটা হতে দিবেন না? থ্যাংক ইউ সো মাচ‌। আপনি যদি কাজটা করে দেন তাহলে আর আমাকে কষ্ট করতে হবে না প্লিজ প্লিজ কাজটা করে দিবেন। আপনি তো জানেনই আমি ভালো মেয়ে না তো আমার মতো মেয়ের সাথে কেন এতো ভালো কাকার বিয়ে দেবেন?

এই বিয়েটা ভেঙে দিয়ে একটা নম্র-ভদ্র ভালো মেয়ের সাথে আপনার কাকার বিয়ে দেন এটাই ভালো হবে‌। আর শুনেন আমি বিয়েতে রাজি হয়ে বা আপনার কাকাকে পছন্দ করে এমন শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে আসি নাই। এটা আমাকে জোর করে পড়িয়ে দিয়েছে। ‘

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘তোমার এই বিয়েতে মত নাই?’
‘ একদমই নাই!’
নিবিড় বলল, ‘আমার এত সুন্দর হ্যান্ডসাম কাকাকে দেখে তুমি অপছন্দ কর কিভাবে? তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো তাকে রিফিউজ করছো?’

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি আবার এসব কথা বলছেন কেন দেখুন একেতে আপনার কাকার বয়স বেশি সে যতই হ্যান্ডসাম হোক তার সাথে আমার একদমই যায়না। আর তাছাড়া আমি এখন বিয়ে করতে চাই না‌।’

নিবিড় বলল, ‘শোনো তোমাকে আমি অপছন্দ করি। আর আমি চাই না কোন মতেই তুমি আমার কাকার বউ হ‌ও। আর আমি এটা হতেও দেবো না। কিন্তু তুমি আমার কাকাকে নিয়ে কোন বাজে কথা আর আমার কাকা কি রিফিউজ করার চেষ্টা করবে না।’

‘ আপনি কি পাগল রিফিউজ না করলে আমার বিয়েটা ভাঙ্গবে কিভাবে? আমিতো কোন মতেই বিয়েটা করব না।’
‘তুমি করতে চাইলেও আমি তো বিয়েটা হতে দেব না। তোমার চাওয়া না চায় তো কিছু হবে না। তোমাকে দেখে আমার একদমই মনে হচ্ছে না তুমি বিয়েতে অমত আমার তো মনে হচ্ছে তুমি বিয়েতে যথেষ্ট রাজি। কিন্তু এখন আমাকে দেখে পার্ট নিচ্ছো।’

আমি এবার কপাট রাগী গলায় বললাম,, ‘ দেখুন আপনার সাথে আমি পার্ট নিতে যাব কেন? নিজেকে কে কি মনে করে আল্লাহ ভালো জানে। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমি এখনই বিয়ে করে আরেকজনের অধীনে চলতে পারব না। আমি নিজে একটা স্বাধীনতা চাই। সারা জীবন আমি মামীর কাছে লাথি-ঝাটা খেয়ে তার অনুসারে চলেছি। এখন আমি বিয়ে করে আবার স্বামী নামক ব্যক্তির অনুসারে চলতে পারব না।

নিজেকে এতো ইম্পর্টেন্ট ভাববেন না। আপনি আমার ব্যাগ ফেরত দিন এই মুহূর্তে‌। ওই ব্যাগে আমি কোটি কোটি টাকা ভরে রাখি নাই যে আপনার কাজে লাগবে‌। ব্যাগে আমার আপন মানুষের কিছু স্মৃতি আছে সেগুলো আপনার কোন কাজে লাগবে না তাই দয়া করে ঝামেলা না করে সব ফেরত দিন।’

‘ আচ্ছা দিয়ে দিব একটা শর্ত আছে!’
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আমার ব্যাগ নিতে আমাকেই শর্ত পালন করতে হবে?’
‘ব্যাগটা তোমার হলেও যেহেতু আমার কব্জায় আছে তাহলে তো শর্ত মানতেই হবে!’

‘ আমি কোন শর্ত মানতে পারলাম না আমার ব্যাগ নিতে আমি কোন দুঃখে আপনার ফালতু শর্ত মানতে যাব।’
নিবিড় কিছু বলতে যাবে ওর ফোন বেজে ওঠে ও ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে কাকার কল।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ চুপ থাকো কাকা কল দিয়েছে।’

আমি বললাম, ‘আপনার কাকা কল দিয়েছে তো আমি চুপ থাকবো কেন আমার ব্যাগ দিন তাড়াতাড়ি।’
‘ চুপ করো নাহলে জীবনেও ব্যাগ পাবে না।’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে থেমে যায়।

নিবিড় ফোন কানে নিতেই রাফসান বলে উঠলো, ‘নিবিড় ক‌ই তুই?’
‘কেন কি হয়েছে কাকা আমিতো দেখা করতে আসছি জানোনা। তুমি বাসায় ছিল না তাই বলতে পারিনি।’
‘ আচ্ছা সমস্যা নাই তোরা কোন রেস্টুরেন্ট আছিস আমাকে বল। আমি আসতেছি আমি ছোঁয়ার সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই।’

নিবিড় রাফসানের কথা শুনে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। আর বলল, ‘ হোয়াট? তোমার আসতে হবে কেন তুমি না বললে আসবে না!’
‘হ্যাঁ তখন তো আসতে চাইনি কত বললি এখন ভাবলাম তোর সাথে কি কথা হবে না হবে। তুই তো আবার এই মেয়েটাকে রাজি করাতে পাগল। তুই তো রাজি করানোর জন্য একটা গেম খেলবি আমার সাথে। তার থেকে বরং আমিও সরাসরি কথা বলি আর আমি কথা বললেই বুঝে যাবো যে ওরা কিনা।’

‘মানে কি তোমার কেন আসতে হবে? তখন আসতে বললাম রাজি হলে না এখন কেন আসতে হবে। আমি তো ঠিকমত কথা বলেছি তোমার আসতে হবে না প্লিজ।’
‘বেশি পাকনামী করবি না চুপচাপ ঠিকানা দে না হলে কিন্তু আমার হাতে মার খাবি।’

নিবিড় ফোন নিয়ে অন্যদিকে চলে এসেছে এখন কি বলবে কোনভাবেই কাকার সাথে দেখা ছোঁয়ার মিট করানো যাবে না। এমনিতেই কাকা বিয়েতে রাজি। আর আজকে ছোঁয়ার লুক যদি দেখে তাহলে তো শত কিছু বলেও আমি বিয়েটা ভাঙতে পারবো না।

‘কিরে কিছু বলছিস না কেন!’
‘আরে রাগ করো কেনো বলছি। দারাও কিন্তু হবু চাচি তো চলে যাওয়ার জন্য তারা করছে খুব‌। তুমি কতদুর আছো আধা ঘন্টা লাগবে আচ্ছা দেখি আটকানো যায় কিনা।’
নিবিড় ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো। আর ছুটে ছোঁয়া দের কাছে চলে এলো ছোঁয়া আবিরের সাথে কি যেনো কথা বলছিল।

নিবিড় ছুটে এসেছ ছোঁয়ার এক হাত ধরে টেনে বসা থেকে দাড় করিয়ে ফেলে আর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,, ‘ তাড়াতাড়ি ওঠ!’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আরে কি হয়েছে ডাকাত পড়েছে নাকি। এমন তারাহুরা করছেন কেন ছাড়েন আমার হাত খালি টাচ করতে মন চায় তাই না আপনি আসলেই একটা….

নিবিড় রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ ওই কথাটা যদি উচ্চারণ করো। আই প্রমিস তোমাকেই রেস্টুরেন্টে এখানে সবার সামনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই কিস করবো।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১০

নিবিড়ের কথা শুনে আমি নাক ছিটকে বললাম, ‘ ছিহ কি নোংরা চিন্তাভাবনা আপনার।’
নিবিড় আমার কথা শুনল না উত্তর দিল না আমাকে রেস্টুরেন্ট থেকে টেনে বের করে আনল। রাগ এ আমার শরীর কাঁপছে শাড়ি পরা অবস্থায় কি টানলে হাঁটা যায়?

অবাধ্য প্রেম বোনাস পর্ব